আজকে আমি তোমাদের অভিধান বা ডিকশনারি দেখা শেখাব।
উপকরণ:
১.জুতো। স্পঞ্জের স্যান্ডেল হলে ভালো হয়।অন্য কোনও জুতো হলেও চলবে।
২.পরিষ্কার তোয়ালে বা গামছা: ১টা।
৩.এক বাটি পানি।অভাবে গামলা হলেও চলবে। তবে সেক্ষেত্রে সামলানো একটু কষ্ট হবে।
৪.ধৈর্য।
৫.সময়।
৬.পুরনো ন্যাকড়া: ১টা।
৭.চশমা(পরিমাণ মতো)। অভাবে, খালি চোখেও কাজ চালানো যাবে।
৮.অভিধান একটা।যে-কোনও অভিধান হলেই চলবে।পোকায় কাটা হলেও সমস্যা নেই।
কার্যপ্রণালি:
১. প্রথমে ন্যাকড়াটা দিয়ে অভিধানটা ভালো করে ঝেড়েঝুড়ে সাফ-সুতরো করে নাও।কারণ, ওটাতে নিশ্চয়ই এতদিনে ধুলোটুলো পড়ে অবস্থা খারাপ!আসলে পড়া জিনিসটা কেমন যেন একপেশে।একবারে খালি একজনই পড়তে পারে।তাই মানুষ পড়লে ধুলো পড়বে না।আবার ধুলো পড়লে মানুষ পড়বে না।এইজন্য ধুলো ঝেড়ে নিতে বলছি। আর তাছাড়া, অভিধানে ধুলো পড়েছে বলে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। ও সবার অভিধানেই পড়ে। আমার বাড়ির অভিধানগুলোও ঐরকম।
২. এবার ঝুলকালি মাখা ন্যাকড়াটা দূরে সরিয়ে রাখো। নইলে অভিধান দেখার সময় বারবার খালি ঐদিকে চোখ যাবে।
৩. ধুলোবালি ঝাড়ার পর নিশ্চয় চোখমুখের অবস্থা করুণ হয়ে গেছে! তাহলে এবার আমাদেরকে হাত-মুখ ধুয়ে নিতে হবে। না, ঐ বাটির পানি দিয়ে না। ওটা অন্য কাজে লাগবে। হাত-মুখ ধোওয়ার জন্য তোমাকে বাইরে যেতে হবে।
৪. উপরে উপকরণ হিসেবে যে জুতোজোড়ার কথা লেখা আছে ওগুলো পরে বাইরে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে আসো। যারা শহরে থাকো, হাত-মুখ ধোয়ার সময় যদি দেখ পানি নেই, তবে তোমাকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। এইজন্য উপরে উপকরণ হিসেবে ‘ধৈর্য’ লেখা আছে।
৫. যাক বাবা! অনেক হাঙ্গামা করে হাত-মুখ ধোয়া গেল। এখন পরিষ্কার তোয়ালে বা গামছাটা দিয়ে ভালো করে হাত-মুখ মুছে ফেলো।
৬. এবার যাদের চোখে সমস্যা আছে তারা চশমা পরে নাও।
৭. চশমা পরার পর যদি দেখ, এতক্ষণ অভিধান মনে করে অন্য কোনও পুরনো-ধুরনো বই সাফ করে ফেলেছ তবে তোমাকে ওই চশমা দিয়েই অভিধানটা খুঁজে বের করে আবার গোড়া থেকে শুরু করতে হবে!
৮. অভিধানটা হাতে নিয়ে মলাট উল্টাও। মলাট না থাকলে উল্টানোর দরকার নেই। এবার প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা উল্টানোর চেষ্টা করো। কী? উল্টানো যাচ্ছে না তো? পৃষ্ঠাগুলো একটার সাথে আরেকটা সেঁটে আছে? জানতাম। এইজন্যই ঐ বাটির পানির ব্যবস্থা। কাজেই এখন বাটির পানিতে আঙুলের ডগাগুলো ডুবিয়ে নাও। এবার পৃষ্ঠা উল্টাও। দেখবে পৃষ্ঠাগুলো বেশ খোলা যাচ্ছে।
৯. এতক্ষণে নিশ্চয় ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে ভাবছ—‘ধুর! অভিধান পড়ার এত ঝক্কি!’ এবং অভিধানটাকে ধড়াম করে সামনে আছড়ে ফেলে দিয়েছ! ঐরকমই হয়। সবার ক্ষেত্রে একই নিয়ম।
১০. হাঙ্গামায় অতিষ্ঠ হয়ে নিশ্চয় ‘আর কখনও অভিধান পড়ব না’ বলে ঠিক করে ফেলেছ? খবরদার! ওরকম কোরো না। তাহলে অভিধান যারা লেখে তারা কিন্তু রেগেমেগে অভিধান লেখা ছেড়ে দেবে। আর তারা অভিধান না লিখলে আমি অভিধান নিয়ে লিখব কী করে? আর তুমিই বা আমার লেখাগুলো পড়বে কী করে?
১১. অনেক দিন পর, অভিধান দেখার রাগটাগ মিটে গেলে, আবার প্রথম থেকে শুরু করতে পারো।
১২. তো, আমরা অভিধান দেখা মোটামুটি শিখেই গিয়েছি ধরা যায়। যেটুকু বাকি আছে সেটা অভিধান খুললে এমনিতেই শিখে যাবে (যদি কখনও খুলতে পারো)।
—অভিধান দেখা
স্নিগ্ধ মুগ্ধতা।
৬ নভেম্বর, ২০১৭।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১৫