somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাম্বুলপত্রের রসে রাঙা অধর নিয়া একদিন আপনে আইসেন, ঠাকুর

০৮ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই সাত সকালে পান খাইয়া ঠোঁট দুইটা বুলবুলি পাখির পুটকির মতন লাল হইয়া গেছে। অবশ্য পান খাওয়ার পেছনে কাহিনীও আছে।

চ্যাপার তরকারী দেখলে লালচ সামলাতে পারি না। আমার মা আমার আবদারের মুখে চ্যাপা এবং শুটকি দিয়ে নানাবিধ তরকারি রান্না করে দেন। আর আমি যক্ষের ধনের মতন ফ্রিজে সেইগুলোরে আগলে রেখে খাই।

তো, সাত সকালে আজ চ্যাপার ঝাল তরকারি দিয়া খাইলাম ভাত। তারপরে মনে হইলো কী, খাই একখান পান।

তাছাড়া আমার ব্যাগের মধ্যে ইন্ডিয়ান চমনবাহার জর্দাও আছে। সেই জর্দা মুখে দিলেই মুখটা কেমন সুবাসে ভইরা যায়! অতএব, পান খাইতে মন আঁকুপাকু করলে দোষ দেখি না।

এখন, পান খাইয়া বুলবুলির পুটকির মতন লাল ঠোঁট নিয়া আমি ফ্যাকাল্টি রুমে বইসা আছি।

আজ অবশ্য ঠাকুরের জন্মদিন। আচ্ছা, আপনি কি পান খাইতেন, ঠাকুর? মানে, খাইতে ভালোবাসতেন?

ঠাকুরের যে সৌম্যরুপ আমার মানসপটে আঁকা আছে সেইখানে কেন জানি কোনো দিনই পানের রং কল্পনা করতে পারি নাই। আপনারা কেউ পারছেন?

পান খাওয়া ভালোবাসা তো দূরের কথা, দুই চোক্ষে পান খাওয়া দেখতেই পারে না এমন বাঙালীও আছেন। আমার মায়ের পেটের ছোটোবোনই তেমন একজন।

পান মুখে দিয়ে তার কাছে ঘেষা যায় না। আর চুন নিয়া তার নিকটে যাওয়া তো দূরের কথা, তার দুই তিন হাতের মধ্যেও বসা যায় না।

কিন্তু পান অপছন্দ করলেই বাঙালিত্ব নিশ্চয়ই কোনো অংশে খইসা পড়ে না? নাকি পড়ে? কী জানি, অত কিছু জানি না।

তবে, আমি তো মহুয়া-মলুয়া-চন্দ্রাবতী-দ্বিজবংশী দাশের ভূখন্ডের লোক। তাদের হাসি-রঙ্গ-তামাশা-দু:খের উত্তরাধিকার হয়তো না চাইতেও কিছু থাকতে পারে আমার ভেতর।

অতএব সেই সূত্রে, তাম্বুলপত্রের রসে অধর রাঙানোর প্রতি ভালোলাগাও ইনহেরেট করলেও করে থাকতে পারি বটে।

কিন্তু রবি বাবু, আপনারে যে কোন সূত্রে ইনহেরেট করছি তা তো জানি না। আর আপনার কোনো শহুরে নায়িকাকেও তাম্বুলপত্রে অধর রাঙা করে বন্ধুদের সহিত আড্ডা দেওয়ার কথা মনে করতে পারতেছি না। নাকি আছেন তেমন নায়িকা আপনার?

লাবণ্যের কথাই না হয় ধরেন। সে-ও কি পান খাইতেন? চমন বাহার দিয়া পান খাইয়া বুলবুলির পুটকির মতন রাঙা ঠোঁট নিয়া ঘুরে বেড়াইতেন সুধী সমাজে?

যাই হোক, না ঘুরলেও আমার আপত্তি নাই কোনো। পরের জন্মে আমার সাথে দেখা হইলে, মহুয়া-মলুয়ার বেদনা বুকে ধারণ করা এক আধুনিকার গল্প লেইখেন। আর তার মুখে তুইলা দিয়েন তাম্বুল পত্র। লিপস্টিকের বদলে পানের রসে অধর রাঙাইয়া সে আলো করে বসে থাকবে বিদ্বৎ সমাজ।

না, না, না। আপনি চোখ ট্যারা কইরেন না। আমি সেই জ্যোতির্ময়ী নই। তাই, আপনারে আমার কথা লিখতেও বলতেছি না।

কিন্তু বলতেছি যে, আমার এই পান খাওয়া রাঙা ঠোঁট আর আমার বুকের ভেতরে মহুয়া-মলুয়ার দেশের যে মায়াগীত আছে তার থেকে আপনি প্রেরণা নিয়েন। এতে তো দোষ নাই কোনো। নাকি আছে!

শরৎ বাবুর কাছে আপনি সাধারণ মেয়েকে অসামান্য করে তোলার যে মিনতি করে রেখে গেছিলেন আমারো তেমন মিনতি। জানবেন, আমার সাথে আর জন্মে আপনার সাক্ষাৎ হবে আলবৎ। হবেই।

আর জন্মে দেখা হলে আমি মুখে না বল্লেও আপনি জাইনেন যে, ময়মনসিংহগীতিকার পালা আর কৃষাণীদের গীতের মায়া আষাঢ়ের ভরা বিলের মতন টলমলটল করে আমার বুকের ভেতর।

তাই, আমি কিঞ্চিত ঘুঘুপাখিও বটে। অতএব, তাম্বুলপত্রের রসে আপনার অধর না রাঙাইলেও কোনো ক্ষতি-বৃদ্ধি নাই। আপনার গান ছাড়া এই ঘুঘু পাখির চলে না গো, ঠাকুর।

জন্মদিনে আপনি চন্দ্রাবতীর দেশের এক বিপন্ন ঘুঘুপাখির ভালোবাসা জাইনেন।


২৫শে বৈশাখ ১৪২৫
৮ই মে ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:৫৬
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×