এই সাত সকালে পান খাইয়া ঠোঁট দুইটা বুলবুলি পাখির পুটকির মতন লাল হইয়া গেছে। অবশ্য পান খাওয়ার পেছনে কাহিনীও আছে।
চ্যাপার তরকারী দেখলে লালচ সামলাতে পারি না। আমার মা আমার আবদারের মুখে চ্যাপা এবং শুটকি দিয়ে নানাবিধ তরকারি রান্না করে দেন। আর আমি যক্ষের ধনের মতন ফ্রিজে সেইগুলোরে আগলে রেখে খাই।
তো, সাত সকালে আজ চ্যাপার ঝাল তরকারি দিয়া খাইলাম ভাত। তারপরে মনে হইলো কী, খাই একখান পান।
তাছাড়া আমার ব্যাগের মধ্যে ইন্ডিয়ান চমনবাহার জর্দাও আছে। সেই জর্দা মুখে দিলেই মুখটা কেমন সুবাসে ভইরা যায়! অতএব, পান খাইতে মন আঁকুপাকু করলে দোষ দেখি না।
এখন, পান খাইয়া বুলবুলির পুটকির মতন লাল ঠোঁট নিয়া আমি ফ্যাকাল্টি রুমে বইসা আছি।
আজ অবশ্য ঠাকুরের জন্মদিন। আচ্ছা, আপনি কি পান খাইতেন, ঠাকুর? মানে, খাইতে ভালোবাসতেন?
ঠাকুরের যে সৌম্যরুপ আমার মানসপটে আঁকা আছে সেইখানে কেন জানি কোনো দিনই পানের রং কল্পনা করতে পারি নাই। আপনারা কেউ পারছেন?
পান খাওয়া ভালোবাসা তো দূরের কথা, দুই চোক্ষে পান খাওয়া দেখতেই পারে না এমন বাঙালীও আছেন। আমার মায়ের পেটের ছোটোবোনই তেমন একজন।
পান মুখে দিয়ে তার কাছে ঘেষা যায় না। আর চুন নিয়া তার নিকটে যাওয়া তো দূরের কথা, তার দুই তিন হাতের মধ্যেও বসা যায় না।
কিন্তু পান অপছন্দ করলেই বাঙালিত্ব নিশ্চয়ই কোনো অংশে খইসা পড়ে না? নাকি পড়ে? কী জানি, অত কিছু জানি না।
তবে, আমি তো মহুয়া-মলুয়া-চন্দ্রাবতী-দ্বিজবংশী দাশের ভূখন্ডের লোক। তাদের হাসি-রঙ্গ-তামাশা-দু:খের উত্তরাধিকার হয়তো না চাইতেও কিছু থাকতে পারে আমার ভেতর।
অতএব সেই সূত্রে, তাম্বুলপত্রের রসে অধর রাঙানোর প্রতি ভালোলাগাও ইনহেরেট করলেও করে থাকতে পারি বটে।
কিন্তু রবি বাবু, আপনারে যে কোন সূত্রে ইনহেরেট করছি তা তো জানি না। আর আপনার কোনো শহুরে নায়িকাকেও তাম্বুলপত্রে অধর রাঙা করে বন্ধুদের সহিত আড্ডা দেওয়ার কথা মনে করতে পারতেছি না। নাকি আছেন তেমন নায়িকা আপনার?
লাবণ্যের কথাই না হয় ধরেন। সে-ও কি পান খাইতেন? চমন বাহার দিয়া পান খাইয়া বুলবুলির পুটকির মতন রাঙা ঠোঁট নিয়া ঘুরে বেড়াইতেন সুধী সমাজে?
যাই হোক, না ঘুরলেও আমার আপত্তি নাই কোনো। পরের জন্মে আমার সাথে দেখা হইলে, মহুয়া-মলুয়ার বেদনা বুকে ধারণ করা এক আধুনিকার গল্প লেইখেন। আর তার মুখে তুইলা দিয়েন তাম্বুল পত্র। লিপস্টিকের বদলে পানের রসে অধর রাঙাইয়া সে আলো করে বসে থাকবে বিদ্বৎ সমাজ।
না, না, না। আপনি চোখ ট্যারা কইরেন না। আমি সেই জ্যোতির্ময়ী নই। তাই, আপনারে আমার কথা লিখতেও বলতেছি না।
কিন্তু বলতেছি যে, আমার এই পান খাওয়া রাঙা ঠোঁট আর আমার বুকের ভেতরে মহুয়া-মলুয়ার দেশের যে মায়াগীত আছে তার থেকে আপনি প্রেরণা নিয়েন। এতে তো দোষ নাই কোনো। নাকি আছে!
শরৎ বাবুর কাছে আপনি সাধারণ মেয়েকে অসামান্য করে তোলার যে মিনতি করে রেখে গেছিলেন আমারো তেমন মিনতি। জানবেন, আমার সাথে আর জন্মে আপনার সাক্ষাৎ হবে আলবৎ। হবেই।
আর জন্মে দেখা হলে আমি মুখে না বল্লেও আপনি জাইনেন যে, ময়মনসিংহগীতিকার পালা আর কৃষাণীদের গীতের মায়া আষাঢ়ের ভরা বিলের মতন টলমলটল করে আমার বুকের ভেতর।
তাই, আমি কিঞ্চিত ঘুঘুপাখিও বটে। অতএব, তাম্বুলপত্রের রসে আপনার অধর না রাঙাইলেও কোনো ক্ষতি-বৃদ্ধি নাই। আপনার গান ছাড়া এই ঘুঘু পাখির চলে না গো, ঠাকুর।
জন্মদিনে আপনি চন্দ্রাবতীর দেশের এক বিপন্ন ঘুঘুপাখির ভালোবাসা জাইনেন।
২৫শে বৈশাখ ১৪২৫
৮ই মে ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:৫৬