somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চোর সমাচার

৩১ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
চোর এসেছে চুরি করতে। তার অনুভূতি প্রকাশ পাচ্ছে গানে গানে—

"এখন অনেক রাত,
খোলা আকাশের নিচে
জীবনের অনেক আয়োজন
আর আমি বসে আছি
দরজার ওপাশে!"

এরপরে সে কসরৎ করে ভেতরে ঢুকল, কিন্তু বাড়ির মালিক গিয়েছে জেগে। অগত্যা চোর বেচারা লুকালো খাঁটের তলায়। এখন গৃহকর্ত্রী গাইছেন—

"আমার চোখেতে ধরা
পড়ে গেছ আজ,
আমার চোখেতে ধরা
পড়ে গেছ আজ!"

পঙ্কজ উদাসের এই গান বেশিক্ষণ সুযোগ পেল না। গৃহকর্তাও মাহমুদ কলি ও ববিতার একটি ছায়াছবির গান দিয়ে হুমকি দিচ্ছেন—

"তুমি বাঘের মুখে পড়ছ
ছাড়া যে পাবে না
বড় ভুল করছ!
তুমি বাঘের, ও তুমি বাঘের.."

এই বলে গৃহকর্তা চোরকে তালে তালে খোঁচাতে লাগলেন একটি লম্বা লাঠি দিয়ে।

চোর তখন মিনমিন করে গাইছে—

"আমাকে আমার মতো থাকতে দাও
আমি নিজেকে নিজের মতো
গুছিয়ে নিয়েছি.."

কিন্তু কতক্ষণ আর এভাবে থাকা যায়! চোর বেরিয়ে আসতে বাধ্য হল। অতঃপর চোরকে বাইরে এনে গাছের সঙ্গে বাঁধা হল। চোর এখন গাইছে—

"একি বাঁধনে বলো
জড়ালে আমায়
ভাবি যতবার
মরি লজ্জায়..."

২.
এবারও এক চোর ঢুকেছে চুরি করতে। যার বাড়িতে ঢুকেছে, সে আরো বড় চোর। চোর বেচারা চুরি করে নেবার জন্য মেঝেতে লুঙ্গি বিছিয়ে রেখে জিনিস খুঁজতে গেল। এসে দেখে লুঙ্গি নেই! বাড়ির মালিক খাঁটে বসে মুচকি হাসছে, চোর চেঁচিয়ে বলল, "চোরের ব্যাটা চোর, আমার লুঙ্গি চুরি করে হাসছিস!"

এই গল্প নিয়ে আর কিছু বলব না। রস এতটুকুই যথেষ্ট।

৩.
এক চোর চুরি করতে একটি ঘরে ঢুকে দেখতে পেল অলরেডি একজন চোর ভেতরে ঢুকে বসে আছে। মুখে পেন্সিল টর্চ ফেলে চোর আঁৎকে উঠে বলল, "হা ভগবান! এ যে দেখছি ব্রাহ্মণ!!"

ব্রাহ্মণ জলদি এসে তার মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে প্রবোধ দিয়ে বলল,

"কইস নং, কইস নং,
তোরেও অর্ধেক দেবো নং"

৪.
এক লোক বাসের দরজার লাগোয়া সিটে বসে তার ব্যাগ রেখেছেন দরজার কাছেই, এমনভাবে, যেন চাইলেই নিচ থেকে টান মেরে নেওয়া যায়। পাশে দাঁড়ানো এক লোক সাবধান করে বলল, "এখানে ব্যাগ রাখবেন না, যেকোন মুহূর্তে চুরি হয়ে যাবে।"

লোকটা খুবই ঘাঘু চিজ। মুচকি হেসে বলল, "আমার সামনেই তো ব্যাগ। আমার চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে নেবে?"

লোকটা বলল, "এইভাবে ব্যাগটা ধরবে, তারপর ঝপাং করে দেবে লাফ!"

ততক্ষণে লোকটা ব্যাগ নিয়ে লাফ দিয়ে ফেলেছে!

৫.
এই গল্পটা আপনারা সবাই জানেন, তবুও শেষ দানের আগে আরেকটু মুখ গরম করি।

চোর এসেছে ঘরে। বাড়ির মালিক দার্শনিক টাইপের। জেগে গেছেন তিনি। তবুও ঘুমানোর ভান করে শুয়ে রইলেন। মনে মনে বলছেন, দেখি চাঁদু, তুমি কর কী!

চোর মনের আনন্দে একে একে তল্পি গোছাতে লাগল। বাড়ির মালিক চোখ আধবোজা করে সব দেখছেন আর মনে মনে হাসছেন, ব্যাটা, ঘরের দামি জিনিস রেখে চুরি করছে থালাবাসন! করবি তো সিন্দুক চুরি কর। ব্যাটা বলদ!
এই ভেবে তিনি চাবির গোছাটা বিনাশব্দে সিথানে রাখলেন। সচেতনভাবে তিনি চোরটাকে নিয়ে খেলছেন।

চোরটা সত্যিই বোকা। থালাবাসনের পর এবার নজর দিল ঘরের কাপড়চোপড়ের দিকে।

মালিক কৌতুকবোধ করছেন খুব, দেখি ব্যাটা, এরপর কী করিস!

জামাকাপড় বস্তায় ভরার পরও চাবিটা খুঁজে পেতে বোকা বেচারার বেশ সময় লাগল। এরপর সে সিন্দুক খুলে টাকা পয়সা গহনাগাঁটি বের করে বস্তায় ভরল।

মালিক চোরটার নির্বুদ্ধিতা দেখে মনে মনে নিরন্তর গাল দিচ্ছেন। ব্যাটা, এত গহনা আর টাকা পাবার পর তোর আবার ঐ বস্তার দরকার কী? অতবড় বস্তা বহন করার আর দরকার আছে? ব্যাটা গর্দভ! আচ্ছা, দেখি, এরপর তুই কী করিস।

চোর অতঃপর বস্তা কাঁধে তুলে বের হল! মালিক কাণ্ড দেখে হাসছেন।
কিছুক্ষণ পর মালিকের খেয়াল হল, অবুক, চোরাইয়া তো ধাই গেইয়ে!!

৬.
এই গল্পটা আপনার জীবন পাল্টে দিতে পারে। এক চোর রাজার ঘরে গিয়েছে চুরি করতে। গিয়ে দেখল, রাজা আর রাণী দুজনেই জেগে আছেন। সে অগত্যা লুকিয়ে রইল। শুনতে পেল রাজা আক্ষেপ করে বলছেন, "কী হবে বলো রাণী? এই রাজ্য দিয়ে আর কী হবে? আমাদের তো কোন সন্তান নেই, কে ভোগ করবে এই রাজ্য? কাকে দিয়ে যাব এই বৈভব?"

রাণী ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললেন, "সবই আমাদের কপাল, মহারাজ! কী হবে এই রাজ্যে? চলুন, আমরা এটা দান করে দিই।"

ব্যথিত রাজা বললেন, "হ্যাঁ, তাই দেব। মন্ত্রীকে নাহয় সেনাপতিকে দিয়ে দিই?"

রাণী বললেন, "না, ওরা লোভী। ওরা অসৎ।"

"তাহলে?"

রাণী বললেন, আমরা সৎ দেখে কাউকে দেব।

কোথায় পাব সৎ লোক?

বুদ্ধিমতী রাণী বললেন, এই রাজ্যের শেষ প্রান্তে একটি গুহায় কিছু সন্যাসী বাস করেন বলে শুনেছি। তাঁদের মধ্য থেকেই কাউকে দেই। তাঁরা সৎ লোক।

তাহলে কাল প্রত্যূষেই যাই চল।

এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজা রাণী শুয়ে পড়লেন।
ওদিকে সব শুনে চোর তড়িঘড়ি করে বের হল। হিসেব সে কষে ফেলেছে। রাজা হবার সুযোগই যখন পাওয়া গেল তখন আর চুরিতে কাজ কী!

রাতের মধ্যে সে কোনমতে একটা সাদা কাপড় যোগাড় করে সূর্যোদয়ের আগেই সে পৌঁছে গেল সন্ন্যাসীদের গুহায়। গুহায় গিয়ে সন্ন্যাসীদের মতো কাপড় পেঁচিয়ে গুহার মুখটায় এমনভাবে বসল যাতে রাজা রাণী এসে প্রথমেই তাকে দেখতে পায়।

সকালে রাজা রাণী এলেন এবং তার পরিকল্পনা ভণ্ডুল করে দিয়ে ঢুকে গেলেন গুহার মধ্যে, গিয়ে দাঁড়ালেন প্রধান সন্ন্যাসীর কাছে এবং তাঁকে এই রাজ্যের ভার নিতে অনুরোধ করলেন।

চোর উৎকর্ণ হয়ে শুনছে, মনে মনে আফসোস করল, ইশ রে, একটুর জন্য রাজ্যটা হাতছাড়া হয়ে গেল রে! রাজ্যটা ওই বুড়ো হাবড়াটাই পেয়ে গেল!

ওদিকে সন্ন্যাসী সব শুনে উহুঁ উহুঁ করে মাথা নাড়লেন। বললেন, আমার এই তুচ্ছ রাজত্ব চাই না, মা। আমার শিষ্যদের মধ্য হতে কেউ নেয় কিনা বলে দেখ।

চোর তো ভীষণ অবাক! বলে কী এই লোক! রাজ্য তার কাছে তুচ্ছ?

এরপরে রাজা রাণী একে একে লাইন দিয়ে বসা সন্ন্যাসীদের সামনে এসে দাঁড়াতে লাগলেন এবং রাজত্ব গ্রহণের অনুরোধ করতে লাগলেন। কিন্তু সন্ন্যাসীগণ প্রত্যেকেই উত্তর দিলেন যে, রাজত্ব তাঁরা চান না। এর চেয়ে বড় সম্পদ তাঁরা পেয়ে গেছেন!

চোর প্রত্যেকবার উত্তরটা শুনে অবাক হতে লাগল। এঁদের কাছে রাজত্বের চেয়েও বড়ো সম্পদ আছে! কী সেই সম্পদ?

সবশেষে যখন রাজা রাণী তার কাছে এসে দাঁড়াল, চোরও তখন গম্ভীর গলায় বলল, "এই তুচ্ছ রাজত্বে আমার দরকার নেই মা। এরচেয়ে বড়ো সম্পদের দেখা আমি পেয়ে গেছি!"

৭.
এটা বড়দের গল্প। তিন আঠারো চুয়ান্ন প্লাস। এখানে বলা যাবে না।

শুভরাত্রি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×