somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঐশী নামের মেয়েটি এবং একটি সুইসাইডাল নোট

২২ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঐশী প্রথমে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সে উদ্দেশ্যে একটি সুইসাইডাল নোটও লিখেছিলো যে নোটে উঠে এসেছে তার মনের একান্ত গোপন কিছু কথা। নোটটি যদিও কাউকে উদ্দেশ্য করে লিখা হয়নি, তারপরও পড়ার পর মনে হয়েছিলো সেটি যেন আমাকেই উদ্দেশ্য করে লিখা। আপনি যখন কোনো পোর্ট্রেটের দিকে তাকান তখন আপনার যেমন মনে হয় পোর্ট্রেটটির দু’চোখ শুধু আপনাকেই দেখছে সেরকম এই নোটটি পড়লে আপনারও মনে হতে পারে এটি আপনাকেই উদ্দেশ্য করে লিখা। সে পরে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত পাল্টে নিজের মা-বাবা’কে কেন খুন করে তা আমার অজানা। তবে ঐশীর নিজের লিখা “সুইসাইডাল নোট” পড়ার আগে আমার যা মনে হয়েছিলো, পড়ার পর আমার ধারণা আরও দৃঢ় হয়। সে সম্পর্কে কিছু বলার জন্যই আমার এ প্রয়াস।

ঐশী যা করেছে তার জন্য আমি তাকে ধিক্কার জানাই। যে কোনো খুনই পৃথিবীর জঘন্যতম অপরাধ, আর নিজের মা-বাবা’কে খুন তো এ জগতের সবচেয়ে বেশি ঘৃণ্য, জঘন্য, অমার্জনীয়, অমানবিক অপরাধ। (এ নিয়ে হয়তো দ্বিমত থাকতে পারে।) তার জন্য যে শাস্তি প্রাপ্য মাননীয় আদালত তাকে সেই শাস্তিই দিক সেটাই কামনা করি।

কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের পারিপার্শ্বিক বাস্তবতায় জানা-অজানা আরও অনেক ঐশী তৈরি হচ্ছে – এ ব্যাপারে আপনি আমার সাথে একমত কিনা? শুধু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বলে নয়, যে কোনো স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও এই ভয়াবহ মাদকের থাবা থেকে বঞ্চিত নয়। শুধুমাত্র উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরাই যে মাদক নিচ্ছে তা কিন্তু নয়, মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরাও এর সাথে জড়িয়ে পড়ছে। সারাদেশে প্রকাশ্য দিবালোকে চলছে এই জমজমাট মাদক ব্যবসা। ব্যাক্তিগতভাবে আমি নিজেই যেখানে এরকম অনেক স্পটের কথা জানি, সেখানে প্রশাসনের তা অজানা থাকার কথা তো নয়। বরং তারাই সেখান থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা উপরি আদায় করছেন। পরোক্ষভাবে তারাও কি এই ব্যবসার সাথে জড়িত হয়ে পড়ছেন না! সে প্রসঙ্গে বিশদ আর নাইবা গেলাম।

এবার আসি অভিভাবকদের প্রসঙ্গে। দেখা যায়, অধিকাংশ উচ্চবিত্ত পরিবারের মা-বাবা’রা সন্তানদের দিকে যথেষ্ট নজর দিচ্ছেন না অথবা দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। হয়তো বাবা ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে মহা ব্যস্ত আর মা পার্টি, সেমিনার, শপিং কিংবা এ জাতীয় আরও নানা ব্যস্ততায় নিজের সন্তানকে সময় দেয়ার সময়টুকুও পান না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেসব বাবা’রা অন্যান্য পরিবারের নিত্যনতুন গাড়ির মডেলের সাথে পাল্লা দিয়ে নতুন গাড়ি কেনা কিংবা মা’রা অন্যান্য গৃহিণীদের সাথে তাল মিলিয়ে সোনার গহনা কেনার প্রতিযোগিতায় মেতে বাইরের পরিবারের যত তথ্য জানেন, হয়তো নিজের ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে অত তথ্যও তারা জানেন না। তারা কোথায় যায়, কি করে কিংবা কাদের সাথে মেশে এসব তারা খেয়াল করেন না কিংবা তাদের ভাষায় খেয়াল করার সময়টুকুও তাঁরা পান না। শুধু উচ্চবিত্ত পরিবার বলে নয়, অন্যান্য শ্রেণীর মা-বাবা’র ক্ষেত্রেও একই কথা সমভাবে প্রযোজ্য।

অভিভাবকরা হয়তো আমার এই লেখা পড়ে প্রশ্ন করতে পারেন – আমি কি তোমার চেয়ে কম বুঝি অথবা ছেলেমেয়ে কি আমার না তোমার? আমি বিনয়ের সাথেই স্বীকার করে নিচ্ছি আপনারা গুরুজন বিধায় আপনাদের অভিজ্ঞতা আমার চেয়ে বেশি এবং আপনারা আমার চেয়ে বেশি জানেন ও বোঝেন। কিন্তু আপনি যখন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ের হাতে মোবাইল ফোনটি তুলে দেন, সেই মোবাইল ফোন দিয়ে তারা কি করছে সেই খবর কি আপনি আদৌ রাখেন? আজকালকার ছেলেমেয়েরা, বিশেষভাবে টিনএজার’রা দ্রুতগতির ইন্টারনেট কিংবা আধুনিক জগতের নানা সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহার করছে। আধুনিকতার নামে পাশ্চাত্য সভ্যতার অসভ্য দিকটিই তারা বেছে নিচ্ছে, ভালো দিকটি তাদের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে। এটা হতেই পারে এবং এটাই স্বাভাবিক যেহেতু মানুষ নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতিই বেশি আকর্ষিত হয়। এক্ষেত্রে তাদের বয়সটাই বিবেচ্য বিষয়, তারা কি করছে তা নয়।

তাই অভিভাবকদের আমি শুধু এই কথাটিই বলতে চাই, আপনারা নিশ্চয় জানেন প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকাল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়টাতে আবেগ তীব্রভাবে কাজ করে বিধায় যে কোনো কিছুই তাদের মনে খুব বেশি প্রভাব ফেলে। এই সময়ে স্নেহ-মায়া-মমতা দিয়েই তাদের খেয়াল রাখতে হয়। আমি শাসন না করার কথা বলছি না, কিন্তু শাসন যেন নির্যাতনের পর্যায়ে না পড়ে। আমার নিজের ব্যাপারেই বলি, ছেলেবেলায় আমি কোনো অপরাধে যখন শাস্তি পেতাম তখন মাঝেমধ্যে মনে হতো বড় হলে নিজেই বাবাকেই মারবো। যদিও পরক্ষণে আমার সেই বোধটা আর থাকতো না এবং শাস্তি পাওয়ার পর মা-বাবা’র কাছে আদর পেতাম আরও অনেক বেশি। আমার কথা হচ্ছে, আমি স্বাভাবিক মানুষ হবার পরও আমার যদি এমনটা মনে হতে পারে সেখানে ঐশী তো মাদকাসক্ত। তার আত্মহনন বা মা-বাবা’কে মারতে চাওয়ার মাঝে দোষ কোথায়? সে তো অসুস্থ। আমার এই কথা বলার মানে এই নয় যে আমি তাকে সমর্থন করছি। আমি চাইছি সকল অভিভাবক যেন তাঁদের সন্তানদের বন্ধু হবার চেষ্টা করেন। আপনার সন্তানরা আসলেই কি চায় তা জানার চেষ্টা করুন এবং মন দিয়ে বিশ্লেষণ করুন। যদি তা গ্রহণযোগ্য মনে হয় তবে তা গ্রহণ করতে দোষ কোথায়, আর অগ্রহণযোগ্য হলে মমতা দিয়ে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। কোনো বিষয়ই জোর করে চাপিয়ে না দিয়ে বুঝিয়ে সমাধানের চেষ্টা করুন। আর মা-বাবাই সবচেয়ে বেশি ভালো জানেন কিভাবে বোঝালে তাঁর সন্তান বুঝবে। তাহলেই হয়তো এরকম ঐশী অনেক কম তৈরি হবে। সমাজের অগ্রগতি হবে এবং আমরা একটা সুস্থ-সুন্দর দেশে অনেক আলোকিত মানুষ পাবো। আর একটা ঐশীও যেন তৈরি না হয় এবং আর একটা সম্ভাবনাময় জীবনও যেন অকালে বিনষ্ট না হয় এই কামনাই করি।

পরিশেষে বলতে চাই, আমি ঐশীকে ঘৃণা করি না। সে যা করেছে তা আমি অবশ্যই সমর্থন করি না এবং আমি চাই তার যথোপযুক্ত শাস্তি হোক। মাদার তেরেসা’র একটি কথা দিয়েই শেষ করতে চাই, “তুমি কখনোই মানুষকে বিচার করতে যেয়ো না, তাহলে তুমি তাকে কখনোই ভালোবাসতে পারবে না।” কারণ, সব মানুষের মাঝে ভালো দিক যেমন আছে তেমনি কিছুটা হলেও মন্দ দিক এবং অবশ্যই নানা সীমাবদ্ধতা আছে। তাই ভালোমন্দ নির্বিশেষে সব মানুষকেই ভালোবাসুন এবং পাপকে ঘৃণা করতে চেষ্টা করুন, পাপীকে নয়। আরও একটা কথা - বেশিরভাগ মানুষই ভাবে আমি ছাড়া আর বাকি সবাই জনগণ, যা করার তারাই করবে। এই ভাবনাটা ত্যাগ করে আপনিও আপনার অবস্থান থেকে এগিয়ে এসে নতুন প্রজন্মের পাশে দাঁড়ান। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের নতুন প্রজন্ম যদি সঠিক পথে পরিচালিত হয় তাহলে সব প্রতিকূলতা জয় করে বিশ্বের দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াবোই একদিন।

© অদ্রি অপূর্ব

(ঐশীর নিজের লেখা সুইসাইডাল নোট :
প্রিয়
আমি জানি না এই চিঠি আমি কাকে লিখছি। তারপরও কাউকে না কাউকে কিছু একটা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। আমি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আরো কঠিন মনে হচ্ছে। বুক ভেঙ্গে যাচ্ছে। আত্মহত্যার কারণ আমি কাউকে বলতে চাইছি না। একজনের দুঃখ সাধারণত আরেকজন কখনোই মন থেকে বুঝতে পারে না। আমার আত্মহত্যার কারণ তোমার কাছে খুবই অপ্রয়োজনীয় ও হাস্যকর মনে হতে পারে। সুতরাং সেই ঝামেলায়ই গেলাম না। আমার এই চিঠিটাকে সুইসাইডাল নোট বলা যেতে পারে। তুমি নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছো, জীবনের শেষ কথাগুলো আমার আত্মীয়-স্বজন, বাবা-মাকে না জানিয়ে কোনো অপরিচিত কাউকে কেন জানাচ্ছি! তারা কোনোদিনও আমাকে বুঝতে পারেনি। আমার অনেক খারাপ দিক আছে – সেই খারাপ দিকগুলো চালাকি করে বুঝে ফেলা ছাড়া ভালো দিকগুলো কখনোই তারা বোঝার চেষ্টা করেছে কি-না সন্দেহ! আমার এই চিঠিটি তাঁদের দেখাতে লজ্জা এবং ঘৃণা লাগে। কারো প্রতি আমার কোনো রাগ নেই। মানুষকে দোষ দিয়ে কি লাভ বলো! প্রত্যেকেরই তো নিজস্ব চিন্তাধারা, আশা থাকে। প্রত্যেকেই চায় তার ইচ্ছা পূরণ হোক। শুধু যেটা বুঝতে পারে না অন্য মানুষের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে। আনন্দের একটি নির্দিষ্ট কারণও থাকতে পারে। আমি জানি তারা আমাকে অনেক ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন তোলার বা দোষ ধরার ইচ্ছা, রাগ, শক্তি কোনোটাই আমার এখন আর নেই। শুধু একটাই আফসোস থেকে গেলো – জীবনে অনেক স্বপ্ন ছিলো কোনোটাই পূরণ করতে পারলাম না। এ পৃথিবীর মানুষ সবাইকে বুকের মাঝে নিয়ে যে স্বপ্নগুলো দেখেছিলাম সবই কেমন যেন ধুয়ে-মুছে গেলো, সব শেষ। আচ্ছা সব এমন হয়ে গেলো কেন, বলোতো?
ভাইয়া/আপু
আমিতো মানুষকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম! পৃথিবীকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম! মানুষের হাসি-কান্না, আনন্দ ভালো লাগা, অনুভূতি, প্রেম, সবচেয়ে বড় কথা – মানুষকে ভালোবাসা। পৃথিবীর নানা জায়গার সৃষ্টি এতো সুন্দর যে বেহেস্তকেও যেন হার মানায়। কেন শেষ পর্যন্ত এখানে বাস করে যেতে পারলাম না! কেন এসব উপভোগ করে যেতে পারলাম না শেষ সময় পর্যন্ত! আমি জানি, এর উত্তর একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া আর কারো কাছে নেই। হয়তো বা ঈশ্বরের কাছেও নেই! আমি সবসময় শুনে আসছি, তুমি যদি মন দিয়ে কোনো কিছু চেয়ে থাকো তবে অবশ্যই তা পাবে। আমার স্বপ্ন আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো আমি কী মন দিয়ে চাইনি! শুধু মন দিয়ে চাওয়া এই স্বপ্নগুলো পূরণ করার জন্য কতো কষ্টই না করলাম। মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে। শারীরিক কষ্টটা হয়তো অন্যের দৃষ্টিতে এতো বেশি হবে না। আমার জন্য তা অনেক ছিলো। আহ, ওহ, মানসিক কষ্টের কথা বলতে গিয়ে আমার হাত কাঁপছে। একটা সময় ছিলো, এমন কোনদিন যেতো না যে আমি কাঁদতাম না। জীবনের দুইটা বছর নষ্ট হয়ে গেলো। দুইটা বছর একা একা কাটালাম। এ দুইটা বছর যে কিসের ভিতর দিয়ে গিয়েছি, আমি আর ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ জানে না। হাজার কষ্টের মধ্যেও একটা জিনিস চিন্তা করে স্বস্তি পেতাম। অন্তত আর কেউ না থাকুক ঈশ্বর আমার পাশে থাকবে। আর কেউ না বুঝুক অন্তত উনি আমার কষ্টটা বুঝবেন। আমি এখনো জানি তিনি আমার পাশে আছেন। যা হোক, এসব কথাবার্তা বলা এখন অর্থহীন। মনের ভিতর এক অজানা উল্লাস হচ্ছে। কেন জানি মনে হচ্ছে, মৃত্যুর পর আমার পছন্দের জায়গায় চলে যাবো। জায়গাটা পৃথিবীর মতোই হবে। কিন্তু এই পৃথিবীতে আমার স্বপ্নগুলো এখনো পূরণ হয়নি। যেগুলো পূরণ করতে হবে। মানুষ কেমন আজব প্রাণী তাই না! আশা (হোপ) মানুষ ছাড়তে পারে না। মরতেও চাই আশা নিয়ে। আমি জানি না মৃত্যুর পর কী হবে! দেখা যাক কী হয়! আসলে হয়তো মৃত্যুর পরের জীবন বলতে কিছুই নেই! শুধুই মাটির সঙ্গে মিশে যাবো। তাহলে তো সবই শেষ। যা হোক, মৃত্যুর পর যদি কিছু নাও পাই এই পৃথিবীতে যতোটুকু সময় কাটিয়েছি, আমার এ ছোট্ট জীবন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। তুমি হয়তো বা মনে করতে পারো, এ পৃথিবীতে এসে তো কিছুদিন পর আত্মহত্যাই করলাম। সময় নিশ্চয় ইহকালে ভালো কাটেনি, তাহলে কৃতজ্ঞ হওয়ার কী আছে? ন্যাকামির আর জায়গা পাই না! কি জানি!
ভাইয়া/আপু,
কেন জানি ভালো লাগে। পৃথিবীতে এসে অনেক কষ্ট পেয়েছি ঠিকই, সবচেয়ে বড় কষ্টটা হলো আশা শেষ হয়ে যাওয়ার কষ্ট। তীব্র হতাশা মাথার উপর ভেঙ্গে পড়ার কষ্ট। মানুষ কি আশা ছাড়া বাঁচতে পারে বলো, এই একটা জিনিসই তো আছে। যা কি-না বহুদিন পর্যন্ত আঁকড়ে ধরে রাখা যায়। কিন্তু আমি যদি বলি পৃথিবীতে আমার জীবনের সময়গুলোতে কোনো সুখ স্মৃতি নেই – তাহলে তো মিথ্যা বলা হবে। কতো ভালো, কতো আনন্দ, কতো কি-ই না আছে! কতো সুন্দর মানুষের হাসি, সেই সুখগুলো, কোনো ছেলেকে প্রথম ভালোলাগা – সেই অনুভূতিগুলো। পছন্দের আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের সাথে জমিয়ে আড্ডা দেয়ার সেই সময়গুলো, পৃথিবীর ইতিহাস পড়ে, সুন্দর জায়গার দৃশ্য দেখে অভিভূত হওয়ার সময়গুলো কতো কি-ই না আবিষ্কার করলাম! পৃথিবীর ব্যাপারে, মানুষের জীবনের ব্যাপারে। মানুষের জীবন সম্বন্ধে কতো সুন্দর সুন্দর তথ্যই না জানলাম। মানুষের তৈরি কতো অদ্ভুত-চমৎকার জিনিসই না দেখার সৌভাগ্য হলো। ঈশ্বরের বিশাল ও তুলনাহীন সৃষ্টি দেখতে পারলাম। এই জায়গাটায় না আসলে এসব কিভাবে জানতাম! কিভাবে দেখতাম! মরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এখন সবকিছুই সহজ মনে হচ্ছে। এক ধরনের স্বস্তি বোধ করছি। সবচেয়ে বেশি স্বস্তি বোধ করছি জীবন যুদ্ধ আর আমাকে করতে হবে না। জীবনযুদ্ধে হেরে গেলাম এই কথাটা আগে শুধু বইয়ে পড়তাম। তখন অনুভব করতে পারিনি, এখন বুঝতে পারছি জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া আসলে কি জিনিস। আমি সব সময় শুনে এসেছি, যারা আত্মহত্যা করে তারা নাকি দোজখে যায়। জিনিসটা কেন জানি বিশ্বাস করতে পারি না। কারণ যে মানুষটা এখন স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে, তার ভিতর কি পরিমাণ হতাশা, কষ্ট, দুঃখ থাকলেই না জানি সে এমন একটা কিছু করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে! এই জায়গাটাকে আমরা কতোই না ভালোবাসি। হাজার কষ্টের মধ্যেও লড়াই করে যাই শুধুমাত্র জায়গাটাতে টিকে থাকার জন্য, একটু সুখে থাকার জন্য। একটা মানুষের বুক কতোটা ভেঙ্গে গেলে এই ধরনের, এই সাধের জীবন, পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে! তার বুক ভাঙ্গা কষ্টের কি কোনো দাম নেই। পৃথিবীর যেখানে আমরা এক টুকরো সুখের জন্য কতো কিছুই না করি, এতো কষ্ট পাওয়ার পরও। ঈশ্বর কী এতোটাই পাষাণ! কি দোষ করেছিলাম আমি। জীবনের কথা নাহয় বাদই দিলাম। আমি এমন কি খারাপ কাজ করেছিলাম যে, কোনো কিছুই সত্যি হতে দেখলাম না। মাঝখান দিয়ে জীবনে আরো যে যুদ্ধ করে যাবো সেই উপায়টাও শেষ হয়ে গেলো। ঈশ্বর বুঝি আসলেই পাষাণ। লেখার মতো আরো অনেক কিছুই আছে। কিন্তু আর কিছুই লিখতে পারছি না। জ্বরের জন্য হাত কাঁপছে। শরীর জ্বলন্ত আগুনের মতো গরম। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে। এখন যে কেউ একজন গায়ে হাত রাখবে এমন কেউ নাই। এই কথাটা সত্যি – মানুষ পৃথিবীতে আসে একা, চলেও যায় একা। হায়রে পৃথিবী! কতো ভালোবাসার, কতো সাধের! আমি ভাববো এক সময় পৃথিবী নামে আমার পরিচিত একটা ছেলে ছিলো।
ইতি, ঐশী/ডালিয়া)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:১৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×