somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এলিয়ে-পড়া এলিয়েন(কল্পবিজ্ঞানের গল্প)

২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এলিয়েন তো এলিয়ে পড়ল, কিন্তু আমরা কী করব বুঝতে পারছিলাম না। সবাই আবার খেলার মাঠে ফিরতে শুরু করেছে। পাঁচিলের আড়ালে থাকায় আমাদেরকে অবশ্য কেউ এখনই দেখবে না, কিন্তু একটু পরে যে-কেউ খেলতে-খেলতে নির্ঘাত এদিকে এসে যাবে।

আমার হঠাত্ মনে হলো—যে করেই হোক, এলিয়েনকে আমার রক্ষা করতেই হবে। কিন্তু কী করা যায়?

আমি জাহিদের কানে ফিসফিস করে বললাম—চিনির বয়েমটা চুরি করে আনব নাকি?

জাহিদ বলল—চুরির জিনিস দিয়ে মানুষের উপকার করে লাভ আছে?

আমি বললাম—মানুষ তো না, এলিয়েন।

জাহিদ হঠাত্ কী যেন ভেবে তড়াং করে লাফ দিয়ে উঠল। তারপর এলিয়েনের কানে ফিসফিস করে কী যেন বলল। এলিয়েনও তড়াং করে একলাফে উঠে দাঁড়ালো। খানিকক্ষণ কাঁপাকাঁপি করে আগের সেই গরু হয়ে গেল! তারপর নিশ্চিন্ত মনে কান নাড়াতে-নাড়াতে ঘাস খেতে শুরু করলো! মনে হলো তার জন্মই হয়েছে ঘাস খাওয়ার জন্য!

আমি জাহিদকে বললাম—তুই যদি গরু হতিস, তাইলে বোধহয় এই গরুটার মতোই দেখতে হতিস!
জাহিদ কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল—বলদ!


আধা ঘণ্টা পর। আমি আর জাহিদ খালপাড়ের মাঠটা থেকে বাড়ির পথ ধরলাম। অবশ্য কেউ যদি একটু খেয়াল করে তবে দেখবে, আমাদের পিছন-পিছন বেশ খানিকটে দূরত্ব বজায় রেখে ইয়া বড়ো একটা তাগড়া গরু হেলেদুলে আসছে। বিকেল পড়ে এসেছে। সন্ধ্যের আগেই বাড়িতে পৌঁছাতে হবে, নইলে বাড়িই আমাদের পিঠের উপরে এসে পড়বে! সেটা চিন্তা করেই আমরা দ্রুত পা চালালাম। কিন্তু সমস্যা বাঁধল বড়ো রাস্তায় এসে! রাস্তায় এসে আমরা দেখলাম লোকজন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ি চলাচল বন্ধ— অথচ পুরো রাস্তা ফাঁকা! সামনে দশ-বারোটা পুলিশ! ব্যাপার কী?

জাহিদ বলল—অ্যাক্সিডেন্ট হলো না কি?

আমি বললাম—ট্যাক্সিডেন্টও হতে পারে—ট্যাক্সিতে ট্যাক্সিতে সংঘর্ষ। যদিও সেরকম কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

হঠাত্ আমাদের পাশ থেকে একজন ভদ্রলোক মোটা গলায় ফিসফিসিয়ে বললেন—এই রাস্তা দিয়ে একটু পর প্রধানমন্ত্রী যাবেন। কাণ্ডটা দেখেছ? এত জন লোকের ভোগান্তি শুধু একজনের জন্য!

জাহিদ বলল—এঁদেরকে ভোট দিয়ে উপরে তুললাম আমরা, আর এখন এঁরাই উপর থেকে আমাদের ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ছে!

ভদ্রলোক বললেন—তবেই দেখো! কিন্তু এসবের প্রতিবাদ করবে কে?

ভদ্রলোকের কথা ঠিকমতো শেষ হয়নি, হঠাত্ জাহিদ হুড়মুড় করে রাস্তার মাঝখানে ছুটে গেল! আমি কী করব বুঝতে না-পেরে শেষপর্যন্ত জাহিদের পিছু নিলাম। তিন-চারজন পুলিশ রে রে করে ছুটে এলো। তাদের মধ্যে সবচে ভারিক্কি গোছের জন বলল—এই কী ব্যাপার? এই বয়সেই ওপারে যাওয়ার শখ হয়েছে, হ্যাঁ?

জাহিদ বলল—ও পারে না। বাড়ি যাব।

পুলিশ অফিসার দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে বললেন—এখন এদিকে যাওয়া যাবে না—প্রধানমন্ত্রী আসছেন।

জাহিদ বলল—বাহ রে! প্রধানমন্ত্রীর শুধু কাজ আছে, আর আমরা তো সব অকাজের লোক, আমাদের তো কোনও কাজ নেই!

পুলিশ অফিসার হতভম্ব হয়ে গেলেন। ওইটুকু একটা ছোঁড়া এমনভাবে কথা বলছে, যা কোনও বড়ো মানুষও বলতে সাহস করবে না! তিনি বললেন—তোমার বাড়িতে যাওয়ার এত তাড়া কেন, হ্যাঁ? প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও বড়ো কোনও প্রোগ্রামে যাচ্ছ নাকি?


জাহিদ অবাক হয়ে বলল—কী গ্রাম? প্রো গ্রাম? এ নামের কোনও গ্রাম তো আমাদের এদিকে আছে শুনি নি! আর থাকলেও বা সন্ধ্যে হতে চলল, এখন তিনি প্রো গ্রামে যাচ্ছেন কেন? সন্ধ্যের আগে কি তার বাড়িতে ফেরা লাগে না? দেরি হলে তার আব্বা তাকে বানায় না?

পুলিশ অফিসার কী-একটা বলতে যাচ্ছিলেন, হঠাত্ হুইসেল বাজিয়ে একঝাঁক গাড়ি এসে পড়ল। কিন্তু আমরা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে। অগত্যা গাড়িগুলো ঘ্যাচাং করে ব্রেক কষল। পুলিশ অফিসারের চোখ তখন রাগে আগুনের গোলার মতো জ্বলছে। তিনি কোমরে গুঁজে রাখা পিস্তলটার দিকে হাত বাড়ালেন, হঠাত্ সেই ফিসফিসানো ভদ্রলোকটি রাস্তার মাঝখানে তেড়ে এলো। তারপর জোর গলায় বলল—এতটুকু একটা বাচ্চার সাথে পিস্তল নিয়ে লড়তে আপনার লজ্জা করে না? আপনাদের প্রধানমন্ত্রীকে বাইরে আসতে বলুন। জনগণকে অসুবিধায় ফেলে নিজেদের সুবিধায় রাখা আর কতো দিন?

আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, সাত-আটজন লোকের সাথে প্রধানমন্ত্রী গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন। তাকে চিনতে কারও বিন্দুমাত্র অসুবিধা হলো না। এই চেহারা আমাদের মুখস্থ, কিংবা বলা যায় চোখস্থ। এই ক্যাঁচালের মাঝেও তার নিশ্চিন্ত চেহারা দেখে অবাকই হলাম। না, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা আসলেই তাঁর আছে।

প্রধানমন্ত্রী এসে নরম সুরে বললেন—কী হয়েছে খোকা?

জাহিদ বলল—দেখুন, সন্ধ্যার আগে আমাদের বাড়ি পৌঁছাতে হবে, তা এই—আপনার জন্য রাস্তা বন্ধ হয়ে আছে। আমরা বাড়ি পৌঁছাতে পারছি নাকি?

প্রধানমন্ত্রী বললেন—তোমরা বাড়িতে সময়মতো না পৌঁছলে তো শুধু তোমাদের সমস্যা হবে, কিন্তু আমি সময়মতো প্রোগ্রামে না গেলে যে পুরো দেশের সমস্যা হবে!

আমার হঠাত্ কী হলো কে জানে, বলে বসলাম—কেন, শুধু খেজুর গাছের নিচে বসে খলিফা ওমর কি রাজ্য পরিচালনা করেন নি? একটা উঠের পিঠে চড়ে শুধু একটা চাকর নিয়ে মরুভূমিতে পাড়ি দেন নি? অর্ধেক পৃথিবী শাসন করেন নি?

প্রধানমন্ত্রী আমতা-আমতা করে টাইয়ের নট ঠিক করতে লাগলেন।

পিছন থেকে দুজন হোমরা-চোমরা হঠাত্ বন্দুক বাগিয়ে তেড়ে এল। বলল—স্যার, আপনি বলুন। এদেরকে আমরা ভাগিয়ে দিচ্ছি। আপনার দেরি—

তারা কথা শেষ করতে পারলো না, হঠাত্ ঘোঁত-ঘোঁত করতে করতে কোত্থেকে একটা গরু শিং বাগিয়ে তেড়ে এলো—কোন গরু, সেটা নিশ্চয় বলে দিতে হবে না। তারপর ভোজবাজির মতোই কাণ্ডটা ঘটে গেল। চোখের নিমেষে লোকগুলো উল্টেপাল্টে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। আর, আর প্রধানমন্ত্রীর হাতের খানিকটে অংশ ছিলে গেল! কাণ্ডটা ঘটিয়ে গরুটা একছুটে পগার পার, তার টিকিটিও দেখা গেল না, কিংবা, ল্যাজটিও দেখা গেল না।

প্রধানমন্ত্রী হতভম্ব হতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলেন। ভদ্রলোকের নার্ভ ইস্পাতের মতো শক্ত। তিনি আমাদেরকে বললেন—ঠিক আছে, তোমরা বাড়িতে যাও। ব্যাপারটা আমি দেখছি।

প্রধানমন্ত্রীর আদেশে রাস্তায় লোক চলাচল আবার শুরু হলো। আর জনগণের মতোই তিনি ভিড়ের মধ্য দিয়ে তাঁর প্রোগ্রামের দিকে রওয়ানা হলেন। শুধু তাই নয়, সেই দিনের পর আর কখনোই কোনও হোমরা-চোমরার জন্য দেশের মানুষকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লাগেনি!

এক সপ্তাহ পর। তখন সন্ধ্যে হব-হব। আমাদের বাড়ির পাশের মেহগনি বাগানে আমি আর জাহিদ বসে আছি—প্রধানমন্ত্রীর সামনে! প্রধানমন্ত্রী বললেন—মহাকাশযান উদ্ধার করতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। খালি ভারতে আমাদের দূতাবাসে কয়েকটা ফোন করতে হয়েছে।

আমি অবাক হয়ে বললাম—কিন্তু ফোন নম্বর তুমি জানলে কী করে?

প্রধানমন্ত্রী কিংবা এলিয়েন, যেটাই বলি, বলল—রূপান্তরের সময় যে দেহে আমরা রূপ নিই, তার পুরো স্মৃতি আমাদের স্মৃতির সাথে যুক্ত হয়ে যায়। কাজেই প্রধানমন্ত্রীর পুরো স্মৃতি এখন আমার জানা।

জাহিদ বলল—কিন্তু, তুমি প্রধানমন্ত্রীর ডিএনএ পেলে কই?

আমি বললাম—ক্যান, ঐদিন পুলিশগুলোকে গুঁতোনোর সময় প্রধানমন্ত্রীর হাতও যে ছিলে গেছিল তুই দেখিস নি?

জাহিদ বলল—ও!

আমি এলিয়েনের দিকে তাকিয়ে বললাম—তুমি কি পৃথিবীতে আর আসবে না?

এলিয়েন, কিংবা প্রধানমন্ত্রী, বলল—আসার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু এখন আসার আশা আছে। তোমাদের কথা সহজে ভুলতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।

প্রধানমন্ত্রী আমাদের দুজনকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর আমাদের কপালে চুমু খেয়ে পাশের মেহগনি গাছ বেয়ে সেটার মগডালে উঠে গেলেন!

কারণ, এবারও এখানে নামার সময় তার মহাকাশযান মেহগনি গাছের মাথায় আটকে গেছে!

—এলিয়ে-পড়া এলিয়েন
স্নিগ্ধ মুগ্ধতা,
‎২০ নভেম্বর, ২০১৭।

এলিয়ে-পড়া এলিয়েন(১ম অর্ধাংশ)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২৩
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×