জনাব রফিক সাহেব, লাবনি গ্রুফ অব
ইন্ডাস্টিজের মালিক ও এমডি। বয়স হয়ে
গেছে। তার ছোট্ট সংসার। একমাত্র
মেয়ে লাবনি ও প্যারালাইসিস
রোগী স্ত্রী সাবিনা। লাবনি এখন
অনার্স ৪র্থ বর্ষে পড়ে। খুব ভদ্র ও
পর্দাশীন ও মেধাবী ছাত্রী । আজ
পর্যন্ত বাইরের কেউ তার চোখ পর্যন্ত
দেখেনি। রফিক সাহেব তার
ম্যানেজার আকাশের সাথে একমাত্র
মেয়ের বিয়ে দিতে মনস্থির করলেন
তবে আকাশকে কিছু এ ব্যাপারে
বললেন না। আকাশ খুব ভাল ও কর্মট তবে
মাঝে মাঝে মদ খেত তা রফিক
সাহেব জানতেন না। হঠাৎ একদিন
রফিক সাহেব মারা গেলেন। মারা
যাওয়ার সময় লাবনিকে আকাশ সম্পর্কে
বলেছিলেন।
লাবনির মা অসুস্থ্য(প্যারালাইসিস
রোগী) তাই ইন্ডাস্টির সব দায়িত্ব
লাবনির উপর পরলো। লাবনি বোরখা
পড়ে ভালভাবে যায় কেউ তার মুখ দুরে
থাক চোখও দেখেনি কারণ সে কালো
সান গ্লাস পড়ে। রীতিমত যাচ্ছে
কিন্তু সে এসব বুঝে না আকাশ তাকে
বুঝিয়ে দেয়। আকাশ তার মনে জায়গা
করে নিতে শুরু করলো।
একদিন লাবনি আকাশকে বললো তার
জন্য একজন মহিলা পি.এ দরকার
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে। পত্রিকায়
বিজ্ঞাপন দেয়া হল এবং প্রায় দশ জন
আবেদন করলো, বেতন ১২ হাজার সাথে
বোনাসও আছে।
ইন্টারভিউয়ের আগের রাত লাবনি
আকাশকে ফোন করে বললো সে অসুস্থ্য
তাই আগামী কাল আসতে পারবেনা,
আকাশ যেন ইন্টারভিউ নিয়ে নেয়
এবং একজনকে বাচাই করে।
পরের দিন ঠিক সময়ে সকল প্রার্থী এসে
উপস্থিত, আকাশ এক এক করে সবার
ইন্টারভিউ নিচ্ছে। সব শেষে যে
মেয়েটি এলো তার নাম নিশাত
আনজুম। মেয়েটি দরজায় এসে
- মে আই কাম ইন স্যার?
-ইয়েস, কাম
নিশাত ভেতরে আসলো। নিশাতকে
দেখে আকাশতো একেবারে ফেদা।
সে মনে মনে কু-মতলব আটলো।
নিশাতের গোলগাল আপেলের মত
চেহারা, গোলাপের পাপড়ির মত দুই
ঠোট, চিরল চিরল দাত যে হাসিতে
মুক্তা ঝড়ে, মাথায় ঘন -কালো -লম্বা
কেশ, হরিণের চোখের মত টানাটানা
চোখ। খুব সুন্দর পোষাক পরেছে এবং খুব
ভদ্র লাগছে যদিও বোরখা পড়েনি,
স্কার্পও পরেছে।
আকাশ তার দিকে হা করে তাকিয়ে
আছে। নিশাত কাশি দিতেই আকাশ
বাস্তবে ফিরলো। বললো
-বসো,
-ধন্যবাদ,
-তোমার নাম কী?
-স্যার, নিশাত আনজুম
-শিক্ষাগত যোগ্যতা?
-এইচ এস সি
-ঠিক আছে, আগে যারা এসেছিলো
তারা সবাই অনার্স পাশ। সমস্যা নেই।
বাসায় কোন জায়গায়?
- মীরপুর
-বাসায় কে কে আছে?
- অসুস্থ্য মা আর আমি, বাবা গত বছর
মারা গেছেন।
-তাহলে তোমাকেই সংসার চালাতে
হয়?
-হ্যাঁ স্যার
-চাকরী হয়ে যাবে কিন্তু আমার একটি
কন্ডিশন আছে
-কী স্যার
-তেমন কিছু না, শুধু আজ রাত
আমাকে................................... ..
নিশাত কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে
গেল। আকাশ সাহেব অফিসের কাজ
সেরে বাসায় গেলেন। বাসায় গিয়ে
দেখলেন একটি চিঠি। খুলে দেখলেন
রিজাইন লেটার। একি আমার চাকরী
শেষ? কিন্তু আকাশ
সাহেব বুঝতে পারলেন না কেন তার
চাকরীটা গেল।
আসলে নিশাত আনজুম নামের
মেয়েটিই হলো লাবনি। তার নাম
নিশাত আনজুম লাবনি।
লাবনী আকাশকে বরখাস্ত করার পর নতুন
ম্যানেজারের জন্য পত্রিকায়
বিজ্ঞপ্তি দিল। কয়েকজন আবেদন
করলো, তাদেরকে ইন্টারভিয়ের জন্য
ডাকা হলো।
ইন্টাভিউয়ের দিন সবাই সময়মত হাজির।
লাবনী নিজেই ইন্টারভিউ নিচ্ছে। সব
শেষে যে ছেলেটির ইন্টারভিউ
নেয়া হলো তার নাম সানি।দেখতে
খুব সুন্দর, গাল ভরা দাড়ি, গায়ের রং
ফর্সা, লম্বা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি, চুল সামান্য
লম্বা, চোখ কালো, ভ্রু দুইটা একত্রে
মিশে আছে, গায়ে খয়েরি কোট,
কালো পেন্ট,গলায় টাই, মাথায় তুর্কি
টুপি।
সানি দরজায় এসে
-আসসালামু আলাইকুম, মে আই কাম ইন
মেম?
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। ইয়েস, কাম।
সানিকে দেখে লাবনীতো
একেবারে ফেদা। অপলক দৃষ্টিতে
লাবনী সানির দিকে তাকিয়ে
আছে।সানি লজ্জায় মাথা নিচে
দিয়ে দাড়িয়ে আছে। সানিকে
দেখে লাবনীর মনে বসন্তের হাওয়া
বইতে লাগলো। সে মনে মনে ভাবলো-
এমন একটি মানুষ আমার জীবনে
প্রয়োজন।
সানি হঠাৎ কাশি দিলে লাবনী
বাস্তবে ফিরলো।
বললো
-বসেন
-ধন্যবাদ
-আপনার নাম কী?
- মুহাম্মদ সানি খন্ধকার
-আপনার বাসা কোথায়?
-ময়মনসিংহ, থাকি মীরপুর।
-পরিবারে কে কে আছে?
-আমি আর আমার মা-বাবা, এক বোন
ছিলো বিয়ে হয়ে গেছে
-আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা?
-ঢাকা ভার্সিটি থেকে এম.বি.এ
ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট
-গুড। কাজের অবিজ্ঞতা আছে?
-হ্যাঁ আছে। একটি কোম্পানিতে প্রায়
১ বছর ছিলাম।
-সে চাকরী ছাড়লেন কেন?
-আমার প্রমোশনের কথা ছিল কিন্তু
বসকে ঘুষ দেইনি বলে প্রমোশন হয় নি,
ঘুষের মাধ্যমে আরেকজনের প্রমোশন
হয়ে গেছে।
-মা বাবা কোথায় থাকেন?
-আমাদের গ্রামের বাড়ি।
-বিয়ে করলেন না কেন?
-নিজের পায়ে দাড়িয়ে বিয়ে
করবো। যে স্ত্রীর ভরন -পোষণ করতে
পারে না ইসলামে তাকে বিয়ে
করতে নিষেধ করা হয়েছে।
-প্রেম করেছেন?
-ইসলামে প্রেমকে হারাম করা
হয়েছে।
-কখনো মাদ্রাসায় পড়েছেন?
- জ্বীনা। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো
সকল মুুসলমানের জানা দরকার।
-ঠিক আছে, আপনার সমস্যা না থাকলে
আগামীকাল থেকে জয়েন করতে
পারেন।
-ধন্যবাদ, আমাকে বাড়িতে গিয়ে মা-
বাবাকে খুশির সংবাদ জানাতে হবে।
আমি পরশু জয়েন করি?
-ওকে
-আসি, আসসালামু আলাইকুম
-ওয়ালাইকুম আসসালাম
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৯