somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটু সচেতনতা ও সৌজন্যবোধ

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১.
মানুষের সঙ্গে মানুষের পরিচয় তৈরি হয় কথার মাধ্যমে। ভাষা আমাদের প্রতি ঈশ্বরের এক অসামান্য বরদান। এই ভাষার ওপর নির্ভর করেই আমাদের বন্ধু এবং শত্রু সৃষ্টি হয়। অথচ আমরা আমাদের এই ভাষার ব্যবহারে কতটা সচেতন? কতটা আন্তরিক? কথা বলার সময় আমরা কি এর প্রতীয়মানতা নিয়ে একটুও ভাবি? ভাবি কখনও যে, এই কথাটা বললে শ্রোতার মধ্যে বা মনে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে? অন্যে কী ভাবছে এটা বিবেচনা করে কথা বলার মানুষ আমি তুলনামূলকভাবে কম পেয়েছি।

নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে আমি অনেক বার বলেছি যে, মানুষের কথার টোনকে আমি খুব খেয়াল করি। আজ ভাবছি আমার পর্যবেক্ষণ থেকেই কিছু বলব।

ক)
মানে

¡)
বাসের ভীড়ের মধ্যে আপনি কাউকে বললেন, ভাই, একটু চেপে দাঁড়ান।
লোকটি বলল, মানে?

¡¡)
আপনি আপনার সহপাঠীকে বললেন, একটু খাতাটা দেখি?
সে বলল, মানে?

কী বুঝতে পারছেন? এই "মানে" শব্দটা কি বেয়াড়া শোনাচ্ছে না? আপনি কি এরকম উত্তরে বিরক্ত হবেন না? এরকম "মানে" সূচক প্রশ্নটা কখনও ভদ্রোচিত নয়। এক ধরনের উপেক্ষা বা উদ্ধত ভাব এটা দিয়ে প্রকাশ পায়।

বুঝলাম যে, আপনি কোন বক্তব্য বুঝতে পারছেন না বিধায় স্পষ্ট করে বোঝার জন্য "মানে" শব্দটি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু একই ঢঙে আপনি কি আপনার শিক্ষককে বা বসকে এই প্রশ্ন করতে পারবেন? আপনার কোন সহকর্মীকে বা বড়ো না হোক, আপনার সমপর্যায়ের কাউকে এভাবে মানে জিজ্ঞেস করতে পারবেন?
আপনার মধ্যে বিনয় থাকলে আপনি "মানে" না বলে কথাটা কি অন্যভাবে ঘুরিয়ে বলবেন না? অবশ্যই। আপনি তখন নিশ্চিতভাবেই বলবেন যে, দুঃখিত, আমি আপনার কথাটা বুঝতে পারিনি। একটু বুঝিয়ে বলুন।
কিংবা "স্যরি" বলে একটি প্রশ্ন জুড়ে দেবেন (স্যরি ?)।

হ্যাঁ। এটাই ভদ্রতা। এটাই সুন্দর। আমাদের এভাবেই বলা উচিত।


খ)
ভাই এবং ভাইয়া

ভাই শব্দটি যথেষ্ট ফ্রেন্ডলি। সমপর্যায়ের ব্যক্তিকে আনঅফিশিয়াল্যি ভাই বলে সম্বোধন করলেই সুন্দর শোনায়।
আপনার চেয়ে ছোট কাউকে ভাই বলে সম্বোধন করলে তাকে সম্মানিত করা হয়। সে তখন আপনার সমপর্যায়ের হয়ে যায়। একারণে ভাই না বলে ছোটদের ভাইয়া সম্বোধন করলে একটা দূরত্ব রক্ষিত হয়। এটা এক দিক দিয়ে ভালো।
তবে মেয়েদের মুখে ভাই শব্দটার চেয়ে ভাইয়া সম্বোধনটাই কেন জানি মিষ্টি লাগে। মেয়েদের মুখে ভাই শব্দটা রুক্ষ পুরুষালি বেমানান শোনায়।

গ)
অনুসন্ধান

একটা পার্টিতে আছেন আপনি। আচমকা খেয়াল করলেন যে, আপনার স্বল্প পরিচিত বা অপরিচিত এক লোক কোন একটা বস্তু তুলে নিয়ে হঠাত চলে গেল। আপনার সন্দেহ হল।
কিংবা ধরুন, পার্টিতে একজন লোককে দেখে আপনার মনে প্রশ্ন জাগল যে, এই লোকটি কি দাওয়াত পেয়ে এসেছে নাকি বিনা দাওয়াতেই খেতে চলে এসেছে?

এরকম আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রেই আপনার মধ্যে কৌতূহল বা অনুসন্ধিতসা জাগতে পারে। এমতাবস্থায় আপনি কী করবেন? হৈচৈ করে সবাইকে শুনিয়ে জিজ্ঞেস করে উঠবেন যে, অমুক না বলে ওটা কী নিয়ে গেল? কিংবা, এই লোকটা কার দাওয়াতে এখানে এসেছে?

এভাবেই কি অনুসন্ধান করবেন আপনি? এভাবেই কি জিজ্ঞেস করা উচিত?
নাকি আপনি গোপনে নির্ভরযোগ্য কাউকে ডেকে নিয়ে ব্যাপারটা খতিয়ে দেখতে চাইবেন?

হ্যাঁ। এটা আপনিও বোঝেন যে, ওভাবে সবাইকে শুনিয়ে অনুসন্ধান করা মানেই উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে হেয় করে ফেলা। অনুসন্ধানের ফলাফল যাইহোক, আপনার ওরকম সবাইকে শুনিয়ে প্রশ্ন করাতেই লোকটার যা অপমান হবার হয়ে গেছে। এবং আপনি নিশ্চিতভাবেই এরকম আচরণ দ্বারা লোকটিকে হেয় করেছেন।

এবার প্রসঙ্গত আমি অন্য আরেকটি উদাহরণ টানছি। ধরুন, আপনি অন্য ধর্মের কোন একটা আচার বা দিক হঠাত বুঝে উঠতে পারলেন না। আপনার কাছে বিষয়টা উদ্ভট বা অযৌক্তিক মনে হল এবং আপনি সেই ধর্মের অনুসারীগণ এমন করেন কেন- তা জানতে চেয়ে ফেইসবুকে একটি পোস্ট দিলেন!

আমি এটাকে প্রথমেই বলব যে, আপনি ওই ধর্মকে আঘাত করেছেন। যেহেতু আপনি ওই ধর্মের নন, তাই আপনার কখনই উচিত নয় অন্যের ধর্ম বা ধর্মীয় বিষয় নিয়ে এভাবে প্রশ্ন তোলা!

আপনার কাছে অযৌক্তিক লাগতেই পারে এবং হয়ত আসলেই সেই ধর্মীয় আচারটি ভুল বা অযৌক্তিক। আপনি যদি সুবিবেচক হন, তবে আপনি ওই ধর্ম সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন এমন কারো কাছে ইনবক্সে ব্যাপারটি জানিয়ে ব্যাখ্যা চাইতে পারতেন। এবং অতঃপর যদি সেটি ভুল বা অযৌক্তিকই সাব্যস্ত হয়, কেবল তখনই তা সম্পর্কে একটি সচেতনতামূলক পোস্ট দিতে পারতেন।
এটুকু বিবেচনা আমাদের থাকা উচিত। অন্য ধর্ম বা ধর্মীয় আচার নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুললে সেটা কোন্দল আর রেষারেষি ছাড়া আর কিছু উপহার দিতে পারে না।

২.
ভাষার ব্যবহারের এরকম অসংখ্য অসচেতন দিকই আছে। তবে এখন বলব আচরণ সম্পর্কে।

ক)
নক বা টোকা

আপনি মেসে থাকেন। টয়লেট শেয়ার করতে হয় আপনাকে।
কেউ টয়লেটে ঢুকে আছেন। আপনি তাঁকে বের হবার তাগাদা দিতে অনবরত দরজায় টোকা দিচ্ছেন!

ভেতরের ব্যক্তিটির জন্য এরচেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে? আরে তিনি তো ইচ্ছে করে দেরি করছেন না, তাঁকে শৌচকর্ম শেষ করতে তো দেবেন! নাকি শেষ না হতেই বেরিয়ে আসুক আপনি চান?

দরজায় টোকা পড়লেই ভেতরের ব্যক্তির মধ্যে টেনশান তৈরি হয় যত যলদি পারা যায় বের হবার !

কেন তাঁকে এই টেনশান দিচ্ছেন? এমন তো নয় যে আপনার মারাত্মক ডায়েরিয়া, আপনি এক মুহুর্তও চেপে রাখতে পারছেন না! তবে ?
আপনার তাড়া আছে ? দেরি হয়ে যাচ্ছে আপনার ? তাহলে সেটা আপনারই ভুল, ভেতরের ব্যক্তিটির নয়। আপনি সময় সচেতন হলে এটা আগেই সেরে নিতেন।

যাইহোক, তারপরেও ইমার্জেন্সি থাকে। এবং এক্ষেত্রে দরজায় টোকা না দিয়ে আপনি বাহির থেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, খুব দেরি হবে কি?
এভাবেই সুন্দর হয় ব্যাপারটা । দরজায় টোকা দেবেন না। ওটা স্রেফ অভদ্রতা, রুচিহীনের কাজ।

খ)
নিজের বা অন্যের বাসায় ঢোকার আগে কলিং বেল টেপেন, কিংবা দরজা পেটান না?
কয়বার? কতক্ষণ?

আমি এই ক্ষেত্রে প্রায় পঁচানব্বই ভাগ মানুষকেই দেখেছি বেল চেপে ধরে তো ধরে আর ছাড়ার নাম নেই, কিংবা এক সকেন্ডে পারলে সাতবার বেল টেপে! দেখেছি দরজা থাবড়ে পুরো বিল্ডিং মাথায় তুলতে!

কী আশ্চর্য! এটা ছেলেমানুষী না আহাম্মকী? ভেতর থেকে দরজা খুলতে আসতে যে সময়টুকু লাগে সেটুকু অপেক্ষা করতে পারছেন না? বিবেক নেই আপনার?

গ)
ধড়াম করে দরজা বন্ধ করাটা যে বেয়াদবী ফ্ল্যাটবাসীরা জানেন তো? তারপরেও কেন করেন?
৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×