বাড়ির বড় ছেলে ছিলাম বলে মা-বাবার আদর একটু বেশীই পেয়েছিলাম।
বাবা-মা চাইতেন আমি ডাক্তার বা ইজিনিয়ার হই। আর আমার নিজের ইচ্ছে ছিল কেবলই ডাক্তার হবো।
কিন্তু পড়ালেখার ধারেকাছে ছিলাম না।
তবুও প্রাইভেট টিউটর, কোচিং চলতেই থাকতো আমার।
অনেকটা জোর করেই পড়ালেখা গেলানো হচ্ছিলো আমাকে।
২০১৯ সাল।
নভেম্বরের ২৬ তারিখ।
কোচিংয়ে যাচ্ছিলাম। দেরি হয়ে গিয়েছিলো বলে ভটভটি ট্যাক্সিতে চড়ে যাচ্ছিলাম। আমাকে আমার অ্যান্টি নিয়ে যাচ্ছিলেন।
যাওয়ার পথে কিভাবে যে গাড়িটা উল্টে গিয়েছিলো তা ঠিক মনে নেই। তবে উল্টে যাওয়ার পর গাড়ি থেকে লোকজন কিভাবে আমাকে আর আমার অ্যান্টিকে বের করে এনেছিলো, সেটি খুব ভালোই মনে আছে।
গাড়ি থেকে বের হতে পেরেই আমি আমার নিজের দিকে তাকাইনি। দৌড়ে আমার অ্যান্টির কাছে গিয়ে দেখছিলাম ওনার মুখে কেটে যাওয়া অংশটার দিকে।
আমি রক্ত সহ্য করতে পারতাম না।
তাই বেহুশ হয়ে পড়ে গিয়েছিলাম।
সেই যে পড়েছিলাম, আর উঠিনি। সবাই আমাকে ধরাধরি করে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলো। মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি।
আমার শরীরটা অনেক জায়গায় থেঁতলে গিয়েছিলো। তা দেখে সবাই অনেক হা-হুতাশ করছিলো।
আমি এতো চিল্লায়ে চিল্লায়ে বলছিলাম না কাঁদতে, কেউই থামছিলো না। আমার কথা কেউ শুনতে পাচ্ছিলো না। আত্মাদের কথা কেউ শুনতে পায় না।
হায়, সেদিনের কথা মনে পড়লে এখনো অনেক কষ্ট হয়।
আমি যেদিন আত্মা হিসেবে জন্ম নিলাম, সেদিন আত্মা সমিতির সেক্রেটারি জনাব আব্দুল জাব্বার আমাকে ফুল দিয়ে বরন করে নিয়েছিলেন।
ওনার দোয়ায় ও ইচ্ছায় আমিই এখন আত্মা সমিতির সভাপতি। আর উনি আমাদের কমিটির উপদেষ্টা।
আমাদের এই সমিতির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যদি কোন নিষ্পাপ আত্মা চায় যে সে আবার পৃথিবীতে ফিরে যাবে, তবে সে যেতে পারবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই তার কোন অপূর্ণ ইচ্ছা থাকতে হবে।
সেই অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণ করতে পারবে আত্মাটা। তবে মানুষের সাথে আত্মাটার অমিল কেবল এক জায়গায়। আত্মার খিদে লাগে না। আর মানুষের প্রচুর খিদে লাগে।
আর খিদে বেশি বলে লোভ জাগে মনে।
এই লোভ যখন বেড়ে যায় তখন মানুষ খুন করতেও দ্বিধা করে না।
তখন নতুন আত্মা জন্ম নেয়।
আত্মা হয়ে যাবার পরই মানুষ বুঝে সে বেঁচে থাকতে কি ভুলই না করেছে। তখন সে চায় তার অপূর্ণ থেকে যাওয়া ইচ্ছে পূরণ করতে। কিন্তু আবার পৃথিবীতে ফিরে আসা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। কেবল নিষ্পাপদের পক্ষেই সম্ভব।
আমি পৃথিবীতে আবার ফিরে এসেছি আজ ১৫ বছর পূর্ণ হল।