শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
আমরা অনেক সময় আধুনিক মালয়েশিয়া রুপকার ডঃ মাহাথীর মোহাম্মদ কে স্মরণ করি আবার কেউবা জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রসরমান ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে স্মরণীয় করে রেখেছেন। আসলে এরা দুইজনই দুটি রাষ্ট্রের রত্ন। তবে আমাদের দেশে এদের মত একজন ছিলেন অথবা এদের চেয়েও উপযুক্ত একজন নেতা ছিলেন তিনি হচ্ছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
জিয়া বেঁচে থাকলে বাংলাদেশীরা হয়তো ডঃ মাহাথীর কিংবা মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে ভালোভাবে চিনতো কিনা তাতেই সন্দেহ রয়েছে। কারন যে দেশে জিয়ার মত সৎ, দক্ষ, যোগ্য, পরিশ্রমী, এবং আধুনিক বাংলাদেশের সপ্নদ্রষ্টা জিয়াউর রহমান থাকতেন সেখানে ভীনদেশী রত্নর খোঁজ করাটাও অবান্তর হতো।
এক নজরে দেখে নেই জিয়ার জীবন বৃত্তান্তঃ
জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ শে জানুয়ারী বগুড়া জেলার গাবতী উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম ছিলেন মনসুর রহমান এবং মাতার নাম ছিল জাহানারা খাতুন (রানী)। জিয়াউর রহমানন ছিলেন পাঁচ ভায়ের মধ্য দ্বিতীয়। তাঁর পিতা কলিকাতা শহরে এক সরকারী দপ্তরে শরসায়নবিদ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জিয়ার শৈশব কিছুটা গ্রামে এরপর কলিকাতায় কাটে। কলিকাতায় তিনি হেয়ার স্কুলে লেখাপড়া করেন এর মধ্য ভারতবর্ষ বিভাগের পর পুরো পরিবারের সাথে পাকিস্তানের করাচীতে চলে যান।করাচীতে তিনি একাডেমী স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৫২ সালে কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে করাচীর ডি জে কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই কাকুই মিলিটারী একাডেমীর অফিসার ক্যডেট হিসেবে যোগ দেন।
কর্মজীবনে জিয়াঃ
১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটোন্যন্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন। সামরিক বাহিনীতে তিনি একজন সুদক্ষ প্যরাট্রুপারস হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেন এবং স্পেশাল ইন্টেলিজেন্ট কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভ করেন।করাচীতে দুইবছর চাকরী করার পর ১৯৫৭ সালে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলী হয়ে আসেন। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেন। ১৯৬০ সালে দিনাজপুরে খালেদা খানমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে একটি কোম্পনীর কমান্ডার হিসেবে খেমকারান সেক্টরে অসিম বিরত্বের পরিচয়দেন। যুদ্ধে দুধর্ষ অবদানের জন্য যে সব কোম্পানী পুরস্কার লাভ করে তার মধ্য জিয়াউর রহমানের কোম্পানী ছিল অন্যতম।এই যুদ্ধে বীরেত্বের জন্য পাকিস্তান সরকার জিয়াউর রহমান কে ‘হিলাল-ই-জুরত’ খেতাবে ভূষিত করেন। এছাড়াও জিয়াউর রহমানের কোম্পানী ২ টি ‘সিতারা-ই জুরাত’ ও ৯টি ‘তাঘমা-ই-জুরাত’ মেডেল লাভ করেন।১৯৬৬ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারী একাডেমীতে পেশাদার ইন্সট্রাকটর হিসেবে নিয়োগ পান এবং ওই বছরেই তিনি পশ্চিম পাকিস্তান ষ্টাফ কোয়াটার কলেজে কমান্ড কোর্সে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে “মেজর” পদে উন্নিত হয়ে জয়দেবপুর সেকেন্ড ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে সেকেন্ড ইন্ড কমান্ড হিসেবে যোগদান করেন।এডভান্সড মিলিটারি এন্ড কমান্ড ট্রেনিং কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি পশ্চিম জার্মানিতে যান এবং কয়েক মাস বৃটিশ আর্মির সাথেও কাজ করেন। ১৯৭০ সালে একজন মেজর হিসেবে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রামে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড পদের দায়িত্ব লাভ করেন।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমানঃ
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাঃ
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যখন পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর বর্বরের মতো ঘৃণ্য হামলা চালায়। সে রাতে পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রিয় বাঙালি নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বন্দী হন। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ চলে যান আত্মগোপনে। জনগণ তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। এই সঙ্কটময় মুহূর্তে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বর আক্রমণের পর জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে বিদ্রোহ করেন এবং ২৭শে মার্চ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করেন।
“ অনুবাদ: আমি,মেজর জিয়া, বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির প্রাদেশিক কমাণ্ডার-ইন-চিফ, শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। আমি আরো ঘোষণা করছি যে, আমরা শেখ মুজিবর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম ও আইনসিদ্ধ সরকার গঠন করেছি যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের সরকার জোট-নিরপেক্ষ নীতি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর। এ রাষ্ট্র সকল জাতীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং বিশ্বশান্তির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আমি সকল দেশের সরকারকে তাদের নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশের নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। শেখ মুজিবর রহমানের সরকার একটি সার্বভৌম ও আইনসম্মত সরকার এৰং বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাবার দাবিদার।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদানঃ
মেজর জিয়া এবং তাঁর বাহিনী সামনের সারি থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং বেশ কয়েকদিন তাঁরা চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অভিযানের মুখে কৌশলগতভাবে তাঁরা সীমান্ত অতিক্রম করেন। ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে প্রথমে তিনি ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত হন এবং চট্রগ্রাম, পার্বত্য চট্রগ্রাম, নোয়াখালী,রাঙ্গামাটি, মিরসরাই, রামগড়, ফেণী প্রভৃতি স্থানে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেন। তিনি সেনা-ছাত্র-যুব সদস্যদের সংগঠিত করে পরবর্তীতে ১ম,৩য় ও ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এই তিনটি ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে মুক্তিবাহিনীর প্রথম নিয়মিত সশস্ত্র ব্রিগেড জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমান, যুদ্ধ পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিল হতে জুন পর্যন্ত ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার এবং তারপর জুন হতে অক্টোবর পর্যন্ত যুগপৎ ১১ নম্বর সেক্টরের জেড-ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের জন্য তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে জিয়ার সামরিক জীবনঃ
স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে কুমিল্লায় সেনাবাহিনীর ব্রিগেড কমান্ডার নিয়োগ করা হয় এবং ১৯৭২ সালের জুন মাসে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ-অফ-স্টাফ নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে,ঐ বছরের শেষের দিকে মেজর জেনারেল পদে এবং ১৯৭৫ সালের ২৫ শে আগস্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন । ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হতে অবসর গ্রহণ করেন।
উপরোক্ত ঘটনা প্রবাহ থেকে নিঃসন্দেহে বলা যায় ‘শহীদ জিয়াউর রহমান’ ছিলেন একজন সাহসী, মেধাবী, সৎ, দক্ষ ও ন্যয় পরায়ন বীরযোদ্ধা।
আজ ৩০ শে মে এই মহান নেতার ৩৩ তম শাহাদৎ বার্ষিকীতে বিশ্বজাহানের মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা...”হে আল্লাহ তুমি আমাদের প্রিয় নেতাকে
জান্নাতুল ফেরদৌস দান করো” আর আমাদের জাতীর বিভেদ ভূলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ার কাজের মনমানসিকতা দাও। জিয়ার আদর্শকে
ধারন করে দেশকে যেন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
চলবে>>
তথ্যসুত্র-উইকিপিডিয়া
ছবিসুত্র- ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:৩১