somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘কৃষক সমাচার’ তথা কৃষিভিত্তিক লাভ-ক্ষতির অংকটা!

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা
দেশমাতারই মুক্তিকামী, দেশের সে যে আশা।”

শুধু কবি রাজিয়া খাতুন চৌধুরানী-ই নন বরং আরো হাজারো কবি, সাহিত্যিক, ছড়াকার তাদের রচনায় একটা সময়ে কৃষকদের জয়জয়কারের অবতারনা করে বাংলাদেশের কৃষক সমাজকে জাতির সর্বশ্রেষ্ট আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন। এটা ছিল সেই সময়ের কথা, যখন দেশজ্ব অর্থনীতিতে কৃষি তথা কৃষকের একটা গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা ছিল। পুরো বাংলাদেশ ছিল একটা কৃষি নির্ভর সমাজ আর কৃষক ছিল দেশের সূর্য সন্তান। কিন্তু আফসোস! বাংলার কৃষকের সেই অবস্থা আজ নাজুক প্রায়। একটা শক্তিশালী শহুরে অর্থনীতির বিপরীতে আজ তারা পরাজিত, তারা যেন অভিশপ্ত। আর সেই পরাজয়ের অভিশাপ নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করতে করতে একটা সময়ে হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতল গহ্বরে।

বাংলাদেশে ভূমি ব্যবস্থাপনার ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় প্রাচীনকালে ভূমির মালিকানা ন্যাস্ত ছিল রাজা তথা রাষ্ট্রের হাতে। রাজা তার প্রজাদেরকে ভূমি মঞ্জুরী প্রদান করত এবং প্রজাগন সেই ভূমিতে ব্যাক্তিগত খামারভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা পরিচালনা করত এবং রাজস্ব ও অন্যান্য কর হিসেবে রাজ-কোষাগারে শস্য প্রদান করত যার মাধ্যমে পুরো রাষ্ট্র-অর্থিনীতির চাকা সচল থাকত। যদিও সেসময় এই অঞ্চলে পতিত ভূমির পরিমানটা বেশ ছিল। সুলতানি ও মুঘল আমলে পতিত জমির সৎ-ব্যবহার তথা চাষাবাদ সম্প্রসারন তথা সরকারী রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে পতিত জমি গুলো কম খাজনায় এবং দীর্ঘ মেয়াদী কিস্তি পরিশোধের মাধ্যমে প্রজাদেরকে লিজ নিতে উৎসাহিত করা হয়। এমনকি সরকার হতে প্রজাদের জন্য কৃষি উপকরন ও সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য তাকাবি ঋনের ব্যবস্থা পর্যন্ত করা হয়। চমৎকার একটা কৃষি নির্ভর এবং স্বয়ংসম্পূর্ন সমাজ ব্যবস্থা এই মধ্যযুগে দৃশ্যমান হলেও ‘জায়গীরদার’ এবং তার সূত্র ধরে ‘জমিদার’ নামক শ্রেনীর উদ্ভবও কিন্তু এই মধ্যযুগে তথা মুঘল আমলে। এই জমিদার শ্রেনীর হাতে ন্যাস্ত ছিল মুঘলদের হয়ে রাজস্ব আদায়ের কাজটি যার বিনিময়ে তারা মুঘলদের নিকট হতে বিভিন্ন সুবিধা, সুযোগ আদায় করত। তারা মূলত ছিল বিভিন্ন ধরনের জমি ও অধিকারের মালিক।

এরপর ব্রিটিশ শাসনামলে, ভূমি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় হেস্টিংস এক বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। শতাব্দী প্রাচীন কর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে তিনি প্রতিষ্ঠিত জমিদার ও তালুকদারদের স্থলে সেইসব ইজারাদার বা খাজনাদাতা জোতদারদের নিয়োগ করেন, যারা সর্বোচ্চ খাজনা প্রদানের অঙ্গীকার করেন। সনাতন জমিদারদের জন্য এই পদক্ষেপ ছিল নিঃসন্দেহে একটি বড় আঘাত। কিন্তু তবুও তারা এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে প্রতিবাদ করেন নি, কারণ তাদের জন্য সংগৃহীত রাজস্বের দশ শতাংশ হারে অনর্জিত মালিকানা ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা চালু করেন যেখানে জমিদারকে জমির স্বত্ত্বাধিকারী হিসেবে ঘোষনা দেয়া হয় এবং জমির জন্য ধার্য্যকৃত খাজনা তাদেরকে চিরকালের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় এবং খাজনা মওকুফের সকল অযুহাতকে খারিজ করে দেবার বিধান রাখা হয়। কোন স্বত্ত্বাধিকারী নির্দিষ্ট সময়ে রাজস্ব পরিশোধে ব্যার্থ হলে তার জমিদারী নিলামে বিক্রির বিধান রাখা হয় যেটি কিনা সূর্যাস্ত আইন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মূলত এই সূর্যাস্ত আইনের কারনেই সে সময় প্রচুর জমিদার তাদের জমিদারী হারান এবং এক শ্রেনীর নব্য জমিদারের আবির্ভাব ঘটে।

এই বন্দোবস্ত প্রথার জমিদারগন তাদের খাজনা আদায়ের উদ্দেশ্যে এসময় একটি মধ্যস্বত্ত্বভোগী পরজীবি শ্রেনী তৈরি করে। আর এই পরজীবি শ্রেনী জমিদারের হুকুমে অথবা নিজের ইচ্ছায় নানাভাবে রাজস্বের হার বাড়াতে থাকে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথার কল্যানে একদিকে যেমন নব্য জমিদারের আবির্ভাব ঘটে তেমনি রাজস্ব আদায়ের নানামুখী চাপ ও ভূমিতে মালিকানা স্বত্ত্ব নিয়ে জমিদার-প্রজা সম্পর্কে অবনতি ঘটতে থাকে এবং তা দ্বন্দ্বে রুপ নেয়, আর এই দ্বন্দ্ব ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার ভিত পর্যন্ত নাড়িয়ে দেয়। কারন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা জমিদারকে জমির একচ্ছত্র মালিক ঘোষনা করলেও ভূমিতে রায়তের অধিকার সম্পর্কে এই রেগুলেশন ছিল পুরাই নিরুত্তর। এসময়টায় একটা স্বচ্ছল কৃষক শ্রেনীরও আবির্ভাব ঘটে, মূলত যাদের নেতৃত্বে আন্দোলন সংগ্রামগুলো গড়ে ওঠা শুরু করে। ১৮৭০ সালের দিকে জেলায় জেলায় জমিদার বিরোধী জোট গঠিত হয় এবং আইন শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। অবস্থা বেগতিক দেখে সরকার, প্রজাদের প্রায় অনেক দাবি-দাওয়া মেনে নিয়ে ১৮৮০ সালে একটি খাজনা কমিশন গঠন করে যেটি কিনা বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ত্ব আইন নামে পরিচিত। বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ত্ব আইন একটা নির্দিষ্ট শ্রেনীর কৃষক-প্রজার অধিকার নির্দিষ্ট করে তো দিল কিন্তু ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক কৃষকেরা সেই আগের অবস্থা তথা জমিধারের ইচ্ছাধীন প্রজা হিসেবেই বিবেচিত হতে থাকল।
১৯৫০ সালে আইন করে জমিদারী এবং সকল মধ্যসত্ত্বাধিকার ব্যবস্থা বিলোপ করা হয় যেখানে রায়ত বা প্রজারাই সরকারের অধীনে সরাসরি জমির মালিক হিসেবে গন্য হতে থাকে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন একটা সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয় যে কোন পরিবার বা প্রতিষ্ঠান ৩৭৫ বিঘার উপরে জমি গ্রহন করতে কিংবা মালিক হতে পারবে না। স্বাধীনতা লাভের পর অর্থ্যাত ১৯৭২ সালের দিকে বাংলাদেশ সরকার ভূমি গ্রহনের পরিমান ৩৭৫ বিঘা থেকে কমিয়ে ১০০ বিঘায় নিয়ে আসে অর্থ্যাত কোন পরিবার বা প্রতিষ্ঠান ১০০ বিঘার উপরে জমি গ্রহন করতে কিংবা মালিক হতে পারবে না। এরপর হতে ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে নানা পরিবর্তন সাধিত হলেও ভূমি মালিকানায় তেমন কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয় নাই।

এখন প্রসঙ্গটা হল, নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে- একটা ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এদেশীয় আবহমান কৃষক সমাজ ভূমিতে তার মালিকানা ফিরে তো পেল আবার একই সাথে তার ভূমি বিমুখতাও ত্বরান্বিত হল। কৃষি সমাজগুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে শিল্প সমাজের দিকে ধাবিত হতে থাকল।

বিগত ২০১৫ সালের মে মাসের পত্রিকাগুলোতে একটা গুরুত্বপূর্ন খবর ছিল যে, বছরে প্রায় দেড় কোটি টন ফসল থেকে বঞ্চিত দেশ। এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন দুই দশকের মধ্যে খাদ্যশস্যের চাহিদা চার কোটি টন ছাড়িয়ে যাবে।

উপরোক্ত খবরটি নিঃসন্দেহে বেশ এলার্মিং একটা ইস্যু। এ কথা অনস্বীকার্য যে একসময় কৃষি-ই ছিল বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে কৃষির অবদান ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৯৮০-র দশকে জিডপিতে কৃষির অবদান ছিল ৩৩.০৭%, ৯০ এর দশকে ২৯.২৩%, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৬.৩৩% এবং ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে মাত্র ১২.২৭% (কৃষি ও বনজ মিলিয়ে)। সূতারাং এটা পরিস্কার যে বাংলাদেশের অর্থনীতি খুব দ্রুত প্রচুর খাদ্য শস্যের চাহিদা নিয়ে কৃষি বিমুখ একটা অর্থনীতিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। এর মূল কারনটাই হল মানুষের কৃষির প্রতি অনাগ্রহ। কালের পরিক্রমায় কিংবা বংশানুক্রমিক ভূমির মালিকানা লাভকারী গোষ্ঠী একটা সময় পর্যন্ত কৃষি উৎপাদনের সাথে যুক্ত তো ছিল কিন্তু ধীরে ধীরে কৃষি একটি অলাভজনক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে পরিণত হবার কারনে তারা কৃষি হতে হাত গুটিয়ে নিয়ে অন্যান্য অধিক মুনাফার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে মনোনিবেশ করছে। গ্রামে যে শ্রেনীর মানুষগুলোর হাতে জমি ছিল তারা জমি বর্গা অথবা লিজ কিংবা বিক্রি করে দিয়ে শহরমুখী শিল্প-ব্যাবসা-চাকুরীর দিকে বেশি মনোনিবেশ করছে। মূল কারনটাই হল খরচের তুলনায় ফসলের পর্যাপ্ত দাম না পাওয়া।
দেশের উত্তরাঞ্চলে জমি গুলো মূলত দো-ফসলী। সারা বছর জুড়ে এখানে মূলত বোরো এবং আমন ধানের আবাদ করা হয়। নিম্নে ১ বিঘা জমিতে খরচ, উৎপাদন এবং লাভ লোকসান দেখানো হলঃ

*বোরো খরচঃ
১। জমি চাষ (৪ বার)= ৩০০X৪= ১২০০ টাকা
২। বীজ (১০ কেজি)= ২০X১০= ২০০ টাকা
৩। বীজতলা তৈরি= ৩০০ টাকা
৪। ধান রোপন= ৭০০ টাকা
৫। সেচ (মোট= ৮/১০ টা)= ১৫০০ টাকা
৬। ফসফেট (২০ কেজি)= ৬০০ টাকা
৭। পটাশ (২০ কেজি)= ৪৫০ টাকা
৮। ইউরিয়া (২০ কেজি)= ৪৫০ টাকা
৯। ঘাস মারা বিষ (১০০ গ্রাম)= ১৫০ টাকা
১০। গোবর সার (৩২০ কেজি)= ৪০০ টাকা
১১। নিড়ানি দেয়া= ২০০ টাকা
১২। দানাদার বিষ (১ কেজি)= ২০০ টাকা
১৩। স্প্রে (২/৩ বার)= ৭০০ টাকা
১৪। ধান কেটে আনা= ৪০০ টাকা
১৫। ধান মাড়াই= ৩০০ টাকা
১৬। জমি ভাড়া (শুধু বোরোর জন্য)= ২২৫০ টাকা

মোট খরচঃ ১০,০০০ টাকা

বোরো ধানের ক্ষেত্রে কোন খড় পাওয়া যায় না এবং ধানের সর্বোচ্চ ভাল ফলন হলে হয় প্রায় ২৭ মন ধান। গত বছর প্রতি মন ধানের দাম ছিল গড়ে ৬০০ টাকা। অর্থ্যাত মোট ধানের দাম ১৬,২০০ টাকা সেখানে মোট লাভ (১৬,২০০-১০,০০০)= ৬,২০০ টাকা

*আমন খরচঃ
১। জমি চাষ (৪ বার)= ৩০০X৪= ১২০০ টাকা
২। বীজ (১০ কেজি)= ২০X১০= ২০০ টাকা
৩। বীজতলা তৈরি= ৩০০ টাকা
৪। ধান রোপন= ৭০০ টাকা
৫। সেচ (মোট= ২/৩ টা)= ৮০০ টাকা
৬। ফসফেট (২০ কেজি)= ৬০০ টাকা
৭। পটাশ (২০ কেজি)= ৪৫০ টাকা
৮। ইউরিয়া (২০ কেজি)= ৪৫০ টাকা
৯। ঘাস মারা বিষ (১০০ গ্রাম)= ১৫০ টাকা
১০। গোবর সার (৩২০ কেজি)= ৪০০ টাকা
১১। নিড়ানি দেয়া= ২০০ টাকা
১২। দানাদার বিষ (১ কেজি)= ২০০ টাকা
১৩। স্প্রে (২/৩ বার)= ৭০০ টাকা
১৪। ধান কেটে আনা= ৪০০ টাকা
১৫। ধান মাড়াই= ৪০০ টাকা
১৬। জমি ভাড়া (শুধু বোরোর জন্য)= ২২৫০ টাকা
মোট খরচঃ ৯,৪০০ টাকা
খড় পাওয়া যায় প্রায় ৮০০ আটি যার মূল্য ৬০০ টাকা। ধানের সর্বোচ্চ ভাল ফলন হলে হয় প্রায় ২০ মন ধান। গত বছর প্রতি মন ধানের দাম ছিল গড়ে ৭৫০ টাকা। অর্থ্যাত মোট ধান এবং খড়ের দাম ১৫,৬০০ টাকা সেখানে মোট লাভ (১৫,৬০০-৯,৪০০)= ৬,২০০ টাকা।

সুতারাং উপরোক্ত লাভ-ক্ষতির হিসাব অনুযায়ী এক বিঘা জমি হতে উত্তরাঞ্চলের একজন কৃষকের এক বছরে উপার্জন হল প্রায় ১২,৪০০ টাকার মত। আর বছরে সর্বোচ্চ ১২,৪০০ টাকার মত লাভটা অপর্যাপ্ত ঠেকল গ্রামের কৃষি-নির্ভর বিশেষ একটা শ্রেনীর কাছে, যারাই মূলত রাজস্ব ভাগ জমির মালিক। জমি গুলো বর্গা/ লিজ/বিক্রি করে দিয়ে তারা জমি থেকে উঠে এসে শিল্প কিংবা সেবা খাতের দিকে ধাবিত হল। একই সাথে তারা আরেকটা শ্রেনীকে জমি হতে উচ্ছেদ করে দিল যারা মূলত ছিল কৃষি দিনমজুর। কৃষি দিনমজুরের অনেকেই শহরে স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী ভাবে অভিবাসী হয়ে অকৃষিভিত্তিক শ্রমের সাথে যুক্ত হতে শুরু করল এবং নগরে একটা অপরিকল্পিত নগরায়ন ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করল। তবে একেবারে নিচু একটা শ্রেনীর কিন্তু বিশেষ লাভ-ই হল। তারা জমিগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারে কিনে, লিজ কিংবা বর্গা নিয়ে নিজেরাই উৎপাদন শুরু করে দিল। আগে যেখানে তারা কৃষি দিনমজুর হিসেবে কাজ করত এখন সেখানে তারা অন্যান্য কাজ করবার পাশাপাশি নিজের জমিতে শ্রম দেয়া শুরু করল। তার জমিতে তার বেচে যাওয়া শ্রম খরচটা, উৎপাদিত সামান্য মুনাফার সাথে যুক্ত হয়ে বেশ ভাল একটা মুনাফা হিসেবে সামনে আসছে।

গ্রাম বাংলার এই প্রান্তিক চাষিদের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল তার পরিবারের জন্য তিনবেলা খাদ্য নিশ্চিত করা। ধান উঠে যাবার পরপর-ই এই ক্ষুদ্র চাষী যা করে, তা হল শুরুতেই একটা নির্দিষ্ট অংশ সে চাল তৈরি করে ফেলে যা তাদের সারা বছরের খাদ্য নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করে এবং বাকী অংশ তারা বিক্রি করে দেয়। খড় এবং চাল হতে প্রাপ্ত চালের কুড়া তারা ঘরের গবাদী পশুগুলোর খাবারের জন্য সংরক্ষন করে।

বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান নগরায়নের পাশাপাশি কৃষি অর্থনীতিটাও টিকিয়ে রাখা বেশ জরুরী হয়ে পড়েছে। আর এই কৃষি অর্থনীতিটা ধংসের মূল কারন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে কম মুনাফার বিপরীতে কৃষি উপকরনের মূল্যের উর্ধগতি। প্রায় প্রতি বছর কৃষকেরা একটাই অভিযোগ করে আসছেন যে তারা তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। সরকার বাহাদুর বলছেন, বাম্পার ফলন! এবং ফসলের ন্যায্য দাম প্রদানের কথা। ফসলের ন্যায্য দামের ঘোষনা সরকার বাহাদূর করছেন ঠিকই হয়তোবা তবে সাথে সাথে তা চলে যাচ্ছে কিছু সরকারদলীয় ফরিয়াদের হাতে। তারা খুব কম মূল্যে কৃষকদের নিকট হতে ফসল ক্রয় করে গোডাউনে স্টক করছে আর তারপর বাজারে একটা কৃত্রিম ক্রাইসিস তৈরি করে পরবর্তীতে চড়া দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। যার ভোক্তা এবং ভুক্তভোগী দুটোই দেশের আমজনতা। প্রতিবছর সরকার হাজার হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিদেশ হতে আমদানি করছে কিন্তু কৃষি খাতের সুষ্ঠু একটা পরিকল্পনাই দেশ এবং জনগনকে চরম ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে পারে।

তথ্যসূত্রঃ তথ্যসূত্রের সিরিয়ালটা বেশ লম্বা তাই সংযোজন করা হতে বিরত থাকলাম।

বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ অনূজ, আরিফ হাসান (রনি) যে কিনা একজন সফল কৃষি উদ্দ্যেক্তা এবং একই সাথে নানান পাইলট ইমপ্লিমেন্ট করবার মধ্য দিয়ে কৃষিকে কিভাবে একটা চরম লাভজনক খাতে রুপান্তর করা যায় সেই চেষ্টায় রত।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:১৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×