somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিল্লা বিয়ে: একটি সামাজিক কুসংস্কার। এখনি এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।

০৫ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৭:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হিল্লা বিয়ে: একটি মারাত্মক কুসংস্কার

‘হিল্লা বিয়ে’ শব্দটি শহর-গ্রামে সর্বত্র পরিচিত। পত্র-পত্রিকায়ও মাঝেমধ্যে তা চোখে পড়ে। তিন তালাক- প্রাপ্তা নারীকে প্রথম স্বামীর নিকট ফিরিয়ে দেয়ার প্রচলিত একটি অনৈসলামিক পদ্ধতি।
ভালোভাবে জেনে নিন, হিল্লা বিয়ে বলতে শরীয়তে কিছু নেই। এ নামে সমাজে যা কিছু হচ্ছে এর সাথে ইসলামের কোন স¤পর্ক নেই। এটি একটি অনৈসলামিক পন্থা,যা কুসংস্কার ও মূর্খতা বৈ কিছুই নয়।
তিন তালাক প্রাপ্তা নারীর ব্যাপারে কুরআন-হাদীসের মূল বিধান হলো, স্বামী স্ত্রীকে একই মজলিসে একই শব্দে তিন তালাক দিলে কিংবা পৃথক পৃথক শব্দে তিন তালাক দিলে অথবা অতীতে কখনো দুই তালাক দিয়ে বর্তমানে তৃতীয়বার তালাক প্রদান করলে-
মোটকথা যে কোন উপায়ে তিন তালাক দেয়া হলে বৈবাহিক স¤পর্ক স¤পূর্ণরূপে শেষ হয়ে যায়। এ অবস্থায় শুধু মৌখিকভাবে স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার যেমন কোন সুযোগ নেই তেমনি নতুন করে বিবাহ দোহরানোর মাধ্যমেও ফিরিয়ে নেয়ার পথ খোলা থাকে না। এ পর্যায়ে প্রত্যেকে স্বাধীন। তালাকদাতা পুরুষ যেভাবে অন্য কোন নারীকে বিবাহ করা না করার ব্যাপারে স্বাধীন, তদ্রƒপ তালাকপ্রাপ্তা নারীও ইদ্দতের পর অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে স্বাধীন। এটি তার একান্ত এখতিয়ারাধীন বিষয়।
অতএব তিন তালাকের পর ওই নারীকে পুনরায় স্ত্রী হিসাবে ফিরে পাওয়া স্বামীর জন্য সুদূর পরাহত হয়ে গেল। কেননা ইদ্দত শেষে স্বাভাবিকভাবে যদি ঐ মহিলোার অন্যত্র বিবাহ হয় তাহলে সেই স্বামীর সাথে যে তার দাম্পত্য জীবন সুখের হবে না এর কী নিশ্চয়তা আছে? এরপর ভবিষ্যতে সহবাসের পর দ্বিতীয় স্বামীর ইন্তেকাল হবে কিংবা ঐ স্বামী স্বেচ্ছায় বৈবাহিক স¤পর্ক ছিন্ন করবে। এরপর ইন্তেকাল বা তালাকের ইদ্দতের পর (স্বামীর ইন্তেকাল হলে স্ত্রীর ইদ্দত চার মাস দশ দিন) সে চাইলে পুনরায় প্রথম স্বামীর সাথে স¤পূর্ণ নতুনভাবে শরীয়ত মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে সম্মত হবে- বলা বাহুল্য, এসব একদম হাতের নাগালের বাইরের বিষয়। সুদূর পরাহত। অন্যের ঘরে যখন চলে যাবে তখন সে অন্যের অধীন। তালাকদাতার অধীন নয়। অতএব এক্ষেত্রে স্ত্রীকে ফেরত পাওয়াটা সহজ নয়। কুরআন মজীদের নি¤েœাক্ত আয়াতে বিষয়টি উল্লেখ হয়েছে:
“অতঃপর (স্বামী) যদি তৃতীয় তালাক দিয়ে দেয় তবে সে (তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী) তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত হালাল হবে না, যতক্ষণ না সে অন্য কোন স্বামীকে বিবাহ করবে। অতঃপর যদি সে (দ্বিতীয় স্বামী) তাকে তালাক দিয়ে দেয়, তবে তাদের জন্য এতে কোন গুনাহ নেই যে, তারা (নতুন বিবাহের মাধ্যমে) পুনরায় একে অন্যের কাছে ফিরে আসবে। শর্ত হল তাদের প্রবল ধারণা থাকতে হবে যে, এবার তারা আল্লাহর সীমা কায়েম রাখতে পারবে। এসব আল্লাহর স্থিরকৃত সীমা, যা তিনি জ্ঞানবান লোকদের জন্য ¯পষ্টরূপে বর্ণনা করেছেন।” (-সূরা বাকারা ঃ আয়াত নং ২৩০)
মোটকথা, তিন তালাকের পর পুনরায় বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা প্রায় অসম্ভব। হাঁ, একটা দূরবর্তী সম্ভাবনা আছে যা উক্ত আয়াতে উল্লেখ হয়েছে। অর্থাৎ ঘটনাক্রমে যদি দ্বিতীয় স্বামীর সাথেও বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে বা স্বামীর ইন্তেকাল হয় তাহলে ইদ্দতের পর পুুনরায় প্রথম স্বামীর সাথে নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।

এক্ষেত্রে নিমোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরী-

 দ্বিতীয় বিবাহটি অবশ্যই পুরোপুরি বাস্তবসম্মত ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অন্যান্য বিয়ের মতো হতে হবে।

 তিন তালাকপ্রাপ্তা নারীকে অন্যত্র বিয়ে বসতে বাধ্য করা যাবে না।

 স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে দ্বিতীয় স্বামীকে বাধ্য করা কিংবা কোন ধরনের চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। এক্ষেত্রে সে অন্যান্য স্বামীদের মতোই স¤পূর্ণ স্বাধীন।

 দ্বিতীয় বিবাহটি তালাক প্রদান বা বৈবাহিক স¤পর্ক ছিন্ন করার শর্তে না হতে হবে। (শর্ত বিবাহের মূল আকদে উল্লেখ হোক কিংবা পূর্বপরিকল্পিত হোক।) এমনটি করা নাজায়েয ও কবীরা গোনাহ। বিবাহ প্রথম হোক বা দ্বিতীয় হোক, সকল বিবাহের ক্ষেত্রেই ইসলামের নির্দেশনা হলো, তা স্থায়ী হবে। অটুট থাকবে। তাই তালাক প্রদান বা স¤পর্ক ছিন্ন করার শর্তে যে বিবাহ করে (দ্বিতীয় স্বামী) এবং যার জন্য তা করা হয় (প্রথম স্বামী)

উভয়ের প্রতি হাদীসে কঠোর ভর্ৎসনা ও অভিস¤পাত করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, যে ব্যক্তি অন্যের স্ত্রীকে তার পূর্বের স্বামীর জন্য বৈধ করার শর্তে বিবাহ করে এবং যার জন্য বৈধ করার শর্তারোপ করা হয় উভয়ের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত করেছেন। অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তাআলা লা’নত করেছেন। (-জামে তিরমিযী ঃ হাদীস নং ১১২০; মুসনাদে আহমদ ঃ হাদীস নং ৮২৮৭)
হযরত উকবা ইবনে আমের রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে জিজ্ঞাসা করেন, “আমি কি তোমাদেরকে ধারে চেয়ে আনা পাঠাঁর পরিচয় দিব না? সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহর রাসূল, আমাদেরকে তার পরিচয় দিন। নবীজী ইরশাদ করেন, “সে হলো অন্যের স্ত্রীকে তার প্রথম স্বামীর জন্য বৈধকারী। আল্লাহ তাআলা এই বৈধকারী ও যার জন্য বৈধ করা হয় উভয়ের প্রতি লা’নত করেছেন।”(-সুনানে ইবনে মাজাহ ঃ হাদীস নং-১৯৩৬)
 দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সহবাস হতে হবে। (- দেখুন, সহীহ বুখারী ঃ হাদীস নং ৫২৬১)
এ হলো তিন তালাকপ্রাপ্তা নারী প্রথম স্বামীর সাথে পুনরায় দা¤পত্য জীবন গড়ার স্বাভাবিক শরীয়তসম্মত পন্থা।
এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার, তিন তালাকের পর প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে আসার জন্য স্ত্রীকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অন্য পুরুষের ঘর করতে হবে কেন? পূর্বে উল্লেখ হয়েছে, বিবাহে যেহেতু দুনিয়া ও আখেরাতের প্রভূত কল্যাণ নিহিত রয়েছে, তাই ইসলাম চায়, বৈবাহিক সম্পর্ক স্থায়ী হোক। বিচ্ছেদ না হোক। বাস্তব প্রয়োজনে স্বামী কখনো তালাক দিতে বাধ্য হলে, এমন ভাবে তালাক দিবে, যেন তালাকের পর পুনরায় স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ থাকে। আর তা হলো, ১-২ তালাক পর্যন্ত। দুই তালাক পর্যন্ত স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু এই ফিরিয়ে নেয়া যেন তামাশা না হয়, স্ত্রী যেন পুতুলের মত খেলনার বস্তুতে পরিণত না হয়, তাই শরীয়ত নারীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার্থে একটি চূড়ান্ত সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ সীমানা অতিক্রম করলে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার সকল পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তা হলো, ৩য় তালাক। এরপর আর ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ নেই। এ সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই সতর্ক করে দেয়া হলো, তোমরা সৎভাবে জীবন-যাপন কর। তালাক পর্যন্ত পৌঁছে এমন কোন আচরণ করো না। কেননা এতে যেকোন সময় সীমানা অতিক্রম হয়ে যেতে পারে। তখন চাইলেও তোমরা একত্রে আর থাকতে পারবে না। এটি সীমানা অতিক্রম করার একটি শাস্তি। তাই স্বামীর উচিত ৩য় তালাক উচ্চারণে সাহস না করা। তদ্রƒপ স্ত্রীও ৩য় তালাকের ভয়ে মন্দ আচরণ থেকে বিরত থাকা।
উক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেল, তিন তালাকের পর ‘অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার শর্ত’ মূলত স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার স্বাভাবিক সকল পথ বন্ধ করার একটি প্রক্রিয়া। এবং এ শর্তারোপের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে সতর্ক করে দেয়াই উদ্দেশ্য, যেন এপর্যন্ত কেউ না পৌঁছে। যদি কেউ এ পযর্ন্ত পৌঁছে তাহলে তার শাস্তি হলো, স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার সকল পথ তার জন্য বন্ধ। সর্বোপরি এর মাধ্যমে নারীর সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণœ রাখাও উদ্দেশ্য।
যাই হোক, এ হলো, তিন তালাক পরবর্তী শরীয়তের বিধান। এবার আপনি এর সাথে প্রচলিত ‘হিল্লা বিয়ের’ চিত্রটি মিলিয়ে দেখুন। এর সাথে শরীয়তের ন্যূনতম মিলও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর তা কিভাবেই হবে, যেখানে বিচ্ছেদের শর্তারোপ করে দ্বিতীয় বিয়ে হয়, এ বাবদ ঘুষও দেয়া হয় এবং শর্তানুযায়ী বিচ্ছেদ না করলে চাপ প্রয়োগ করা হয় ইত্যাদি। এসব স¤পূর্ণরূপে শরীয়ত পরিপন্থি কাজ। কবীরা গুনাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন।
পুনশ্চ: ফিকহের ভাষায় হিল্লা বিয়ে মাকরুহে তাহরীমী। তদুপরি কেই তা করলে তা অাইনের দৃষ্টিতে বিবাহ হিসাবে ধরা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৩২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×