কোন ব্যক্তি প্রকৃত মুমিন নয়, যদি না সে নিজের জন্য যা কামনা করে তার ভাইয়ের জন্য তা-ই কামনা করে। -আল হাদিস
‘গুঁড়ো দুধে ঠকছেন দেশের ক্রেতারা।’ এই শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয় সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে। গুঁড়ো দুধ নিয়ে রীতিমতো তুলকালাম কান্ড ঘটছে। একে অনাচারও বলা যায়। দেশের জিনিসপত্রের দাম নিয়ে মানুষের চিন্তার শেষ নেই। পণ্যমূল্য বৃদ্ধিকে অনেকে ‘আতঙ্ক’ হিসেবেই অভিহিত করছেন। কখন কোন দ্রব্যের দাম বাড়ে, তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। আর দাম বৃদ্ধির মাত্রাও অস্বাভাবিক। কীসের ভিত্তিতে দাম বাড়ে, কেউ জানে না। হয়তো দীর্ঘদিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে অনেকেই মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু কোনো কোনো সময় কোনো কোনো পণ্যের দাম এমনভাবে বেড়ে যায় তা মেনে নিতে কষ্ট হয় ভোক্তা-ক্রেতাদের। প্রকাশিত খবরে বলা হয়-গুঁড়ো দুধ এখন অনেকটাই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বিশ্ববাজারে কয়েক দফা দাম বাড়ার পর এখন তা অনেক কমে গেছে। অথচ এর কোনো প্রভাব নেই দেশের বাজারে। ব্যবসায়ীদের একটাই দোহাই, তা হচ্ছে বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধি। এভাবে তারা, বলা যায় প্রতিনিয়ত দাম বাড়াচ্ছে। গত মার্চ মাসে এক দফা দাম বাড়ানো হয়। সেসময় মাণ ভেদে গুঁড়ো দুধের দাম বাড়ে কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৬০ টাকা। অর্থাৎ তখন প্রতি কেজি গুঁড়ো দুধের দাম দাঁড়ায় ৫শ’ ৭০ থেকে ৭শ’ দশ টাকা। অথচ গত ফেব্রম্নয়ারি থেকে বিশ্ববাজারে গুঁড়ো দুধের দাম কমতে শুরম্ন করে। এখন পর্যমত্ম বিশ্ববাজারে দাম কমেছে ৪৪ শতাংশ। আর এই সময়ে আমাদের দেশে গুঁড়ো দুধের দাম তো কমেই নি, বরং বাড়ছে প্রতিনিয়ত। দাম বৃদ্ধির এই পাগলা ঘোড়া কোথায় গিয়ে ঠেকবে কেউ জানে না। গুঁড়ো দুধ মূলত একটা আমদানিপণ্য। চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানি করা হয় বিদেশ থেকে। বছরে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিকটন গুঁড়ো দুধ আমদানি করা হয়। এছাড়া, দেশীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বছরে প্রায় সাত হাজার মেট্রিকটন গুঁড়োদুধ উৎপাদন করছে। যেহেতু আমদানিকৃত দুধই বেশি ব্যবহার করছেন এদেশের ভোক্তারা তাই এর দামও নির্ভর করছে বিদেশ থেকে কী দামে কিনে নিয়ে আসা হয়েছে, তার ওপর। অবশ্য এই কথাটি স্বাভাবিক যে, আমদানি মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই অভ্যমত্মরীণ বাজার দাম নির্ধারণ করতে হয়। কিন্তু এই নিয়মটি এখানে মোটেই কার্যকর নয়। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে, গত ছয় মাসে বিশ্ববাজারে গুuঁড়াদুধের দাম ৪৪ শতাংশ কমেছে। আর এই সময়ে আমাদের দেশে গুঁড়ো দুধের দাম এক টাকাও কমেনি, বরং বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। এক কথায় বর্তমানে বাজারে যে দামে গুঁড়ো দুধ বিক্রি হচ্ছে বিশ্ববাজারের দাম অনুযায়ী সেটা কমপÿÿ ৫০ ভাগ কমানোর কথা। ব্যবসায়ীরাও অবশ্য একটা খোঁড়াযুক্তি প্রদর্শন করেছেন। তারা বলছেন, দুধ উৎপাদনকারী দেশগুলো থেকে গুঁড়ো দুধ আমদানী করে দেশে আনতে তিন থেকে চার মাস সময় লেগে যায়। ফলে আমত্মর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশের বাজারে প্রভাব পড়তে তিন চার মাস লেগে যায়। তাদের এই যুক্তি মেনে নেয়ার কোনো কারণ নেই। দুধ আমদানি করে বাজারজাত করতে যদি তিন চার মাস সময় লেগেও যায়, তবে গত পাঁচ/ছয় মাস পূর্বে যে দুধ আমদানি হয়েছে সেটা তো বর্তমানে বাজারে বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু এই দুধের দামও তো ছয় মাস আগের দামের চেয়ে বেশি, প্রায় দ্বিগুণ। সুতরাং সমস্যা এখানে নয়। সমস্যা হচ্ছে, দুধ আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে মোটা অঙ্কের মুনাফার ধান্দায় গুঁড়ো দুধের দাম শুধু বাড়িয়েই চলছে। শুধু গুঁড়ো দুধ নয়, আমদানিনির্ভর অন্যান্য পণ্যেরও দামের কেত্রে একই অবস্থা বিরাজ করছে। আমদানিকারকদের এই আগ্রাসী আচরণ বন্ধ করতে হবে।