somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাধবগাঁও বুরুজঃ মাটির ভেতর হতে বের হয়ে আসা আরেকটি হাজার বছরের ইতিহাস

১৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



‘দিনাজপুরে ১২’শ বছর আগের মন্দিরের সন্ধান লাভ’ শিরোনামে খবরটি দেখবার পর থেকেই সুযোগ খুজছিলাম যে গিয়ে একবার দেখে আসব। রৌদ্র-বৃষ্টি আর ব্যস্ততা সব মিলিয়ে সময় করে উঠতে পারছিলাম না। এরপর গত শুক্রবার হঠাত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম খননকাজ পরিদর্শনের। পত্রিকা হতে ঠিকানা সংগ্রহ করে সোজা কাহারোল উপজেলার জয়নন্দ বাজারে গিয়ে হাজির হলাম। জয়নন্দ বাজার হতে বীরগঞ্জ উপজেলামুখী রাস্তায় ছোট্ট একটা বাজার নাম ‘টংক বাবুর হাট’। স্থানীয়দের নিকট এই বাজারটি বুড়ির হাট নামেও পরিচিত। বুড়ির হাট হতে আরো প্রায় ৪ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে গিয়ে পৌছালাম মাধব গাঁও। একটা আদর্শ ‘নিভৃত পল্লী’ বলতে যা বোঝায় তার প্রায় সকল উপাদান এখানে বিদ্যমান।



মাধবগাঁয়ে ঢুকার মুখে এটিকে নিভৃত পল্লী মনে হলেও প্রত্ন এলাকায় প্রবেশ মাত্র তব্দা খেয়ে গেলাম। খননস্থানটিকে দেখার জন্য দুর-দুরান্ত থেকে শ-য়ে শ-য়ে মানুষ ছুটে এসেছেন। গড়ে উঠেছে ছোট বাজার এবং সাইকেল-মোটর সাইকেল রাখবার গ্যারেজ। যেন মেলা বসেছে। একটা অ-ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে কিভাবে একটা বানিজ্যিক এলাকা গড়ে উঠতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরন এখন বোধকরি মাধবগাঁও।
ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না। আমি প্রত্নস্থানে পৌছাবার পূর্বেই প্রত্নবস্তুটিকে পলিথিন দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে ঝড়-বৃষ্টি এবং অতি উৎসাহী জনতা হতে। খনন পূর্বে, এটি ছিল ইটের উচু একটা ডিবি যেটি এলাকার লোকেদের নিকট পরিচিত ছিল বাধবগাঁও বুরুজ হিসেবে। এটি এতই উচু ছিল যে এর উপর দাঁড়ালে নাকি সেখান থেকে প্রায় ২৫/৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কান্তজিউ মন্দিরের চূড়া দেখা যেত। হিন্দু ধর্মালম্বি অধ্যুষিত এই মাধবগাঁয়ের লোকেরা অনেক আগে থেকেই এই বুরুজের মাহাত্ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন তবে এর ভেতরে যে আস্ত একটা মন্দির রয়ে যাবে তা তারা কখনো ঠাঁহর করতে পারেন নাই। তারা এটিকে ইটের স্তুপ সম্বলিত দেবতাদের আখড়া হিসেবে মনে করতেন এবং কথিত আছে যে এই বুরুজ হতে কেউ যদি একটি ইট ও তাদের বাড়িতে নিয়ে থাকেন তবে সেই রাতেই তাকে দেবতারা স্বপ্ন দেখাতেন এবং ইট যথাস্থানে রেখে আসতে বলতেন। যারা স্বপ্নে পাওয়া আদেশ মোতাবেক কাজ করতেন না, তাদের হয়ে যেত চরম ক্ষতি। সেই ভয় থেকেই মূলত বুরুজের কেউ কোন ক্ষতি সাধন করতেন না।



২০১৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক দল দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায় একটা প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করে। সেসময় তারা উক্ত উপজেলায় মোট ৯২ টি প্রত্নস্থান চিহ্নিত করেন। যার মশ্যে ৭৫ টি-ই আনুমানিক ১০০০ বছর পূর্বের। এগুলোর মধ্যে এই মাধবগাঁও বুরুজটি একটি। সরকারী খাস জমির উপর অবস্থিত প্রত্নস্থানটির খননকাজ পরিচালনা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সেই দলটি-ই। তারা মন্দিরের বিভিন্ন অংশে বিষ্ণু প্রতীমার উপকরণ যেমন শঙ্খ, চক্র, গদা এবং পাথরের একটি দেবি প্রতীমারও ভগ্নাংশ পাওয়ার দরুন মনে করছেন, এটি প্রায় ১২শ’ বছর আগের একটি বিষ্ণু মন্দির এবং পূর্ব ভারতীয় সনাতনী স্থাপত্যের গঠনের সঙ্গে এর রয়েছে বিস্তর মিল। খননকারী প্রত্নতাত্ত্বিকগন এটিকে একটি ‘নবরথ’ মন্দির বলে ধারনা করেছেন। তাদের ধারনা সত্যি হলে, এটি হবে বাংলাদেশে আবিস্কৃতি প্রথম নবরথ মন্দির। মূলত মন্দিরের বহির্গাত্রের অভিক্ষেপের সংখ্যার ওপরে ভিত্তি করেই মন্দিরকে রথ অন্তর্ভূক্ত করা হয়। আবিষ্কৃত মন্দিরটির নয়টা রথ থাকায় এটিকে ‘নবরথ’ মন্দির হিসেবে ধারনা করা হচ্ছে। মন্দিরটি মূলত কাঁদা এবং ইটের সমন্বয়ে এবং দেয়াল শক্ত ও দৃঢ় করবার জন্য পাথরের টুকরা ব্যবহার করা হয়েছিল। দরজা ও জানালাতেও সম্ভবত পাথরের টুকরা ব্যবহার করা হয়েছে বলে তারা জানান । তারা বলেন সাধারনত এই অঞ্চলে যে সব প্রাচীন মন্দির দেখতে পাওয়া যায় তার সাথে এর কোন মিল নেই। মন্দিরটির আনুমানিক খ্রিস্টীয় ১১শ-১২শ শতকে নির্মিত অর্থ্যাত এর আনুমানিক বয়স প্রায় এক হাজার বছর। তারা ভারতের ভূবনেশ্বরের রাজা-রানী মন্দির, পশ্চিম বাংলার বাকুরা জেলার সিদ্ধেশ্বর (শিব) মন্দিরের সাথে এই মন্দিরের ভূমি নকশার মিল খুঁজে পান।


রাজা-রানী মন্দির, ভূবনেশ্বর


সিদ্ধেশ্বর (শিব) মন্দির, বাকুরা

প্রত্নবস্তুটির পলিথিনে ঢাকা কিছু রেন্ডম চিত্র প্রদান করা হলঃ

















প্রত্নদলটির ধারনা মোতাবেক মন্দিরটি মূলত নিম্ন চিত্রের অনুরুপ ছিল যার উপরের শিখর গুলো ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।



(খননকার্য সমাপ্ত হবার পর পূর্নাঙ্গ চিত্র নিয়ে পুনারায় একটি পোস্ট প্রদান করা হবে, পোস্টের বিভিন্ন তথ্য গ্রহন করা হয়েছে পত্রিকা, ইন্টারনেট এবং প্রত্নস্থানে টানানো তথ্য তালিকা হতে)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৪৬
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×