somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি কাজী নজরুল ইসলামঃ কবি, এ ইসলাম ইসলাম নয়

১৪ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নজরুল নাকি রবীন্দ্রনাথ?

আমাদের ছোটবেলায় মোটামুটি সবাইই এই নিয়ে বিতর্কে মেতে উঠেছি কম বা বেশী। কেউ নিয়েছে রবীন্দ্রনাথের পক্ষ কেউ নজরুলের। এক্ষেত্রে তাদের সাহিত্যের মান কেমন তার ছাপিয়ে পেছনের যে সত্যটা লুকানো থাকতো তা হলো একজন হিন্দু অন্যজন মুসলমান। সেই বিশ্বাস থেকেই হয়তো ইসলামের বড় কবি হিসাবে আমাদের কাছে নজরুল স্থান করে নিয়েছেন। এছাড়াও তাঁর ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই’ কিংবা ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ’ এমন চমৎকার সব ইসলামী গানে মোহিত হয়েছি সবাই। এসব গান আর কবিতায় তাঁর ইসলাম প্রীতি আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে।

তবে মানুষের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ভেতর যেমন অনেক ব্যবধান থাকে, তেমনি ইসলাম আর নজরুল প্রসঙ্গেও রয়েছে বিস্তর ব্যবধান। এমনকি ইসলামের কথা ভেবে নজরুলের কিছু ‘ইসলামিক’ রচনার কথা মেনে নিলে তা যে কাউকে ইসলাম থেকে খারিজও করে দিতে পারে। নজরুলের কিছু রচনায় যেমন ভালো কিছু কথা ইসলামের পক্ষে এসেছে, বিপরীত দিকে এসেছে বিদআত, কুফর ও শির্কের মতো ভয়াবহ আকিদাগত ভ্রষ্টতাও। কোন দাড়িওয়ালা লোক সুদ খেলেই যেভাবে সুদ জায়েজ হয়ে যায়না, একইভাবে কবি নজরুল ইসলামকে নিয়ে যা কিছু বলেছেন তাই ইসলাম নয়। বরং সেসব কথা চোখ বুঁজে মেনে নিলে নিশ্চিতভাবে ইসলামকে ধ্বংস করার মতো ব্যাপার ঘটে যেতে পারে। নজরুলকে নিয়ে তাই অতি আবেগী না হয়ে ইসলামের চোখে দেখার উদ্দেশ্যেই এ লেখা।

ব্যক্তিজীবনে নজরুল যেমন ছিলেন বা যা করেছেন তার দায় একান্ত তাঁর নিজের। তবে কবি নজরুল তাঁর কিছু লেখায় সরাসরি ইসলামের বিরোধিতা করেছেন। “মানুষের চেয়ে বড় কিছু নয়, নহে কিছু মহীয়ান” ধরণের কথা বলে প্রকারান্তরে সরাসরি আল্লাহকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর সমকক্ষতায় মানুষকে বসিয়ে কুফর ও শির্ক করেছেন। কখনো নামাজকে কটাক্ষ করেছেন, কখনো ঝেড়েছেন মানবধর্মের শ্রুতিমধুর কিন্তু বিষাক্ত বাণী। এছাড়াও হিন্দু ধর্মের পূজায় ব্যবহৃত শ্যামা সংগীত লিখে মুসলিম হিসাবে তাঁর অবস্থানের ব্যাপারে বিশাল প্রশ্ন এঁকে দিয়েছেন। তবে আলোচ্য অংশে আমরা সেসব নিয়ে আলোচনা করবো না, বরং তাঁর রচিত ‘ইসলামী’ সাহিত্য নিয়েই তাঁর ইসলামী জ্ঞান ও বিশ্বাসের কিছু ভয়াবহতাকে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

আল্লাহ্‌ ও রাসুল দুজন একই এই বিশ্বাসঃ


যিনি আল্লাহ্‌, তিনিই সৃষ্টিজগত এরকম একটি ভয়াবহ আকিদা ইসলামের নামে পোষণ করে মুসলিম নামধারী একটি দল। এরই অংশ হিসাবে রাসুল সাঃ কে তারা স্বয়ং আল্লাহর একটি রূপ বলে প্রচার করে যা একটি নির্ভেজাল শির্ক ছাড়া আর কিছুই নয়। কুরআনের অসংখ্য আয়াতকে পাশ কাটিয়ে রাসুল সাঃকে এভাবে আল্লাহর স্থানে বসিয়ে দেয়া ইসলাম ধ্বংস করার একটি গোপন ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। ‘আল্লাহ্‌’ এই নামটি ছাড়াও আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআলার অনেক গুনবাচক নামের একটি হলো আহাদ। আহাদ নামটি লিখতে আরবীতে প্রয়োজন হয় তিনটি অক্ষর। আলিফ, হা ও দাল। অপরদিকে মুহাম্মাদ ছাড়াও রাসুলুল্লাহ সাঃ এর আরেকটি নাম ছিলো আহমাদ। আহমাদ নামটিকে লিখতে আরবীতে প্রয়োজন হয় চারটা অক্ষর-আলিফ, হা, মিম এবং দাল। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো এই যে এখান থেকে মিম সরিয়ে দিলে বাকী থাকে আলিফ, হা ও দাল যা দিয়ে আহাদ লেখা হয় এবং যেটা আল্লাহর নাম। এই স্থূল উপমাটি ব্যবহার করে আল্লাহ্‌ ও রাসুলকে একই সত্ত্বা বানিয়ে মানুষকে শির্কে ডুবিয়ে ফেলে সেই পথভ্রষ্ট দলটি। দুঃখজনক ব্যাপার হলো কবিতা দিয়ে একই প্রচার করেছেন কবি নজরুল।
আহমাদের ঐ মিমের পর্দা
উঠিয়ে দেখ মন।
আহাদ সেথায় বিরাজ করেন
হেরে গুণীজন।
(নজরুল ইসলামী সংগীতঃ ৩৫ নং)
ছিলে মিশে আহাদে আসিলে আহমাদ হ’য়ে (নজরুল ইসলামী সংগীত ১৫১)
আরো আছে-
আরশ হতে পথ ভুলে এল মদীনা শহর
নামে মোবারক মোহাম্মদ পুঁজি ‘আল্লাহু আকবার’।
(নজরুল ইসলামী সংগীত ৩৯)
আরশ হলো আল্লাহর স্থান। কবিতায় বলা হয়েছে আল্লাহ্‌ আরশ হতে পথ ভুলে মদীনা এসে মুহাম্মাদ হয়ে গেছেন।

আল্লাহর স্থানে মুহাম্মাদ সাঃ কে ডাকা বা তাঁর কাছে প্রার্থণা করার শির্কঃ

ইসলামের প্রকৃত শিক্ষায় আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কারো কাছে কিছু চাওয়া বা আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকা বা কারো নাম জপ করা সবই শির্কের মতো জঘন্য অপরাধ, যার জন্য অবধারিত জাহান্নামের কথা আল্লাহ্‌ কুরআনে বহুবার বলেছেন। এমনকি আল্লাহ্‌ ছাড়া রাসুলুল্লাহ সাঃএর কাছেও কিছু চাওয়া যাবে না। তবে নজরুল তাঁর কবিতায় বা গানে হরহামেশাই তা বলেছেন, যেগুলো মানুষকে ভুল পথের দিকে সহজেই নিয়ে যায়।
দুখের দোসর কেহ নাহি মোর- ব্যথিত ব্যথার
তোমায় ভুলে ভাসি আকুলে পার কর সরকার।
হে মদিনাবাসী প্রেমিক, ধর হাত মম।
(নজরুল ইসলামী সংগীত ১৯৪)
রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সুপারিশ অনেক মুসলিমকে নাজাতের পথ দেখাবে তা যেমন সত্য, তবে সে সুপারিশ কাদের জন্য প্রযোজ্য তাও হাদিসে স্পষ্টভাবে এসেছে। যেকোন ব্যক্তি শির্ক যুক্ত আমল নিয়ে আল্লাহর কাছে দাঁড়ালে তার সকল আমল আল্লাহ্‌ বাতিল করে দেবেন আর এসব ক্ষেত্রে রাসুল সাঃ এর সুপারিশের কোন প্রশ্নই থাকবে না। আল্লাহ্‌ কুরআনে বলেছেন, “কে আছে এমন যে তাঁর (আল্লাহ্‌র) কাছে সুপারিশ করবে তাঁর অনুমতি ছাড়া?” (সুরা বাক্বারা-আয়াতুল কুরসি)। সুতরাং সুপারিশ যার জন্য করা হবে তাও করতে হবে আল্লাহর অনুমতি পাবার পরই। এছাড়াও রসুল সাঃ এর সুপারিশ পেতে হবে নিজের পৃথিবীতে করে যাওয়া ভালো কাজের মাধ্যমে। রাসুলের নাম জপে, রাসুলের কাছে প্রার্থণা করে কিংবা রাসুলের নামে বাড়াবাড়ি করে নয়। নজরুলের রচনায় এই ভ্রান্ত দিকটাই ফুটে উঠেছে অনেক যায়গায়।
হে মদিনার নাইয়া, ভব নদীর তুফান ভারী কর মোরে পার,
তোমার দয়ার তরে গেল লাখো গোনাহগার।
(নজরুল ইসলামী সংগীত ১৯৫)
তুই যা চাস তাই পাবি হেথায়,
আহমাদ যদি চান হেসে। (নজরুল ইসলামী সংগীত ২৬)
আমার নবী হযরত আমার
কর মোনাজাত কবুল।
(নজরুল ইসলামী সংগীত ১২০)

আল্লাহর বিচার ও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগঃ


মুসলিম হিসাবে দাবীদার কোন ব্যক্তির এমন কোন এখতিয়ার ইসলামে নেই যে সে আল্লাহর কোন ইচ্ছা বা আদেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলবে বা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করবে। সবার জীবন যদি মসলিনের মতো মসৃণ যায় তাহলে ধৈর্য্যের পরীক্ষা দেবার দরকার হতো না কোন মানুষের। প্রতিটি মানুষই কোন না কোন সময় ভাবে এই পৃথিবীতে সেই সবচে’ দুঃখের মধ্যে আছে। তবে এসব কথা অভিযোগ আকারে বলে আল্লাহকে দোষী সাব্যস্ত করার অপচেষ্টা এক ধরণের কুফর ছাড়া আর কিছুই নয়। নজরুলের অনেক ইসলামী রচনায় এমনটি এসেছে বহুবার।
কেন দুনিয়ায় পাঠাইলে
কেন গোনাহের বোঝা দিলে
তুমি তো জান দুনিয়ায় পুড়ে মরব যে তিলে তিলে।
(নজরুল ইসলামী সংগীত ১৯৯)
করুণাময় তুমি দয়া কর যদি দয়ার লাগি,
ভুলের তরে আদমেরে কেন করিলে স্বর্গ ত্যাগী।
(নজরুল ইসলামী সংগীত ১৭৬)
তবে সবচেয়ে ভয়াবহ কথা উঠে এসেছে রাসুল সাঃ মৃত্যুর পরবর্তি প্রতিক্রিয়া কবিতায় ফুটিয়ে আনার ক্ষেত্রে। এই রচনায় তিনি আল্লাহর নামে অযাচিত মিথ্যা কথা উমর রাঃ মুখ থেকে নিঃসৃত হয়েছে বলে দেখিয়েছেন, যা কিনা প্রকাশ্য কুফর। এমন কথা কবি নজরুল কেন, উমর রাঃ বা স্বয়ং রাসুল সাঃ বললেও তা ভয়াবহ কুফরি। একই সাথে আল্লাহ্‌ তখন কি করছিলেন সেই অজানা জ্ঞান মিথ্যাভাবে ফুটিয়ে তুলে এবং আল্লাহর আসন টুটে গেছে বলে অভিমত প্রকাশ করে তিনি আরো একবার কুফর তুল্য অপরাধ করেছেন।
শোকে উন্মাদ ঘুরায় উমর ঘুর্ণির বেগে ছোরা,
বলে “আল্লার আজ ছাল তুলে নেবে মেরে তেগ, দেগে কোঁড়া”।
খোদ খোদা সে নির্বিকার,
আজ টুটেছে আসনও তাঁর।
খোদা, একি তব অবিচার।
(বিষের বাঁশিঃ ২১-২৩ পৃঃ)

বানোয়াট সওয়াব প্রচারঃ

কোন কাজে কিরকম সওয়াব হবে তার জ্ঞান আছে একমাত্র আল্লাহ্‌র এবং রাসুলকে তিনি যতটুকু জানিয়েছেন ততটুকু রাসুলের। এর বাইরে এ জ্ঞান কারো কাছে নেই এবং কেউ এভাবে কোন কথা প্রকাশ করার অধিকারও রাখে না। তবে নজরুল গ্রামে গ্রামে মুসলিমের মিলনকে হজ্জের অধিক সওয়াবের বলে ফতোয়া জারি করেছেন তাঁর একটি রচনায়।
মিলনের আরাফাত ময়দান
হোক আজি গ্রামে গ্রামে
হজ্জের অধিক পাবি সওয়াব
এক হলে সব মুসলিমে।
(নজরুল ইসলামী সংগীত ৪৩)

কিয়ামাতের দিন ফাতিমা রাঃ আল্লাহর আরশ ধরে কাঁদবেনঃ

উপমহাদেশের সামগ্রিক ইসলামের মতোই নজরুলের অনেক রচনা ভ্রান্ত শিয়া বিশ্বাসের ছাপ রেখে গেছে। আর এক্ষেত্রে আলী, ফাতিমা, হাসান, হুসাইন নিয়ে অতিরঞ্জিত বিশ্বাস ও তাদেরকে নবীর মতো মর্যাদা দেয়া কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে তাদের নিয়ে শির্কে লিপ্ত হবার মতো বহু কবিতা ও গান নজরুল রচনা করেছেন।
‘কাঁদিবে রোজ হাশরে সবেযে ‘নফসি, য়্যা নফসি’ রবে,
“য়্যা উম্মতি” বলে একা
কাঁদিবেন আমার মোখতার।।
কাঁদিবেন সাথে মা ফাতিমা ধরিয়া আরশ আল্লাহর
হোসায়নের খুনের বদলায় মাফী চাই পাপী সবাকার।
(নজরুল ইসলামী সংগীত ৪৮)
খৃষ্টানদের ভয়াবহ সব বিশ্বাসের ভেতর যেটি তাদেরকে লাগামহীন পাপ করতে উৎসাহিত করে সেটি হচ্ছে, ‘যিশু খৃষ্ট নিজে সকল পাপী খৃষ্টানের পাপের বোঝা মাথায় নিয়ে সবাইকে পাপমুক্ত করে বেহেশতে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন’। নজরুলের এই লেখায়ও তেমনি ফাতিমাকে দিয়ে এমন একটি মিথ্যা রচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে আল্লাহ্‌র আরশ ধরে কেঁদে ফাতিমা রাঃ হুসাইন রাঃ এর খুনের বদলা হিসাবে সকল পাপী মুসলমানকে মাফ করিয়ে আনবেন।

আল্লাহর প্রেমের শরাব পান করলেই হবে, জান্নাতের প্রয়োজন নেইঃ


আল্লাহ্‌র সাথে প্রেম নামের অত্যন্ত শ্রুতিকটু ও আদবহীন একটি শব্দ কিছু মুসলিম নামধারী ব্যক্তি ব্যবহার করে যার উদাহরণ কুরআন ও সুন্নাহয় কোথাও নেই। আল্লাহকে ভালোবাসা মানে প্রেম নয়, যা অর্থকে বদলে দিয়ে গুনাহের দিকে নিয়ে যায়। তবে আল্লাহকে ভালোবাসলে তা কিভাবে তা আল্লাহ্‌ স্পষ্ট কুরআনে বলে দিয়েছেন এভাবে, “(হে নবী) তুমি বলে দাও, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ করো; তাহলে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন ও তোমাদের গুনাহগুলোকে ক্ষমা করে দেবেন”। সেজন্য রাসুলের কাজ ও আদেশের অনুসরণ করাই হলো আল্লাহকে ভালোবাসা, আল্লাহ্‌র ‘প্রেমে’ নেশাগ্রস্থ হয়ে যাওয়া, পাগল হয়ে যাওয়া, আশিক হওয়া ইত্যাদি কোনভাবেই নয়। তদুপরি বলতে হয় শরাবের মতো হারাম বস্তু দিয়ে আল্লাহ্‌র প্রেমের তুলনা করা আল্লাহ্‌র পবিত্র নামকে ছোট করা এবং আদবের ভীষণ খেলাফের একটি উদাহরণ হতে পারে।
খোদার প্রেমের শরাব পিয়ে বেহুঁশ হ’য়ে রই পড়ে
ছেড়ে মসজিদ আমার মুর্শিদ এল যে এই পথ ধরে।
দুনিয়াদারির শেষে আমার নামাজ রোজার বদলাতে,
চাইনা বেহেশত খোদার কাছে নিত্য মোনাজাত করে।
(নজরুল ইসলামী সংগীত ৭৮)

আল্লাহর নামে আবিষ্ট হয়ে থাকলেই হবে, নামাজ রোজার প্রয়োজন নেইঃ


‘আল্লাহ্‌র প্রেম পেলেই চলবে, বিনিময়ে বেহশত চাই না’ এমন ধারণা একটি অতি বাড়াবাড়ি আর ভন্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়। কুরআনে আল্লাহ্‌ কোথাও এমন কোন বাড়াবাড়ির সুযোগ রাখেননি, হাদিসেও এ ব্যাপারে কিছুই নেই, বরং বাড়াবাড়ির বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
দেশে দেশে গেয়ে বেড়াই তোমার নামের গান।
হে খোদা এ যে তোমার হুকুম, তোমারই ফরমান।
এমনই তোমার নামের আছর
নামাজ রোজার নাই অবসর
তোমার নামের নেশায় সদা মশগুল মোর প্রাণ।
(নজরুল ইসলামী সংগীত ১১৭)

আল্লাহ্‌ কাঁদেনঃ

আল্লাহ্‌ কি করেন বা করেছেন তা কি কেউ জানে? আল্লাহ্‌ কুরআনে অসংখ্যবার বলেছেন গায়েব বা অদৃশ্যের জ্ঞান শুধুমাত্র তাঁরই আছে, আর কারো নয়। গায়েবের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাঃ কে তিনি যা জানিয়েছেন তার বাইরে রাসুলও কিছু জানেননা বলে কুরআন ও হাদিসে এসেছে। তাই কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে আল্লাহ্‌ তখন কি করেছেন বলা আল্লাহ্‌র উপর পরিস্কার মিথ্যারোপ।
কাশেমের লাশ ল’য়ে কাঁদে বিবি সকিনায়
আসগরের ঐ কচি বুকে তীর দেখে কাঁদে খোদায়।
(নজরুল ইসলামী সংগীত ১৫৯)

আল্লাহ্‌ খেলা করছেন, রসিকতা করছেনঃ

‘খেলিছো এ বিশ্ব ল’য়ে, বিরাট শিশু আনমনে’ বিখ্যাত ও শ্রুতিমধুর এই গানটি ভালো শোনালেও তা মূলতঃ আল্লাহ্‌র পবিত্র সত্ত্বাকে ছোট করে। একইভাবে আরো অনেক যায়গায় আল্লাহ্‌ খেলছেন বলে উল্লেখ করেছেন যেগুলো আল্লাহকে নিয়ে তামাশা করার মতো কাজ হিসাবে গণ্য হতে পারে।
তখনও প্রহরী জাগে বিনিদ্র দশ দিক আগুলিয়া
- রসিক খোদার খেলা
তারি বেদনায় প্রকাশে রুদ্র কারে করে অবহেলা। (সঞ্চিতা ২০২ পৃঃ)
তুমি কম্পিত জলাধারে ছবি আঁক,
উহারই বুকের তলে গোপনে থাক;
কর নিতি নিতি খেলা
সারাক্ষণ সারাবেলা
সুখ দুঃখ, হাসি-কান্না সবই তোমার শান।।
(বিপ্লবী গজল ৩০ পৃঃ)

জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসঃ

হিন্দু অনেক বিশ্বাসের মতো জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস কবি নজরুল করতেন কিনা তা আমরা জানিনা, তবে অনেক রচনায় তিনি এর উল্লেখ করেছেন, যেগুলো মুসলিম হিসাবে বিশ্বাস করা কুফর।
পরজনমে দেখা হবে প্রিয়
ভুলিও মোরে হেথা ভুলিও
এ জনমে যাহা বলা হ’ল না
আমি বলিব না, তুমিও বলো না।
জানাইলে প্রেম, করিও ছলনা,
যদি আসি ফিরে, বেদনা দিও।।
(সঞ্চিতাঃ ২৩৯ পৃ)

আবেগে এবং প্রচলিত সাহিত্যে মানুষ অনেক কথাই বাড়িয়ে বলতে পারে। তবে প্রসঙ্গটি যখন আল্লাহ্‌, রাসুল ও ইসলাম তখন নজরুলের এসব কবিতা-গান আবেগ ও ভাবের শিল্প বলে আমরা এড়িয়ে যাব সে উপায় কোনভাবেই নেই। একথার কোন অন্যথা নেই যে, আল্লাহর পবিত্র দ্বীন কোন মিথ্যা আর কবিতার উপর নির্ভরশীল নয় এবং কবিতা আল্লাহ্‌র দ্বীন প্রচারের কোন মাধ্যমও নয়। বরং আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ কিংবা রসুলুল্লাহ সাঃ এর উপর মিথ্যা আরোপ করলে যে কারো গন্তব্য যে জাহান্নাম সেকথা কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদিসে বহুবার এসেছে।

ইসলামের ভবিষ্যৎ দলাদলি নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাঃ একটি ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন এই বলে যে, তাঁর উম্মাত তিয়াত্তরটি মতবাদীয় দলে পরিণত হবে যার ভেতর বাহাত্তরটি যাবে আগুনে আর একটি যাবে জান্নাতের দিকে। এক ইসলাম নিয়ে, আল্লাহ্‌ ও রাসুলের নামে একটি দলের এক কথা এবং অন্য দলের সম্পূর্ণ বিপরীত কথা হরহামেশা শোনার পর সে ভবিষ্যতবাণীর কথা আরও বেশী করেই যেন মনে পড়ে। কেউ বলছে কবরে সিজদাহ করা শির্ক, কেউ বলছে কবরে সিজদাহ করাই ইসলাম। কেউ বলছে আল্লাহকে পাবার জন্য পীর ধরতেই হবে, কেউ বলছে পীর বলতে কিছু ইসলামেই নেই। তবে এসব কিছুই সম্ভব হচ্ছে সাধারণ মানুষের ইসলাম নিয়ে অজ্ঞতার সুযোগে। রাসুলুল্লাহ সাঃ সামান্য একটি প্রেসক্রিপশন দিয়েছিলেন গোমরাহী থেকে বাঁচার উপায় হিসাবে আর তা হলো “কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরে রাখা”। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো ‘মুসলমান’ নামধারী অধিকাংশ লোকেরাই কুরআনের দশটা আয়াতের অর্থ অথবা বিশুদ্ধ দশটি হাদিস ভালোভাবে না জানা সত্ত্বেও নিজেদের ‘কুরআন ও সুন্নাহ’ আঁকড়ে ধরে রাখা দলটির ভেতর ভাবে। ভয়ংকরভাবে তাদের যুক্তি ও সন্তুষ্টির যায়গাটি হলো-“আমরা যাদের অনুসরণ করছি, তারা ভালোভাবে জেনেই এ পথে ছিলেন”। আর এভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম গোমরাহির অতলে তলিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় খালি হাতে। আর এই জ্ঞানশূন্যতার সাইড এফেক্ট হিসাবে ইসলাম বিধ্বংসী আকিদা ও বিশ্বাস প্রচার করেও ইসলামের কবি হয়ে যায় ফেরদৌসী, ওমর খৈয়াম, কাজী নজরুলরা। মুসলিম হিসাবে এ আমাদের দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কি হতে পারে?

নজরুল নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই তিনি একদিকে কবিতা দিয়ে আল্লাহকে অস্বীকার করেছেন আবার একইসাথে কবিতা দিয়েই আল্লাহ্‌র স্তুতি গাইবার চেষ্টা করেছেন। একদিকে তিনি আলিম সমাজের বিষোদগার করেছেন অপরদিকে রাসুলের গুন গাইতে গিয়ে অবাস্তব বাড়াবাড়িতে মেতে উঠেছেন। একদিকে রচনা করেছেন শ্যামা সংগীত অন্যদিকে ইসলামী সংগীতও রচনা করেছেন। এ যেন বিভিন্ন স্কুল অব থিংকিং-এ উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ানো। কবিদের নিয়ে আল্লাহ্‌ কুরআনে সুরা আশ শু’আরায় যা বলেছেন তার সামান্য অন্যথা কখনো হয়নি আর কিয়ামাত পর্যন্ত হবেওনা, আর তা হয়নি নজরুলের ক্ষেত্রেও। আল্লাহ্‌ বলেছেন, “আর কবিরা (হলো তারাই), কেবল পথভ্রষ্ট লোকেরাই যাদের অনুসরণ করে। তুমি কি দেখোনা তারা (কল্পনার হাওয়ায় চড়ে) উদ্ভ্রান্তের মতো প্রতিটি (কল্পনার) উপত্যকায় উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ায়। আর তারা তা বলে বেড়ায় যা তারা নিজেরাই করে না” (সুরা শুআরাঃ ২২৪-২২৬)। এই আয়াত নাজিল হওয়ার সময় আরব উপদ্বীপের কয়েকজন বিখ্যাত কবি ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সাহাবা যাদের মধ্যে ছিলেন ক্বাব বিন মালিক, হাসসান বিন সাবিত এবং আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা (রাঃ)। তাঁরা আয়াতগুলো শোনার পর ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে রাসুল সাঃ এর সাথে দেখা করলেন। রাসুল সাঃ বললেন, “সম্ভবত তোমরা পরের আয়াতটি শোননি। এরপরে তিনি শোনালেন সে আয়াতটি যা হলো- “তারা ব্যতীত, যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করেএবং আল্লাহকে খুব ক’রে স্মরণ করে আর অত্যাচারিত হবার পর প্রতিরক্ষা করে। আর (কবিদের) যারা অন্যায় করেছে তারা অচিরেই জানতে পারবে কোন বিপর্যয়ে তারা প্রত্যাবর্তন করছে” (সুরা আশ শুআরা ২২৭)”। সত্যিই কি দারুন সত্য আল্লাহ্‌র কথা, আর কী বাস্তব। আল্লাহ্‌ আমাদের পথভ্রষ্টতা থেকে হিফাজত করুন।

কৃতজ্ঞতাঃ
নজরুলের ইসলামী রচনার এই আলোচনার অনেকটুকু নেয়া হয়েছে আবদুল হামিদ ফাইযী রচিত ‘নজরুল ইসলামী সংগীত ও কবিতায় অনিসলামী আক্বীদা’ নামের বই থেকে। বইটিতে কুরআন ও হাদিসের চমৎকার রেফারেন্স সহ তিনি আরো বিশদভাবে আলোচনা করেছেন।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×