আজিজ সাহেবের মন অত্যন্ত খারাপ।তার একমাত্র মেয়ে রিতু জিনিসপত্র ভাঙচুর করছে।কেন করছে তার জানা নেই।শুধু তার না বাসার কারো ই জানা নেই।মেয়েটা দিনদিন মানসিক রোগি হয়ে যাচ্ছে।আজিজ সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
রিতু আজিজ সাহেবের প্রিয় গ্লাসটি ভেঙে ফেলল।মৃত গ্লাসের ডেডবডি আজিজ সাহেবের পায়ের কাছে এসে পড়লো।রিতুর বয়স যখন ছয় বছর বয়স তখন তার মা মারা যায়।ক্যান্সারে মৃত্যু।অনেক আদরে তিনি রিতুকে বড় করেছেন।সকল অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করেছেন।এখন মনে হচ্ছে কাজটা তিনি ঠিক করেননি।একটু শাসনের মধ্যে রাখলে মেয়েটা আজকে এতটা লাগামছাড়া হত না।এত নির্দ্বিধায় তার পছন্দের গ্লাসটি ভাঙতে পারতো না।তিনি এই গ্লাস ছাড়া অন্য কোন গ্লাসে কিছু খান না।এই গ্লাসটি তার স্ত্রী তাদের সংসার জীবনের শুরুতে তার জন্য কিনেছিলেন।প্রতিবার গ্লাস স্পর্শ করার সময় তিনি তার মৃত স্ত্রীর কথা স্মরণ করেন।আজিজ সাহেব খুব ব্যাথিত হলেন।তার ধারনা তিনি অন্য কোন গ্লাসে কিছু খেতে পারবেন না।আজীবন তাকে গ্লাসহীন জীবন কাটাতে হবে।
- চাচাজানের গেলাস ভাইঙ্গা ফেললেন আফামনি?
রিতুদের বাসার কাজের লোক রহমত বললো।তার চোখে রাজ্যের বিস্ময়।তার কোলের কুকুরছানার চোখেও রাজ্যের বিস্ময়।এমন ঘটনা যেন তিনি জিবনে আর দেখেন নি।ভবিষ্যতে দেখবে বলেও মনে হয় না।কুকুরের চোখ ও বিস্মিত।কুকুর বলে আমরা তাকে অবহেলা করি।এটা ঠিক না।তারাও অনেক কিছু বোঝে।
- চোখে দেখতে পারেন না?দৃষ্টি শক্তি কমে গেছে আপনার?আজ থেকে আপনার ভাত খাওয়া বন্ধ।সারাদিন শুধু মাছ খাবেন।মলা এবং ঢেলা মাছ।ভিটামিন এ।
এই বলে রিতু আরো একটা গ্লাস ভাঙল।না।এটা তেমন গুরুত্বপূর্ন কোন গ্লাস না।অত্যনত নিরীহ প্রকৃতির গ্লাস।এই গ্লাস ভাঙনে তাই কেউ স্বল্পশ্বাস,দীর্ধশ্বাস কোন শ্বাস ই ফেললো না
আজিজ সাহেব রহমতকে ডাকলেন
-রহমত!
-জ্বে খালুজান
আজিজ সাহেব রহমতকে কষে একটা থাপ্পড় মারলেন।রহমত ভাবলেষহীন থাকে।কারন এটা নতুন কিছু না।সপ্তাহে তিন চার বার এই ঘটনা ঘটে
-তুই একবার আমাকে চাচাজান ডাকিস একবার খালুজান ডাকিস।ঘটনা কি তোর?
-ঘটনা কিছুই না চাচাজান।আফামনির চিন্তায় অস্থির আছি।মুখ ফসকে বলে ফেলেছি।আফামনি দশটা গেলাস ভাঙছে
-তোর এত ঘন ঘন মুখ ফসকায় কেন?আর এটা তো নতুন কিছু না।তুই আগেও বহুবার এমনটা করেছিস।এটা যেন আর না হয়।
-আচ্ছা চাচাজান।অহন যাই চাচাজান।কুত্তাডারে গোসল দেয়া লাগবে।বিকট গন্ধ বের হইছে।মনে হইতেছে এর শইল্লে কেউ গু দিয়া মালিশ করছে।কাচা গু।
আজিজ সাহেব রহমতকে আবার ও থাপ্পড় দেন।
-কুত্তা বলছিস কেন?
-কুত্তারে কুত্তা বলবো না তো কি বলবো?শিম্পাঞ্জী?
-এর একটা নাম আছে।নাম ধরে ডাকবি।বল এর নাম কী?
- জানি না খালুজান।নানান চিন্তায় অস্থির থাকি।এত কিছু মনে রাখার সময় কি?
- তুই আবার আমাকে খালুজান বলছিস!
-সরি মিসটেক হয়ে গেছে।আর বলবো না।
কলিং বেল বেজে উঠলো।রহমত দৌড়ে গেল দরজা খুলতে।এই কাজটা করে সে ব্যাপক আনন্দ পায়।অজানাকে জানার আনন্দ।অজানাকে জানার কৌতুহল সবার ই আছে।রহমতের ও আছে।অতি স্বাভাবিক এবন্হ নির্দোষ কৌতুহল।
রহমত দরজা খুলে দেয়।অরন্য এসেছে।অরন্যের চোখে চুখে আতঙ্ক।সব ধরনের বিপদের প্রস্তুতি নিচ্ছে তার সব কয়টি নিউরন
- আসসালামুআলাইকুম মাস্টার সাব।ভিতরে কেয়ামত হয়া গেছে।একশোর উপরে গেলাশ ভাঙছে আফামনি।অবস্থা বড়ই করুন।আল্লাহ খোদার নাম নেন।আল্লাহ খোদা ছাড়া বিপদ থেকে বাচানোর কেউ নাই।আয়াতুল কুরছি পড়েন।আয়াতুল কুরছি জানেন?
- না জানি না।
-বলেন কি?আপনে তো সাংঘাতিক লোক।বাচ্চা পোলাপাইন পর্যন্ত্য আয়াতুল কুরছি জানে আর আপনে জানেন না?কেয়ামতের লক্ষন।কেয়ামত আসন্ন।ইস্রাফিল শিঙ্গা হাতে রেডি হয়ে আছেন।যে কোন মূহূর্তে ফু দিয়া দিবেন।যান ভিতরে যান।আফামনি ভিতরে আছে।
অরন্য রীতুর পড়ার ঘরে ঢোকে।রিতু টেবিলের সামনের চেয়ারে বসে আছে।একে দেখলে কে বলবে একটু আগে এই মেয়ে ভাঙচুর করছিল?
-আপনি দেরি করলেন কেন?
-কাজ ছিল
-কি কাজ?
-সেটা তোমার না জানলেও চলবে।বই বের করো
-আচ্ছা আমি অনুমান করছি।আপনি কারো সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন
- না।আমি কারো সাথে দেখা করতে যাই নি
-তাইলে কি করছিলেন?
-বাসার যে কাজগুলা দিয়েছিলাম সে গুলো করেছো?
-আপনি টপিক পাল্টাচ্ছেন স্যার!
-আমি কি করেছি এটা তোমাকে বলতে চাচ্ছি না।
-কেনো এটা কি নারী ঘটিত কোন ব্যাপার
-হ্যা নারী ঘটিত ব্যাপার।এবার বই বের কর
-আপনি চলে যান স্যার।আমি পড়বো না আজকে
-কেনো?পড়বে না কেন?
-আমার মন খুব খারাপ।এই জন্য পড়বো না
-আচ্ছা ঠিক আছে
অরন্য উঠে দাড়ালো
-জিঞ্জাসা করলেন না কেন মন খারাপ?
-না।জিঞ্জাসা করলাম না।আমার কৌতুহল কম
রিতু চরম অপমান বোধ করলো।তার ইচ্ছা করছে অরন্যের চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে
রিতু প্রায় চিৎকার করে বলে-আপনি আর কখনো আমাদের বাসায় আসবেন না।কখনো না।আপনাকে আমার অসহ্য লাগে
রিতুর চোখে পানি টলমল করছে।আপ্রান চেষ্টায় সে সেটা আটকিয়ে রেখেছে।
-আচ্ছা ঠিক আছে আসবো না।
অরন্য দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে যায়।এখানে যতক্ষন থাকবে ততক্ষন রিতুর পাগলামী সহ্য করতে হবে।
অরন্য চলে যাওয়ার পর রিতু বাথরুমে ঢোকে।বাথরুমে ঢুকে আয়নার সামনে দাড়ায়।আয়নার সামনে দাড়িয়ে এখন সে কাদবে।অনেক্ষন কাদবে।