somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসঙ্গায়িতঃ পর্ব ৩

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্ব কথাঃ জীবনের ব্যাখ্যাতীত একটা ঘটনা লিখছি। এটা আমার ভয় পাওয়ার গল্প, আপনাকে ভয় দেখানোর গল্প নয়!

২০১১ সাল। নোয়াখালী।

বাসাটার বর্ণনা যেহেতু আগের পর্বে দিয়ে দিয়েছি, তাই এই অংশ উহ্য থাকলো। আজকের গল্পও তাই ছোট।
আগের পর্বের ঘটনার ৩/৪ দিন পর সন্ধ্যার গল্প এটা।

যে গ্রামে থাকতাম, সেটা যে কতটা নিশ্চুপ সেটা সূর্য্য ডুবলে বুঝা যায়। দুপুরে ভার্সিটি থেকে ফিরে আর কিছুই করার থাকতো না আমার। নিঃসঙ্গ জীবন অনেক ভয়াবহ। প্রতিটা মিনিট ঘন্টার মত দীর্ঘ ছিল, আর সিলেটকে মিস করতাম। ইচ্ছা হত, চলে যাই সিলেট, সকালে ক্লাসের আগে চলে আসবো!!!
আস্তে আস্তে সন্ধ্যা নামে। সামনে দীর্ঘ রাত। বিকাল থেকে বৃষ্টি, তাই বাইরে হাটাহাটি করা যায় নাই।

টিভি, পিসি বা একটা মাল্টিমিডিয়া ফোন কিছুই ছিলো না। ভারী ভারী আসবাবগুলো শুধু নিশ্চুপ দাড়িয়ে।
বই খুলি, এক-আধটু পড়া যাক। আবার কখন কারেন্ট যায় কে জানে। ভাবতে না ভাবতেই কারেন্ট চলে গেল। মোমবাতি জ্বালাই। কাঁপা কাঁপা আলোতে বই পড়ার ফিলিংস অন্য রকম! বাইরে একটানা বৃষ্টির শব্দ, অনেকটাই কমে এসেছে তখন।

ওহ! আমার বাসার একটা ছোট্ট বৈশিষ্ট্য বলা হয় নাই। বাসার সব গুলো জানালা স্টিল আর কাঁচের মিলানো ছিলো, স্কুলে যেমনটা থাকে।

টু হিজ কয় মিসট্রেস।
এখনো মনে আছে, এই কবিতাটা পড়ছিলাম তখন।

ঠং!!!
খালি বাসার মাঝে ভয়ানক জোরে হলো ধাতব আওয়াজটা। ভয়ানক চমকে উঠলাম! সামনের রুমের জানালায় কেউ পাথর ছুড়লো? এই বৃষ্টির রাতে, এই গ্রামের কেউ এমন না। কেউ কি ডাকছে? কিন্তু, রুমের সামনে তো গ্রিল দেয়া বারান্দা... কলাপ্সিবল গেট ধরে ঝাকালেও তো পারে… এইসব ভাবতে ভাবতে উঠে দাড়িয়েছি, ঠিক তখন,

ঠং!!!
এবারও ড্রয়িং রুম থেকে। তবে, সামনের জানালা না, পাশের জানালা থেকে, কিন্তু, ঐ দেয়ালের সাথে তো অনেক নিচে পুকুর, দাড়ানোর জায়গা নাই...কিন্তু… কিভাবে সম্ভব… ভাবতে না ভাবতেই…

ঠং!!!
এইবার রান্নাঘরের জানালায়, ধাতব আওয়াজটা অন্তরাত্মা কাপিয়ে দিলো আমার। অসম্ভব, রান্নাঘরের পাশে এমন কোন জায়গা নাই যেখানে কেউ দাঁড়াতে পারে, এই আবহাওয়ায় আসতে পারে বা দূর থেকে ঢিল ছুড়তে পারে.. তাহলে… হচ্ছেটা কি…

ঠং!!!
ডায়নিং রুমের জানালা! আমার রুমের পাশের রুম! কি হচ্ছে এসব!
স্থির হয়ে গেলাম।
ততক্ষণে হিসাব কষা শেষ। একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর নক হচ্ছে, একবার করে। স্নায়ুর উপর চাপ পড়ছে, মারাত্মক চাপ। দাঁতে দাঁত চেপে অপেক্ষা করছি, আমার ঠিক সামনে একটা জানালা, আরেক সেট জানালা পাশের দেয়ালে।
চোয়াল শক্ত করে সামনের স্টিলের জানালার দিকে তাকিয়ে আছ। এখনই হবে!

ঠং!!!!
প্রস্তুত থাকার পরও শব্দটা যেন ধাক্কা দিলো প্রবলভাবে। চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেল, কিন্তু কোন শব্দ করলাম না।
১ সেকেন্ড...
২ সেকেন্ড...
৫ সেকেন্ডের সময় নক হবে শেষ জানালায়।
৫ সেকেন্ড...
তাকালাম বন্ধ জানালার দিকে।

ঠং!!!
শেষবারের মত ধাতব আওয়াজে ঘর কাঁপিয়ে মিলিয়ে গেল সব।
দুই হাত দিয়ে মুখ মুছে উঠে উঠে আসলাম জানালার পাশে। পাশের ফ্ল্যাটে কেউ নাই, ওখানে শব্দ হয় কি না –কান পাতি... নাহ, নিস্তব্ধ। শুধু আমার ফ্ল্যাটে হলো!
বৃষ্টি থেমে গেছে কখন।
ধপ করে বিছানায় বসে পড়ি। স্নায়ু অবশ হয়ে আছে যেন।
ঘড়ি দেখি, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। এত চুপ কেন চারপাশ! একটা মানুষও কি নাই দুনিয়ায়?
কিভাবে কাটবে এই রাত। আমি পারবো না আর, প্রতিটা রাতে এই স্নায়ুযুদ্ধ... সকালে সিলেট চলে যাবো। -এইসব এলোমেলো ভাবছি। জানি এখন সিলেট যাওয়া সম্ভব না। পরীক্ষা সামনে।
সিলেটে, বাসায় ফোন দেই। এইসব চেপে যাই। বলতে পারি না, দুশ্চিন্তা করবে।
অসহায় লাগে নিজেকে নিস্তব্ধ নিশ্চুপ গ্রামের মাঝে একা বাড়িতে ভারি ভারি আসবাবের মাঝে...
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৫৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×