somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বেচ্ছামৃত্যু বা ইউথেনেসিয়া: একটি দার্শনিক জিজ্ঞাসা

১৮ ই মে, ২০১৮ দুপুর ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডেভিড গুডউইল। অস্ট্রেলিয়ান বোটানিস্ট ও ইকোলজিস্ট। ১০৪ বছর বয়সে তার জীবনাবসান হয়েছে।

গুডউইলের মৃত্যু যে কোনো একটি সাধারণ ঘটনা বা দূর্ঘটনা নয়।

তাঁর মৃত্যু একটি দার্শনিক জিজ্ঞাসা।

মি. গুডউইল দরিদ্র বা দু:খী বা অসুস্থ্য বা অসুখী ছিলেন না। তাহলে কেন তিনি স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে বেছে নিতে চেয়েছেন?

ব্রিটিশ কাগজ টেলিগ্রাফ-এর অনলাইন সংস্করণে মি. গুডউইলের একটি ছোটো সচিত্র প্রতিবেদন মতন দেখলাম।

সেখানে তাঁর পরিবার-পরিজনেরা তাঁকে ঘিরে রেখেছেন। তাঁর জন্মতিথি উদযাপন করছেন।

সেই জন্মদিনেরই ছোট্ট একটি ক্লিপিংস জুড়ে দেয়া আছে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনটিতে। যেখানে তিনি বলছেন, এই দীর্ঘ জীবন নিয়ে তিনি আর আহ্লাদিত বা পুলকিত নন।

নিজের দীর্ঘ জীবনকে আর বয়ে নিতে সম্মত ছিলেন না ডেডিভ গুডউইল। তাই, সানন্দে স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিতে চেয়েছিলেন।

‘বন্দী’ নামে আমার লেখা একটি গল্প আছে। সেই গল্পের মূল চরিত্র বয়সের ভারে নুব্জ্য একজন পুরুষ। দীর্ঘ জীবন তার কাছে বোঝার মতন মনে হয়। বুকের উপরে ভার হয়ে চেপে বসে। সেই ভার মুক্তির জন্য সে বেছে নেয় তার মতন একটা উপায়।

গল্পটি সমকাল পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিল।

কিন্তু স্বেচ্ছামৃত্যুর মতন গুরুতর সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারা চাট্টিখানি কথা নয়।

পরিবার-পরিজনেরা গুডউইলের এই মৃত্যুর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। টেলিগ্রাফের ওই প্রতিবেদনেই একজনকে এই কথা বলতে দেখলাম।

পশ্চিমা দুনিয়ার অনেক জায়গাতেই খুব গুরুতর অসুস্থ্য ব্যক্তি যার আর সেরে উঠবার কোনো সম্ভাবনাই নেই এবং যার বেঁচে থাকাটাও মৃত্যুর চেয়ে কষ্টকর সেসব ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে বেছে নেয়ার আইনি বৈধতা আছে।

কিন্তু মি. গুডউইলের তেমন কিছু ছিল না।

তবু কেন তবে তিনি জীবন থেকে ছুটি নিতে চেয়েছিলেন? দার্শনিক জিজ্ঞাসাই বটে।

দীর্ঘজীবনে তার ক্লান্তি ধরে গিয়েছিল। এই জীবন তিনি আর বহন করতে চাইছিলেন না। এটাই ছিল তার বক্তব্য।

হতে পারে, জড়ভরৎ শরীর তার চেতনাকে ক্লান্ত করেছিল।

হতে পারে, দীর্ঘ জীবনে ভালোবাসার মানুষদের হারাতে হারাতে চিত্তে তার জমেছিল অমোচনীয় ক্লান্তির ক্লেদ।

হতে পারে, এ জীবনে যা কিছু দেখা যেতে পারে সব তিনি দেখেছেন। তাই, আরবার সেই স্বাদ তিনি নিতে চাননি।

যা কিছুই হোক, সতর্ক ও সচেতন মনে সজ্ঞানে তিনি মৃ্ত্যুকে তার বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

ব্রিটেনে জন্ম নেয়া এই বিজ্ঞানী অস্ট্রেলিয়ায় থিতু হয়েছিলেন। কিন্তু সহজে মৃত্যুকে বেছে নিতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছেছিলেন সুইৎজারল্যান্ডে। কারণ অস্ট্রেলিয়ায় এভাবে মৃত্যু অনুমোদিত নয়, সুইৎজারল্যান্ডে অনুমোদিত।

সেখানেই ডাক্তারেরা ইনজেকশান দিয়ে তাকে পাড়িয়ে দিয়েছে চিরঘুম।

পরম পরিতৃপ্তি নিয়ে তিনি ঘুমিয়েছেন প্রশান্তিতে।

কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনা নয়, নিজের মৃত্যুদিনটি ছিল আর যে কোনো উৎসবের দিনের মতই পরিকল্পিত, প্রার্থিত।

প্রার্থিত এই সুখী মরন জীবনের এক নিপুণ সমাপ্তি বৈকি!

ডেভিড গুডউইলের এই সিদ্ধান্তকে আমি সশ্রদ্ধায় সম্মান জানিয়েছি।

আমিও মনে-মনে চাই আমাদের দেশ ও সমাজ আরো মানবিক হয়ে উঠুক।

ক্লিবের মতন, জড়ের মতন, কীটের মতন যে কোনো একটা উপায়ে কেবল শরীরটাকে পেলে-পুষে বয়ে বেড়ানোটা যে জীবন নয় সেই সত্য সকলে হৃদয় দিয়ে অনুভব করুক।

মৃত্যুকে কেবলি একটি ঘটনা বা দুর্ঘটনা হিসেবে না দেখে একটি বিকল্প হিসেবেও দেখা হোক।

মৃত্যুকে যখন মানুষ আরো গুরুত্ব দিতে শিখবে তখন জীবনও তার কাছে আরো প্রার্থিত হয়ে উঠবে বৈ-কি!

রোগ থেকে যার সেরে উঠবার আর কোনো দাওয়াই নেই, কোনো উপায় নেই তারা সরকারের কাছে চাইলে ইউথেনেসিয়া বা স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য সজ্ঞানে আবেদন করবেন। মেডিকেল গ্রাউন্ডে তাদের এই মৃত্যু গ্রহণযোগ্য করা হবে।

এইসব মৃত্যুর জন্য থাকবে কিছু সেন্টার। সেখানে পরিজন পরিবৃত্ত হয়ে সুখী মুখে মানুষ জীবনের বিকল্পকে বেছে নিতে যাবেন।

মেডিকেল গ্রাউন্ডের বাইরেও ডেভিড গুডউইলের মতন কেউ যদি জীবন থেকে ছুটি নিতে চান তাহলে তার জন্যেও একটা ব্যাবস্থা রাখতে হবে।

আমি মনে করি মানুষের সামনে সবসময়ই বিকল্প খোলা থাকা উচিত। বিকল্প খোলা ছিল বলেই মৃত্যুকেও জন্মদিনের মতনই হাসিমুখে আনন্দময় ঘটনার মতন বরন করে নিতে পেরেছেন গুডউইল।

কিন্তু বিকল্পের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলেই মানুষের মন বিকল হয়ে ওঠে।

আমাদের দেশেও সামনের দিনে নীতি নির্ধারকেরা এই বিষয়গুলো নিয়ে আরো ভাববেন বলে আশা করি।

তাই বলে এটি ভাবার কারণ দেখি না যে, ইউথনেসিয়া বা স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমোদন থাকলেই দলে-দলে মানুষ মৃত্যুর জন্য আবেদন করবেন বা প্র্রেমে ব্যার্থ হলেই, ব্যাবসায় বিরাট লোকসানের মুখে পড়লেই চরম হতাশ হয়ে কেউ স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করে বসবেন।

কারণ স্বেচ্ছামৃত্যুর ক্ষেত্রেও ক্রাইট্রেরিয়া সেট করা থাকবে।

আর বিভিন্ন বয়সী মানুষের হতাশা ও বিষণ্নতা সারাতে থাকবে অন্য ব্যাবস্থা।

তবে, বিকল্প অবশ্যই খোলা থাকা প্রয়োজন। বিকল্প খোলা থাকলে মানুষ তার জীবনকে নিয়ে আরো মমতা ও সতর্কতার সাথে নাড়া-চাড়া করবে বলে মনে হয়।

#Euthanasia #স্বেচ্ছামৃত্যু #ইউথেনেসিয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৮ দুপুর ২:৩০
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×