somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আবদুল্লাহ ০২৬
আমি অতি সাধারন একজন মানুষ। পেশাগত জীবনে মাইক্রোবায়োলজিস্ট। চাকুরীর সুবাদে এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছি। দেশ ও দেশের মানুষকে প্রতিনিয়তই অনেক অনুভব করি। আর তাই খুব তাড়াতাড়িই দেশে ফেরার আশা রাখি। অবসর সময়ে বই পড়তে, ঘুরে বেড়াতে ও প্রিয় মানুষদের সাথে সময় কাটাত

ইসলাম কি আসলেই যুদ্ধ বা তরবারীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?? কিছু পর্যালোচনা…

০৬ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলাম কি আসলেই যুদ্ধ বা তরবারীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?? একটু লক্ষ্য করুন...

অনেকের ধারনা- ইসলাম প্রচারে তলোয়ারের ও যুদ্ধ-বিগ্রহর উপরই বেশী নির্ভর করা হয়েছে। এর প্রমান হিসাবে তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবদ্দশায় সংঘটিত যুদ্ধ সমূহ ও পরবর্তীতে মুসলিম শাসকদের যুদ্ধ-বিগ্রহকে তুলে ধরার চেষ্টা করে। আসুন, কিছু পরিসংখ্যান নিয়ে আলোচনা করা যাক-

৯ম হিজরীর রজব মাসে সংঘটিত তাবুক যুদ্ধ ছিল রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশার শেষ যুদ্ধ। রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় ২৭টি গযওয়া বা যুদ্ধ ও যুদ্ধাভিযান পরিচালিত হয়েছে। তাছাড়া ছোটখাট যুদ্ধ ও নৈশ অভিযান (যার সংখ্যা ৬০টি; আরও কতগুলো যুদ্ধ ও সংঘর্ষ পর্যন্ত গড়ায়নি) পরিচালিত হয়েছে।

রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় জিহাদ হয়েছিল ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। প্রতিরক্ষা মূলক এসব যুদ্ধ ও অভিযানে, যা রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশে পাঠানো হয়েছিল, তাতে যে পরিমান রক্তপাত হয়েছিল, সমগ্র যুদ্ধের ইতিহাসে এর চেয়ে কম রক্তপাত আর খুজে পাওয়া যায়না।

শুনতে খুবই অবিশ্বাস্য শুনাবে! এসব যুদ্ধে মোট নিহতের সংখ্যা মাত্র দেড় থেকে দুই হাজারের বেশী নয়, তাও এ সংখ্যায় উভয় পক্ষের নিহতেরাই অন্তর্ভুক্ত। এর পরিনতিতে জাযীরাতুল-আরবের চারপাশে যে শান্তি ও নিরাপত্তার পরিবেশ কায়েম হয়েছিল তার কোন তুলনাই চলে না। অথচ, পুর্বে গোটা জাযীরাতুল-আরবে হত্যা, ধ্বংস, প্রতিশোধমূলক কর্মকান্ড, গৃহযুদ্ধ ও লড়াই-সংঘর্ষের ধারা বংশানুক্রমিক ভাবে অব্যাহত ছিল এবং শুধু তাইনা, ব্যাপারগুলো খুবই সাধারন ও নৈমত্তিক বিষয় ছিল।

এছাড়া, ঐসব যুদ্ধের ওপর রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যেসব নৈতিক শিক্ষা ও সহানুভূতিশীল নির্দেশ ছিল তা একে আরববাসীদের প্রতিশোধ ও ক্রোধের আগুন নেভানোর বদলে চরিত্র সংশোধনমূলক কর্মকান্ড, হেদায়েত ও কল্যান লাভের মাধ্যম বানিয়েছিল। রসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোথাও কোন বাহিনী পাঠাতেন তাখন তাদের প্রতি হেদায়েত থাকত,

“আমি তোমাদের আল্লাহকে ভয় করার এবং যেসব মুসলমান তোমাদের সাথে রয়েছে তাদের সাথে উত্তম আচরনের উপদেশ দিচ্ছি। তোমরা আল্লাহর নামে যুদ্ধরত হবে এবং আল্লাহর পথে তাদের সাথে যুদ্ধ করবে যারা আল্লাহর সাথে কুফুরী করেছে। কোন শিশু, নারী, আসহায় বৃদ্ধ কিংবা খানকাহ, গীর্জা, মঠ, মন্দিরের ধর্মীয় পুরোহিত, বিশপ-যারা কোন না কোন ধর্মের সেবায় নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছে তাদেরকে হত্যা করবে না। কোন গাছ কাটবে না, কোন গৃহ ধ্বসিয়ে নিবে না”

সূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশাতে এই সামরিক কর্মকান্ডের সফলতা যে কত দ্রুত অর্জিত হয়েছে, তা এভাবে বুঝা যেতে পারে, প্রায় দশ বছরেরও কম সময়ে, দৈনিক গড়ে জাযীরাতুল-আরবের প্রায় ২৭৪ বর্গমাইল এলাকা ইসলামের অধীনে এসেছে। মুসলমানদের জীবনহানির হিসাব নিলে দেখা যাবে, গড়পরতা মাসে একজন মানুষের অর্ধেক শাহাদত বরন করেছে। দশ বছরেরও কম সময়ে, প্রায় দশ লাখ বর্গমাইল এলাকা ইসলামের পদানত হয়েছে।

এসব যুদ্ধ ও অভিযানের তুলনা দু’দুটি বিশ্বযুদ্ধের (যার প্রথমটি ১৯১৪ সালে শুরু হয়ে ১৯১৮ সালে শেষ হয় এবং দ্বিতীয়টি ১৯৩৯ সালে শুরু হয়ে ১৯৪৫ সালে শেষ হয়) সাথে করলেই পার্থক্যটা ভাল ভাবে বুঝা যাবে। ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার তথ্যমতে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ছিল চৌষট্টি লক্ষ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ছিল সাড়ে তিন কোটি থেকে ছয় কোটির মধ্যে। অথচ, এই দু’দুটি বিশ্বযুদ্ধ মানবতা ও মানব সমাজের জন্য কি আদৌ কোনো সুফল বয়ে আনতে পেরেছিল? বিশ্বমানবতার জন্য ইসলামের যে অবদান তার সাথে কি এর আদৌ কোনো তুলনা চলে?

রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় জিহাদ হয়েছে সম্পুর্ন ইনসাফ ও ন্যায়বিচারে ভিত্তিতে যা মানবতার ইতিহাস পুর্বে কখন ধারনাও করেনি। যার প্রভাবে দলে দলে মানুষ ইসলামে প্রবেশ করেছে ও তাদের অন্তরকে ইসলামের আলো দিয়ে আলোকিত করেছে। তরবারির জোরেই যদি মানুষ ইসলাম গ্রহন করত, তবে তাদের অন্তরে ইসলামের স্থায়ী প্রভাব কিভাবে রেখাপাত করত? অন্তরে এ প্রভাবের প্রমান হল, তাদের স্বভাব-চরিত্র সম্পূর্ন নির্মল ও ইসলামী শরীয়তের শিক্ষার আলোকেই পরিপুর্নরূপে গড়ে উঠেছিল।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইসলামের ইতিহাসে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মদীনায় আসার পর। আর মদীনাবাসীদের বেশিরভাগই রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মদীনায় আসার পুর্বেই ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। তাহলে কোন তলোয়ার বা অস্ত্রের মুখে তারা মুসলিম হয়েছিল? আর মক্কাতে শুরুতেই যে কয়েক’শ লোক মুসলিম হন এবং কাফিরদের নির্মম অত্যাচারে জর্জারিত হতে থাকেন তারা কিসের ভয়ে তা সহ্য করেছিলেন?

পরবর্তীত, খোলাফায়ে রাশিদীনের ব্যাপারেও পুর্ন আস্থাসহ দাবী করা যায় যে , তারা অযৌতিকভাবে কখনো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন নি, বরং কোনও সঙ্গত কারন এবং প্রয়োজনেই কেবল যুদ্ধের আশ্রয় নিতেন। ইসলাম যুদ্ধ সংক্রান্ত বহুবিহ নীতি ও শর্ত নির্ধারন করে দিয়েছে। সেগুলির মধ্যে সংক্ষেপে আমি একটি মাত্র বিষয়ে আলোচনা করছি।

শরীয়তের এই নীতির উপর খোলাফায়ে রাশিদীন সবসময় আমল করেছেন যে, “যুদ্ধ ক্ষেত্রে যদি কোন লোক তোমাদের পিতা, পুত্র, ভাই তথা আত্নীয়কে হত্যা করে এবং দীর্ঘকাল পর্যন্ত রক্তপাত করতে থাকে এবং তারা কখনো পরাস্ত হলে তোমরা তার প্রতিশোধ নিতে চাও, তবে এই অবস্থায়ও যদি সে মুখে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” উচ্চারন করে, তাহলে তাকে তৎক্ষণাৎ মুক্ত করে দাও। এমনকি যদি তোমার পুর্ণ বিশ্বাসও হয় যে, সে প্রানভয়ে কালেমা পড়েছে অনত্রে আদৌ বিশ্বাস করেনি, তবুও সাথে সাথে তলোয়ার সরিয়ে নাও। এমনকি বিপদ মুক্ত হয়ে সে অন্য সময় তোমাদের হত্যা করবে বলে প্রবল আশংকা তাকে তবুও”।

মুসলিমরা যদি অস্ত্রবলেই মানুষকে ইসলামে দীক্ষিত করে থাকে, তবে ছয়শ বছর মুসলিমরা শাসন করার পর ভাররবর্ষে আজ একজন হিন্দুও দেখা যেত না। অতীতের কথা বাদ দেই, বর্তমানে ভারত সহ সারা বিশ্বে যে যেসব লোক আজ ইসলাম গ্রহন করছে, তারা কেন মুসলমান হয়? তাদের উপর কোন অস্ত্র বা শক্তি কাজ করে? বরং সবদিক থেকেই তো তারা মুক্ত ও স্বাধীন।

পরিশেষে এতটুকুই শুধু বলতে চাই, ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারনা আগেও ছিল এবং তা সবসময়ই থাকবে। একজন ভাল মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হবে শুরুতে নিজে সঠিক ভাবে ও সাধ্যমত ইসলামকে জানা ও সেটা মেনে চলতে থাকা। সেইসাথে ইসলামের সৌন্দর্যের সাথে অন্যকে শুধুমাত্র পরিচয় করিয়ে দেয়া। আর দিন শেষে যার যার হিসাব কিন্তু তাকেই দিতে হবে। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৫২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×