somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ইচ্ছেশক্তির বাস্তব গল্প

০৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ৯:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সালাম সাহেবের একমাত্র ছেলে রেজা.. অষ্টম শ্রেনীতে পড়ে.. বিকেলে কম্পিউটার শিক্ষক প্রাইভেট পড়িয়ে গেছেন...
সন্ধায় এসির টেম্পারেচার একটু বাড়িয়ে দিয়ে পড়ার টেবিলে পড়তে বসে রেজা... একটু পর আবার ইংলিশ টিচার আসবে পড়াতে.. তাই আবুল মিয়া মাস্টারের বসার জায়গা পরিস্কার করছেন..

.. আবুল মিয়া সালাম সাহেবের বাড়ির একজন বিশ্বস্ত কর্মচারী.. এ বাসায় কাজ নিয়েছেন বছর খানেক হল, এরই মধ্যে সবার বিশ্বাসের পাত্র হয়ে উঠেছেন..

গুনগুন করে পড়ছে রেজা..!

রেজার পিছনেই সোফা সেটের পাশে হেলান দিয়ে ফ্লোরে পা গুটিয়ে বসে আছে আবুল মিয়া... আনমনা হয়ে তাকিয়ে আছে রেজার দিকে.. নিজের স্ত্রী - সন্তানদের ছেড়ে ঢাকায় পড়ে আছেন আজ এতটা বছর... স্ত্রীর সাথে শেষ দেখা হয়েছিল গত রমজানের ঈদে..
নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে তার...

সালাম সাহেব লক্ষ করলেন বিষয়টা..

কাছে এসে কান্না করার কারন জিজ্ঞেস করতেই চোখের পানি মুচতে মুচতে বললেন তার কষ্টের কথা...

"স্ত্রী ও তিন ছেলে নিয়ে তার সংসার... সংসার জীবনের শুরু থেকে স্বামী স্ত্রী দুজনেই যুদ্ধ করে আসছে জীবনের সাথে.. দেখতে দেখতে তিনটা ছেলে সন্তান হল তাদের... বড় ছেলেটাকে কোনমত মেট্রিক পর্যন্ত নিজে খরচ দিয়ে পড়িয়েছেন... এখন সে গ্রামে হাল চাষের কামলা দেয়; সাথে পড়াশুনা করছে..

মেঝো ছেলের পড়ালেখা ও সংসারের ভারে নিজের শেষ সম্ভল ভিটে বিক্রি করে দেয় আবুল মিয়া.. বড় ভাইয়ের বিশাল ঘরের বারান্দার এক কোনে তিন সন্তান রাত কাটায়...

ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেনী পাশ করার পর পড়ালেখা আর সংসার খরচের চাপে বাধ্য হয়ে আবুল মিয়ার স্ত্রী মানুষের বাড়িতে ঝী এর কাজ করা শুরু করে...

আজ তার তিন ছেলেই শিক্ষিত...
.

কিন্তু তবুও সে কাঁদছে কেন?? তার তো প্রান খুলে হাসার কথা..!

সালাম সাহেব কারন জিজ্ঞেস করতেই আবুল মিয়া বললেন,

"স্যার গো... প্রত্যেক বাপে-মা'ই চায় তার সন্তান ভালা খাওন খাক.... ভালা মত ঘুমাক.... ভালা কইরা পড়ালেখা করুক....
আপ্নে আপ্নার পোলারে কত সুন্দর কইরা বড় করতাছেন.. এত এত প্রাইভেট মাস্টর রাখছেন, এত ভালা ভালা খাওন দেন...

স্যার গো, আমার ছোট পোলাটাও আপনার পোলার মত অষ্টম শ্রেনীতে পড়ে... কিন্তু আজ পর্যন্ত আমি আমার পোলার লাইগা একটা প্রাইভেট মাস্টর রাখতে পারি নাই.. ভাল কিছু খাওয়াইতে পারি নাই... আমার পোলাডার কথা মনে উঠসে আপনেগো রেজারে দেইখা.. তাই কানতেসি...

"............ শেষ.........."
.

পুরোটা লিখা আপাতদৃষ্টিতে কাল্পনিক গল্প মনে হলেও ইহা সম্পূর্ণ বাস্তব একটি গল্প... গতকাল আমার অফিসের এক সিনিয়র টেকনিশিয়ান এর মুখে শোনা তার বাড়ির কর্মচারীর কাহিনী এটি...

বাবা-মা দুজনই অন্যের বাড়িতে কাজ করে তাদের তিন ছেলেকে পড়ালেখা করিয়েছে... আবুল মিয়ার একটাই নাকি কথা,
"ভিটামাটি তো দূরের কথা, আমার শরীরের শেষ ফোটা রক্ত বেইচা হইলেও আমার পোলাগো পড়ালেখা করাই মানুষ করুম.."

.....এই দৃঢ কথার মান রেখেছে আবুল মিয়ার তিন ছেলে!!

ইতিকথা কি বলব!! আল্লাহ মানুষ কে হেদায়েত দেন.. এমনি এমনি দেন না, হেদায়েত আল্লাহর কাছ থেকে পেতে হলে তার বিনিময়ে তীল পরিমান কিছু হলেও করা লাগে কিংবা পোষন করা লাগে... হতে পারে সেটি কোন কাজ কিংবা ইচ্ছেশক্তি...
তা নাহলে আবুল মিয়ার ছেলেগুলো বিগড়ে গিয়ে চোর ডাকার কিংবা ধর্ষক হতে পারতো... কিন্তু তারা তা না হয়ে সম্পুর্ন নিজের ইচ্ছায় পড়ালেখা করে শিক্ষিত হয়েছে... হয়ত আল্লাহর পক্ষ থেকে এই হেদায়েত পাওয়ার প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে আবুল মিয়ার তীব্র ইচ্ছেশক্তি কিংবা তার ছেলেদের সুনিয়ন্ত্রিত বিবেক...

.

""আল্লাহ যেন প্রতিটা সন্তানের জন্য এমন বাবা-মা ও প্রত্যেক বাবা-মায়ের জন্য এমন সন্তান কবুল করেন...
যাদের হৃদয়জুড়ে থাকে ভাল কিছু করার অদম্য ইচ্ছা ও দৃঢ প্রত্যয়..""
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×