somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোটাসংস্কার আন্দোলন ২০১৮ ভাবনা:-২

১১ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিচিত্র এই দেশ। বিচিত্র আমরা।

জটিল একটা উদাহরণ দিয়ে শুরু করি।

চট্টগ্রামের হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ। এইচএসসি শিক্ষার্থীদের পছন্দের ১ম সারির কয়েকটি কলেজের একটি।

২০০৪ সালের কথা (খেয়াল কইরা, তখন কিন্তু বিম্পি আমল)। এক ভদ্রলোক তার জ্যেষ্ঠ পুত্রকে আগের বছরের চেষ্টায় ভালো (এবং সস্তা) কলেজে ভর্তি করাতে পারেননি। রেজাল্টেও মেধাতালিকায় স্থান মিলছিল না। এই বছরে তিনি ডেসপারেশনে এসে এক অদ্ভুত এবং লজ্জাজনক সিদ্ধান্ত নিলেন। আর, এই সিদ্ধান্ত নিতে তাকে উদ্বুদ্ধ করল তারই সুযোগ্য পুত্র!

মহসিন কলেজে এইচএসসি শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রেও দেশের অন্যান্য লক্ষ লক্ষ ভর্তি/নিয়োগের মতই "মুক্তিযোদ্ধা কোটা" অনুসরণ করা হয়। এই loop-hole এর সদব্যবহার করার জন্য পরিচিত এক মুক্তিযোদ্ধার সাহায্য নিলেন ওই ভদ্রলোক, যার নাম তার নিজের নামের সাথে প্রায়ই মিলে যায়। নিজের ছেলের ভর্তির আবেদন ফরমে "পিতার নাম"-এর জায়গায় সেই মুক্তিযোদ্ধার নাম বসিয়ে দিলেন। সাথে একটি এফিডেভিট, আর ওই মুক্তিযোদ্ধার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি জমা দিলেন।

এভাবে অবলীলায়, সেই পিতা তার পত্নীকে, এবং সেই ছেলে তার মাতাকে বীরাংগনা বানিয়ে দিলেন।

এভাবেই দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, আঞ্চলিকতা, সুযোগের অপব্যবহার, ইত্যাদি চলে আসছে এই দেশে বছরের পর বছর। কোন ব্যক্তি, দল, বা গোষ্ঠী এসবের জন্য দায়ী নয়। দৈবভাবেই পুরো বাংলাদেশ আজ "মগের মুল্লুক"! একদম অরাজনৈতিক কোন পাবলিকও যদি কোন অনিয়মের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে, তবে তাকে সরকারবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী, অমুক দলবিরোধী উপাধি দিয়ে গলার টুঁটি চিপে ধরা হয়। "জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস"-কথাটি কি তাহলে পাগলের প্রলাপ?!

যার যে সুবিধা পাওয়ার কথা, সে যদি সে সুবিধা না পায় বা না চায়, তখন ওই সুবিধা নিয়ে ব্যবসা শুরু হয়, ধান্দাবাজি শুরু হয়।

কোটার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ও গুপ্তঘাতক হচ্ছে "জেলা কোটা"! এই সরকার দাবীদাওয়া বিচার-বিশ্লেষণে ১ মাস সময় চেয়েছে। অন্যদিকে দাবী উত্থাপনকারীরা সময় বেঁধে দিয়েছে ১ সপ্তাহ। কিন্তু, যতদিন না "মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" কিংবা "নারীবাদের সেন্টিমেন্ট" নিয়ে ধান্দাবাজির চিন্তা দেশের মানুষের মগজ থেকে বিদায় না নিবে, ততদিন কোন সরকার/দলই এই অযৌক্তিক সিস্টেম সংস্কার করতে পারবে না। ১ যুগেও সম্ভব না, ১ শতাব্দীতেও না।

মাঝে একটু ভিসির বাড়িতে "দুর্বৃত্ত"-দের হামলা প্রসংগে বলি। "দুর্বৃত্ত" শব্দটি ইনভার্টেড কমার ভিতরে কেন রেখেছি, একটু পরে বলব।
ভিসির পদমর্যাদা যতদূর জানি মন্ত্রী/সিনিয়র সচিবদের কাছাকাছি। অথচ, ত্রিশ মিনিটের বেশি সময় ধরে সেই ভিআইপি বাসার আশেপাশে একটাও "খেয়ে ফেলব" বাহিনীর সদস্য দেখা গেল না। এতেই প্রমাণিত হয়, এই বিশেষ প্যাকেজ নাটকের কুশীলব কারা। অতীতেও দেখা গিয়েছে, ছাত্রলীগ/যুবলীগ যেখানে মারমুখো সিনেমার শোডাউন/শুটিং করছে, জনগণের করের টাকায় পালিত পুলিশেরা সেখানে হাতের চুড়ি গুণছেন।

গেল রাতেই রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট হ্যাক করা হয়েছে। চ্যানেলগুলির স্ক্রলে দেখানো হচ্ছে, "করেছে দুর্বৃত্তরা। কোটাবিরোধী স্লোগান ঝুলিয়ে দিয়েছে!" এখানে একই সাথে ভীতু-দালাল চ্যানেলগুলি দুইটি ভুল করেছে। প্রথমত, অন্যায় প্রথার প্রতিবাদকারীদের অপবাদ দেওয়া। দ্বিতীয়ত, "মেধাবী" ও "দেশপ্রেমিক" হ্যাকারদের অপমান করা। এই হ্যাকাররা আর যাই করুক, জাতীয় রিজার্ভ চুরি করেনি। বরং, গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটগুলির দুর্বলতা দেখিয়ে দিয়েছে। দেশের ছেলেরা করতে পারলে, উন্নত বিশ্বের হ্যাকারেরা চাইলে নিমিষেই তা করতে পারে, অপূরণীয় ক্ষতিও করতে পারে! এই সোনার ছেলেদের খুঁজে বের করে দেশের সাইবার সিকিউরিটি খাতের চাকরি দিয়ে সম্মাননা দেওয়া হোক।

যতই ভালোর মুখোশ পরে থাকুক না কেন, ভিতরে ভিতরে সবাই অনিয়মের অমৃত রস খেতে চায়। সাময়িক চাপে পরে যতই সাহসিকতার সাথে অন্যায়ের প্রতিবাদ করুক না কেন, জায়গামতো গিয়ে সবাই মেরুদণ্ডহীন কাপুরুষ হয়ে যায়।

এরই নাম "বাংলাদেশী"!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৪০
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×