somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসলিম-অমুসলিম সম্পর্কঃ জানা, অজানা

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বছর দুয়েক আগে লোকচক্ষুর অন্তরালে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে। চেচনিয়ার মুসলিম তথা ইসলামের বিরুদ্ধে মিশন নিয়ে কাজ করেছিলো কেজিবির এক সিক্রেট এজেন্ট যার নাম ছিলো আলেক্সান্ডার লিটভিনেনকো। দীর্ঘদিন ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করার পর এক সময় কেজিবি ছেড়ে দেন এবং অজ্ঞাত এক বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি। তাঁকে লন্ডনের এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার পরও তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এ সময় একদিন তাঁর বাবাকে তিনি জানান মৃত্যু হলে তাকে যেন মুসলিম রীতিতে জানাজা ও কবর দেয়া হয়। পরবর্তিতে বাবাকে তিনি খুলে বলেন যে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ইসলামের দীর্ঘদিনের শত্রু এই ব্যক্তিটিকে কি তাহলে জেনে শুনেই বিষ দেয়া হয়েছিলো ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ায়-এমন প্রশ্ন উঠে আসে বিশ্বজুড়ে, তবে তা ধামাচাপা পড়ে যায় দ্রুত।

আলেক্সান্ডার লিটভিনেনকোর কথা মনে পড়লো দেশের একজন স্বনামধন্য মানবতাবাদী বুদ্ধিজীবীর কথার প্রেক্ষিতে। মুসলিমের নাম ধারণ করেও নানা কথার মারপ্যাঁচে তিনি ইসলামকে সরাসরি আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে বলছেন, “ধর্মীয় গোঁড়ামির মূলোৎপাটন আমরা করবোই”। সত্যি কি দারুন বৈপরীত্য। দুঃখ পেলাম এই ভেবে যে, ইসলাম সম্পর্কে প্রায় শূন্য ধারণা নিয়ে আজ তারা ইসলাম ও মানবতাকে বিপরীতার্থক হিসাবে দেখাচ্ছে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তারা বলছে ইসলাম হচ্ছে সবচেয়ে অসহিষ্ণূ ধর্ম আর ইসলাম অমুসলিমদের জন্য খড়গহস্ত। কিন্তু সত্যটা কি?

মুসলিমদের ব্যক্তিগত মানবতার অবিশ্বাস্য সব উদাহরণ পৃথিবীময় আছে। এগুলো ছাড়াও জাতিগত মানবতার যে উদাহরণ পৃথিবীতে ইসলাম রেখেছে তার ধারে কাছেও কোন জাতি যেতে পারেনি। সামান্য কয়েকটা উদাহরণ দেখা যাক।

মদীনায় ইসলামী শাসন চলছে। সে সময় আরব উপদ্বীপের শেষ সীমায় রোমান সম্রাটের অধীনস্ত আরব খৃষ্টান গোত্র ‘বনু তাঈ’ বাস করতো। নানা কারণে তারা মুসলিমদের উত্তক্ত করতো এবং ভীষণ শত্রুতাও পোষণ করতো। সমর কুশলী একদল সাহাবার সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকশ বাহিনী এক অভিযানে বনু তাঈ গোত্রকে পরাজিত করলো। পালিয়ে গেলো তাদের নেতা ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিখ্যাত বিশপ আ’দী ও বন্দী করে আনা হলো আদীর বোন সহ অনেককে। পরাজিত জনপদের সকলেই ভিটে ছেড়ে পালিয়ে গেলো। মদীনায় বন্দীদের দলটি এলে তাদের যথাযোগ্য সম্মান দেন রাসুলুল্লাহ সাঃ। বনু তাঈ গোত্রের পূর্বতন বিখ্যাত দানবীর ছিলেন হাতিম তাঈ এবং রাসুলুল্লাহ সাঃ এ দানবীরের সম্মানে আদীর বোন হাতিম তাঈ’র কন্যাকে বিনা মুক্তিপণে ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেন। তিনি অন্য সব বন্দীদেরও আজাদ করে দেন। হাতিম তাঈ কন্যা রাসুল সাঃ এর মহানুভবতায় বিস্মিত হন এবং তিনি মদীনায় কিছুদিন থাকার সংকল্প করেন। অল্পদিনের ভেতরই ইসলামে প্রবেশের ঘোষণা দেন তিনি। ফিরে যান নিজের এলাকায়। নিজের ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন রেখে তিনি ভাই আদীকে কৌশলে মদীনা যেতে রাজি করান। আদী বিন হাতিম মদীনা এসে রাসুল সাঃ এর সাথে দেখা করেন। বাইবেল ও তাওরাতে বিশেষজ্ঞ এই ব্যক্তি নিশ্চিত হন এই ব্যক্তিই প্রতিশ্রুত রাসুল। তিনিও ইসলাম গ্রহণ করেন। আদীর ইসলাম গ্রহণ ছিলো আরব ও রোমের সকলের জন্য চোখ কপালে ওঠাবার মতোই ঘটনা। আদী ইসলাম গ্রহণ করাতে বনু তাঈ’র সকলেই ইসলামে আসার ঘোষণা দেয়। তবে পরবর্তিতে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর মৃত্যুর পর ভূতপূর্ব খৃষ্টান এই বনু তাঈ গোত্র আবার ইসলাম ত্যাগের ঘোষণা দেয়, যদিও বিজ্ঞ আদী বিন হাতিম ঈমানের উপর দৃঢ় ছিলেন আর তিনি ছিলেন ইসলামী সেনাদলের অন্যতম নীতিনির্ধারক যোদ্ধা। অবশ্য পরবর্তিতে সমগ্র তায়ী গোত্র আবার ইসলামে ফিরে আসে, যার পেছনে ছিলো আদী।

মক্কা বিজয় ও তৎপরবর্তিকালে অমুসলিমদের সাথে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর মহানুভবতা নিয়ে আলোচনা করা হলো না। মানব ইতিহাসে বিরলতম এই ক্ষমার ঘটনা আমাদের সকলের জানা।

আবু বকর রাঃ এর খিলাফতের সময় থেকেই মুসলিমরা নিকটবর্তি নির্যাতিত অমুসলিম জনপদের আহবানে যুগপতভাবে পারস্য ও রোমান সাম্রাজ্যের সীমান্ত আক্রমণ করে। একে একে তাদের অসাধারণ সব বিজয়ও আসতে থাকে। পরাজিত জনপদের খৃষ্টানরা আশা করছিলো বর্বোরচিত অত্যাচারের। তারা অবাক হয়ে দেখলো কোন অত্যাচার তো নয়ই, বরং সকল আইন প্রয়োগের বেলাতেও মুসলিম অমুসলিম কোন ভেদাভেদ নেই। অন্যায়ভাবে কোন অমুসলিমের এক কানাকড়ি সম্পদও কেউ গ্রাস করতে পারেনা, কেউ তাদের ধর্ম পালনে বাধা দেয় না, জোর করে কাউকে মুসলিম বানানো হয়না। কেবলমাত্র জিজিয়া করের বিনিময়ে তারা নিজেদের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সবই পাচ্ছে। এই অভূতপূর্ব ইনসাফ রোমান ও পারস্য কেন, সারা পৃথিবীই কম দেখেছিলো। আর তাই সে সকল যুবকেরাই সাহাবাদের বা তাবেয়ীদের কাছে এসে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করছিলো যাদের বাবা-চাচারা যুদ্ধের ময়দানে সাহাবাদের হাতে নিহত হয়েছে।

আবু বকর রাঃ এর খিলাফতকালে খালিদ বিন অয়ালিদ এবং উমার রাঃ এর সময় আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ এর নেতৃত্বে মুসলিমদের অসাধারণ সব বিজয় আল্লাহ্‌ দান করেন রোমানদের বিপক্ষে। হিমস ছিলো এশিয়ান অঞ্চলে রোমান খৃষ্টানদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। আবু উবাইদাহ ৬৩৪ সালে হিমস জয় করেন। জয়ের পর মুসলিমরা জিজিয়ার বিনিময়ে অমুসলিমদের সকল অধিকার নিশ্চিত করলো। হিমসবাসী দেখলো সমঅধিকার ও ইনসাফের শাসন কাকে বলে। তবে বছর খানিকের মাথায় রোমান সম্রাট বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে মুসলিমদের চুড়ান্ত আঘাত করতে আসে। কৌশলগত কারণে মুসলিম বাহিনী হিমস থেকে বেরিয়ে গিয়ে মোকাবেলার কৌশল নেয়। হিমস ছাড়ার আগে মুসলিম বাহিনী বিগত সময়ের সকল জিজিয়া ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত জানায় খৃষ্টান শহর নেতাদের। বিস্মিত হয় নগরবাসী। এও কি কখনো সম্ভব? খৃষ্টান নেতারা জিজ্ঞেস করল, “যা আপনারা নিয়েছেন তা আর ফেরত দিচ্ছেন কেন?” আবু উবাইদাহ উত্তর করলেন, “তোমাদের কাছ থেকে জিজিয়া আমরা নিয়েছিলাম ইসলাম নির্ধারিত কিছু শর্তের বিপরীতে, যার ভেতর ছিলো তোমাদের নিরাপত্তা প্রদান। আজ আমরা তোমাদের নিরাপত্তা দিতে পারছি না আর তাই এই জিজিয়া নিজেদের কাছে রাখার কোন অধিকারও আল্লাহ্‌ আমাদের দেননি”। কৃতজ্ঞ চোখগুলোর সামনে দিয়ে চুলচেরা হিসাবে সকল জিজিয়া ফেরত দিয়ে মুসলিম বাহিনী হিমস ছাড়ল। আবু উবাইদাহ রাঃ একই নির্দেশ দিলেন অন্যান্য কমান্ডারদের। এভাবে সিরিয়ার যে সকল স্থান মুসলিম বাহিনী ত্যাগ করলো তাদের সবার জিজিয়া ফেরত দেয়া হলো। লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হলো এই যে, এবার তারা মুসলিমদের বললো, স্বজাতির নিপীড়নের চেয়ে তাদের কাছে বরং বিজাতীয় মুসলিমের শাসনই বেশী প্রিয়।

রাসুলুল্লাহ সাঃ এর ইন্তেকালের প্রায় অর্ধশতাব্দী পরের ঘটনা। মুসলিম বিশ্বের খলিফা তখন ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিক। চার খলিফার মৃত্যুর পর বেশ কিছু গৃহযুদ্ধ শেষে মুসলিম বিশ্ব আবার পুরোপুরি শান্ত। এ সময় বিখ্যাত সমর কুশলী তাবেয়ী মুসা বিন নুসাইর আফ্রিকা মহাদেশের প্রায় পুরোটা ইসলামী সাম্রাজ্যের ভেতর নিয়ে আসেন। মরক্কোতে তিনি থাকা অবস্থায় একদিন সাগর পাড়ি দিয়ে তার সাথে এসে দেখা করলেন সাগরের ওপারের প্রতিবেশী স্পেনের জিব্রাল্টার উপকূলের খৃষ্টান শাসক কাউন্ট জুলিয়ান, যিনি স্পেনের সম্রাট রড্রিক্সের অত্যাচারে জর্জরিত ছিলেন। এমনকি জুলিয়ানের অবিবাহিত মেয়েকেও রড্রিক্স নিজ হেফাজতে থাকা অবস্থায় ধর্ষণ করে। জুলিয়ান মেয়ের সম্ভ্রমহানীর বিচারের আশায় স্পেনের প্রধান পোপের কাছে যান। তবে রড্রিক্সের ক্ষমতাভোগী সেই পোপ তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। জুলিয়ান ক্রুদ্ধ হয়ে বিদ্রোহের চেষ্টা করলে রড্রিক্স বিরাট সেনাদল প্রেরণ করে তাকে উৎখাত করতে। অসহায় জুলিয়ান শুনেছিলো মুসলিমদের মহানুভবতার কথা। সে শুনেছিলো এই জাতি হলো এমন জাতি, যারা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে অত্যাচারিতের পাশে দাঁড়ায়। তাই একদিন রাতের আঁধারে জাহাজে চেপে সাগর পাড়ি দিয়ে মরক্কো পৌঁছে জুলিয়ান শান শওকতহীন মুসা’র তাঁবুতে প্রবেশ করেন। আবগাপ্লুত হয়ে তিনি সাহায্য প্রার্থণা করলেন মুসার কাছে। মুসা বিন নুসাইর তাঁর সেনাদলের একজন তাকওয়াবান আফ্রিকান অফিসার তারিক বিন জিয়াদকে সাত হাজার সৈন্য দিয়ে জুলিয়ানকে সাহায্য করতে পাঠালেন। তারিক যখন জিব্রাল্টারে নামলেন, তখন শুনলেন গোয়েন্দা মারফত জুলিয়ানের তৎপরতার খবর পেয়ে রড্রিক্স নিজেই এক লাখ সৈন্য সহ হাজির হয়েছে তারিক সহ জুলিয়ানকে ধ্বংস করার জন্য। মাত্র সাত হাজার সেনা নিয়ে তারিক এখন কি করবেন? তিনি উপকূলে নেমে জাহাজ থেকে সব সেনা ও রসদ নামিয়ে সবগুলো জাহাজ পুড়িয়ে ফেললেন। সেনাদলকে বললেন, “আমরা বের হয়েছি আল্লাহ্‌র জন্য এবং আমাদের মৃত্যুও হবে কেবল তাঁরই জন্য। আমি সকল জাহাজ পুড়িয়ে দিলাম এ কারণে যে, আমাদের যেন ফিরে যাবার কোন পিছুটান না থাকে। তোমরা জেনে রেখো, এই জমিনে আমরা নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে আসিনি, বরং এ জমিন হলো আল্লাহ্‌র এবং আমরা তাঁর সন্তুষ্টির জন্যই এখানকার মজলুমকে সাহায্য করতে এসেছি। মনে রেখো, যদি আমরা জয়ী হই তা হবে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ আর যদি আমাদের মৃত্যু হয়, তবে আমরা তো এমন মৃত্যুর প্রত্যাশাতেই আল্লাহ্‌র কাছে কেঁদে থাকি”। তারিকের সকল সৈন্য চিৎকার দিয়ে বললো, “আমরা আমৃত্যু আপনার সাথে লড়বো”। স্পেনের আকাশ কেপে উঠলো নতুন আওয়াজে-“আল্লাহু আকবার”। এরপরই ইতিহাস সাক্ষী হলো মাত্র সাত হাজার সৈন্যের কাছে এক লাখ সেনার এক অসীম সাহসী লড়াইয়ের যেখানে রড্রিক্স পরাজিত ও নিহত হলো।

দীর্ঘ অবরোধের পর উমার রাঃ এর শাসনকালে মুসলিমরা জেরুজালেম বিজয় করেছিলো। কোন রক্তপাত হলো না, কোন খৃষ্টান বা ইয়াহুদী নিহত হলোনা, কোন অমুসলিমকে ঘর ছাড়তে হলোনা। সেখানে তখন একই সাথে সকল ধর্মমতকে সহাবস্থান করতে দেয়া হলো। এর সাথে মুসলিমদের ইনসাফপূর্ণ শাসনে খ্রিষ্টানদের অত্যাচারে জর্জরিত জেরুজালেম পেলো শান্তির সুবাতাস। এর কয়েক শতাব্দী পর পোপ দ্বিতীয় আরবানের আহবানে প্রথম ক্রুসেডে খৃষ্টানদের সম্মিলিত বাহিনী আবার জেরুজালেম বিজয় করে। বিজয়ের পর সকল ঘর থেকে ধরে ধরে মুসলিম যুবক ও পুরুষদের হত্যা করা হলো। ধর্ষনের মহোৎসব চলল নারীদের ওপর। ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা হলো হাজার হাজার মুসলিম পরিবারকে। এক সময় ঘোষণা করা যারা মসজিদুল আকসায় আশ্রয় নেবে তারা নিরাপদ থাকবে। ঘোষণা শুনে কয়েক হাজার নিরস্ত্র অসহায় মুসলিম পুরুষ-নারী-শিশু আশ্রয় নিলো মসজিদুল আকসায়। শহরে হত্যাযজ্ঞ শেষ করে সৈন্যরা পৌঁছালো আল আকসায়। হায়, এবার মসজিদের গেট চারদিক থেকে বন্ধ করে দিয়ে মসজিদের ভেতরই হত্যা করা হলো অসহায় আশ্রিতদের। অমুসলিম ঐতিহাসিকরা পর্যন্ত এ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন যে, সেখানকার রক্তে কম্পাউন্ডের ভেতরে ঘোরার খুর পর্যন্ত ডুবে গিয়েছিলো।

এ ঘটনার প্রায় এক শতাব্দী পর প্রখ্যাত মুসলিম বীর সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর হাতে আল্লাহ্‌ আবার জেরুজালেম বিজয় দান করলেন। শহরে অবস্থিত হাজার হাজার খৃষ্টান এবার ভয়ে কম্পমান। এবার প্রতিশোধ নেয়া হবে প্রথম ক্রুসেডের। বিজয়ীর বেশে জেরুজালেমে এসে সালাহউদ্দীন আল আকসায় জুমা’র নামাজ আদায় করলেন। নামাজের পর তিনি ঘোষণা করলেন-সকল মানুষ আজ নিরাপদ। সকল অমুসলিমের ধন-সম্পদ নিরাপদ। যারা সব কিছু নিয়ে চলে যেতে চায় তাদেরও বাধা দেয়া হবে না। অভিভূত হলো খৃষ্টানরা। সালাহউদ্দীনকে তারা উপাধি দিলো ‘সালাদিন দ্য গ্রেট’।

আর এভাবেই যুগে যুগে ইসলাম ও মুসলিমরা দাঁড়িয়েছে অত্যাচারিত জনপদের পাশে। উসমানী তুর্কি খলিফার কাছে নিজ দেশ থেকে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন সুইস রাজা, জার্মানীতে খৃস্টানদের হাতে ইহুদী হত্যাযজ্ঞের সময় যখন সমগ্র পৃথিবী যখন ইহুদীদের আশ্রয় দিয়ে অস্বীকার করেছে, তখন তাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল ছিলো মুসলিম উসমানীয়া খিলাফত। জাতিগতভাবে ইয়াহুদীরা মুসলিমদের অন্যতম শত্রু হলেও অত্যাচারিতদের আশ্রয় দেয়া ইসলামের অন্যতম ফরজ হিসাবেই মুসলিমরা তা দিয়েছে। ইসলাম ও মুসলিমদের মহানুভবতার ফলে লক্ষ লক্ষ অমুসলিম জনগোষ্ঠী মুসলিম ভূমিতে মাইগ্রেট করেছে নিজেদের ধর্ম পালন করার জন্য এবং স্বজাতির অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য। বিগত চৌদ্দশ বছর পৃথিবী দেখেছে ইসলাম ও মুসলিমদের মানবতা ও মহানুভবতা।

এবার কিছু বিপরীত চিত্র দেখে নেয়া যাক।

রোমান সম্রাট কন্সট্যন্টিনোপলের খৃস্টধর্ম গ্রহণের আগে গীর্জার পাদ্রী ও শাসকদল ছিলো দুই বিপরীত নৌকার মাঝি। শাসকদের অত্যাচারে নিষ্পেশিত ছিলো সাধারণ মানুষ ও পাদ্রীরা। হুকুমতের বিরুদ্ধে গেলে নির্বিচারে হত্যা করা হতো তাদের। কন্সট্যান্টিনোপলের পর এ অবস্থার পরিবর্তন হয়ে পালটে গেলো বাতাসের গতি। শাসন ক্ষমতায় ভাগ বসালো গীর্জা। এক সময় সম্রাট থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী পর্যন্ত সকলেই হয়ে গেলো তাদের হাতের পুতুল। পাদ্রীদের বীভৎস অত্যাচারের রূপ দেখলো এ পৃথিবী। ‘ইনকুইজিশন’ নামের একটি সংস্কার আদালত প্রতিষ্ঠা করা হলো যার কাজ ছিলো গীর্জার সামান্য বিরোধিতা যারা করে তাদের নির্মমতম শাস্তি দেয়া। যাদের নামে গীর্জায় নালিশ আসতো তাদের অপরাধ প্রমাণিত হোক আর না হোক তাদের সকল সম্পদ গীর্জার হাতে তুলে দিতে হতো। গীর্জার বিরুদ্ধে সামান্য কিছু বলাও ছিলো ধর্ম ত্যাগের সামিল। এর শাস্তি ছিলো ইনকুইজিশন সেলে মৃত্যুদন্ড। শুধু বিধর্মীরা নয়, খৃষ্টান সম্পদশালীদের সম্পদ হাত করার জন্য তাদেরও ইনকুইজিশন করা হতো। এর ভয়ে লক্ষ লক্ষ ইহুদী খৃষ্টান হতে বাধ্য হয়েছিলো। খৃষ্টধর্ম হয়ে উঠলো পৃথিবীর সর্বাধিক মানুষের অনুসৃত ধর্ম। মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে কেড়ে নিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলতো গীর্জা আর পাদ্রীরা। খৃষ্টধর্ম কম পালন করার জন্য কোন মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেবার জন্য দুজন সাধারণ মানুষ বা একজন পাদ্রীর সাক্ষীই যথেষ্ট ছিলো। যারা গ্রেফতার হতো তারা দোষ করুক বা না করুক অপরাধের স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করতো ইনকুইজিশন কিংবা দমন সংস্থা।

তারিক বিন জিয়াদের ঐতিহাসিক স্পেন বিজয়ের পর আটশ বছর স্পেনে ইসলামী শাসন ছিলো। সে সময় স্পেনে ছিলো ইসলাম, খৃষ্টবাদ আর ইহুদীদের চমৎকার সহাবস্থান। কালের আবর্তে স্পেনের মুসলিম শাসকগণ বিলাসিতা, সুরা আর নারীর মোহে আবিষ্ট হয়ে পড়েছিলো। প্রতিশোধপরায়ণ গীর্জার অধিপতিরা এই সুযোগে তৈরী করলো হাজার হাজার মুনাফিক যারা নিজেদের দীনকে একটি কড়ির বিনিময়েও বিক্রি করে দিতেও পিছপা হতো না। কিন্তু এসব সত্ত্বেও তারিকের স্পেন বিজয়ের পর থেকে পরবর্তি আটশ বছরে একজন অমুসলিমকেও জোর করে ইসলামে আনা হয়নি। নিজেদের ভেতর দলাদলি আর মুনাফেকীর ভয়াবহ বিষে জর্জরিত হয়ে ১৪৯২ সালে রাজা ফার্দিনান্দ ও রানী ইসাবেলার হাতে এক চুক্তির মাধ্যমে স্পেনের শেষ মুসলিম সালতানাত গ্রানাডার পতন হয়। গ্রানাডার সেনাপ্রধান মুসা বিন আবি গাসসান ও সত্যপন্থী আলিমগণ যুদ্ধের মাধ্যমেই ফার্দিনান্দ-ইসাবেলার সাথে মোকাবেলার পক্ষপাতি ছিলেন। কিন্তু তাদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বা উজিরে আজম আবুল কাশিম, যিনি ছিলেন ফার্দিনান্দের কেনা গোয়েন্দা ও মুনাফিক, এর স্বজাতি বিধ্বংসী ষড়যন্ত্রে চুক্তি বাস্তবায়িত হয়। চুক্তির অগণিত ধারার ভেতর একটি ছিলো এই যে, চল্লিশ বছরের ভেতর গ্রানাডায় ইনকুইজিশনের কোন সেন্টার বসানো যাবে না, এখানে কোন মুসলিমকে দ্বীন ত্যাগে বাধ্য করা যাবে না, তাদের সকল মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিরাপদ থাকবে। কিন্তু গ্রানাডা পতনের কিছুদিন পরই স্পেনের আর্চবিশপ জেমস গ্রানাডা এসে মুসলিমদের হুকুম দেয় তাদের সকল আরবী বই ও কুরআন সেন্ট্রাল চার্চে জমা দেয়ার জন্য যেটা মসজিদ থেকে গীর্জায় রূপান্তর করা হয়েছিল। শাসকদের সেনাবাহিনী নেমে পড়লো মাঠে। গরুর গাড়িতে বোঝাই করা হাজার হাজার ইসলামী বই জমা হতে লাগলো গীর্জায়। একদিন সন্ধ্যায় গ্রানাডার আলবিসিনের চৌরাস্তায় সকল আরবী বই ও কুরআন পাহাড়ের মতো স্তুপ করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় আর্চবিশপ জেমস। কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে হাজার হাজার মুসলিম নরনারী। খৃষ্টান ঐতিহাসিকরা বর্ণনা করেছেন সেদিন দশ লক্ষ পাঁচ হাজার ইসলামী বই ও কুরআনে আগুন দেয়া হয়েছিলো। মানব ইতিহাসে এমন ঘটনা দুটি নেই।

সেদিনের পর থেকে স্পেনে বিদ্রোহ দমনের নামে হত্যা করা হতে লাগলো হাজার হাজার মুসলিমকে। জেমস হুকুম জারি করলো স্পেনে থাকতে হলে হয় খৃষ্টান হতে হবে নতুবা মৃত্যুবরণ করতে হবে। চুক্তির শর্ত ভেঙে তৈরী করা হলো ইনকুইজিশন সেন্টার। হাজার হাজার মুসলিমকে হত্যা করা হলো সেখানে। প্রাণভয়ে ভীত হয়ে অসহায় অনেক মুসলিম খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য হলো। যারা ইসলাম ছাড়তে অস্বীকার করতো প্রকাশ্যে ফাঁসি বা ক্রুশবিদ্ধ করা হতো তাদের। যারা খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করলো তাদেরও রেহাই হলো না। তারা সকল সময়ই থাকতো সন্দেহের চোখে। মুসলিম থেকে খৃষ্টান হওয়া জনগোষ্ঠীকে নাম দেয়া হলো ‘মরিসকো’। তাদের জন্য আলাদা পোষাক আর নিম্নতম সামাজিক মর্যাদা নির্ধারণ করে দেয়া হলো। কথায় কথা তাদের ঢুকানো হতো ইনকুইজিশন সেলে। আর এভাবেই আটশো বছর স্পেন শাসন করার পরও একজন মুসলিমও যেন স্পেনে না থাকে তার ব্যবস্থা করা হলো।

নব্বই দশকের আগে পৃথিবীতে সোভিয়েত রাশিয়া আর আমেরিকা যখন দুটি সুপার পাওয়ার, তখন রাশিয়া দখল করলো আফগানিস্তান। নির্বিচারে তারা হত্যা করতে লাগলো নিরস্ত্র মুসলিমদের। আর সব বিষয়ে একে অপরের বিরোধিতা করলেও এখানে এসে মুখে তালা দিলো আমেরিকা কিংবা ইহুদী-খৃষ্টান জোট। ইসলাম যে তাদের বহু পুরোনো শত্রু। কিন্তু আল্লাহ্‌ বিজয় দিলেন মুসলিমদের, যা কেউ কল্পনাতেও আনতে পারেনি।

নব্বই দশকের শেষে বসনিয়ার নিরীহ মুসলিম জনগণের উপর হামলে পড়ল সার্ব বাহিনী। হত্যার পাশবিক উৎসব দেখলো ইউরোপ। এক রাতেই হত্যা করা হলো পাঁচ হাজার নারী-পুরুষকে।

মুসলিম কিংবা অমুসলিম যে কেউ বিপদে পড়ুক, তাদের জন্য নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে এগিয়ে এসেছে মুসলিমরাই। বিপদাপন্ন অমুসলিমের জন্য সহানুভূতি দেখানো শুধু নয়, নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়ার ঘটনা ইসলামে অনেক আছে। সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর কথা আমরা আগে আলোচনা করেছি। একটি খৃষ্টান মেয়ের সম্ভ্রম বাঁচাতে তাঁর এক প্লাটুন সেনা নিজেদের জীবন দিয়েছিলেন একটি ঘটনায়। তবে একথা সত্যি যে, যে কেউ ইসলামের বিরুদ্ধে লড়তে এসেছে, অস্ত্র সমর্পণ না করলে তাদের একজনকেও ছেড়ে দেয়নি মুসলিমরা। তবে যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তারা দেখেছে বন্দীদের সাথে কি রকম অনন্য ব্যবহার মুসলিমরা করেছে। অতীত ইতিহাস বাদ দিয়ে এযুগেই দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, চেচনিয়াতে যেসব রাশিয়ান সেনা মুসলিমদের হাতে আত্মসমর্পণের পর বন্দী হচ্ছে তাদের বড় একটা অংশ ইসলাম গ্রহণ করছে। একই ঘটনা ঘটছে আফগানিস্তান ও অন্যান্য যুদ্ধক্ষেত্রে। অবিশ্বাসীদের মিডিয়া এসব খবর অন এয়ারে আসতে দেয়না।

কুরআনে আল্লাহ্‌ বলেছেন, “তোমরা যারা ঈমান এনেছো, তোমরা ইয়াহুদী ও নাসারাদের বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করোনা। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের ভেতর যারা তাদের বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে তারা তাদেরই একজন হিসাবে গণ্য হবে”। আল্লাহ্‌ আরো বলেছেন, “মুমিনরা যেন মুমিন ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ না করে”। আল্লাহ্‌র এ ঘোষণা আদর্শিক বন্ধুত্বের জন্য প্রযোজ্য এবং প্রযোজ্য সেসব ক্ষেত্রে যেখানে অমুসলিমদের কোন কৃষ্টি বা কাজ ইসলামের বিপরীতে হলেও তা মেনে নেয়া ও গ্রহণ করা হয়। কুরআনের এ আদেশের বাস্তবায়ন নিজের জীবনে করে দেখিয়ে গেছেন রাসুলুল্লাহ সাঃ। মনে পড়ছে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর হিজরতের সময়কার কথা। তাঁকে জীবন্ত বা মৃত ধরে এনে দেয়ার জন্য একশ লাল উট (যা বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী দশ কোটি টাকারও বেশী) পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। তাকে খোঁজার জন্য মক্কা থেকে বের হবার প্রতিটি পথে ছড়িয়ে পড়েছে শত শত লোক। মদিনা যাবার সম্ভাব্য সকল রাস্তায় তন্ন তন্ন করে খোঁজা হচ্ছে। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাঃ মদীনা যাবার জন্য এমন পথ বেছে নিলেন যা প্রায় কখনও ব্যবহৃত হয় না। এ পথটি তিনি চিনতেন না। তাঁকে পথ চিনিয়ে মদীনা পৌঁছে দিল যে লোকটি, তার নাম আবদুল্লাহ বিন আরাকাত। তিনি ছিলেন একজন অমুসলিম। নিজ সম্প্রদায় যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এবং যাকে ধরিয়ে দিলেই নিশ্চিতভাবে মক্কার সেরা ধনীদের একজন হয়ে যাওয়া যাবে, তাঁকেই অসাধারণ আমানতদারী দেখিয়ে আবদুল্লাহ বিন আরাকাত পৌঁছে দিয়েছিলেন মদীনা। কতটুকু গভীর সম্পর্ক তাঁর সাথে রাসুলের ছিলো। ব্যক্তিগত জীবনে কাফির বা অমুসলিমদের সাথে সদ্ভাব রাখা, তাদের ব্যথায় সমব্যথী হওয়া, তাদের বিপদে সবার আগে এগিয়ে যাওয়া মুসলিমদের কর্তব্য। মক্কায় যখন রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নামে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়েছিলো, সে সময়ও অনেক ঘোর শত্রু তার সাথে দেখা করে নিজের মূল্যবান সম্পদ জমা রেখেছে বা গোপনতম কথা জানিয়ে পরামর্শ নিয়ে বুকের কষ্ট লাঘব করতে এসেছে। তিনি তাদের আমানতের এক চুলও নষ্ট করেননি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি তাদের সাথে মিশেছেন ঘনিষ্টভাবে, তাদের বাসায় নিজে খেয়েছেন ও নিজের বাসায় তাদের খাইয়েছেন। আয়িশা রাঃ থেকে সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, মৃত্যুর সময় রাসুলুল্লাহ সাঃ এর যুদ্ধবর্ম একজন ইহুদীর কাছে বন্ধক রাখা ছিলো। তিনি সেটা বন্ধক রেখে (সম্ভবত) দুই সা গম ধার করেছিলেন ইহুদি ব্যক্তিটির কাছ থেকে। এটা গভীরভাবে ভেবে দেখার ব্যাপার বটে। তখন বাইতুল মাল শূণ্য ছিলো না, তাঁর মেয়ের জামাই উসমান ছিলেন আরব উপদ্বীপের সেরা ধনীদের একজন, ঘনিষ্ট অনেক সাহাবা ছিলেন সহায় সম্পদে ভরপুর। তাদের কেউ একজনকে বললে দুই সা কেন, হাজার সা এনে তারা হাজির করতো।

ইহুদী-খৃষ্টান সহ পৃথিবীর অন্যান্য অমুসলিম জাতির প্রতি যে ইনসাফ ও আদল ইসলাম দেখিয়েছে তা তাদের কেউ কারো প্রতিই দেখায়নি। তবে ইসলামের এই মহানুভবতা তারা মনে রাখেনি কখনো। ইসলামের বিজয় তাদের স্বেচ্ছাচারিতার পথে বৃহত্তম বাধা, আর তাই ইসলামের বিরুদ্ধে তারা সকলেই এক জাতি। আজ তাদের মুখে মানবতাবাদের মুখোরোচক বুলি, তবে অন্তর বিদ্বেষে পরিপূর্ণ। তাদের মানবতার সংজ্ঞার ভেতর নেই আফগানিস্তান, ইরাক, চেচনিয়া, কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, সুদান, সোমালিয়ার কোন অসহায় মুসলিম। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতো করে তারা ব্যবহার করে মালালাদের। কালের পরিক্রমায় তারা বুঝেছে মুসলিমদের জোর করে খৃষ্টান বানিয়ে ‘মরিসকো’ করার দরকার নেই, বরং তাদের মন মগজ দখল করে তাদের দিয়েই তাদের ধর্মকে উৎখাত করা হলো সহজ পথ। আজ বাইরে আমাদের জন্ম ও খোলসটা হয়তো মুসলিমের আছে কিন্তু আমাদের চিন্তা চেতনা মরিসকো হয়ে যাচ্ছে নিজেদের অজান্তেই।

যে ইহুদীরা সারা পৃথিবীতে উদবাস্তুর মতো জীবন কাটিয়েছে, যাদের সবচেয়ে দুর্যোগময় সময়ে মুসলিমরা আশ্রয় দিয়েছে, তারা আজ মুসলিমদের নিজ ভূমি থেকে উৎখাত করে দখল করে নিয়েছে ফিলিস্তিনের আশিভাগ ভূমি। গাজার চারদিকে উঁচু দেয়াল তুলে একে বানানো হয়েছে পৃথিবীর একমাত্র খোলা কারাগার। যখন খুশি তখন বোমা বর্ষণ করে মারা হচ্ছে হাজার হাজার মুসলিমকে। ইহুদীরা মারার পর খৃষ্টানরা আজ সমস্বরে আওয়াজ তোলে “আত্মরক্ষার অধিকার ইজরাইলীদের আছে”। একজন মালালাকে কাজে লাগিয়ে বিলিয়ন মানুষের দৃষ্টি তারা তার দিকে ফিরিয়ে রাখে আর দৃষ্টির অগোচরে হাজার হাজার মালালা বোমার আঘাতে নিরবে ছিন্ন ভিন্ন হয়, স্বজাতির কেউ তাদের জন্য চোখের সামান্য পানিটুকু ফেলার অবকাশও পায়না। ব্যক্তিগত বিচারে কোন মুসলিমের অন্যায় বা মানবতার বিপরীতে কাজ থাকতে পারে, তবে সত্যিকারভাবে ইসলামের মতো ইনসাফ আর মানবতা পৃথিবীতে আর কোন জাতি দেখাতে পারেনি, পারবেওনা।

দিল্লীতে বাসে গনধর্ষনের পর হত্যা সারা ভারত ও পৃথিবী জুড়ে শ্লোগান উঠেছে-ধর্ষকের ফাঁসী দেয়া হোক এবং যে কোন ধর্ষণের জন্য ফাঁসীর বিধান রেখে নতুন আইন তৈরী করা হোক। ‘রজম’ নামের একটি আরবী শব্দ আছে যার ইসলামী পরিভাষিক অর্থ হলো-‘পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা’। ইসলামী আইনে বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক বা ধর্ষণ প্রমাণিত হলে অপরাধীকে এ দন্ড দেয়া হয়। রজম নামের এ আইন ইসলামকে আক্রমণ করার জন্য অন্যতম হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে ইসলাম বিরোধীরা। ইতিহাস আজ নিঃশব্দে দেখছে সে সকল মুখেই আজ রজমের দাবী উঠছে যারা ইসলামকে হেয় করতে তা ব্যবহার করেছিলো।

মানবতা নামের শ্রুতিমধুর কথাটির সুকৌশল ব্যবহার শুরুর ইতিহাস খুব বেশীদিন আগের নয়। মানব নামের যে একটি জাতি আল্লাহ্‌ তাঁর মাটিতে চড়ে বেড়াতে পাঠিয়েছেন তাদের সকলের ভেতর আল্লাহ্‌ এই গুনটি জুড়ে দিয়েছেন, কম-বেশী সবাই এর ব্যবহার পৃথিবীর বুকে করেছে। তবে দুঃখের বিষয় হলো মানবতা নামের বাণীটির বর্তমান উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহার পুরোটাই ইসলামকে হেয় করার জন্য। আজ মুসলিম নামধারী এই আমরা অমুসলিমদের তৈরী করা মানবতা নামের সেই চকোলেটে মোড়ানো বিষ খেয়ে নিজেরাই নেমে পড়েছি নিজেদের বিরুদ্ধে।

আল্লাহ্‌ আমাদের ক্ষমা করুন। আমাদের মৃত্যু দিন মুসলিম হিসাবে।

১২টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×