১))
ছোট্ট একটা রুম। রুমের মধ্যে কোন আসবাব পত্র নেই। পুরো মেঝেটা প্লাষ্টিকের ম্যাট বিছানো। এই প্লাষ্টিকের ম্যাট তৈরি হওয়াতে বর্তমানে অনেকেই কার্পেট ব্যবহার করে না । ম্যাটের ডিজাইনও খুব সুন্দর, দামও কম। দরজার বিপরীত দিকে একটা সেমি ডাবল গদি। বিছানার চাদরের উপর পেইন্টিং করা বিশাল একটা বাঘের ছবি। রয়েল বেঙ্গল টাইগার। যে ভদ্রলোকের বিছানা সে নিঃশ্চয় বাঘ খুব পছন্দ করে। খুব ভাল।
ম্যাটের নিচে টিভি অথবা ফ্রিজের কাভার দিয়ে গদিটা একটু উঁচু করা হয়েছে। এগুলোকে মনে হয় কাটুন-টাটুন বলে। আচ্ছা কাটুনের সহিত আবার টাটুন হবে কেন? এগুলো হচ্ছে শব্দের ছন্দ। যেমন, কাজ-টাজ, চেয়ার-টেয়ার, নামায-টামায। না না নামায-টামায বলা যাবে না। এতে পাপ হয়। নামাযের সাথে হবে কালাম, নামায-কালাম।
গদির একপাশে বসে আছে জাহিদ। জাহিদের সামনের দিকে ফ্লোরে নামানো একটা দোয়েলের শো-পিচ। দোয়েলটি এমন ভঙ্গিতে গাছের ডালের উপর বসে আছে, দেখে মনে হচ্ছে, খুব কষ্ট নিয়ে বসে আছে। মনটাও বেশ খারাপ। আচ্ছা, একটা ব্যাপার- মানুষের কষ্ট হলে একজন অন্যজনকে বলি। মানুষের মত দোয়েলেরাও কি একজনের কষ্ট অন্যজনকে বলতে পারে?
জাহিদের খুব ইচ্ছে হচ্ছে দোয়েলটার সাথে কথা বলতে। ওর দু;খ্যটা শুনতে। জাহাংগীর নগর ইউনিভার্সিটিতে মাঝে মাঝে পাখি দেখানো মেলা বসে। ওখানেতো অনেক পাখি বিষেজ্ঞরা আসেন। উনারা কি এইসব দোয়েলদের দু;খ বুঝতে পারেন। বুঝতে পারলেই ভাল। যদি সম্ভব হয় একদিন দোয়লটাকে পাখি বিষেজ্ঞের কাছে নিয়ে যাবে।
জাহিদে মনে মনে হেসে ফেলল। শব্দ ছারা হাসি। কারন হচ্ছে শো-পিচের দোয়েলটি মাটির ৗতরি।
অনেকক্ষন ধরে এই রুমে একা বসে আছে জাহিদ । বসে আছে তা-ও ঠিক না। গদির উপর আধো শোয়া অবস্থায় আছে। গাবতলী বাস ষ্ট্যান্ড-এসে পেীছেছে রাত্রি নয়টা তেঁতাল্লিশ মিনিটে। বাসায় যে কখন পেীছেছে এটা মনে নেই। হাতে ও ঘড়ি নেই। মোবাইল কেনার পর থেকে হাত ঘড়ি ব্যবহার বন্ধ। হাত ঘড়ির বিদায় মোবাইল ঘড়ির আগমন। সমান সমান।
বেশ খুধা লেগেছে। কয়টা বাজে দেখতে হবে। অন্য রুম গুলোতে যে ভদ্রলোকেরা আছেন একবারও খোঁজ নেয়নি। শুধু বাসায় ঢোকার সময় একজন রোগা টাইপের ছেলে চোখে-মুখে বিরক্তি ভাব নিয়ে দরজা খুলে জিজ্ঞেস করেছিল-কাকে চাই।
লোকটার দিকে তাকিয়ে জাহিদ বলেছিল, আমি রিমনের ফ্রেন্ড, বগুড়া থেকে এসেছি।
ও আচ্ছ, রিমনতো বাসায় নেই।
কখন বাসায় ফেরে বলতে পারবেন।
সন্ধার মধ্যেই আসে।
ছেলেটা রুম খুলে দিয়ে ঐ যে গেছে আর কোন খোঁজ নেয়নি। তখন থেকে একাই রুমের মধ্যে বসে আছে জাহিদ।
সময় দেখার জন্য প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করল জাহিদ। সাথে সাথে রিং বাজতে শুরু করল, রিমনের ফোন।
রিমন বলল-জাহিদ, তুমি কোথায়।
আমি তোমার বাসাতে, তুমি কোথায়।
ও, আচ্ছা, আমিNew D.O.H.S গিয়েছিলাম, এখন কলাবাগানের কাছাকাছি।
ঠিক আছে, তারাতারি আস।
তুমি কি রাতের খাবার খেয়েছ।
না।
তুমি ফ্রেস হয়ে একটু অপেক্ষা কর, একসাথে ডিনার করব।
OK, by.
রিমনের সাথে কথা বলার পর এখন বেশ ভাল লাগছে। ফ্রেস হওয়া দরকার। বাথরুমটা যে কোন দিকে। কাওকে জিজ্ঞেস করা দরকার। আবার মনে হলো, না, এই সামান্য ব্যপারে help নেওয়ার দরকার নেই। জীবনে অন্যের help যত কম নেওয়া যাবে ততই ভাল।যাকে বলে স্ব-নির্ভর। কম help কম ঋণী। যত কম ঋণ নিয়ে পরপারে যাওয়া যায় ততই ভাল।
ফ্রেস হতে প্রায় কুড়ি মিনিট লাগল। ঝিনুককে একটা ফোন করা দরকার। ঢাকা পৌছার পর একটাও ফোন করা হয়নি। চিন্তা করবে। বাসের মধ্যে কিছুক্ষন পর পর ফোন করেছে। কোচ এখন কোথায়, কোন সমস্যা হচ্ছে কি-না।
রংপুরে ঝিনুক-ই জাহিদের একমাত্র বন্ধু। একটা বিদেশী NGO এর Branch Manager । একদম সময় পায় না। একটু সময় পেলেই জাহিদের খোঁজ খবর নেয়। ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা হয়। ঝিনুকই ফোন করে বেশী। প্রতিদিন সকাল সাতটার সময় ফোন করবেই, ঘুম থেকে উঠাবে।সময়মত খাবার খেয়েছি কি-না, প্রতিটি মুহুর্তই খোঁজ নিবে।
জাহিদ ঝিনুকের নম্বরে ডায়াল করল।
Hallo, ঝিনুক, কেমন আছ।
হু, ভাল।এ্যাই, তমি ভাল ভাবে পৌছেছ। ফোন করতে এত দেরী করলে যে ? আমি অনেক বার ট্রাই করেছি, কিন্তু নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়নি।
ভালভাবে পেীছেছি, আমি ভাল আছি, এখন রিমনের বাসায়।
ডিনার করেছ ?
না, রিমন বাহিরে আছে, এলে একসাথে করব, তমি খেয়েছ ?
হু,
আচ্ছা ঘুমাও, by, Good Night.
শোন, রিমন ভাইয়াকে আমার শুভেচ্ছা দিবে, কেমন। OK, Good Night.
জাহিদ মোবাইলের লাইনটা কেটে দিয়ে পকেটে রেখে দিয়ে ফিস ফিস করে বলল- পাগলী মেয়ে।