তথ্য ও প্রযুক্তির এই পৃথিবীতে পুরো বিশ্বকে বলা হয় গ্লোবাল ভিলেজ। আর সব কিছু এখন হাতের কাছে।
আজ আমি আলোচনা করব ই-কমার্স নিয়ে। অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়ার এক নতুন দিগন্ত ই-কমার্স।
ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স বা ই-বাণিজ্য একটি বাণিজ্য ক্ষেত্র যেখানে কোন ইলেকট্রনিক সিস্টেম (ইন্টারনেট বা অন্য কোন কম্পিউটার নেটওইয়ার্ক) এর মাধ্যমে পণ্য বা সেবা ক্রয়/ বিক্রয় হয়ে থাকে।
আধুনিক ইলেকট্রনিক কমার্স সাধারণত ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এর মাধ্যমে বাণিজ্য কাজ পরিচালনা করে। এছাড়াও মোবাইল কমার্স, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার ও অন্যান্য আরো কিছু মাধ্যম ব্যবহৃত হয়।
প্রকারভেদ
ব্যবসা-থেকে-ব্যবসা (B2B):
ব্যবসা-থেকে-ব্যবসা ইলেকট্রনিক কমার্স সম্পাদিত হয় একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। ৮০ শতাংশের (৮০%) মত ইলেকট্রনিক কমার্স ব্যবসা-থেকে-ব্যবসা প্রকার এর অন্তর্ভুক্ত।
ব্যবসা-থেকে-গ্রাহক
ব্যবসা-থেকে-গ্রাহক ইলেকট্রনিক কমার্স সম্পাদিত হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকের মধ্যে। এই প্রকারে দ্বিতীয় সর্বাপেক্ষা বেশি ইলেকট্রনিক বাণিজ্য সম্পাদন হয়ে থাকে।
ব্যবসা-থেকে-সরকার (B2G):
ব্যবসা-থেকে-সরকার ইলেকট্রনিক কমার্স সম্পাদিত হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় খাতের মধ্যে। এটি সাধারনত ব্যবহৃত হয়ে থাকে রাষ্ট্রীয় কেনা/বেচা, লাইসেন্স সংক্রান্ত কার্যাবলী, কর প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে।
গ্রাহক-থেকে-গ্রাহক (C2C):
গ্রাহক-থেকে-গ্রাহক ইলেকট্রনিক কমার্স সম্পাদিত হয় একাধিক ব্যক্তি ও গ্রাহকের মধ্যে। ইলেকট্রনিক বাজার ও অনলাইন নিলাম এর মাধ্যমে সাধারণত এই ধরনের বাণিজ্য সম্পাদিত হয়।
মোবাইল কমার্স (m-commerce):
মোবাইল কমার্স ইলেকট্রনিক কমার্স সম্পাদিত হয় তারবিহীন প্রযুক্তি যেমন মোবাইল হ্যান্ডসেট বা পারসোনাল ডিজিটাল অ্যাসিস্টেন্ট (PDA) এর মাধ্যমে। তারবিহীন যন্ত্রের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের গতি ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ধরনের বাণিজ্য জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
গ্রাহক থেকে সরকার (সি টু জি) কখনো সরসরি জনগনের কাছ থেকে সরকার বিভিন্ন সেবার বিনিময় ফি বা কর নিয়ে থাকে। যখন এর মাঝে কোন মাধ্যমৈ থাকেনা তখন এটা গ্রাহক থেকে সরকার পক্রিয়া বলে বিবেচিত হয়। ডিজিটাল গর্ভসসেমএর আওতার এ ধরনের সেবা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ক্ষেত্রসমূহ
পণ্য ও সেবা কেনা/ বেচা।
মূল্য পরিশোধ।
পণ্য নিলাম।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এর পণ্য ও সেবার মূল্যের তুলনামূলক বিশ্লেষন।
টিকেট ক্রয়।
পণ্য ও সেবা অর্ডার ও বুকিং দেয়া।
অনলাইন বিজ্ঞাপন বাণিজ্য। ইত্যাদি।
মাধ্যম, উপকরণ ও সম্পর্কিত বিষয়সমূহ
• বিক্রেতার জন্যঃ
ই-কমার্স উপযোগী ওয়েবসাইট।
দ্রুত ও কার্যকরভাবে অর্ডার প্রক্রিয়া করার জন্য ইন্ট্রানেট ও সার্ভার।
• মধ্যবর্তী মাধ্যমঃ
ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার,ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে মূল্য প্রদানের ও সমধর্মী সেবা প্রদানকারী ব্যাংক প্রতিষ্ঠান।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান।
পণ্য ও মুদ্রা স্থানান্তর ও পরিবহনে নিরাপত্তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
• গ্রাহকের জন্যঃ
• ইন্টারনেট সুবিধা।
মূল্য পরিশোধের জন্য ক্রেডিট কার্ড বা সমধর্মী মাধ্যম।
• সরকারিভাবেঃ
ই-কমার্স এর নিরাপত্তা ও মান নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় আইন ও নীতিমালা।
• বাণিজ্য বাজারে প্রভাব
অর্থনীতিবীদদের মতে, যেহেতু ইলেকট্রনিক কমার্স গ্রাহকদের বিভিন্ন পণ্য সহজে খুঁজে পাওয়া এবং তুলনামূলক বিশ্লেষনের একটি ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে, তাই এটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরীতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।
ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর আগে করণীয়:
অনলাইনের প্রচার ও প্রসার যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে ব্যবসার সুযোগ। অনলাইনের বাজারে পরিচিত হয়ে ওঠা নাম ই-কমার্স। এর পূর্ণ রূপ ‘ইলেকট্রনিক কমার্স’। ই-কমার্স মানে হচ্ছে ইন্টারনেটে একটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয়ের প্রক্রিয়া। ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করার আগে কিছু বিষয়ে কাজ করে নেওয়া ভালো। ফোর্বস জানিয়েছে এ বিষয়ে কিছু পরামর্শ। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সে বিষয়গুলো।
১. পণ্য নির্বাচন, দাম এবং ডেলিভারি সিস্টেম
ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর প্রথম ধাপে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে সঠিক পণ্য নির্বাচন করা। পণ্য নির্বাচনে অন্যদের তুলনায় আপনার মার্কেট স্ট্র্যাটেজিতে পার্থক্য করতে পারলে এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা বেশি। মনে রাখবেন, ব্যবহারকারীরা সব সময় ভিন্নতা পছন্দ করেন। আপনার পণ্যটি কেমন বিক্রি হতে পারে, তা পণ্যের দাম, ডিসকাউন্ট এবং স্থানীয় বাজারে এর প্রাপ্যতার ওপর নির্ভর করে।
পণ্যের দামটি এমনভাবে ঠিক করবেন, যাতে আপনি পণ্যটিকে বর্তমান বাজারের থেকে কম দামে বিক্রি করতে পারেন এবং খেয়াল রাখতে হবে, যাতে আপনার পণ্যের বিনিয়োগ যেন ফেরত আসে। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট’। বাজার বিবেচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনে প্রতিটি পণ্যের ওপর আপনি কত শতাংশ মূল্যহ্রাস দিতে পারবেন, তা আপনাকে পণ্য কেনার পূর্বে হিসাব করতে হবে। যেসব পণ্যের চাহিদা ভালো, কিন্তু স্থানীয় প্রাপ্যতা কম, এ ধরনের পণ্য রাখতে পারেন। তাহলে বিক্রির সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
এ ব্যবসার একটা বড় বিষয় হচ্ছে ভোক্তার কাছে পণ্যটি সঠিক সময়ে পৌঁছে দেওয়া। পণ্যের ডেলিভারির জন্য আপনি কয়েকজন ব্যক্তি নিয়োগ করতে পারেন। এ কাজে পার্টটাইমার হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাজে লাগাতে পারেন। এতে তাদের লেখাপড়ার পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হবে এবং আপনিও কম খরচে ভালো কর্মী পাবেন।
২. ভালো পণ্য খুঁজে বের করা
আপনি যে পণ্যের মাধ্যমে শুরু করুন না কেন, অবশ্যই পণ্যের গুণগত মানের দিকে সর্বোচ্চ নজর দিতে হবে। যেমন—গ্যাজেট বা ইলেকট্রনিক পণ্যের ক্ষেত্রে মূল উৎপাদনকারীর থেকে জোগাড় করতে পারলে ভালো। কারণ, এতে পণ্যের ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি ঠিকভাবে ব্যবহারকারীদের দেওয়া সম্ভব হয়। সরাসরি উৎপাদনকারীর কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করা গেলে সেটা খরচ যেমন কমিয়ে আনে, তেমনি ভালো পণ্যের নিশ্চয়তা দেয়।
৩. ওয়েব সাইট তৈরি
আপনার পণ্যের ওপর ভিত্তি করে আপনাকে দৃষ্টিনন্দন একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। তার জন্য আপনি দেশের ই-কমার্স সাইটগুলো দেখতে পারেন। যেমন : esho.com, priyoshop.com, akhoni.com, ajkerdeal.com, rokomari.com ইত্যাদি। তবে ওয়েবসাইট তৈরির ক্ষেত্রে অনেক বিষয়ের মধ্যে আপনাকে দুটি বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে।
ডোমেইন নাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে যত সুন্দর, সহজ এবং ছোট নাম ঠিক করা যায়, ততই ভালো। এতে নামটা মানুষের মনেও থাকবে, সে সঙ্গে ইন্টারনেটে সার্চ দিলে সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে। আপনি আপনার প্রয়োজন অনুসারে সব ফিচার নির্বাচন করবেন। কিন্তু একটি ব্যাপার খেয়াল রাখবেন, যাতে আপনার সার্ভারে কমপক্ষে একসঙ্গে ১০ লাখ ইউজার সাবস্ক্রাইব করতে পারেন, এতে যেন সার্ভারের গতি কমে না যায়। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করবেন, এর ফলে আপনার সকল কনটেন্ট গুছিয়ে রাখতে সুবিধা হবে। কনটেন্ট ম্যানেজমেন্টের সুবিধার জন্য অনেক ধরনের প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যেমন—ওয়ার্ডপ্রেস, হাবস্পট, জুমলা, ধ্রুপাল, এবং ম্যাজেন্টো।
লেখক- এ বি এম তামিম
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৭