somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অগ্নি সারথি
একটা বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন নিয়ে, আমি প্রান্তিক জনতার কথা বলতে এসেছি...!

বৈদ্যনাথ মন্ডলঃ একজন ‘শূকর রাখালে’র গল্প

২৬ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“হামরা হচি বাহে অচ্ছুতের এমন অচ্ছুত
যে হামাক দেখি, কুকুরগুলা পর্যন্ত ঘাউ ঘাউ করি উঠে’’
(আমরা হচ্ছি বাবা এমন অচ্ছুতের অচ্ছুত, যে আমাদেরকে দেখে কুকুর গুলো পর্যন্ত ঘেউ ঘেউ করে উঠে)

কথা গুলো বলছিলেন বৈদ্যনাথ মন্ডল। যিনি পেশায় একজন শুকর পালের রাখাল। বর্ষার শুরু হলেই শুকরগুলোর চারণভূমি পানিতে তলিয়ে যায় এবং দেখা দেয় খাদ্য সংকট। শুকরদের আর ঘরে রাখা যায় না সেসময়। বৃষ্টির পানিতে তখন ‘শূকর রাখালগন’ তাদের একপাল শূকর নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়েন। রোদ, ঝড়, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তারা শূকর চড়িয়ে বেরান এই পাড়া সেই পাড়া, এই জেলা সেই জেলা, এই অঞ্চল সেই অঞ্চল। বৈদ্যনাথ মন্ডল তাদেরই একজন। যিনি কিনা শূকর পাল নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়েছেন। ঠিক জানেন না, এবার তিনি কোথায় যাবেন। গতবার তিনি রংপুর থেকে গিয়ে ঠেকেছিলেন সাতক্ষীরা পর্যন্ত। পুরো দেশ জুড়ে খেয়ে চলা এসব শূকরেরা এই পালের মধ্যে একটা আরেকটার সাথে যৌন সঙ্গম করে, তারা গর্ভবতী হয়, বাচ্চা প্রসব করে, শাবকেরা বড় হয় আর কেউ কেউ বিক্রি ও হয়ে যায়।



রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামের বাসিন্দা বৈদ্যনাথ মন্ডলের এবারের যাত্রায় তার একমাত্র সঙ্গী হল শূকর নামক নিকৃষ্ট জীবগুলো, একটা ছড়ি আর সাথের একটা পোটলা। ছড়ি ঘুড়িয়ে তিনি শূকর পালকে কমান্ড করেন। আর তার প্রতিটা কমান্ড অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে এই শূকর সন্তান গুলো। তারা জানে কোন কমান্ডে তাদের রাস্তায় উঠতে হবে আর কোন কমান্ডে নামতে হবে চারন ভূমিতে কিংবা কখন তাদের বিশ্রামের সময়। কমান্ডের বাইরে কারো যাবার জো নেই। এক অর্থে তিনি একজন দক্ষ কমান্ডারও বটে। যেখানে রাইত সেখানে কাইত নামক তত্ত্বে যেখানেই রাত নামে সেখানেই ‘শূকর রাখাল’ তার তাবু (আসলে পলিথিন) ফেলে শুকরের সাথে রাত্রী যাপন করেন। তাদের সাথে থাকা পোটলায় থাকে খাবার-দাবার, সরঞ্জাম আর পলিথিন। খাবার দাবার মূলত মালিকেরাই দিয়ে দেন আর সেই সাথে বেতন হিসেবে প্রদেয় হয় প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা। এই সামান্য কিছু টাকার দিকে মুখিয়ে থাকে অভাব আর দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত শূকর রাখাল পরিবারগুলো। পরিচালিত হয় ‘শূকর রাখালে’র আস্ত একটা পরিবার। উত্তরন সেখানে অসম্ভব, ‘শূকর রাখালে’র ঘরে জন্ম হয় আরেক ‘শূকর রাখালে’র। আর মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায় অল্প বয়সে, হয়তোবা আরেক শূকর রাখালের সাথে।



পতিত জমিতে শূকর চরালে জমি উর্বর কিংবা জমির আগাছা দমন হলেও বংশানুক্রমিক এই পেশাটি সমাজের ‘ভদ্র লোকেদের’ কাছে বিবেচিত হয় শূকরের মত নিকৃষ্ট হিসেবে। অনেক গৃহস্থ ঘর মাঝে মাঝে তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে পর্যন্ত দেয় না এসব অচ্ছুতদের। বেশ ঘৃন্য একটা কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়, সকলে তাদের এড়িয়ে চলে। অথচ সমাজের অনেক সম্মানিত মুসলমানও রয়েছেন এই শূকর পালের মালিক। শূকর বিক্রির টাকা দিয়ে তারা তাদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরন করেন। এতে তাদের কোনো সমস্যা হয় না, যত সমস্যা এই শূকর রাখালদের।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:০৬
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×