মাঝে মাঝে হতাশাগুলো কার্নিভোরাস প্ল্যান্টের মত ঝাপটে ধরে। যেন এক্ষুনি ছিঁড়ে কুরে খেয়ে ফেলতে চায়। মরিয়া যুদ্ধ চলে তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য। কিন্তু তারা নাছোড়বান্দা। হতাশার ক্যারিজমা অনেকটা দুঃখের মত। একটা দুঃখ কোনভাবে কাছে আসতে পারলে বাকিগুলোও কোত্থেকে যেন হুড়মুড়িয়ে এসে জড়ো হয়ে যায়। পরজীবী হয়ে মানুষের ভেতর আশ্রয়স্থল গড়ে তোলে। তারপর তাকে কষ্টের জোয়ারে ভাসিয়ে নেয়। অতঃপর হয়তো সেগুলো অশ্রুঝর্ণা হয়ে বয়ে যায় অদৃশ্য কোন সমুদ্রের কোলে। অবশ্য মাঝে মাঝে দুঃখবিলাসীতার মধ্যেও কেমন যেন একটা আনন্দ পাওয়া যায়। অসুখের ভেতর সুখ। অনেকগুলো না পাওয়ার কষ্ট মনে করে আঁখিযুগলকে অশ্রুবর্ষণের জন্য নির্দেশ দেয়া। কিন্তু তারা কি সে কথা কর্ণগোচর করে? মোটেই না। তারা তো সেই কবেই প্রবল বর্ষণে বর্ষণে অশ্রু বিসর্জনে শুকিয়ে পাথরে পরিণত হয়েছে। তখন অবশ্য অনুমতি ছাড়াই তারা স্বীয় কার্য সম্পাদন করেছে। এখন তারা ক্লান্ত। ভীষণ ক্লান্ত। অগত্যা বুকের ভেতরে জলের ফোয়ারা বইয়ে দেয়া। কার সাধ্য তা ঠেকায়? কখনো কখনো করুণ কিছু সুরকে দুঃখবিলাসের সঙ্গী করে নেয়া। তখন সে সুর আর দুঃখ হাতে হাত ধরে এগিয়ে চলে আর মাথা ঠুকে বিলাপ করে। বিশ্বাসঘাতক পাথর চোখ তখন ঠায় তাকিয়ে থাকে চরম নির্লিপ্ততায়। তাদের সঙ্গ দেয়না বিন্দুমাত্র। তাদের দোষ দিয়েও বা কী লাভ! তাদেরও তো চাই খানিক বিশ্রাম।
এ তো গেল দুঃখের সাতকাহন। হতাশার অভ্যেসও তো ওই একই। একটা এলেই বাকি সব হতাশা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এসে সারি বেঁধে দাঁড়ায়। কে কার আগে এসে ভর করতে পারবে সে প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়ে পড়ে। তারপর সব জোট বেঁধে মাথার ভেতর হুটোপুটি করে আর নিঃশেষ করে দিতে চায় নিঃশেষে। যতই তাদের কাছ থেকে মুক্তি পাবার চেষ্টা করা হোক ততই তারা আরো শক্ত করে চেপে ধরে। কিছুতে আলাদা হতে দেবেনা। কিছুতেই না। পুরোপুরি জ্যান্ত গ্রাস করে ফেলতে পারলে তবেই যেন তাদের কার্যসিদ্ধি হবে। কেবল তখনই তারা ক্ষান্ত হবে। অনেক ধস্তাধস্তির পর একপর্যায়ে হার মানতে বাধ্য হয় পোষক। বিধাতা বোধহয় হতাশাকে একটু বেশিই শক্তিশালী করে ধরায় প্রেরণ করেছেন। একসময় নিজেকে স্বৈরাচারী হতাশার হাতে সঁপে দিতে বাধ্য হতেই হয়। অতঃপর ক্রমেই নিমজ্জিত হতে হয় গভীর হতে গভীরতম হতাশা গহ্বরে।।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৫৯