somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সম্ভাবনাময় খেলা দাবার বেহাল দশা

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই বলি আমার এই লেখার উদ্দেশ্য দাবার কঙ্কালদশা জনসমক্ষে প্রকাশ করে সাধারণ মানুষের সহানুভূতি অর্জন নয়, বরং সম্ভাবনাময় এই খেলার ভবিষ্যৎ যে সরকার, মিডিয়া ও আমাদের অবহেলার কারণে ধুলায় লুটাতে বসেছে সেটাই তুলে ধরা। প্রথমেই নিজেদের অবহেলার কথাটা বলি।

আমরা অনেকেই দাবা সম্পর্কে কিছুই জানি না। দাবা বিষয়ে কথা উঠলে শুধুমাত্র দুইটা নাম সর্বোচ্চ বলতে পারে অনেকে গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদ এবং মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার রাণী হামিদ। নিয়াজ ভাই যে এশিয়ার সরবপ্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার এই তথ্যও অনেকের অজানা। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কতজন গ্র্যান্ডমাস্টার এই প্রশ্নের উত্তরে শতকরা নব্বই জনই সঠিক উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়। যাই হোক উত্তরটা হল ৫ জন - নিয়াজ মোর্শেদ,জিয়াউর রহমান,রিফাত বিন সাত্তার, আব্দুল্লাহ আল রাকিব, এনামুল হোসেন রাজিব। এই লেখার মাধ্যমেও যদি নতুন কয়েকজন বাংলাদেশ দাবার এই কর্ণধারদের চিনতে পারেন তবে ক্ষতি কি!! বাংলাদেশে দাবা যে শুধুই শখ এর খেলা তা না বললেও চলে। ঘরোয়া বা চায়ের দোকানেই এই খেলার গণ্ডি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। তা হবেই বা না কেন? যে খেলায় প্রতিযোগিতা সবই ঢাকাকেন্দ্রিক ফেডারেশন এ সীমাবদ্ধ,স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে তেমন কোন প্রতিযোগিতা হয় না বললেই চলে, সবচেয়ে বড় কথা যে খেলায় খুব ভাল করলেও উপার্জনের তেমন সুযোগ নেই সেই খেলা মানুষ খেলবে কেন? তাই একতরফা সাধারণ মানুষকে আমি দোষ দিই না।

এবার আসি মিডিয়ার কথায় । সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের দাবার দুরবস্থার পিছনে মিডিয়ার অনীহা অনেকাংশে দায়ী। প্রতিদিন পত্রিকা খুলে অধীর আগ্রহে খুঁজি দাবার কোন খবর আছে কি না? বছরে সব মিলিয়ে ৫০ দিন মত দাবার খবর পত্রিকায় ছাপা হয় সেটাও ইঞ্চিমাত্র জায়গা নিয়ে ছোট্ট পরিসরে। পাশেই শোভা পায় বৃহৎ আকৃতির বিজ্ঞাপন । আমার কথা হল, বাংলাদেশের দাবার দুরবস্থা থাকতে পারে তবে সাফল্যও কিন্তু কম নয় । নিয়াজ ভাই থেকে শুরু, পাঁচজন গ্র্যান্ডমাস্টার কিন্তু কিছুদিন আগেও খুব বেশি দেশে ছিল না। আমাদের দুইজন আন্তর্জাতিক মাস্টার আবু সুফিয়ান সাকিল ও মিনহাজউদ্দিন আহমেদ সাগরও গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার পথেই এগিয়ে চলেছেন। আছেন আরও কয়েকজন প্রতিভাবান তরুণ ফিদেমাস্টার। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত একসময় আমাদের চেয়ে দাবায় পিছনে ছিল। আজ তারা বহুদুর এগিয়ে গিয়েছে আমাদের চেয়ে। তাদের দেশে এখন ৩১ জন গ্র্যান্ডমাস্টার ও ৬৮ জন আন্তর্জাতিক মাস্টার রয়েছে। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আনন্দও ভারতের নাগরিক। তবে তাদেরকে যে আমরা পিছনে ফেলতে পারি তা আমরা বিগত বছরেই দেখিয়েছি। বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দল ভারতকে (৩৪ তম) পিছনে ফেলে গত বছর ৩৩ তম হয়েছে। আমাদের আফসোসটা এখানেই যে এত বড় সাফল্য আমাদের দেশের পত্রিকা ও খবরে স্থান পায় না। দাবা খেলা নিয়ে মিডিয়ার এই অনীহা সম্পূর্ণ যুক্তিহীন আমার কাছে।


দাবা যে মিডিয়াতে কতখানি অবহেলিত তা একটা ছোট উদাহরণ থেকেই পরিষ্কার হতে পারে। গত বছর ফেডারেশন এ বেশ বড়সড় একটা রেটিং টুর্নামেন্ট চলছিল । আমিও খেলছিলাম এই টুর্নামেন্ট এ । একদিন সকালে খুব আগ্রহ নিয়ে পেপার খুলে টুর্নামেন্টটার কোন খবর ছাপা হয়েছে কিনা দেখছিলাম । কিন্তু বিরক্তির চরম সীমায় পৌছালাম যখন দেখলাম অর্ধপাতা জুড়ে দুই শখের দাবাড়ু(!!!) সাকিব ও মাশরাফি এর অনুশীলন এর ফাক এ দাবা খেলার ছবি ছাপা হয়েছে অথচ আন্তর্জাতিক মাস্টার, ফিদেমাস্টাররা জাতীয় একটা টুর্নামেন্ট খেলছেন তার কোন খবরই নেই। যারা দাবার গুটিই ঠিকভাবে বসাতে পারে না বোর্ড এ (ওইদিনের ছবিতে সাকিব ও মাশরাফি দুইজনই ভুলভাবে গুটি সাজিয়েছিল) তাদের ছবি অতি উৎসাহের সহিত পেপারে ছাপা হয় আর পেশাদার দাবাড়ুদের ছবি পেপারে ঠাই হয় না। খুবই দুঃখজনক , এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশে আর কোন ক্ষুদে প্রতিভাবান দাবাড়ু দাবাকে প্রিয় খেলা হিসেবে বেছে নেবে না।

সরকারের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই বরং অনুযোগ আছে। বাংলাদেশের দাবা কিন্তু সাফল্যের দিক দিয়ে ক্রিকেট ফুটবল
এর পরেই স্থান পাওয়ার যোগ্য। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোতেও বাংলাদেশের দাবাড়ুরা বরাবরই ভাল ফল করে আসছেন। গত বছরই গ্র্যান্ডমাস্টার রাজিব ভারতের ভাইজাগ দাবায় অনেকগুলো দেশের গ্র্যান্ডমাস্টারদের পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হলেন। এমন সাফল্য এটাই প্রথম নয়। বাংলাদেশের দাবাড়ুদের এই প্রতিভা স্বভাবসিদ্ধ । তবে এই সম্ভাবনাময় খেলা কেন সরকার ও শীর্ষ মহলের মনোযোগের বাইরে থাকবে চিরকাল! সবচেয়ে বড় সমস্যা হল সরকার যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয় দাবা ফেডারেশন এর জন্য তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অনেক কম। এই কারণেই অর্থাভাবে দেশে জি এম টুর্নামেন্ট হয় না, নতুন দাবাড়ু বের করে আনার জন্য স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে বড় কোন টুর্নামেন্ট হয় না এবং বিদেশি কোচ এর অভাবে দেশের শীর্ষ খেলোয়াড়দের রেটিং আর বেশিদুর আগায় না। সরকার যদি দাবাড়ুদের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আর সম্মান নিশ্চিত করতে পারত তবে দাবাড়ুরা অর্থাভাবে দাবা খেলা ছেড়ে দিত না, স্পন্সরের অভাবে টুর্নামেন্ট গুলো আটকে থাকত না ।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশের দাবা বর্তমানে একটা দুষ্টচক্রের মধ্যে আটকে গেছে। মুজতবা আলী যেমন "বই কেনা" প্রবন্ধে বলেছিলেন "বইয়ের দাম বেশি তাই মানুষ বই কেনে না তেমনি পাঠক কম তাই প্রকাশক বই এর দাম কমান না" তেমনি খুবই সহজ কথা- দাবায় টাকা নেই তাই মানুষ দাবা খেলতে চায় না , আর খেলোয়াড় ও জনপ্রিয়তা কম তাই স্পন্সররা দাবায় টাকা বিনিয়োগ করতে চায় না। এই চক্র থেকে বের হবার উপায় আমাদের নিজেদেরই বের করতে হবে। টাকা না থাকলেও আমাদের প্রিয় খেলা দাবাকে ভালবেসে খেলে যেতে হবে। ভাল খেললে একদিন আপনা আপনি টাকা আসবে কারণ আমরা ভাল খেললেই স্পন্সররা দাবার প্রতি শীঘ্রই আকৃষ্ট হবে । তেমনি সরকার ও মিডিয়ার দাবা এর প্রতি সুদৃষ্টি ফিরে আসবে এই আশা আমরা করতেই পারি কারণ ভাল কিছু আশা করতে আসলেই কোন ক্ষতি নেই ।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×