somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাক না কি কবি? (কবিতা নিয়ে একটি উপদেশবহুল কচকচানি)

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চায়ের কাপে বড় একটা চুমুক দিয়ে টুটুল বলল—দেশে কবি আর কাকের সংখ্যা যে সমান—এই বিষয়ে অনেকের আপত্তি থাকলেও কারও সন্দেহ নেই। চুম্বকের আশেপাশে থাকলে খানিকক্ষণ পরই লোহাও চুম্বক-চুম্বক আচরণ শুরু করে। আর বাংলাদেশে জন্মালে কয়েক বছর পরই মানুষ কবি-কবি ভাব ধরে।

টুটুল সবসময় এইরকম বড়-বড় বুলি ঝাড়ে। এটা অবশ্য, বলতে গেলে, ওর জন্মসূত্রে পাওয়া। ছেলে বড়ো দার্শনিক হবে—এই রকম একটা আশা নিয়ে বাবা নাম রেখেছিলেন ‘অ্যারিস্টটল’। সেই অ্যারিস্টটলই কালক্রমে ‘টুটুল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই নামের মহিমা বজায় রাখার জন্যই ও বোধহয় এইরকম বড়ো-বড়ো লেকচার দেয়!

আমি বললাম—হঠাত্ কবিদের নিয়ে পড়লি?

টুটুল বলল—কেন কবিতা পড়া যাবে, আর কবিদের নিয়ে পড়া যাবে না?

আমি ত্যক্ত হয়ে বললাম—কথা প্যাঁচাস ক্যান?

টুটুল বলল—আরে হাল-আমলের উঠতি কিছু কবিদের কবিতা পড়ছিলাম। তা, যেভাবে তারা কবিতা লিখছে তাতে করে ওইসব উঠতি কবিরা উঠতে-উঠতে কবিতাও উঠে যাবে!

আমি বললাম—তাদের কবিতায় সমস্যা কোথায়?

টুটুল বলল—প্রথম কথা হলো—এরা গদ্য আর পদ্যের মধ্যে পার্থক্যটাই বোঝে না! গদ্য-কবিতা লিখছিস, মিল-ছাড়া কবিতা লিখছিস ভালো কথা। কিন্তু, তাই বলে ছন্দ ছাড়াও কবিতা লিখবি? সব এইরকম করে ছাড়তে থাকলে তো কয়দিন পর কবি ছাড়াও কবিতা লেখা হয়ে যাবে!

আমি চায়ের কাপ ঠকাস করে টেবিলে নামিয়ে রেখে বললাম—তাহলে তাদেরকে তুই কী করতে বলিস?

ও বলল—তাঁদের উচিত আগে বিখ্যাত সব কবিতাগুলো টানা পড়ে যাওয়া। বিদ্রোহী পড়তে পারে, সাত সাগরের মাঝি পড়তে পারে, আর রবীন্দ্রনাথ তো আছেই! আল মাহমুদ আছেন, শামসুর
রাহমান আছেন।

আমি ভুরু কুঁচকে বললাম—তোর কি মনে হয় কবিতা পড়তে থাকলেই ছন্দজ্ঞান সবার চলে আসবে?

টুটুল বলল—তবে কি না-পড়লে আসবে? আর ছন্দজ্ঞান আরও টনটনে করতে হলে ওদের উচিত জাদুকরের কাছে যাওয়া।


আমি বললাম—জাদুকর?


টুটুল বলল—ছন্দের জাদুকরের কথা বলছি। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। তাঁর কবিতা পড়লেই দেখ না কেমন ঢেউ খেলে যায় মাথার মধ্যে—


আজকে তোমায় দেখতে এলাম জগৎ-আলো নূরজাহান,
সন্ধ্যা-রাতের অন্ধকার আজ জোনাক পোকায় স্পন্দমান!
বাংলা থেকে দেখতে এলাম মরুভূমির গোলাপ ফুল,
ইরান দেশের শকুন্তলা, কই সে তোমার রূপ অতুল?


আবৃত্তি শেষ করে ও বলল—ছন্দের জাদুটা দেখেছিস? থামার পরও কেমন রেশ রয়ে যাচ্ছে?

আমি অবশ্য এইসব রেশফেশ কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু, আর যাই হোক কবিতার ব্যাপারে টুটুলের উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। কাজেই মাথা নেড়ে বোঝার ভান করলাম।

টুটুল ওর চা শেষ করে বলল—আর ছোটদের নিয়ে ছড়া-কবিতা যে লেখা যায়—ওটাতো সবাই ভুলেই গেছে! যাও দু-একজন লিখছে ওতে শুধু জ্ঞানের কথা ছাড়া আর কোনও রস নেই।

আমি বললাম—জ্ঞানের কি দরকার নেই?

টুটুল বলল—জ্ঞানের দরকার নেই, তা বলেছি নাকি? আমি বলেছি ‘শুধু জ্ঞানের’ দরকার নেই। মানে, জ্ঞানের সাথে একটু লবণও মিশিয়ে দিতে হবে। নইলে বাচ্চারা খাবে কেন?

আমি বললাম—তো তুই-ই লেখ না!

চায়ের বিল মিটিয়ে দিয়ে টুটুল বলল—লিখছি তো। এই দ্যাখ, বাচ্চাদের জন্য একটা ছড়া লিখেছি—

‘আপনাকে বড়ো বলে বড়ো সেই নয়,
আমাকে যে বড়ো বলে বড়ো সেই হয়।
বড় হওয়া সংসারে কঠিন ব্যাপার—
নিয়মিত খেতে হয় নানান খাবার!
খেয়েদেয়ে হাতি হলে বড় বলে সবে,
বড় যদি হতে চাও—বেশি খাও তবে!’


দেখবি এই ছড়া পড়লে যে-সব বাচ্চারা খেতে চায় না, তারা না-খেয়ে থাকতে চাইবে না। আর বড়ো হয়ে আসল কবিতাটা যখন তারা পড়বে, তখন বুঝবে আগে-পড়া কবিতাটা ছিল ছোটোবেলার জন্য, আর এখনকার কবিতাটা জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার জন্য।

মোক্ষম যুক্তি। অতএব, আমি সায় দিয়ে মাথা নাড়লাম।


—কাক না কি কবি?
স্নিগ্ধ মুগ্ধতা।
‎৯ নভেম্বর, ২০১৭।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৯
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×