ভূমিকাঃ
আমার আগের একটি লেখাতে বলেছি সৌদি আরবে আসার পর ইসলাম ও তার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা, ইতিহাস নিয়ে আমার ব্যাপক আগ্রহ জন্মে। পাশাপাশি আরবের ইসলাম পূর্ব জীবনধারা ও ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ। আর এ কারনেই আদ, সামুদ জাতি নিয়ে পড়াশোনা করেছি, কখনোবা পিরামিড নিয়ে।
সৌদি আরবে “দাওয়া সেন্টার” নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ইসলামের দাওয়াত প্রচার করে থাকে। তারা বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত ইসলামের বইগুলি বিতরণ করে। সেখানে গিয়ে আমি বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় অনুদিত বিভিন্ন গবেষণাধর্মী বইয়ের নাগাল পেয়ে যাই। আমি সবসময় পড়তে ভালোবাসি। আর এ ভালোবাসা আমাকে ইসলামের কিছু সুক্ষ্ণ সত্য খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে।
লিটু ভাই আমাকে প্রায়ই বলেন- আমার এ বিষয়ে বেশী বেশী লেখা উচিত। আমি বিভিন্ন সময়ে বিক্ষিপ্তভাবে বেশ কিছু লেখা লিখেছি। কতকটা লিটু ভাইয়ের তাগাদা, নিজের ভেতরের সুপ্ত বাসনা, আর সবাইকে জানানোর প্রত্যয়ে এই “জানা অজানা” সিরিজটি শুরু করছি।
পৃথিবীতে লোহা’র আগমন:
পবিত্র কোরআনের ৫৭ নম্বর সূরাটি হচ্ছে “আল হাদীদ”। হাদীদ মানে হচ্ছে “লৌহ” বা “লোহা”। মদীনায় অবতীর্ণ ২৯টি আয়াতের এ সূরাটিতে “লোহা” সম্পর্কে বলা হয়েছে মাত্র ১ টি আয়াতে, অথচ পুরো সূরাটির নামকরণ লোহা’র নামে। এ থেকেই এই সূরাটির সূক্ষ্ণ গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।
৪র্থ আয়াতে আমরা পাই-
“ .... তিনি জানেন যা কিছু ভূমিতে প্রবেশ করে ও যা কিছু তা হতে বের হয় এবং আকাশ হতে যা কিছু নামে ও আকাশে যা কিছু উত্থিত হয় ..." (৫৭:০৪)
২৫ নম্বর আয়াতে গিয়ে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয় যেখানে পুরো সূরাটিতে একবার মাত্র “লৌহ” সম্পর্কে বলা হয়েছে।
“ ... আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচন্ড শক্তি ও রয়েছে মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ; ...” (৫৭:২৫)
... And We sent down iron in which there lies great force and which has many uses for mankind, ... (Surat Al-Hadid, 25)
লোহা সম্পর্কে বলতে গিয়ে পবিত্র কোরআনে “আনযালনা” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ নাযিল করা/ অবতীর্ণ করা (to send down)- এমন কিছু যা উপর থেকে আসে বা আকাশ থেকে পতিত হয়।
আমাদের বিষ্ময়ের সীমা থাকে না যখন জানতে পারি-বিংশ শতাব্দীতে এসে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছে যে লোহা পৃথিবীতে তৈরি হয়নি, লোহা মহাকাশ হতে এসেছে। বস্তুতঃ লোহা আমাদের সৌরজগতেই তৈরি হয়নি, লোহা এসেছে অন্যকোন সোলার সিস্টেম হতে। আমাদের সূর্যের কেন্দ্রস্থ তাপমাত্রা ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস। অথচ লোহা উৎপন্ন হবার জন্য প্রয়োজন কম বেশী ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস। যখন কোন নক্ষত্রের নিউক্লিয়ার ফিউশন এতটাই বেড়ে যায় অথবা নক্ষত্রের গ্রাভিটিশনাল কলাপ্স ঘটে তখন নক্ষত্রটি বিষ্ফোরিত হয় যাকে আমরা সুপারনোভা বলে জানি।
আর এধরনের কোন এক সুপারনোভার কারনেই অন্যকোন সোলার সিস্টেম হতে আমাদের পৃথিবীতে লোহা এসেছে।
“ .... তিনি জানেন যা কিছু ভূমিতে প্রবেশ করে ও যা কিছু তা হতে বের হয় এবং আকাশ হতে যা কিছু নামে ও আকাশে যা কিছু উত্থিত হয় ..."(৫৭:০৪)
আমাদের জ্ঞানের বহুমুখী সম্প্রসারণের আগেই পবিত্র কোরআন তারই ঘোষণা দিচ্ছে।
পৃথিবীর এই পরিমিত পরিমান লোহা আমাদের ম্যগনেটিক ফিল্ডগুলো তৈরি করেছে। যার সাহায্যে আমাদের ওযোনস্তর গঠিত হয়েছে। আর ওযোনস্তর আমাদেরকে কিভাবে সৌর ঝড় ও অন্যান্য কসমিক রেডিয়েশন থেকে রক্ষা করছে তা আমরা কম বেশী সবাই জানি।
“ ... আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচন্ড শক্তি ও রয়েছে মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ; ...” (৫৭:২৫)
আরো অবাক হয়ে যাই যখন একই সূরার ২য় আয়াতে পাই-
"আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কর্তৃত্ব তাঁরই; তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান; তিনি সবকিছু করতে সক্ষম।" (৫৭:০২)
প্রথম অংশে একাধিক মহাকাশ সম্পর্কে বলা হয়েছে। আমরা জানি লোহা আমাদের সৌরজগতের নয়। এটা এসেছে অন্যকোন সোলার সিস্টেম হতে।
একাধিক মহাকাশ সম্পর্কে বলার পর ঘোষণা করা হচ্ছে- “তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান;”
কার বা কিসের জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান? –নক্ষত্রের? সুপারনোভার মাধ্যমে যেমন নক্ষত্রের মৃত্যু ঘটে, তেমনি নতুন নক্ষত্রের জন্মও হয়। আর সুপারনোভা’র কারনেই লোহা’র উৎপত্তি।
একটু ভেবে দেখবেন কি? প্রশ্নটা আপনাদের কাছেই রইল।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:০৮