আগের পর্ব
ক্ষিদে পেয়ে গিয়েছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম বাহিরে খাব। কিন্তু রেস্টুরেন্টের খাবার সারা সৌদিতে একইরকম- কোন বৈচিত্র নেই। তাই শেষ পর্যন্ত বাসাতেই লাঞ্চ করার কথা ভাবি। শাকিলাও তাই চাচ্ছিল। আমরা চা শেষ করে বাসায় ফিরে আসি। শাকিলাও এরই মাঝে কলেজ থেকে ফিরে আসে।
একসাথে লাঞ্চ সেরে আমরা তড়িঘড়ি করে আল সুদা’র পথে রওনা দেই। আল সুদা হচ্ছে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ চূড়া।১০,৮৪৮ ফিট উচ্চতার আল সুদা সৌদি আরবের সবচেয়ে ঠান্ডা স্থানও বটে। চারিদিকে সবুজের সমারোহ, চমৎকার আবহাওয়া আর নয়নজুড়ানো সৌন্দর্যের কারনে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে বেড়াতে আসে।
আল সুদায় বেশ কয়েকটি স্পট আছে যেখানে লোকাল সৌদিদের দেখতে পাওয়া যায়। তারা সেখানে নিজেদের উৎপন্ন মধু বিক্রি করে থাকে। কিছু কিছু জায়গা বণ্যভাবেই গুছিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে মানুষজন সেখানে রান্না করে খেতে পারে, একান্ত সময় কাটাতে পারে।
আল সুদা পৌছতে ৩০ মিনিটের মতো লাগলো। গাড়ী পার্ক করার সাথে সাথে কোথা থেকে এক বেবুন আমাদের গাড়ীর বনেটের উপর এসে বসল। সৌদিরা এখানে গাড়ী থামিয়ে বেবুনদের খাবার দেয়। কিন্তু আমরাতো খাবার নিয়ে আসিনি। বেবুনটির চেহারা দেখে মায়া লাগল। আশেপাশে আরো কিছু বেবুনকে ঘুরে বেড়াতে দেখলাম। আমরা খুব সাবধানে নেমে কিছু ছবি তুলেই অন্য আরেকটি জায়গায় চলে আসলাম।
খাবারের আশায়
এখান থেকে রিজাল আলমা যাবার সর্পিল রাস্তাটি দেখা যাচ্ছিল। কয়েকজন সৌদি বেদু তাদের মধু বিক্রি করছে। মধু আর আসল নেই, এখানেও ভেজাল। এরাও চালাক হয়ে গেছে। চিনি গুলিয়ে মধু বানায় আর বেশী দামে বিক্রি করে নতুনদেরকে বোকা বানায়। আমাদেরকে দেখেই সবাই মধু কেনার জন্য ডাকাডাকি করতে লাগল।
মধু বিক্রয়রত সৌদি লোকাল
রিজাল আলমা যাবার সর্পিল রাস্তা
মোজাম ভাই এক বেদু’র সাথে কথা বলল। তার সাথে ছবি তুলল, তার মধুও চেখে দেখল। এখনতো মধু কিনতেই হবে। তাদের সাথে কোমড়ে ঝোলানো ছোরা থাকে। বিপদ! উচ্চ মূল্যে এই ভেজাল মধু কেইবা কিনতে চায়। মানে মানে করে কেটে পড়লাম।
মোজাম ভাই এর পাল্লায় পড়েছিল
আল সুদা’র পাহাড়্গুলো মাঝে মাঝেই মেঘে ঢেকে যায়। জুনিপারের সারিগুলো প্রায়ই ভৌতিক মনে হয়। কিন্তু দুপুরের এই কটকটে রোদে মেঘে ভেজার আশা বাদই দিতে হল। আল সুদা’য় আরো কিছুক্ষণ থেকে আমার ভার্সিটির পথ ধরি। এক জায়গায় রাস্তার ধারে এক বাংলাদেশি সমুচা ও চা বিক্রি করে। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারনে তার স্বাদ মোজাম ভাইকে দিতে পারলাম না। ভার্সিটি এসে কিছুক্ষণ থেকে বাসায় রওনা হই।
জুনিপারের সারি
আজ ছিল মঙ্গলবার। আবহার প্রাণকেন্দ্রে সুক তালাতার বাজার বসেছে। এমন কোন জিনিস নাই এখানে পাওয়া যায় না। মশলা, তরি তরকারি, হাড়ি পাতিল, খরগোশ, হাস, মুরগী- সবই পাওয়া যায়। ইচ্ছে ছিল মোজাম ভাইকে ঘুরিয়ে দেখাব। কিন্তু সময়ের কারনে তা আর হয়ে উঠেনি।
মাগরিবের নামাজ শেষে মোজাম ভাইকে এয়ারপোর্ট দিয়ে আসলাম। তবে যাবার আগে- তিনি আরেকবার সময় নিয়ে আবহা বেড়াতে আসার কথা বলে গেলেন। সেই অপেক্ষায় আছি।
(শেষ)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:২৩