ফোনাআলাপ:
-"দেখো, আমি কিন্তু আগেই বলছি, আমরা মধ্যবিত্ত পরিবার। তোমাকে ভালো কিছু গিফট করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আর তাছাড়া আমরা কলেজে পড়ি!"
-"এই কথাটা কি তোমার ডেইলি বলা লাগে? আমি কি বলছি তোমাকে গিফট দিতে? তুমি আমার সাথে এমন করো কেন?"
(আসলেও! আমি একটা গর্দভ, আমি বিষয়টা জানি। প্রেম জিনিসটাই আমার জন্য না, সেটাও জানি। কিন্তু কেউ বোধহয় ইচ্ছে করে প্রেমে পড়ে না। আমিও পড়িনি। আমাকে প্রায় ল্যাং মেরে ভালোবাসার গর্তে ফেলা হয়েছে)
-"আচ্ছা বাবা, বুজলাম। কিন্তু আজকে আসতে পারবো না।"
-"কেন? সত্যি পাঁচ মিনিটের বেশি লাগবে না..."
-"নেক্সট রোববার একটা পরীক্ষা আছে, আসতে পারবো না..."
-"তাহলে, হিমেলকে দিয়ে পাঠিয়ে দিবো?" (আদ্রিতার কাজিন)
-"কি??"
-"সেটা দেখো। এখন রাখি।"
প্রেম করি, বেশি দেখা করি না। আজব হলেও হতে পারে, আমি এমনই, কিছুই করার নাই। আমি আগেই বলছি। ইংলিশ কোচিং এর বাইরেও একশ বার বলছি, এখনও বলি। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবার। আমাকে সামনে কিছু করা লাগবে। একদিন আদ্রিতা কি বলছে শুনবেন,
'আমাকে বিয়ে করে ঘরজামাই থাকবা, টাকা পয়সার চিন্তা করো কেন?'
দুই দিন কথা বলি নাই। কিন্তু কান্নাকাটি, ফোন দিয়ে জ্বালানো, আর ভাল্লাগে না।
বাসার নিচে এসে হিমেল ছোকরাটা ম্যাসেজ দিচ্ছে। নিচে নামলাম। ছেলেটা আমাকে পছন্দ করেনা। আদ্রিতা ওকে টাকাপয়সা এইটা সেইটা দিয়ে আমার কাছে পাঠায়। আজকেও আরেকটা 'গিফট' পাঠালো। আমি নামার সময় বুক শেলফ থেকে গোর্কির 'মা' বইটা নিয়ে নামলাম।
-পড়ে ফেরত দিতে বলবা।
-পুরান বইতো!?
-তো কি হইসে?
-আচ্ছা, বলবো নে।
হিমেল তার বাবা, কিংবা চাচার কাছে বিচার দিলে, এই মহল্লায় থাকা লাগবে না। কিন্তু জানি, আদ্রিতা ওর মুখ বন্ধ রাখবে।
চকলেট, কলম আর একটা সেন্টের বোতল। আর একটা কাগজের টুকরায় লেখা, একটা ফেসবুক আইডি খুলো না! আমার বান্ধবীরা কথা শোনায়। চিন্তা করেন অবস্থা! কয়দিন পরে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা!!
ফোন দেই, ধরেনা। বুঝতে পেরেছে, আমার মেজাজ গরম।
২.
দিনগুলো খুব মিস করি। এখন আমার আদ্রিতা কোথায়? কতদূরে!
প্যারিস ঢাকা থেকে কতদূরে?
হঠাৎ করেই ওর বাবা ওকে বিয়ে দিয়ে দিলো। আমার কিছুই করার ছিলো না, সত্যি!
আমি ওর সাথে শেষবারের মতো দেখা করার সময়, কাঁদতেও পারি নাই। ওকে আমি কাঁদতে শুনেছি, ফোনে। বাস্তবে মন খারাপ করতে দেখেছি। কিন্তু যখন ও আমাকে জড়িয়ে ধরে রাস্তার মধ্যে কাঁদছিলো;....তখন চারদিকে সব থেমে গেছে, আমার বুকে প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে, চোখটা হয়তো লাল। আমি শুধু বললাম, "আদ্রিতা, I Love You."
বিকেল মরে যাচ্ছে, আমি শেষবারের মতো বললাম, " দেখো তুমি অনেক ভালো থাকবে।"
আমার ইন্টার পরীক্ষা খারাপ হলো না, প্রথমবর্ষ থেকেই ভালো করে পড়েছি।
পরীক্ষা দিয়েই আমি একটা স্কলারশিপের জন্য অ্যাপ্লাই করলাম। সোজা টরোন্টো।
শুধু আসার আগে হিমেলের বাচ্চাটাকে ইচ্ছে মতো পিঠিয়ে এসেছি।
৩.
বালিশটা উড়ে এসে আমার মাথায় লাগলো।
আদ্রিতার কাজ।
ওর ছেলেমানুষী গেলো না।
-"এইযে ব্লগারমিয়া, সারাদিন কি ব্লগেই পড়ে থাকবেন?"
আমার পিচ্চি মেয়েটা টি শার্ট ধরে টানছে আর বলছে,
-"বাবা, কফি খাবো, কোল্দ কফি" .....ওর সবগুলো দাঁত এখনো উঠেনি, হাহাহা।
বের হতে হবে। আজকে আদ্রিতার জন্মদিন, কি গিফট দেয়া যায় বলুনতো।
আগেতো পুরোনো বই দিয়ে কাজ চালাতাম, এখন?
মো.আশরাফুল আলম খান প্রান্ত/ ঢাকা
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১১:৫১