রাজামশাই-এর পোষ্ট দুইখান
মধ্যপ্রাচ্যকামলা-১
মধ্যপ্রাচ্য কামলা-২
পইড়্যা মনটা বড়ই উচাটন হইছে।ব্যাপারটা এমন নয় যে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক শোষণের খবর প্রথম জানলাম।তবুও বুর্জোয়া মানবতাবাদী হিসাবেও যতবার পড়ি ততবারই মর্মাহত হতে হয়।ক্ষোভে, রাগে, দু:খে চিৎকার করতে চাই, কিন্তু করা হয়ে ওঠেনা কোথায় যেন কিসের বাধা! দারিদ্র সীমার সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থানরতে কোন দেশের একেবারেই সাধারণ মানুষের চিৎকারের মুল্যই বা কতটুকু!
জানি এত অন্যায়,অবহেলা,নির্মমতা এতো কিছুর পরেও আমাদের শ্রমিকদের মানুষের মধ্যপ্রাচ্য যাওয়া থামবেনা।পরদেশ যাত্রা বোধকরি বাংলাদেশি কিংবা বৃহৎ পরিসরে তৃতীয় বিশ্বের মানুষের রক্তে ঢুকে গেছে।হাজার যুক্তি, নিয়মনীতি, বাধানিষেধ সত্বেও ঠিক তারা ছুটে বিদেশযাত্রা নামক মরীচিকার পিছনে।
যাইহোক রাজামশাই লিখেছেন অশিক্ষিত কামলাদের মধ্যপ্রাচ্য যাত্রা নিয়ে;আমি শিক্ষিত কামলাদের মধ্যপ্রাচ্য কিংবা আফ্রিকাযাত্রা নিয়ে
কিছু প্যাচাল পেড়ে যাই।
ফ্রিল্যান্সার হতে হলে প্রথমেই আপনাকে যা পরিত্যাগ করতে হবে স্থায়ী
চাকরির মায়া।অ্যাপ্লাই করে যেতে হবে ধৈর্য্যের চরম পরীক্ষা দিয়ে, শেষ পর্যন্ত যে সফল হবেন সেই নিশ্চয়তাও নাই।প্রয়োজন অফিসে কাজের ফাকে নিয়মিত বিভিন্ন জবসাইটে ঢুঁ মারার অভ্যাস।ফুলিয়ে ফাপিয়ে বেশ এমপ্লয়ীকে ইমপ্রেস করার মত একখান রিজিউমি(তয় কোন কাজকাম না শিখে শুধু রিজিউমের জোরে চাকরি পেয়ে বিপদে পড়লে আমার কোন দোষ নাই কইলাম ) এবং দুরলাপনিতে ইংরেজিতে ইন্টারভিউ দেওয়ার সক্ষমতা(ইংরেজির জাহাজ না হলেও চলবে )
বাংলাদেশি ছেলেদের প্রধান দূর্বলতা রিজিউমি প্রস্তুতকরণে।
রিজিউমি এবং জীবনবৃত্তান্ত(বাওডাটা) যে এক বস্তু নহে বংগসন্তান তা প্রায়শই ভুলিয়া যান।বছরখানেক আগে এক বন্ধুর ছোটভাই একখান রিজিউমি নাকি বায়োডাটা ঠিক কি দিল বুঝলাম না;প্রথম পৃষ্ঠাতেই বিশাল আকারে পারসোনাল ডিটেইলস নামে এক আন্ডারলাইন করা এক প্যারা। সেখানে তার নাম-ধাম, মা-পিতার নাম, বাড়ি-ঘর, উচ্চতা সব লিখা।তবে
পারসোনাল ডিটেলসে একলাইনে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছে।লাইনটা এমন,
ম্যারিটাল স্টেটাস:নেভার ম্যারিড।
যাক উক্ত রিজিউমি কাম বায়োডাটা দীর্ঘদিন আমাদের বিনোদন যুগিয়েছে।উহা এখনো আমার আর্কাইভে আছে।
সুতরাং "নেভার ম্যারিড" টাইপ রিজিউমি লিখলে কখনই কাংখিত ডাক আসবেনা।
আরো অনেক কিছুর মতোই ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্র এখন এশিয়ানদের দখলে;সেখানে ফিলিপিনো, ভারতীয়, পাকিস্তানি, ক্ষেত্রবিশেষে ইন্দোনেশিয়ান, মালয়েশিয়ানদের উপস্থিতিই মুখ্যা।সোনার বাংলার ছেলের এই ক্ষেত্রে একেবারেই নতুন আমদানী।একটা উদাহরণ দেই। আমি যে সেক্টরে কাজ করি, সে সেক্টরে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ-আমেরিকা'য় কর্মরত বাংলাদেশি যুবার সংখ্যা তিন অংকের কোটায় পৌছেছে।সেইটা নিয়ে আমরা(আমাদের একটা ইয়াহু গ্রুপ আছে) ভার্চুয়ালি আনন্দ উল্লাস করলাম।অথচ আমি যে দেশে থাকি শুধু সে দেশেই কর্মরত ফিলিপিনোর সংখ্যা শয়ের কাছাকাছি ।
ফ্রিল্যান্সিং -এর ক্ষেত্রের স্বজন প্রীতি (নিজদেশের লোক), দুর্ণীতি, ভাগ্যের পক্ষপাতিত্ব আছে।এইসব মেনেই মাঠে নামতে হবে।
যেহেতু ফ্রিল্যান্সিয়ে উচুঁ উচুঁ পদধারী বাংলাদেশি ভাই-বেরাদর কম(নাই বললেই চলে)।আপাতত আমাদের আত্মবিশ্বাস কিংবা ভাগ্যের উপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় নাই।
কয়েকটা মোটামুটি নামকরা ওয়েবসাইটের নামদিলাম:
www.jobserve.com ,
cellular-news কিংবা
3gwirelessjobs -এ
টেলিকম, আইটি রেলাটেড জবের হদিস পাবেন।
jobsbd -এ দুবাইয়ের
সব ধরনের চাকরির খবর মিলবে এবং
DubaiJobs-তে মুলত সিংগাপুর, সেই সাথে দ:পুর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে চাকরিব খোজ মিলবে।কারুর কাছে আরো ওয়েবসাইটের নাম থাকলে জানাতে পারেন।
সতর্কতা ফ্রি ল্যান্সারদের সাধারণত কোন কোম্পানি সরাসরি নিয়োগ করেনা, কোন কিছু দালালকে( ভদ্রলোকের ভাষায় এজেন্সি, প্রোভাইডার!)
নিয়োগের দ্বায়িত্ব দেয়।এই দালালরা মুল কোম্পানী থেকে বেতন নিয়ে সেখান থেকে কমিশন রেখে আপনাকে বেতন দিবো।সুতরাং ইন্টারভিউয়ে টিকে গেলে যতটা পারুন বেতন এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধার(অ্যাকোমডেশন, বিমানভাড়া) জন্য মুলোমুলি করুন।আবার
এতো বেশি টানাহেচড়া করবেন না দালাল ব্যাটা খেপে গিয়ে আপনারে বাতিল করে দেয়
ও হ্যাঁ বিমানের টিকেট, ভিসা এইগুলো হাতে না পাওয়া পর্যন্ত হাতের পাঁচ চাকরিটা ভুলেও ছাড়বেন না যেন!
সো যারা আগ্রহী আজকেই নেমে পড়ুন।উইশ ইউ বেষ্ট অফ লাক!!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:১৫