somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধুর ডায়েরী থেকে-৪ঃ সে যায় ধীরে

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“ভিক্ষুকের হাতে মার খেলেন পথচারী”

অনেকক্ষণ ধরে খবরটার দিকে তাকিয়ে আছি। মানুষের সমস্যা কি? শিরোনাম পড়েই বুঝতে পারছি যে শিরোনামে যা বলা হয়েছে বাস্তবে ঘটনা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কিছুদিন আগে এক অনলাইন পত্রিকায় দেখলাম - "মাইক্রোসফট এর চাকরী ছেড়ে দিয়েছেন শাকিব খান"। ভিতরের কাহিনি ছিল - শাকিব খানের নতুন এক ছবি তে দেখা যায় যে সে মাইক্রোসফট এর চাকরী ছেড়ে দেশে ফিরে এসেছেন। সাধারনত এই ধরনের সংবাদ পড়ার কোন আগ্রহ পাইনা। কিন্তু এইবার এর কাহিনী একটু ভিন্ন মনে হচ্ছে। একটু একটু আগ্রহ পাচ্ছি। মন তো এমন ই। একবার বলে এদিকে যা আরেকবার বলে অইদিকে যা। আমি অইদিকে গেলাম। পড়ে ফেললাম।

“......... ১০০ টাকা ভিক্ষা দেয়ায় ভিক্ষুক আবেগে কেঁদে ফেলেছেন। এরপর বিরাট বড় চিৎকার দিয়ে আল্লাহকে ডেকে পথচারীর মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করতে লাগলেন। আর তাই দূর থেকে মনে হয়েছিল যেন তিনি পথচারীকে মারছেন। আসলে তা ছিল দোয়া। ”

পেপার এম্নিতেই পড়া হয় না। আজাইরা খবরে ভর্তি। কাজের কোন খবর নাই। আজকে কেন যে হাতে নিলাম। এমন সময় আম্মা আসলো।

“বল। কি বলবি?”

“তোমারে তো কোন সাত সকালে ডাকলাম। এতক্ষনে আসলা?? এর মধ্যে এক বেডায় ফকিরের কাছে মাইর খাইয়া ভুত!”

“কি কস? তাড়াতাড়ি ক? রান্না আছে। ”

“আচ্ছা শুন মা। আমার এক মেয়েরে ভালো লাগসে। সব দিক থেকে ঠিক ঠাক। আসা করি আব্বা মাইনা নিবে”

“মেয়ে কি করে?”

“ঢাকা ভার্সিটি থেকে B.B.A M.B.A complete করসে। এখন কিছু করে না আপাতত। বাড়ি চাদপুর। এখানে মিরপুরে থাকে। বড় ভাই এর মিরপুরে কাপড়ের দোকান আছে।”
“আর বাবা কি করে?”

“বাবা আলাদা থাকে। মেয়ে তার মা আর ভাই এর সাথে আলাদা থাকে।”

“অমা। এইডা কেমন কথা। বাবা আলাদা থাকলে ক্যাম্নে হবে। এই relation তো তোমার আব্বা মাইনা নিবে না।”

“আব্বারে মানানের কাজ তো তোমার। আমার না। তুমি আব্বা রে জানাও।”

আম্মা আর কিছু বলল না। দেখি বলে সে রান্না করতে চলে গেল। আমি জানি কি হবে। আব্বা আসলেই মানবে না। আম্মা
নিজেও মানাতে পারবে না। কিন্তু তারপরো মন মাঝে মাঝে অনেক কিছু মানতে চায় না। আমি বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। কারন বাসায় আব্বা আছে। আম্মা রান্নার এক ফাঁকে আব্বার কাছে এসে ঘাম মুছতে মুছতে আতঙ্কের সুরে কথাটা বলবে। আব্বাও আতঙ্কিত হয়ে যাবে। সেই ঘটনা দেখতে ইচ্ছে করছে না। আসলে আমার বয়সী ছেলেদের একটা সমস্যা আছে। আমরা সত্যের মুখোমুখি হইতে ভয় পাই। আমাদের আগের generation এর এই সমস্যা ছিল না। আমি আমার এই generation নিয়া চিন্তিত।
-----------------------------------------------------------------------



আমেরিকান এম্বেসির সামনে বিশাল বড় লাইন। লোকমান সাহেব অনেক্ষন ধরে এই লাইনের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনার অবাক হবার ক্ষমতা অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু তারপরো মাঝে মাঝে উনি অবাক হন। এখন অবাক হচ্ছেন এই লাইন দেখে। কিছু মানুষের জন্ম থেকেই স্বপ্ন থাকে আমেরিকা যাওয়ার। যেন সেটাই final destination. না যেতে পারলে এই মানব জীবন্টাই বৃথা। এই ধরনের স্বপ্ন দ্রষ্টা মানুষগুলাকে একটা প্যাকেজ এর মধ্যে দেখতে পারাটা বিরাট ব্যাপার। লোকমান সাহেবের ধারনা মানব জাতি তিন জায়গা নিয়ে বেশি obsessed. জান্নাত জাহান্নাম আর আমেরিকা।উনি নিজেও বেশ কিছু বছর বিদেশ এ থেকে এসেছেন। উনার বিদেশ থেকে উপার্জন হল একটা ধারনা যে – “দূর থেকে ঘু রে সোনা মনে হয়।”

“এই যে ! এইখানে কি করেন??” কর্কশ গলায় এক পুলিশ চেঁচিয়ে উঠলো।

লোকমান সাহেব হটাত যেন বাস্তব জগতে ফিরে এলেন। থতমত ভাব কাটিয়ে নিয়ে বললেন – “স্বপ্ন দেখি।”

পুলিশ এর সন্দেহের দৃষ্টি এবার প্রবল হল। সে আরো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বলল –

“কি দেখেন???”

“না আসলে এই যে দেখেন এত গুলা মানুষ সেই ভোর বেলা থেকে লাইনে দাড়িয়ে আছে।কিসের আসায়? আমেরিকা যাবার আসায়। কত বছরের লালিত স্বপ্ন তাদেরকে এখান পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। সবাই স্বপ্নে বিভোর। আমি তাদের স্বপ্ন কে দেখছি। আচ্ছা আপনার কখনো আমেরিকা যেতে ইচ্ছে করে না?”

এবার পুলিশ প্যারা খাইয়া গেল। যদিও প্যারা খাওয়ার কিছু নাই। এই ধরনের পাগল ছাগল দেইখা সে নিয়মিত অভ্যস্ত। সে বলল –

“এখান থেকে যান । এখানে ভিড় করবেন না।”

এরপর আর অই জায়গায় থাকার কোন মানে নাই। লোকমান সাহেব চইলা আসলেন। আসলে এই কাজটা উনি প্রায়ই করেন। বিভিন্ন জায়গায় দাড়িয়ে চিন্তা করেন – “Why?” কোন উত্তর খুজে পাননা। দীর্ঘদিন ধরে উনি পরিবারের বাইরে থাকেন। one fine morning ঘুম থেকে উঠার পড় উনার মনে হল – “কেন এই সংসার? কি সেই কারন। ” উনি সেদিন কোন উত্তর খুজে পাননাই। নাস্তার টেবিলে চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলে ফেললেন – “বুঝলা রেহানা। আমার এই ঘর সংসার আর ভালো লাগছে না। আমি ভাবছি এখন থেকে আলাদা থাকবো। তোমার মতামত আমার জানার দরকার নাই। এটাই আমার শেষ কথা। তোমার ছেলে মেয়েদের বলে দিয় এইটা নিয়া যেন কাহিনি না করে।”

রেহানা বেগম কিছুই বললেন না। চুপ করে খালি চায়ের কাপ নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলেন। কিছু মানুষের কষ্ট প্রকাশের ভাষা হল নীরবতা।

লোকমান সাহেবের মনে হল অনেক বড় কিছু মাথার উপর থেকে সরে গেছে। হটাত করে মনে হল তার ছেলে মেয়েদের পাশে শেষ সময়টা থাকা দরকার। তার বড় ছেলে অনেক দিন ধরে চেষ্টা করছে মিরপুরে একটা কাপড়ের দোকান দেয়ার। টাকা পয়সার ঝামেলা। কিন্তু সে বাবার টাকা নিবে না। নিজেই করতে চাচ্ছে যেহেতু করুক। আর ছোট মেয়ে কিছুদিন পরে ঢাকা ভার্সিটি থেকে B.B.A complete করবে। বিয়ে সাদির সময় চলে এসেছে । এই মুহূর্তে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত। নাহ। পিছপা হওয়া যাবেনা। মায়া তুচ্ছ ব্যাপার। পৃথিবীতে বাচতে হলে প্রতি পদে পদে মায়ার বাধন ছিন্ন করতে হয়।

-------------------------------------------------------------------------


আমি লাকির সামনে বসে আছি । একটু একটু করে লাচ্ছি তে চুমুক দিচ্ছি। সে লাচ্ছির গ্লাসের দিকে তাকিয়ে পাইপ নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে বলল –

“বাসায় কি বলল?”

“হবে না।” আমি সরল স্বাভাবিক ভাবেই বললাম। ভনিতা ভালো লাগে না। কিন্তু মাঝে মাঝে দরকার। ভালোবাসায় পড়ার মুহূর্তে ভনিতা মানায়। কিন্তু মন ভাঙ্গার মুহূর্তে না।
“কেন?”

“তোমার পরিবারের ব্যাপারটা আব্বা ভালো চোখে দেখে নাই। এক কথাতেই না করে দিয়েছে।”

“তুমি কি বললা?”

“আমি কিছু বলিনাই। বলে কিছু হবে না। আব্বা কোন ভাবেই রাজি হবে না।”
লাকি চুপ করে এবার লাচ্ছিতে চুমুক দিল। সে মনে হয় এধরনের কিছু একটা আশা করেছিল। “তাহলে আমাদের কি হবে?।“

“যেহেতু কিছু হবে না। কাজেই কথা বার্তা বন্ধ করে দেয়াই ভালো” – আমি বললাম।
“আচ্ছা।” এই বলে সে ধীরে সুস্থে লাচ্ছি শেষ করলো। এরপর উঠে আমার গালে হাত রেখে বলল –“ভাল থেক।” বলেই চলে গেল। আমি পিছন থেকে তাকিয়ে রইলাম । এই তাকিয়ে থাকাতেও কষ্ট। কিছু করতে না পারার যন্ত্রনা যে কতটুকু তা আমি লাকিকে বুঝাতে পারিনাই। শুনেছি মেয়েরা অনবেক কিছু বুঝে। সে কি বুঝতে পেরেছে? পারার কথা না।

--------------------------------------------------------------------------


লাকিদের পরিবারের সবাই মিরপুর ১ এ তার বড় মামার বাসায় জড় হয়েছে। কেউ বাদ নাই। তার আব্বাকে খবর দিয়ে আনা হয়েছে। সবাই এক সাথে বসে আছে। রেহানা বসেছেন লোকমান সাহেবের বরাবর। কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছেন না। কেউ কোন কথাও বলছেন না। থম থমে অবস্থা।

প্রথমে নীরবতা ভাঙলেন লাকির বড় মামা।

“আমাদের লাকি মা রে তো বিয়া সাদি দেয়ার দরকার। বয়স হয়ে গেছে। আপনি কি বলেন লোকমান ভাই?”

“আমি কি বলব। আপনারা যা ভালো মনে করেন তাই করেন। ”

“আরে আপনি হইলেন মাইয়ার বাপ। আপনি ই না বলবেন। আমরা কি বলবো। যেই ঝামেলা পাকাইয়া রাখসেন এখন তো ভালো জায়গায় বিয়াও দেয়া যাবেনা। ”

সবাই আবার চুপ। এবার লোকমান সাহেব নিজে থেকেই বললেন – “কি করতে হবে বলেন?”

“একটা ভালো ছেলে ছিল। সব কিছুই ঠিক ঠাক। কিন্তু আপনাদের separation এর কথা শুইনা রাজি হয় নাই। এরকম আরো ভালো ছেলে আসবে যাবে। এইভাবে তো মেয়ের জীবন টা নষ্ট হইয়া যাইতেসে। নিজেদের জন্য না হোক ছেলে মেয়ের জীবনের কথা চিন্তা কইরা আপ্নারা এক সাথে হইয়া যান। এদিকে আপনার মাইয়া তো আরেক সুর তুইলা বইসা রইসে যে আপ্নারা এক না হইলে সে বিয়া করবো না।“

লোকমান সাহেব কি যেন ভাবলেন। হটাত করে যেন বোমা ফাটালেন।

“ঠিক আছে আমি এক সাথে থাকতে চাই। আমার আর কোন আপত্তি নাই। আপ্নারা লাকিরে একটা ভালো জায়গায় বিয়া দেন।”

এই ঘটনার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। আবার আরেকটা থম্থমে পরিবেশ ধারন করলো। কিন্তু সবার মাঝেই উত্তেজনা। এবার লাকির বড় মামি পরিবেশ গরম করলেন। “অই তুমি যাও মিষ্টি নিয়া আস। এই রকম মুহূর্তে মিষ্টি না খাওয়া অন্যায়। দোউর।”

---------------------------------------------------------------------------


আমি আর লাকি আবারো বসে আছি। তবে এবার ফেইসবুকে।

“আব্বা আম্মার ঝামেলা ঠিক হইয়া গেসে। ”
“good”
“কি good?”
“মানে ভালো।”
“তোমার বাসায় বল”
“কি বলবো?”
“কি বলবো মানে? আমাদের কথা।”
“আব্বা মানবে না।”
“কেন?????”
“কারন একবার যেহেতু আব্বা না কইরা দিসে আব্বা হ্যা আর বলবে না। এই জায়গায়।”
“কিন্তু এখন তো সব ঠিক ঠাক। এখন না মানার কি আছে?”
“আগে তো ঠিক ছিল না।”
“আচ্ছা তুমি কি আমারে সত্যিই ভালোবাসচ নাকি এমনি এমনি!!”
Silence
“ u there?”
“হুম”
“চুপ কেন? কথা বল”
“যা বলার বলে দিয়েছি।”
“তাইলে এটাই তোমার শেষ কথা?”
“হুম”

এই “হুম” বলার পড় মাঝে ৬ মাস কেটে যায়। আমি নিয়মিত লাকির profile এ ঢুকি। ওর আপডেট দেখি। ওর চাপা কষ্ট দেখি। কিন্তু আমার কিছুই করার থাকেনা। আমার বাবা কখনই মেনে নিবে না। এটা আমি কাউকে বুঝাতে পারবোনা। মানুষ তার ব্যাক্তিগত ego তে এতটাই বশবর্তী হয়ে আছে যে সেখান থেকে তার যেমন মুক্তি নাই তার আশেপাশের মানুষের অ মুক্তি নাই।

হটাত করে একদিন আম্মু বলে -

“আচ্ছা তোমার তো এখন বিয়ার বয়স হইসে। মেয়ে দেখ।”

আমি বললাম -“ এখন মেয়ে দেখবো? আমার পছন্দ করা মেয়ে তোমাদের পছন্দ হবে??”

“না হওয়ার কি আছে। ভালো বংশে দেখবা।”

আমি বললাম – “আমার একটা মেয়ে পছন্দ আছে।”

“কি করে?”

“ঢাকা ভার্সিটি থেকে B.B.A M.B.A complete করসে। এখন কিছু করে না আপাতত। বাড়ি চাদপুর। এখানে মিরপুরে থাকে। বড় ভাই এর মিরপুরে কাপড়ের দোকান আছে।”
“আর বাবা কি করে?”

“বাবা অনেক দিন বাইরে ছিল। এখন কিছু করে না। বড় ভাই সংসার দেখে।”

আম্মা আমার দিকে ক্যামন করে তাকালো। কিন্তু কিছু বলল না।

“ঠিক আছে তুমি মেয়ের খোঁজ খবর নাও। ভালো হলে আমরা কথা বলতে যাব। এমনিতে তুমি কি মেয়ে দেখেছ?”

“হুম। দেখেছি। আমার পছন্দ হয়েছে।”

“ঠিক আছে আমাকে জানাও”

আমার একটা লাফ দিতে মনে চাইসিল। কিন্তু নিজেরে সামলালাম। তীরে এসে তরী ডুবানোর কোন মানে হয় না। লাকিকে কিভাবে জানাবো বুঝতে পারছি না। ওর অভিমান ভাঙ্গাতে হবে। ওর ভাঙ্গা মন আবার জোড়া লাগাতে হবে। জীবনে এই প্রথম বারের মত মনে হচ্ছে অভিমান ব্যাপারটাই প্রেম।

---------------------------------------------------------------------------


আমি আর লাকি আবারো ফেইসবুকে। সে আমার সাথে কখনোই add করা ছিল না। কিন্তু তারপরো মাঝে মাঝে chat messenger এ সে কিভাবে যেন এসে যায়। ফেইসবুকের কোন bug হবে মনে হয়।

এবার আমিই শুরু করলাম।

“কি খবর? ক্যামন আছ?”
“ভালো। তুমি?”
“ভালো। শুভ পহেলা ফাল্গুন”
“তোমাকেও শুভেচ্ছা।”

এরপর অনেকক্ষণ কথা হয়না। এরপর আমি ভনিতা না করে লেখা শুরু করলাম –

“আমার বাসায় রাজি হয়েছে। চল কাল কে দেখা করি। আর কোন বাধা নাই। এই ভালোবাসা দিবস তো আমাদের জীবনে অমর হইয়া থাকবে। তার আগে তোমার একটা bio data দাও। বাসায় দেই” লিখে send করতে যাব এমন সময় সে লিখলো –

“তোমাকে একটা mail করেছি দেখ।”

আমি আর send করলাম না। Copy করে রাখলাম। mail খুললাম। subject এ লেখা –

“Bio Data”. আমি চিন্তা করলাম – “কিরে কি হইল। আমি তো message send করিনাই। তাইলে ক্যাম্নে কি?”
Bio data নামাইলাম। খুলে দেখি এক ছেলের bio data. দেখতে অনেক সুন্দর। জিজ্ঞেস করলাম কে?
“আমার কলিগের friend. আমার জন্য proposal এনেছে। ব্লেযার পড়া ছেলেটা।”
“হুম অনেক সুন্দর। তোমার সাথে মানাবে। রাজি হইয়া যাও।”

আমি লাকিরে যতটুকু চিনি সে final কোন কিছু না হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাকে bio data দেখানোর কথা না। আমি আর আমার কথাটা send করলাম না। বললাম –

“মানা কইরো না।”

“আচ্ছা তুমি আমাকে এত দিন পরে কেন knock দিলা?”

“ভুলে। বলতে পারো এইটা ফেইসবুকের একটা বাগ।”

“কি বাগ?”

“তুমি তো মার সাথে Add করা নাই। তাছাড়া আমার chat all time off করা থাকে। কি মনে করে আজকে খুলে দেখি সেইখানে তুমি অনলাইনে। এই জন্য ভাব্লাম একটু খোঁজ খবর নেই। এই আর কি। ”

“মানে কি? আমি তোমার জীবনের বাগ??? ”

“হুম। যাহোক আমি যাই ভালো থেক। আর অই ছেলেকে মেনে নাও। অনেক মানাবে তোমার সাথে। Take care”
----------------------------------------------------------------------

রাতে ভালোই ঘুম হল। শেষ রাতের দিকে লাকিকে স্বপ্নে দেখলাম। দেখলাম সে স্কুলের মেয়েদের মত দুই বেনী করে আমার সামনে দাড়িয়ে আছে। আমার গালে হাত দিয়ে বলছে “ভালো থেক”।

তার থেকে বেশ কিছু দূরে আরেকটি ছেলে দাড়িয়ে। তাকে ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। তারপরো আমি তাকে চিনে ফেলেছি। এর নাম মাসুদ।এই ছেলে premier bank এ চাকরী করে। তার bio data আমার কাছে আছে।

লাকি ধীরে ধীরে চলে যেতে লাগলো। একবার পিছন ফিরে তাকাতে গিয়েও তাকালো না। কিছুদুর গিয়েই ডানে মোর নিল। এবার এক অদ্ভুত জিনিস অনুভব করলাম। আমিও লাকির সাথে সাথে parallel ই যাচ্ছি। আমি তাকে দেখতে পাচ্ছি কিন্তু সে আমাকে দেখতে পাচ্ছে না। সে বার বার পিছন ফিরে তাকাচ্ছে যে কেউ তার কাছে ছুটে আসবে। এদিকে মাসুদ এর কাছ থেকে তার দূরত্ব কমে যাচ্ছে। শেষ বার মাসুদের বুকে মাথা রাখার আগ পর্যন্ত লাকি শেষ বারের মত এক বার পিছন ফিরে তাকালো। আমি সব ই দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আমি যেই জগত থেকে ওকে দেখছি সেই জগত থেকে খালি দেখা যায় কিছু করার ক্ষমতা নাই। শেষ বারের মত আমিও দেখে নিলাম মাসুদ তাকে পরম মমতা দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো। মেয়েদের চিরকালের আকাঙ্ক্ষা থাকে এমন মমতা মাখা প্রেম। আমি জেগে উঠলাম এক শূন্য জগত থেকে আরেক শূন্য জগতে। কোথাও কেউ নেই।

লিখেছেনঃ প্রকৌশলী মোঃ আবদুল্লাহ আল মামসাদ সরকার
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৪৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×