কনে পক্ষের চাহিদার শেষ নেই। পাত্রকে স্মার্ট-সুদর্শন হতে হবে। শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। ব্যাংক ব্যালেন্স থাকতে হবে। পারিবারিক ঐতিহ্য ও সামাজিক সম্মানজনক অবস্থান থাকতে হবে।
পাত্র পক্ষের চাহিদাও কম নয়। কনে সুন্দরী হতে হবে। সাধারণ সুন্দরী নয়, অনন্যা রূপসী। উল্লেখযোগ্য একাডেমিক ডিগ্রী থাকতে হবে। শারীরিক গঠন ও উচ্চতা হতে হবে ঈর্ষণীয়। তাছাড়া প্রয়োজনেরর সময় পাত্রকে সাপোর্ট দেয়া বা খুশি করার মতো পারিবারিক সামর্থ্য থাকতে হবে।
আমাদের দেশের শিক্ষাঙ্গন সমূহে দুর্নীতি এবং সেশনজটের যে অবস্থা, স্বাভাবিক নিয়মে পড়ালেখা শেষ করতে একজন শিক্ষার্থীর বয়স ২৪-২৭ হয়ে যায়। এরপর শুরু হয় চাকুরির পিছনে দৌড়। বর্তমান সময়ে একটি ভালো চাকুরী যেন সোনার হরিণ। মোটামুটিভাবে কিছু একটি করে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে একজন যুবক প্রায় ত্রিশের কাছাকাছি অবস্থান করে।
প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় নানা প্রথা ও আনুষ্ঠানিকতার নামে বিবাহ ব্যাপারটিকে আমরা অনেক জটিল করে ফেলেছি। এখন বিয়ে মানেই বাহারি আয়োজন। জমকালো ব্যবস্থাপনা। একগাদা টাকার রমরমা লেনদেন। বিয়েকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠিত এসব সামাজিক প্রথা অনেকের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন মেয়ের পিতার কাছে তেমনি অপ্রস্তুত পাত্রের কাছেও ভয়ের। এর কারণেও সাধারণ পাত্ররা বিয়ের দিকে ধাবিত হতে ভয় পান। প্রস্তুতির নামে ধ্বংস করেন জীবনের মূল্যবান সময়।
পড়ালেখা, ক্যারিয়ার, চাকুরী, নিজেকে প্রতিষ্ঠাসহ নানাবিধ কাজে ব্যস্ত থাকলেও, প্রশান্তি থাকে না মনে। সেই মাধ্যমিক স্তরে যে জীবনের অনুভব আসে, সেই চাওয়াগুলো ডালপালা মেলে ভেতরে ভেতরে। মানবিক গুণাবলীগুলোকে অস্বীকারের কোন সুযোগ থাকে না।
নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষাব্যবস্থা, সহশিক্ষার বিরূপ প্রভাব, আকাশ সংস্কৃতি ও প্রযুক্তি পণ্যের সহজলভ্যতায় বিস্তৃত যৌনাচার, ইসলাম বিদ্বেষী সরকারের ছত্রছায়ায় চরিত্র বিধ্বংসী নানাবিধ কর্মকাণ্ড সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে যুব সমাজকে। ফলে দিনদিন বাড়ছে অশান্তি আর অনাচার।
চাহিদামত পাত্র-পাত্রী না পাওয়া, ব্যয়বহুল বিবাহে ভীতি, বিবাহের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিসহ নানা অজুহাতে বিয়ে থেকে দূরে থাকলেও বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকেই। সবার অজান্তে, আড়ালে-আবডালে পূরণ করছেন জৈবিক চাহিদা। আর এসবকে কেন্দ্র করে বাড়ছে নানা অপরাধ। নারীঘটিত সমস্যাকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত ঘটছে খুন-অপহরণ।
আর এই সকল অপরাধের মূলে হলো- কুরআন ও হাদিসের শিক্ষা থেকে দূরে অবস্থান। সামাজিক প্রথাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া। দ্বীনদারীর চেয়ে বৈষয়িক বিষয়কে বেশি মূল্যায়ন করা। প্রাচুর্য প্রীতি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাদের?
দিবালোকের মতো স্পষ্ট কথা- যে সমাজে বিবাহ সহজ সেখানে জিনা-ব্যভিচার কঠিন। আর যে সমাজে বিবাহ কঠিন সেখেনে বিবাহবহির্ভূত যৌনাচার সহজ।
বিয়ের ক্ষেত্রে আমরা পাত্র-পাত্রীর দৈহিক সৌন্দর্যকে যতটা গুরুত্ব দেই, তার নৈতিকতা বা দ্বীনদারীকে সে রকম কেয়ার করি না। সে জন্য আমাদের কাছে দিল্লির লাড্ডু সহজেও পৌছায় না।
ইসলাম বিবাহ সহজ করেছে। নৈতিকতার গ্যারান্টির স্বার্থে। কুরআন-হাদিসের অসংখ্য স্থানে বিবাহের যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে- তা নামেমাত্র খরচেই সম্ভব। রাসুল (সা.) বলেছেন- সেই বিয়ে সবচে বেশি বরকতময়, যেখানে খরচ কম হবে।
আমরা নিজেরাই প্রথা তৈরি করেছি। লালন করছি। সেই আগুনে পুড়ছি। জ্বলছি জ্বালাচ্ছি। পুরো সমাজটাকে হাকিয়ে নিয়ে যাচ্ছি ধ্বংসের শেষ দিকে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৩