তখন বাংলা ভাষার বিকাশের যুগ।সাহিত্য আর ব্যাকরণ নিয়ে চলছে নতুন-নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা।“বৌ”কে অনেকেই “বউ” লিখছেন।ভাষাচার্য সুনীতিকুমার এই বানান দেখে মন্তব্য করলেন—ছি ছি!শেষ পর্যন্ত বৌ হলো এমন! বউ, তো বৌয়ের মাথায় ঘোমটা কই?বাস্তবিকই!অক্ষরের চেহারার সঙ্গে তার অর্থের দিকটাও কেমন করে যেন জড়িয়ে যায়।ৌ-কারের মাথার বাঁকা অংশটা যে ঘোমটার মতো দেখতে এটা কে অস্বীকার করবে?
তেমনিভাবে “ঈদ”কে যখন বলি ইদ, তখন কি মাথায় প্রশ্ন জাগে না—"ব্যাটা, ঈদের নতুন চাঁদটা গেল কোথায়?" চাঁদমামা এসে যখন “ই”-এর লেজে চড়ে বসে তখনই তো সেটা “ঈ” হয়, নয় কি?
ওই একই দৃষ্টিগ্রাহ্য কারণে ইদকে অনেকের কাছে ইঁদুর বলেও ভ্রম হয়!এটাকে হয়ত অস্বীকার করা যায়।কিন্তু অগ্রাহ্য করা যায় না।
মানুষ সবসময় কোনও এক অদৃশ্য কারণে ফিরে যেতে চায় ছেলেবেলায়।হয়তো একমাত্র সে-সময়টাতেই লাভক্ষতির চুলচেরা হিসেব না করে আনন্দটাকে বাঁধাহীন উপভোগ করা যায় বলে।ছেলেবেলার ঈদের মাঠে গিয়ে দেখা ইমামের খুতবার ছোট্ট জায়গাটাতে “ঈদ মোবারক” লেখাটির মধ্যে যে শিহরণ,যে আবেগ —সেটাকে অস্বীকার করবে কোন অভাজন?কোন অভাগা?
“ঈদ”-এর চাঁদকে সরিয়ে “ইদ” বানিয়ে এই কোটি-কোটি মানুষের কোমল আবেগটিকে আঘাত করার অধিকার কোনও ব্যাকরণবিদকে জনগণ তো দূরের কথা, ভাষা নিজেও দেয় কি?
চাঁদকে অন্ধকারে ঢাকা দেওয়া যায় না।অন্ধকার যত গাঢ় হয়, এর উজ্জ্বলতা ততো বাড়তে থাকে।“ঈদ”-এর চাঁদটাকে ঢাকা দিয়ে “ইদ” বানানোর তাই যতই চেষ্টা করা হোক সেটা নিজ মহিমায় প্রকাশ পাবেই।
এই ভাষা আমার ভাষা।আমার মায়ের ভাষা,ভায়ের ভাষা।আমার বাবার ভাষা, বুবুর ভাষা।আমি ছোটবেলার মতো আমার বাবার হাতটি ধরে ঈদের মাঠে যেতে চাই।আমি ঈদের মধ্যে বাঁকা চাঁদের হাসিটি চাই।আমি চাইনা কোনও ইঁদুর দৌড়ের মধ্য দিয়ে ঈদের মাঠে যেতে।
—ঈদ না কি ইদ?
স্নিগ্ধ মুগ্ধতা।