somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অফিসের গাড়ী (ছয়)

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অফিসের গাড়ী (ছয় )
পঞ্চাশ সিনড্রোম
জোহরা উম্মে হাসান

নুসরাত আলীর এখন বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই । এ বয়সেও ভারী টিপটপ আর কেতাদুরুস্ত সে। দারুন ম্যানলি । তাঁকে দেখলে মনে হবে তাঁর বয়স তাঁর বড় জোড় ৪০ কিংবা ৪২ । নিজের বয়স প্রায় ন দশ বছর কিভাবে যে লুকিয়ে রেখেছে সে , তা খোদাই জানেন ! এর আলাদা কোন মাজেজা নেই, বাহিরে নুসরাত আলী তা বলে বেড়া্য বটে । কিন্তু আছে ! নুসরাত আলী রেগুলার ডায়েট করে। প্রতিদিন সকালে ওয়াকিং স্যূট আর কেডস পরে চন্দ্রিমা উদ্যানে দুপাক হাঁটা তাঁর রুটিন ওয়ার্ক এ পড়ে । সোবহানবাগ ছ তলা স্টাফ কোয়াটা্রে তাঁর বাস ! সেখান থেকে সংসদ ভবন খুব কাছে , এমন কি খোদ প্রধান মন্ত্রীর বাড়ীও !

যে অফিসটাতে আজ নুসরাত আলীর নুতুন পোস্টিং হোল , সেখানে অনেক মেয়ে চাকরি করে । আগের অফিসের মতোই । আগের সে অফিসটায় কাজ করার অভিজ্ঞতা যদিও তার জন্য ততটা সুখকর নয় । তবুও মেয়েদের সঙ্গে চাকরি করার বাড়তি একটা পাওনা আছে বলে মনে করে নু্সরাত আলী । চারদিক জুড়ে বেশ একটা নব-বসন্ত বসন্ত ভাব । ফুলের মৌ মৌ চাপা সুবাস । ফিনফিনে হাসি বিদেশী পা্রফিউমের মতো সদাই মন কাড়ে । । সহকর্মী হিসেবেও মেয়েরা খুব ভাল হয় । দলাদলি মারামারিতে যায় না । লেগ পুলিং এর ধার ধারে না । আর------ , না আর কিছু না । এরপর নুসরাত আলী নতুন করে আর কিছু বলতে চায় না মেয়েদের নিয়ে । অনেক শিক্ষা হোয়েছে তাঁর !

আগের অফিসের বস ছিলেন জানে আলম সরকার । অফিস পাড়ায় তাঁকে সবাই বেশ সমঝে চলত । দারুন রাশভারি আর একগুয়ে স্বভাবের মানুষ । যা হোক , নুসরাত আলী তাঁর কাজ আর কথা দিয়ে বসকে সুন্দরভাবে ম্যানেজ করে ফেলেছিল । কিন্তু একটা বড় বাজে দোষ ছিল ভদ্রলোকের । আর তা হল কান কথা শোনা । নুসরাত আলীর নামে কে যে কি লাগিয়েছিল , আর তাতেই সাত দিনের মাথায় বদলীর খড়গ ! ঢাকায় থাকা সে কি চাট্টিখানি কথা ! ধরাধরি করে প্রথমে ওএসডি আর তারপর একবছর তপস্যা করে নুতুন এই পোস্টিং ।

আজ নতুন এ অফিসটায় জয়েন করার আগে নুসরাত আলীর বউ রেহনুমা , মানে নুমা বারে বারে তাঁকে বলে দিয়েছে সাবধানে থাকতে । চোখ কান খোলা রেখে চলতে। কারো সাথে বাদ-বিবাদে অযথা জড়িয়ে না পড়তে । আগের অফিসে হালকা একটা বিবাদে নিজেকে জড়িয়েছিল সে বটে । কিন্তু সেটা কি তা আজতক জানে না নুমা। তবে নুসরাত আলী তাঁর সহজ সরল বউটাকে ইনিয়ে বিনিয়ে এ বিষয়ে এটা ওটা বলে থামিয়ে দিয়েছে ।

নতুন অফিসে জয়নিং এর আগে বউয়ের সাবধান বাণীতে নুসরাত আলী অবোধ শিশুর মত কেবল মাথা নাড়িয়ে হাঁ হাঁ বলেছে । তাতেই মহাখুশী রেহনুমা । বরকে আঁচলের তলায় বেঁধে রাখতে কারই না ভাল্লাগে ! তাও মহাবাঁচা । মনে মনে প্রমাদ গোনে নুসরাত আলী । ভাগ্যিস এখন পর্যন্ত তাঁর বদলির আসল কারণ জানে না নুমা । জানলে তাঁর এত সাধের গেহ প্রেম ভালবাসা শুকনো পাতার মতো পলকা বাতাসে উড়ে যেত ।

স্বামীর অফিশিয়াল ব্যাপার ট্যাপার এসব সব কি ঘরের বউকে জানতে হবে ? নাকি জানাতে হবে ? ঘর আর বাহির এক করোনা ভায়া । এ ছবকটা সে পেয়েছিল তার আদিগুরু মহব্বত খান মাওলার কাছ থেকে। এতদিন এই তত্ত্বের প্রয়োগ বা প্রমাণের তাঁর প্রয়োজন হয়নি । কিন্তু পূর্ব পঞ্চাশে এসে গুরুর কথার গুরুত্ব যে কতখানি তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে নুসরাত আলী !

আসল কথা হোল আগের বসের সাথে নুসরাত আলীর লেগেছিল জিনাতকে নিয়ে । জিনাত আরা হক । নাম যাইই হোক না ক্যানো, বড়ই নিরীহ আর গোবেচারা স্বভাবের একটা মেয়ে । অতি সাধারণ একটা সালোয়ার কামিজ পড়ে তেল নিপাট চুলে দুরু দুরু বুকে যোগ দিতে এসেছিল কাজে।
বস কেন জানি তাঁকে দেখেই ভ্রু বাকিয়ে বলেছিলেন - বুঝলে নুসরাত এসব মেয়েরা চাকরি পায় স্রেফ পলিটিকাল ব্যাকিং এ । হাতে পায়ে ধরে । কত ভাল ভাল মেধাবি ছেলেমেয়েরা চাকরি পায় না, কিন্তু এরা পায় । এদের হাতে ধরে কাজ শিখাতে গেলে জীবন যৌবন সব শেষ । দেখ, এই প্যানসে মেয়েটাকে নিয়ে তুমি কি করতে পার ।

নুসরাত আলীর কপালে জিনাতকে কাজ শিখানোর দায়িত্ব পড়েছিল । প্রথম প্রথম একটু বিরক্তই লাগতো তার ! নিজের কাজের দেরী হতো । তারপরও কিভাবে নথি খুলতে হয়, নোট ,মিনিটস লিখতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি কাজগুলো পরম ধৈয্য ধরে জিনাতকে শেখাচ্ছিলো সে । শেখাতে গিয়ে একসময় তাঁর মনে হোচ্ছিল , জিনাতকে শেখানোর এ দায়িত্বটা না পেলে তাঁর জীবন যেন অপূর্ণই থেকে যেত ! কিছুই না, তেমন কিছুই না । কেবল টেবিলের ও পাশে বসে থাকা একটা কোমল সুন্দর মুখ প্রতিদিন দেখা । কখনও বা আচমকা আলতো হাতের স্পর্শ । এর চেয়ে নুসরাত আলীর বেশি কিছুর প্রয়োজন ছিল না । এটুকুই তাঁর জন্য যথেষ্ট ছিল !

তবে কোন কোন দিন নুসরাত আলীর মনে হতো- জিনাতের কাজ শেখায় মন নেই । চুপচাপ কেবল এমনি এমনি সে সময় নষ্ট কোরছে । মন খারাপ নাকি তোমার জিনাত ? নুসরাত আলীর কণ্ঠে রাজ্যের ব্যাকুলতা ঝরে পড়তো । বলেই সে মনে মনে কামনা করতো- না, না বলুক জিনাত । না বলুক । মন বা শরীর খারাপ হলেই তো জিনাত তাঁর সামনে থেকে এখনই চলে যাবে । কি ভয়ানক এক অবসেশন !
নিজের বউ নুমাকে আগের মতো ভালো লাগছিল না কি তার ? কি জানি । তবে ফিকে আবছা ভালো !

নুমা কিন্তু আগের মতোই রোজ রোজ বিকেলের খাবার তৈরী করে , সুন্দর করে সেজেগুজে সামনের চিলতে বারান্দাটায় বসে স্বামীর অফিসের মাইক্রো বাসটার হর্নটা শোনার জন্য কান পেতে থাকতো । ক্রিম সাদা গাড়িটা গেটের বুক ছুঁলেই এক দৌঁড়ে ঘরে ঢুকে সে চঞ্চল পায়ে সামনের দরজা খুলে দিত । প্রতিদানে নুসরাত আলীও আলতো করে বউয়ের গালটা ছুঁয়ে দিত । কিন্তু জিনাতের সাথে পরিচয়ের পর কেন জানি মাঝে মধ্যেই এ কাজটা করতে ভুলে যেত সে !

রোজ রোজ অফিসে এসেই জিনাত আগে ঢুকতো নুসরাত আলীর রুমে । সুমসাম সুন্দর সাজানো গোঁজানো পরিপাটি ঘর । ভারী পর্দা দেয়া । নিঝুম । কেউ নেই চারদিকে । কেবল সে আর নুসরাত আলী । জিনাতকে দেখেই মনে মনে ক্যামন যেন একটা নাম না জানা পুলক অনুভব করতো নুসরাত আলী! সুযোগ পেলেই সে জিনাতের চোখ ফাঁকি দিয়ে আড় চোখে তাকিয়ে দেখতো তাঁকে । তাঁর মতো জিনাতের মনেই কি ভাললাগার ছায়া ? কিন্তু এটা কি ঠিক হোচ্ছে ? পরক্ষণেই নুসরাত আলী মনে মনে নিজেই নিজেকে শুধাতো । না ! না ! কিন্তু ভাললাগা তো কোন দোষের নয় নুসরাত , এতো ভালবাসা নয় – কে যেন তাঁকে কানে কানে বলতো !

দিনকে দিন জিনাত যতই চটপটে আর ফিটফাট হোচ্ছিল , ততই নুসরাত আলীর মনটা ক্যামন যেন ভারী হয়ে যাচ্ছিল । সে মনে মনে চাইতো , কাজ শিখতে জিনাতের আরও দেরী হোক । সে বার বার একই কাজের জন্য তাঁর কাছে এসে ঘুরপাক খাক । কিন্তু বড়ই ঝটপট করে লাউয়ের ডগার মতো বেড়ে উঠছিলো জিনাত । নুসরাত আলীর মনে হোচ্ছিল আগের জিনাতই বেশী ভালো ছিলো । গেঁয়ো গেঁয়ো । সহজ সরল । জানে না কিছুই । কিন্তু মেয়েরা কিভাবে যে এতো তাড়াতাড়ি খোল নলচে পালটে ফেলে তা ভেবে ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছিল না নুসরাত আলী !

মাস কয়েকের মধ্যে জিনাতের নুসরাত আলীর ঘরে আসা ভাটা পড়তে থাকে । এর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না সে । এমনও হোয়েছে যে , নুসরাত আলী নয়টার সময় চেম্বারে ঢুকেই তড়িঘড়ি কোরে লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে পিয়নের কাছে জানতে চেয়েছে - জিনাত এসেছিল কি না । এসে সে যদি ফিরে যায় , এই ভাবনাটাই প্রতিনিয়ত গ্রাস করতো তাকে । কিন্তু তারপরও প্রতীক্ষা । নয়টা থেকে ঘড়ির কাঁটা গড়িয়ে গড়িয়ে চলে দশটায় । এরপর এগারো । বারো । এক । নুসরাত আলীর মনটা জিনাতের আগমনী গান শোনার জন্য কান পেতেই থাকতো । কিন্তু জিনাতের দেখা মিলতো না । ইন্টারকমে কথা বলা যেত । ল্যান্ড ফোনে কিংবা মোবাইলে । কিন্ত নুসরাত আলী পণ করে বসেছিল জিনাতের সাথে আগে সে আগ বাড়িয়ে কথা বলবে না ।

জিনাত ততদিনে ঘন ঘন বসের রুমের দিকে পা বাড়াচ্ছে , জেনে গিয়েছিল নুসরাত আলী । তাঁর কাছে যে সময়টায় আসতো , সেই সময়টাকেই বসের রুমে যাবার উপযুক্ত সময় বলে বেছে নিয়েছিল সে ! শোনা কথা , বস নাকি তাঁকে গণিত শেখাচ্ছেন ! অংক শিখে কি করবে মেয়েটি ? বস নাকি তাঁকে হাসি হাসি মুখে বলছেন , তুমি অঙ্কে ভারী কাঁচা হে । কাঁচাই তো । কাঁচা না হলে কি আর সে নুসরাত আলীর মত তিন নম্বর কলিগের সাথে কথা বলে এতো সময় নষ্ট করে । দিনকে দিন অঙ্কে খুব পাকা হোয়ে উঠছিলো জিনাত !

তোমার সেই নুসরাত আলীকে ক্যামন মানুষ বলে মনে হয় জিনাত ? ছিলে তো তাঁর সাথে ম্যালা দিন । বস নীচের ঠোঁটটা চেপে হাসি হাসি মুখে জিনাতকে প্রায়শঃ জিজ্ঞেস করে !

জিনাত ভ্রু উল্টিয়ে বলে , আপনাকে কি আর নতুন কোরে বলতে হবে স্যার ? দারুন সেন্টিমেন্টাল আর মেয়েলী । মেয়ে ঘেঁষা !

আর আমি ?

জিনাত খিল খিল করে হাসতো । আপনি ? রয়েল বেঙ্গল টাইগার ! না, না তাঁর সাথে এই পারিফিউমটার মতোই সুগগ্ধময় ।গুচ্চি !

জিনাতকে দেখার আশা তখনও ছাড়েনি নুসরাত আলী্ । গ্যাপটা কাটিয়ে উঠবার জন্য জিনাতকে সেই মোবাইল সেটটা উপহার দেয়ার পরেই বাঁধলো যত গণ্ডগোল । আসলে নুসরাত আলী নুতুন করে একটু চমক দিতে চেয়েছিল জিনাতকে । আবার একটু আপন হওয়া । এই আর কি । মিসকালো রঙের স্লিম সেটটা পেয়ে জিনাত সত্যই খুব খুশী হয়েছিল । তারপর মুখ ফসকে সে বলে ফেলেছিল - কি দারুন কোইনসিডেনস দেখুন নুসরাত ভাই । ভাই ? স্যারও কিন্তু কাল আমাকে খুব সুন্দর একটা সেট উপহার দিয়েছেন । গ্যালাস্খি থ্রী । হায় রে হায় । তারপরই ট্রান্সফার অর্ডার । এক ঘরমে দো পীর ! জিনাত স্যারকেও নিশ্চয়ই বলেছিল , দেখুন কি দারুন কোইনসিডেনস স্যার ! নাকি ভাই ?

এ ঘটনার পর জিনাতকে নয় নুমাকে হারানোর ভয় পেয়ে বসেছিল নুসরাত আলীকে । কেউ যদি বলে দেয় নুমাকে সব কথা । জিনাতের কথা । মোবাইল সেট । বদলী ! উহ ! কনফেশন ! সত্যিই কি কনফেশন করতে হবে নুমার কাছে । করলে কি হবে । ভাঙ্গা ফুলদানি জোড়া লাগানোর পর যেমন একটা দাগ থেকেই যায় , তেমনি একটা দাগ থেকেই যাবে নুমার বুকে !

কিন্তু তেমন দোষ তো করেনি সে । কিন্তু যা করেছে তাইই বা কম কিসে ? ভালবাসা । আনুগত্য । বিশস্ততা । এগুলো যেন কোথা থেকে উড়ে উড়ে এসে কুরে কুরে খেয়ে ফেলছিলো নুসরাত আলীকে । আচ্ছা , একটা মানুষের মধ্যে কি হাল্কা পাতলা দোষ ত্থাকতে পারেনা ? মানুষ তো আর দেবতা না । কেবলি একটু ভাললাগা । এর চেয়ে বড় কোন ভুল করেনি সে । কিন্তু যদি সে করেই ফেলতো ? নুসরাত আলীর তাই হঠাৎ করে পাওয়া বদলীর অর্ডারটা আশীর্বাদ বলেই মনে হোয়েছিল !

এবারের অফিসটার যে রুমটায় বসেছে নুসরাত আলী - সেটাও বেশ নিরিবিলি । ছিমছাম ! আগের অফিসের রুমটার চেয়ে অনেক বড় ! হবেই বা না কেন । কেননা একবছর ওএসডি থাকা অবস্থায় সে তাঁর প্রমোশনটা সময় মতই বাগিয়ে নিয়েছে ! তবে এসব , সব সম্ভব হোয়েছে নুমার বাবার কল্যানে ! নুমার ফ্যামিলির লোকেরা রাজনীতি করে । বাঘা বাঘা লোক আছে দু পাশেই ।

নুসরাত আলী এখানে আসার আগেই মনে মনে একটা প্রতিজ্ঞা করে এসেছে- ভুলেও আর কোন জিনাত কাহিনী নয় ! তবে তারই বা তেমন দোষ কোথায়! পাতলা ফিনফিনে দুধশাদা রঙের বোকাসোকা একটা মেয়ে যদি কাছে এসে নিত্য কাঁদো কাঁদো সুরে বলে, স্যার এটা বুঝি না , ওটা বুঝি না! তবে ধরা তো খেতেই হয় । সেও খেয়েছিল ।

নুতুন এ অফিসের মান্থলি মিটিং এ নুসরাত আলীর পরিচয় হলো সবার সাথে ! মিটিং শেষে কয়েকজন মেয়ে কলিগের নামই কেবল মনে থাকলো তাঁর । নীলা , তানজিলা ,আফরিন , সুতপা ইত্যাদি ! কিন্তু এটা কি খুব ভালো লক্ষণ ? আর সুতপা নামের মেয়েটিকে দেখে ভিমরি খাবার যোগাড় হোল নুসরাত আলীর । ওরে বাবা , এ যেন জিনাতের জেরম কপি !

টেবিলে রাখা টেলিফোনটার আলো জ্বলল ! সাউন্ড কমানো । রেহনুমার কল ! এ আবার এক জ্বালা ।ভালবাসার জ্বালা । অনবরত কল আর কল । রেহনুমা কি ইদানীং তাঁকে সন্দেহ করা শুরু কোরেছে ?

-হু , হ্যালো কি খবর ? বল !

- খবর তো তোমার কাছেই । এই মিটিং কেমন হল । তোমার সহকর্মীরা সব কেমন । তোমায় মন থেকে নিল তো - নুমা বেশ ব্যাকুল হয়েই জানতে চাইলো ।

-দুর , পাগলী , একদিনে বোঝা যায় বুঝি কে কেমন । আমি কেমন । বা ওরা ! বলতে গিয়ে নুসরাত আলীর মনের মধ্যে একবার জিনাত আর একবার সুতপা উঁকি দিল । দূর হ --- দূর হ !

নুমা আজ বেশ খোশ মেজাজে আছে । স্বামীর ভাল পোস্টিং মানে সন্মান বাড়লো তাঁর আবার । কোয়াটারে কোয়াটারে বউদের মধ্যে আলোচনা চলে এসব নিয়ে । কার স্বামীর কোথায় পোস্টিং । কে ওএসডি হয়ে জাবড় কাটছে বছরের পর বছর !

- স্বামীর কথার রেশ টেনে নুমা বলল, বোঝা যায় না ? তা অবশ্য , সারা জীবন এক সাথে থেকেও তো একজন অন্য জনকে চিনতে পারে না ।

নুসরাত আলী একটু ভয়ই পেল । আজ নুমার গলার স্বরটা কেমন যেন অন্য রকম শোনাচ্ছে ! রেহনুমা কি দিনে দিনে ভয়ানক ম্যাচিউরড হয়ে উঠছে । নাকি কোন গায়েবী বার্তা পাচ্ছে আজকাল । কেউ বলে দেয়নি তো জিনাতের কথা ?

- ইউ আর সো সিম্পল এ্যাজ ওয়েল এ্যাজ এট্টাক্টিভ । আই লাভ ইউ ভেরি ম্যাচ নুমা । নুসরাত আলী মনে প্রানে বলতে চাইলো ! পারলো না । এখানে এসব বলার সুযোগ যেন নেই । তাঁর দরজার কোনায় রবিউল নামের ছেলেটি বসা । আচ্ছা, ও ইংরেজি বোঝে নাকি , বাংলা তো অবশ্যই অবশ্যই বোঝে । চোখ দিয়ে গিলছে স্যারের সব কথা ! এর নাম আনুগত্যও হতে পারে ! যাকগে ।

-আই লাভ ইউ মাই ডার্লিং , মিন মিন কোরে শেষমেষ তাঁকে বলেই ফেললো নুসরাত আলী । জিনাত জিনাত করে , অনেকটা দিন সে অবহেলা করেছে নুমাকে । যদিও টের পায়নি বউটি তার , তাই রক্ষে ।

নুমা তখনও ফোনের ওপাশে । মাঝে মধ্যে অনেকক্ষণ ধরে ফোনে কথা বলতে ভালবাসে সে! আবার কখনও বোলেও বলে না ।

নুসরাত আলী বেশ হাসিমুখে বললো- নুমা শোন , এ অফিসটা খুব ভালো । বস কিন্তু মহিলা ! সবাইকে ভালই বলে মনে হল ! এ অফিসেও যে একগন্ডা মেয়ে অফিসার আছে আগের অফিসটার মত , তা বলি বলি করেও সে বললোনা রেহনুমাকে ! আসলে এ লক্ষণটা ভাল । মেয়েরা অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে !

নুমা ফোন রাখল !

কিন্তু কোথা থেকে যেন জিনাতই উড়ে এল । থুরি জিনাত নয় সুতপা !

-স্যার , খুব ভাল লাগলো , আপনাকে পেয়ে ! সুতপার হাতে একটা মোটা ফাইল, বহু ব্যবহারে জীর্ণ !

-বসেন সুতপা !

-স্যার , বসেন কেন , আমাকে তুমি বলবেন । এখানে বড়রা সবাই ছোটদেরকে তুমি বলে । ম্যাদাম তো সবাইকেই তুমি বলেন। আপনাকেও বলবে দেখবেন !

ওরে বাবা এ মেয়েটিও দেখছি কম কথা বলে না । একবারে জিনাতের মত। তাঁর কপালেই কেন যে বেশী বেশী কথা বলা মেয়েরা আসে ।

-হু, তিনি তো বলতেই পারেন , এতে অবশ্য র‍্যাপোট বাড়ে । আমিও তাই পছন্দ করি- তবে এখন থেকে নুসরাত আলী দারুন ফরমাল !

-হোক স্যার , আপনি আমাকে তুমিই বলবেন, অন্যরা তাদেরটা ভাববে !

ফাইলে সই হোল , দুজন ঘুরে সে তিন ! এরপর মাদাম ! নুসরাত আলী বললো , ফাইলে এতজনের স্বাক্ষর দেয়ার নিয়ম তো নেই !

-সুতপা ভ্রু কুঁচকে বলল , কনসারন্ড সবাই এর সব জানা ভাল । এতে সুবিধা হয় কাজের ।

-দেরীও তো হয় !

-না, না স্যার , এখানে সবাই পানচুয়াল । এমন কি ম্যাদামকে না বলে বাহিরেও যায় না কেউ !

-ওরে বাবা !

-কিছু বললেন কি স্যার ?

-না , না তো ।

নুসরাত আলীর সরাসরি মেয়ে বস বলতে গেলে এই প্রথম !যা হোক , বস বেশ ভালই বলতে হবে । মেয়েরা তো মেয়েদের প্রশংসা করে না সহজে । আবার যখন করতে থাকে তখন ভালোর বন্যা বইয়ে দেয় ! এই মেয়েটি সত্যি না মিথ্যে বলছে তা ঠিক বুঝতে পারছে না সে !

সুতপা তো আর মনের কথা পড়তে পারছে না নুসরাত আলীর । না পারুক , কোনদিনই না পারুক । নুতুন কোন জিনাত এপিসোডে জড়িয়ে পড়ার আদৌও ইচ্ছে নেই তাঁর । এক্ষণে তাড়াতাড়ি সুতপাকে বিদায় করতে পারলে যেন বেঁচে যায় নুসরাত আলী ।

সুতপা বেশ একটু অবাকই হোল তাঁর আচরণে । নিরামিষ ! মনে মনে বললো সে । তারপর ফাইল হাতে চলে গেল রিনি ঝিনি মল বাজিয়ে !

সুতপাকে একরকম জোর কোরে বিদায় দিতে একটু কষ্টই হোল নুসরাত আলীর । মেয়েটি হয়তো ভুল বুঝলো তাঁকে। বুঝুক । সে যে কলিগদের ব্যাপারে কতো কনশারন্ড তা কেবল জিনাতই জানতো ! এখনও নিশ্চয় সে - সে কথা অস্বীকার কোরতে পারবে না !সুতপার মাঝে ক্যামন যেন একটা জিনাত জিনাত ভাব ।

কিন্তু জিনাত থেকে বেড়িয়ে আসতেই হবে তাঁকে । উপায় নেই ! না হলে আবার বদলী । আবছা নুমা । ভাললাগা আর ভালবাসার টানপোড়ন । না । মনকে আর বাড়তে দেবে বা নুসরাত আলী ! মেয়েদের দেখলেই ক্যানো মিছে এই ভাললাগা ! আসলে নুসরাত আলী কি কোন সিনড্রোমে ভুগছে ! তার মনের এই অস্বাভাবিক লক্ষণকে সিনড্রোম না বলে সে আর কি বলবে। ছুঁইছুঁই পঞ্চাশের ভীমরতি ? গোল্লায় যাক পঞ্চাশ সিনড্রোম ! কেবল নুমা , নুমাই থাক ।

** সব চরিত্রই কাল্পনিক
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৪
১৪টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×