somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সেমিনার ও কিছু কথা

০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
‘বাঙলার পাঠশালা’ সংবিধান নিয়ে একটি সেমিনার আয়োজন করেছে। পোস্টারে দেখেছি। ফেসবুকে আমন্ত্রণবার্তা ও পেয়েছি। সে কারণে আরও অনেকের মতো উৎসাহী মন নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম আর সি মজুমদার মিলনায়তনে। ‘বাঙলার পাঠশালা’ কোন আদর্শ-নিরপেক্ষ সংগঠন নয়। কী তার আদর্শ তাও আমাদের একেবারে অজানা নয়। তদুপরি আমন্ত্রিত অতিথিবর্গের নামগুলো বাইরে থেকেই খানিকটা জানান দিয়ে দেয় যে সংবিধান-সংক্রান্ত আলোচনার গতি-প্রকৃতি কেমন হবে, কোন মতাদর্শকে মহিমান্বিত করে দেখানো হবে এবং আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু কী হবে। আর এটাও অত্যন্ত পরিষ্কার যে কিছু কৌতূহলী এবং জ্ঞানপিপাসু তরুণকে বক্তাদের মুখ-বলে মহিমান্বিত সেই মতাদর্শে মোটিভেটেড করতেই এতসব আয়োজন।
যাহোক, একজন দর্শক হিসেবে যেটা লক্ষ্য করেছি, সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম ইত্যাদি উঠিয়ে দিতে হবে, ধর্মকে রাজনীতির মাঠে টেনে আনা যাবেনা ইত্যাকার কথা অতিথিদের মুখ থেকে বারবার উচ্চারিত হয়েছে। কেউ নরম সুরে, কেউ গরম সুরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে সংবিধানের এসব কালিমা(?) দূর করার দাবি জানিয়েছেন। যেমন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। এক্ষেত্রে তিনি অবশ্য বিসমিল্লাহ শব্দটিও মুখে আনেন নি। সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্ট যে! সমকামীদের প্রতি সহানুভূতিশীল সারা হোসেন ও অনেক আপত্তিকর কথা বলেছেন।
অবশ্য ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম না’ জাতীয় স্লোগান বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। জনসমর্থনে সংখ্যালঘু কিছু দল এ জাতীয় স্লোগানে মাঝেমধ্যেই রাজপথ গরম করতে অভ্যস্ত।
লেখালেখির চর্চা নেই। তবুও কিছু কথা লিখতে বসেছি বিশেষতঃ অধ্যাপক আবু সাইয়িদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায়।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমি মনেকরি, বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম ইত্যাদি সংবিধানে থাকা-না থাকায় ইসলামের কিছু যায় আসেনা। কিন্তু স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে যে, এতে কী এমন পাপ রয়েছে যে এটা দূর করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে আর আবু সাইয়িদ – অনিসুজজামানদের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে? অন্যদিকে সরিয়ে দিতে পারলেই বাংলাদেশ স্বর্গে পরিণত হয়ে যাচ্ছে?
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় এ.কে. খন্দকার, আবু সাইয়িদ এবং তদের মতাদর্শের লোকগুলো Intellectual Property Law এর আওতায় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ এর পেটেন্ট নিয়ে নিয়েছে। এখন তারা যদি বলে, মূর্তিপূজা করাটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অংশ, নিজেকে মুসলিম বলা যবেনা না, বাঙালী বলে পরিচয় দিতে হবে-এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবি, আমাদেরকে তাই মেনে নিতে হবে।
আসলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে কী বুঝায়? মুষ্টিমেয় কিছু লোকের মুক্তিযুদ্ধ-কেন্দ্রিক চেতনা? নাকি সকল শ্রেণীর মুক্তিযোদ্ধার মুক্তিযুদ্ধ-কেন্দ্রিক চেতনা? মূল মুক্তিযোদ্ধা কারা ছিলো এ প্রশ্নের জবাবে সব মতাদর্শের লোকই স্বীকার করবেন যে কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র নির্বিশেষে সাধারণ জনগণই ছিলো মুক্তিযুদ্ধের প্রাণ-শক্তি। যদি সাধারণ জনগণ এ জন্যেই প্রাণবাজি রেখে যুদ্ধ করে থাকেন যে সংবিধানে বিসমিল্লাহ থাকবেনা, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবেনা তাহলে প্রশ্ন জাগে যে পঞ্চদশ সংশোধনিতে বিভিন্ন ধর্মনিরপেক্ষ মহলের দাবি উপেক্ষা করে এ দুটি জিনিস সংবিধানে রাখা হয়েছে এ যুক্তিতেই যে তা উঠিয়ে দিলে জনমত বিপক্ষে চলে যাবে। যে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমতকে ভয় করা হল মুক্তিযোদ্ধাদের মূল অংশ কি সেই জনগণের মধ্যেই পড়েনা? তদের চেতনা আর আবু সাইয়িদদের চেতনা কেন এক নয়?
আমরা জানি, বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম ইত্যাদি খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারাই মাঠের লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। দৈনিক প্রথমআলো একে একে তাদের সবার পরিচিতি ‘তোমাদের এ ঋণ শোধ হবেনা’ শিরোনামে ছাপাচ্ছে। লক্ষণীয় বিষয় যে বর্তমান ছবিতে তাদের অধিকাংশকেই দাড়ি-টুপি পরিহিত দেখা গেছে। তারা কোন চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন?
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য যে অল্প ক‘জন মুক্তিযোদ্ধা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন বঙ্গবীর কদের সিদ্দিকী তাদের মধ্যে অন্যতম। তার নেতৃত্বাধীন কাদেরিয়া বাহিনী সেই সময়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ-টাঙাইলে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলো। কিন্তু তিনিও তো প্রবলভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসি। জীবনে একবারও এ দাবি করেননি যে সেকুলারিজম প্রতিষ্ঠা করতে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। বরং তার লেখা কলামগুলো থেকে এটাই উপলব্ধি হয় যে তিনি চান দেশে ইসলামি মূল্যবোধ বিরাজ করুক। আমাদের পাড়া-পড়শী, আত্মীয়-স্বজনের মধ্যেও তো মুক্তিযোদ্ধা আছেন তাদের মুখেওতো কখনও সেকুলারিজমের গীত গাইতে শুনিনি, বিসমিল্লাহর বিরুদ্ধে বলতে শুনিনি।
এতকিছুর পরও অধ্যাপক আবু সাইয়িদরা নিজস্ব মতবাদকে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সকল মুক্তিযোদ্ধার চেতনার ট্রেডমার্ক বানিয়ে উদ্ভট এবং অদ্ভুত সব দাবি তুলছেন এবং একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় শিক্ষিত তরুণদের মগজ-ধোলাই করছেন। জনসাধারণ কর্তৃক যে তারা প্রত্যাখ্যাত সেটা বলাইবাহুল্য।
এছাড়াও অনেক অতিথি ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা, অপব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং আপত্তিজনক কথা বলেছেন যার প্রতিবাদ করা জরুরী। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে লিখব ইনশাআল্লাহ। আজ এ পর্যন্তই। আল্লাহ হাফিজ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×