অন্যমন্শক শরৎ এর একটা পোস্ট পড়লাম। পোস্টের বিষয়বস্তু হল ব্লগাররা কিভাবে পদ্মা সেতু বানাতে পারে। বেশীরভাগ ব্লগারি দেখলাম পোস্টের বেপারে চরম নেগেটিভ। কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখলাম একটা ভাল রোডম্যাপ থাকলে বেপারটা আসলে তেমন অবাস্তব কিছু না। সঠিক পরিকল্পনা নিলে আমরা ব্লগাররাই পারি পদ্মা সেতু বানানোর মুক্ষ ভুমিকা নিতে। প্রথমে দেখি পদ্মা সেতু বানাতে আমাদের কি কি উতরাই পার হতে হবে।
১। সরকারের সাথে সমন্বয়।
২। টাকা
৩। টেকনলজি
৪। সেতুর অবকাঠাম তৈরির জায়গা অধিগ্রহন
৫। কাচামাল, শ্রম।
সরকারের সাথে সমন্বয়ঃ
পদ্মা সেতু আসলে ৩ তলা বিল্ডিং না যে চাইলাম আর একটা রাজমিস্ত্রি ভাড়া করে কাজ শুরু করে দিলাম। প্রথমে আমাদের পদক্ষেপ হতে হবে সরকারের সাথে সমন্বয়। সরকার যদি না চায় তাহলে ১৬ কোটি মানুষ মাথা কুটে মরে গেলেও সেতু বানানো সম্ভব না।ব্লগে অনেক প্রতিষ্ঠিত মানুষ আছে। তারা যদি সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করে এবং তাদের পুরা পরিকল্পনাটা বুঝাতে সক্ষম হয় তাহলেই কাজ শুরু করা সম্ভব। আমাদের ভিতর থেকে এরকম যোগাযোগ করতে সক্ষম এমন ব্লগারদের একত্রিত করতে হবে। এর পর কিভাবে সরকারের সাথে সমন্বয় করা যায় সেটা নিয়ে আর একটা রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এই প্রথম পদক্ষেপটাই সবচাইতে কঠিন।
টাকাঃ
পদ্মা সেতুর মোট বাজেট মনে হয় ১৮০০০ কোটি টাকা। টাকার অঙ্কে নেহায়েত কম না। আমাদের গরিব দেশে যাদের নাই তারা হয়ত অনেক গরিব কিন্তু আল্লাহর রহমতে যাদের আছে তাদের মাশাল্লাহ কম নাই। এই আছে গ্রুপটা যদি এগিয়ে আসে তাহলে ১৮০০০ কোটি টাকা আসলে তেমন বেশি না। শরত ভাই এর পোস্টে দেখলাম তীর্থযাত্রি কমেন্ট করেছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন পদ্মা সেতুতে তাদের লাইফ ফান্ডের টাকা সেতুতে বিনিয়গ করতে চায় যা কিনা প্রায় ১১০০০ কোটি টাকা। আমি আরো শুনেছি (সত্যি কিনা জানি না) বিটিটিবি এরও নাকি এমন অনেক টাকা (২-৩ হাজার কোটি) অলস পরে আছে। এরকম বড় বড় ২-৩ টা বিনিয়গ একত্র করতে পারলেই সিংহ ভাগ টাকা যোগার হয়ে যাবে।
বড় বড় কর্পোরেট হাউজ গুলার প্রোভিডেন্ট ফান্ড আক্যাউন্টে কোটি কোটি টাকা জমা থাকে। এই টাকা গুলা সাধারনত এফ ডি আর করা হয় অথবা শেয়ার বাজারে বিনয়গ করা হয়। এই টাকাগুলা কর্পোরেট হাউজ গুলা সেতু ফান্ডে বিনিয়গ করতে পারে। সামুর যেসব ব্লগার ভাইরা সমাজে উচ্চ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত তারা এসব লিয়াজো করতে অনেক ভাল ভুমিকা রাখতে পারে।
সামুর হিসাব মতে আমরা প্রায় এক লক্ষ ব্লগার আছি। সবার তার একদিনের ইনকাম পর পর ছয় মাস জমা করলেই অনেক টাকা হয়ে যাবে। প্রবাসি ব্লগার ভাইরা এখানে হয়ত অনেক গুরুত্যপূর্ন ভুমিকা রাখতে পারবে।
বাংলাদেশের বিভিন্য যায়গায় যদি সামুর পক্ষ থেকে সঠিক ভাবে এলাকা ভিত্তিক প্রচারনা চালান হয় তাহলেও ব্যাপক ফান্ড রাইজ হওয়া উচিত।
সব ব্লগার ভাইরা এক সাথে আইডিয়া জেনারেট করা শুরু করলে টাকা তোলার আরও ১ লক্ষ আইডিয়া পাওয়া যাবে। এত কিছু করার পরে আমার মনে হয় ১৮০০০ কোটি টাকা যোগার না হবার কোন কারন নাই।
টেকনলজিঃ
দুনিয়াতে পদ্মা সেতুর থেকেও অনেক বেশি বড় সেতু অনেক বেশি পরিমানে তৈরি হয়েছে। আমার মনে হয় টেকনলজি তেমন কোন সমস্যা হবার কথা না। বাংলাদেশের প্রোকৌশলিদের বেপারে আমি অনেক উচ্চ ধারনা পোষন করি। আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়াররাই সেতুর নকশা অবকাঠাম নির্মান সব ক্ষেত্রে সফলতার পরিচয় দিতে পারবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।
সেতুর অবকাঠাম তৈরির জায়গা অধিগ্রহন
এখানে ব্লগারদের মনে হয় তেমন কিছু করার নাই। সরকারের নিজস্ব লোকবলই এখানে যথেস্ট হওয়া উচিত।
কাচামাল, শ্রমঃ
সেতু বানানোর মুল উপাদান রড, সিমেন্ট। এই ২ টাই দেশে আমরা খুব ভাল মানের তৈরি করতে পারি। এখানেও মনে হয় আমরা আটকাব না।আর ১৬ কোটি মানুষের দেশে শ্রমিকের অভাব নিয়ে কথা বলতে গেলে মানুষ হাসবে।
আমার যদি ভুল না হয় তাহলে মহাখালি ফ্লাইওভার কোরিয়ানরা বানিয়েছিল আর তার বাজেট ছিল ৭০০ কোটি টাকা। ঠিক একি সময়ে আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়াররা বানাচ্ছিল খিলগা ফ্লাইওভার। মহাখালি থেকে খিলগা ফ্লাইওভার অনেক বড় আর ডিজাইনেও জটিলতা আছে। কিন্তু দেশীয় প্রযুক্তিতে সেই ফ্লাইওভার আমরা বানিয়েছিলাম মাত্র ৯০ কোটি টাকা দিয়ে। এইবার ভাইয়ারা একটু অঙ্ক করে বের করেন বিদেশি প্রযুক্তিতে পদ্মা সেতুর বাজেট ১৮০০০ কোটি টাকা হলে, দেশি প্রযুক্তিতে এর বাজেট কত হওয়া উচিত? (ইনফরমেশনে ভুল থাকতে পারে)
তেমন গভীর ভাবে চিন্তা না করেই লেখাটা শুরু করে দিয়েছিলাম। যত বেশি লেখা আগাচ্ছিল, তত আমার কাছে মনে হচ্ছে যে না আসলেই সম্ভব। আমার লেখাটা হয়ত খুব ছেলেমানুষিপুর্ন হয়েছে। হয়ত আমি না বুঝেই অবাস্তব কল্পনা করে বসে আছি। কিন্তু আমিই তো শেষ না। আমার থেকে অনেক বুদ্ধিমান ব্লগাররা এই মুহুর্তে সামুতে লগইন করা আছে। আপনারা কাটা ছাটা করে এই রোড ম্যাপকে বাস্তব সম্যত রূপ দেন। অনেক গুনিজন আছেন সামুতে। আপনারা লিডিং রোল নেন। নিয়ে ওই রোড ম্যাপকে বাস্তবায়ন করেন। কেন পাড়ব না আমরা? ১ লক্ষ উৎসাহি কোন কিছু করতে চাইলে সেটা হবে না এমন হতেই পারে না। আমাদের হয়ত টাকা নাই, আমাদের হয়ত বুদ্ধি শুদ্ধি কম। কিন্তু আমাদের মাশাল্লাহ উৎসাহের কোন অভাব নাই। এখন দরকার সঠিক নির্দেশনা, সঠিক নেতৃত্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:৩৭