প্রায় ৪ মাস যোগাযোগহীন অবস্থার পর অবশেষে ছোট্ট একটা টেক্সট আসল, যেটায় লেখা:
আজ আমার বিয়ে। এখন নিশ্চয়ই আমার এগেইনস্টে কোন অভিযোগ নাই কারো....
ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না, এমন টেক্সটের বিপরীতে কি করা উচিত আমার। খুশি আমি কখনোই হতে পারবনা, দুঃখী হওয়া আমার সাজে না। আর বাকী থাকে অভিযোগ, সেটা কার কাছে করব? কেনই বা করব?
মেঘ বালিকার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল বছর দশেক আগে হবে হয়তোবা। সেই প্রথম, সেখানেই শেষ। এরপর আর কখনোই দেখা হয় নাই। আমরা দেখা আর করি নাই। নিজেদের চাওয়া পাওয়া গুলোর সাথে একরকম আপোষ করে ফেলেছিলাম। আমি ছিলাম পাগল আর সে আরেকজনের বাগদত্ত্বা। দেখা না হলেও কথা হত আমাদের। সে অনেক অনেক কথা। এরপর একদিন তার সে, তার কথা বলাও বন্ধ করে দিল। জীবন থেকে হারিয়ে গেল 'মেঘ বালিকা'। আর কোন কথা নেই, ছিল না যোগাযোগও।
তারপর একদিন, বন্ধু মতিয়ুর ও তার ভাগ্নী রুমানা। রুমানার সাথে কয়েকদিনের কথোপকথনে, তার নিবেদিত ভালবাসাকে অগ্রাহ্য করার হিম্মত আমার মাঝে ছিল না। মেঘ বালিকাকে ভোলার ব্যার্থ প্রয়াস নিয়ে শুরু হল আমাদের অমর প্রেমগাঁথা। সময় নিয়েছিল পুরো সাত বছর। মেঘ বালকাকে ভূলে আমি গিয়েছিলাম ও। আমার সর্বস্বঃ বিসর্জন দিয়ে পাগলের মত ভালবাসা শুরু করেছিলাম রুমানাকে। যেন সে-ই শুরু, সে-ই শেষ। মাঝ খানে আর কিছু নেই। বিবাহের বন্ধন দ্বারা আইনসিদ্ধি ছিল শুধু সময়ের ব্যাপার। আর একদিন! হঠাত করেই রুমানার পুরান প্রেমিকের আবির্ভাবে লন্ড-ভন্ড, ওলট-পালট হয়ে গেল জীবন-জগতের সব কিছুই।
৬ মাসের শত কান্না চেষ্টা করেও রুমানাকে আমি ধরে রাখতে পারি নাই। তার পুরান প্রেমিকটির পায়ে পর্যন্ত ধরেছিলাম পথের কুকুরের মত। সে শোনে নাই, রুমানাও না। শুধু একটা দীর্ঘশ্বাসকে সঙ্গী করে তাদের সুন্দর ভবিষ্যত হতে বের হয়ে আসি। যেন বিষ পান করে ফেলেছিলাম। কোথাও কোন শান্তি নেই। মনের কথা গুলো যেন কত্তদিন কাউকে বলা হয় না। একটাবার দেখবার জন্য পাগল হয়ে উঠতাম। আমি ডুকরে ডুকরে কাঁদি। আমি দেয়ালে মাথা ঠুকে মরি। কান্না শোনবার কেউ নেই।
খুব কষ্ট করে দুটো খুন করবার ইচ্ছাটাকে চাপিয়ে বিবাহের দিকে মনযোগী হই। এটাই হয়তোবা সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিশোধ যার উপর কিছু নাই। আমার ও একজন সঙ্গী চাই।
সাত বছর পর আবারো মেঘ বালিকার সাথে কথা হয়। কুশলাদি বিনিময় হয়। আর কিছুই নয়।
বিবাহ পূর্ব সময়গুলো বাগদত্ত্বা শারমিনের সাথে বেশ ভালই কাটছিল। পুরো তিন মাস। ঢাকা শহরের এই গলি সেই গলি, এক জোড়া কপোত কপোতি আর একটা মোটর সাইকেল। আমি যেন নতুন প্রেমিক।
বিয়ের ঠিক তিন দিন আগে কি এক অজানা কারনে শারমিন রা বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছিল। তাকে আর মানাতে পারি নাই, বোঝাতে পারি নাই তার পরিবারকেও। হতভাগ্য আমি ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলাম শারমিনদের বাড়ির গেটের বাইরে। তারা ঢুকতে দেয়নি। কথাও বলতে দেয়নি শারমিনের সাথে। ভাগ্য মেনে নিয়ে সেদিনই শারমিনকে আমি ভূলেছিলাম এবং পরদিনের শারমিনের তুমুল আকুতিও আমার কানে পৌছায় নাই।
রীতিমত না দেখে তড়িঘরি করে আমার স্ত্রীর সাথে নির্ধারিত দিনেই আমি বিবাহে আবদ্ধ হই। গ্রাম দেশের মাথায় ছিল, মান ইজ্জ্বতের বারতা, বিয়ের থেকে বেশি ছিল সমঝোতা এক্সপ্রেসে টিকেট কাটা, যার নেপথ্যে ছিল শুধুই প্রতিশোধ পরায়নতা।
আমার বিয়ের পর, আবারো মেঘ বালিকার সাথে কথা শুরু হল। সে যার বাগদত্ত্বা ছিল সে তাকে অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছিল খবরটি শুনে আফসোসের সীমা ছিল না। একে অপরকে দোষ দিয়ে শুরু হয়েছিল আবারো আমাদের কথা বলা। মোবাইলে, ভাইবারে, হোয়াটসএপে। শত চেষ্ঠা করেও আমরা দুজন আমাদের কথা আর ঠেকাতে পারছিলাম না। পাগল হয়ে গিয়েছিলাম আমরা যার কোন সীমা ছিল না। আমরা আমাদের পুরাতন সময় গুলোকে ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম। এবার আমি ছিলাম বিবাহিত আর সে পাগল। কিন্তু আমাদের দেখা হল না কখনোই। এভাবে ৬ মাস। সে আমাকে সংসারী আর আমি তাকে বিয়ে করতে উপদেশ শুধু দিয়েই যেতাম কিন্তু কেউই তা চাইতাম না। এরপর একদিন শত চেষ্ঠাতে সকল যোগাযোগ বন্ধ।
তারপর আজ, হঠাত করেই তার টেক্সট মেসেজটি। ছোট্ট করে ইংরেজীতে উত্তর দিলামঃ Congrates. Wishing a very very happy married life.......
ইংরেজী ভাষাটাও কি অদ্ভূত তাই না! জীবনের কত্ত কত্ত জটিল সমীকরনগুলোকে খুব সহজেই হালকা করে দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩০