somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রেনেড হামলা: কী ঘটেছিল সেদিন? মূল হোতা কারা?

২১ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৮:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা-গ্রেনেড হামলা ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এক সমাবেশের আয়োজন করেছিল। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর স্থাপিত মঞ্চে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা তার বক্তব্য শেখ করার পর পরই বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে অতর্কিতে চতুর্দিক থেকে গ্রেনেড এসে পড়তে থাকে।

রাস্তার উল্টো দিকে পনরো তালা বিল্ডিং ছাদের উপর থেকে বেশিরভাগ গ্রেনেড গুলো ছোড়া হয়। ২২ টি গ্রেনেডের ৫ টি টার্গেটের খুব কাছাকাছি পরেছিল, একটি ট্রাকের পিছের চাকায়, একটি ট্রাকে লাগানো সিঁড়ির কাছে, যেখানে আইভি রহমান মারা যায়। ট্রাকের বনেটে পড়ে ছিটকে ফুটপাতের ড্রেনে যাওয়া আরেকটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়নি। সবচেয়ে বিপদজনক বিস্ফোরনটি হয়েছিল হাসিনার খুব কাছে। যেটাতে হানিফ, মায়া, সুরঞ্জিত বাবু ও অনেকে আহত হয়।


ট্রাক থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামানোর পর হাসিনা কে সবাই ঘিরে মানব বর্ম তৈরি করে নেতা কর্মীদের জটলাটি গাড়ীর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।

আসে পাসে পড়ে থাকা আহত-নিহত দেহ, রক্তের ধারা, ছিটিয়ে থাকা জুতা সেন্ডেল। হাসিনার দুই দেহরক্ষী জটলাটিকে আগলে রাখছিল, রাজ্জাক সুরঞ্জিতের পিঠ রক্তে ভিজে পাঞ্জাবী লাল হয়ে যাছে, হানিফের লম্বা ঘাড় বেয়ে রক্ত ঝরছে, জিপের কাছাকাছি আসতেই ..প্রচন্ড বিস্ফোরনটি হয়। দেহরক্ষীর একজন ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদের মাথা বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। মুলত এই অকুতোভয় দেহরক্ষীর কারনেই নেতাকর্মী পরিবেষ্টিত শেখ হাসিনা বিষ্ফোরনের ধাক্কা থেকে বেঁচে যায়। উভয় দেহরক্ষী বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরিহিত থাকলেও মাথায় হেলমেট ছিল না। এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। ঠেলে উঠিয়ে অপর দেহরক্ষী ড্রাইভারের অপেক্ষা না করে নিজেই নেত্রীকে নিয়ে তীব্র গতিতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। ঘিরে জটলার প্রায় সবাই কমবেশি আহত হয়। সবচেয়ে বেশি মেয়র হানিফ, বাহাউদ্দিন নাসিম, মায়া, সুরঞ্জিত, রাজ্জাক।

হানিফের মাথায় ১০টি স্প্রিন্টার ঢুকে যায়। এগুলো আর বের করা সম্ভব হয়নি, মাথার ইনফেকশনে উনি এক পর্যায়ে পাগল হয়ে যান। এক বছর ভুগে তারপর মৃত্যুবরণ করেন।

জিল্লুর রহমান সবার শেষে নামছেন, কান চেপে ..। তিনি তখনো জানেন না সিঁড়ির নিচে তার স্ত্রী, নিম্নাঙ্গ উড়ে গেছে, রক্তের একটি ধারা ড্রেনের দিকে।

পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী হামলায় ব্যবহৃত আরজেস গ্রেনেডগুলো সামরিক অস্ত্রাগারের গ্রেনেডের মত ছিল। এই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন গ্রেনেড যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিভাবে সংগ্রহ করলো তা তদন্ত করা সম্ভব হয় নাই। আলামত পুন-বিষ্ফরন করে নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল একটি আইনের অযুহাত দেখিয়ে। অবিষ্ফোরিত বোমা জনস্বার্থে বিষ্ফোরন ঘটিয়ে নিরাপদ করতে হবে। পিন বিমুক্ত চার-পাঁচটি অবিষ্ফোরিত গ্রেনেড ঘটনাস্থলে, কেন্দ্রীয় কারাগারে যাওয়ার পথে, ফুটপাতের পাসে ড্রেনে, গণশৌচাগারে পাওয়া গিয়েছিল। যেহেতু পিন খোলা হয়নি, তাই নিরাপদ। মুল্যবান আলামত হিসাবে গ্রেনেডগুলো ডেটনেটর খুলে রেখে দেয়া যেত।

সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার একটি গ্রেনেড পাওয়া যায় কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে, ময়লার ভেতর। তাহলে কি কারাগারের বন্দিদের একাজে ব্যাবহার করা হয়েছিল? পরদিন অজ্ঞাত সংখ্যক আসামী কোর্ট থেকে জামিন পেয়ে যায়। দুজন কারারক্ষী ছুটি নিয়ে চলে যায়। এরা কখনো ফিরে আসেনি। একজন কারারক্ষী তার নিজ গ্রামে ১৪ লক্ষ টাকা সহ গ্রেফতার হয়। তাকে গ্রেনেড হামলার আসামি করা হয়েছিল। অজ্ঞাত কারনে সেও জামিন পেয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এসবেরও তদন্ত হয়নি। পরবর্তীতে পুন-তদন্ত শুরু হলে অভিযুক্ত পলাতক জেলওয়ার্ডেনদের ব্যক্তিগত সিভি, ছবি খুঁজে পাওয়া যায় নাই। গায়েব করে ফেলা হয়েছিল।

জামিন নিয়ে সেদিন বের হয়ে যাওয়া অজ্ঞাত সংখ্যক আসামীকেও সনাক্ত করা সম্ভব হয় নাই। সকল আলামত অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবেই সরিয়ে ফেলা হয়েছিল।

তদন্তকারীরা নিরুপায় হয়ে আবার হয়তো কোন জজ মিয়া নিয়ে আসবে। এদের পেছনে দৌড়ে কোন লাভ নেই, এরা টাকার বিনিময়ে কাজ করছে, জেল থেকে মুক্ত হয়েছে।

শক্ত তদন্ত করে মূল হোতাদের ধরতে হবে:

২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জরিত না হলেও দায়িত্ব এড়াতে পারে না। তার কতিপয় সদস্য জড়িত থাকতেও পারে, যেহেতু আরজেস গ্রেনেডগুলো সামরিক অস্ত্রাগারের ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছিল। কিন্তু তদন্ত হয়নি। সম্ভবত হত্যায় নিযুক্ত হুজি সদস্যরা তাদের সমর্থক সেনা সদস্যদের সাহায্য নিয়েছিল এসব সেনা সদস্য পরে তাপস হত্যাপ্রচেষ্টার জরিত ছিল। এখানেও বিস্ফোরক অন্যত্র সংগ্রহ করা হলেও এর ডেটনেটর ও টাইমিং ডিভাইস ছিল সামরিক অস্ত্রাগারের। তাদের গ্রেফতার করে কোর্টমার্শালে ৫ বছর জেলদন্ড হয়েছিল। তারা অনুতপ্ত ছিলনা। বরং একটি উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর অনুসারি বলে গর্বিত ছিল। কদিন আগে উদ্ঘাটিত মেজর জিয়া গংও এরূপ উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর অনুসারী ছিল।

আমার নিজ ধারনা এসব হত্যাকান্ডের মুল হোতা ছিল তৎকালিন বিএনপি-জামাতের একটি উগ্র ডানপন্থি গ্রুপ, যারা দলের হাইকমান্ড ও চেয়ারপারসনকে অন্ধকারে রেখে একটি নৃশংশ হত্যা পরিকল্পনা সুরু করে, টার্গেট ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষকে মেধা শুন্য ও নেতৃত্যশুন্য করে ফেলা। হত্যায় নিযুক্ত করা হয় জেহাদি চেতনায় উজ্জীবিত হুজি সদস্যদের।

সিলেট দিয়ে শুরু হয় তাদের অপারেশন, আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরন টেষ্ট করা হয় জনবহুল শাহাজালাল মাজারে (সায়েদির মাজার বিরোধী ওয়াজে উজ্জীবিত হয়ে)। তার পর প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া কে গ্রেনেড ছুড়ে হত্যা করা হয়। সিলেট মেয়র প্রার্থী কামরান অল্পের জন্য বেঁচে যান, তাকে লক্ষ করে ছোঁড়া গ্রেনেডে তার পার্কিং স্পেসে ইব্রাহিম সহ কয়েকজন নিহত হয়। এর কদিন পরেই সিলেট মহিলা আওয়ামী লিগ সভায় ছোড়া গ্রেনেডে কয়েক জন নিহত হয়। মৌলবাদ বিরোধী ব্রিটিশ হাইকমিশনার সিলেটে মাজারের ভেতর গ্রেনেড ছোড়া হয়, বোমাটি সরাসরি তার পেটে লাগলেও সৌভাগ্যক্রমে তাৎক্ষনিক বিস্ফোরিত হয়নি, দুঃসাহসী আনোয়ার চৌধুরী গ্রেনেডটি কুড়িয়ে নিয়ে দূরে ছুড়ে ফেলেন সেখানেই বিষ্ফোরন ঘটে। বেচে যান বাংলাদেশী বংশদ্ভূত আনোয়ার চৌধুরী। ঢাকায় ও দেশের অন্যান্ন স্থানেও তাদের ভাড়াটে আততায়িরা হত্যাকান্ড চালাচ্ছিল। জনপ্রিয় নেতা আহাসানুল্লা মাস্টার … কবি সামসুর রহমান, হুমায়ুন আজাদ। তবে হাসিনা হত্যাচেষ্টা মিশনে তাদের উচ্চ প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়।

ব্রিটিশ-ইইউ এর চাপে অনোয়ার চৌধুরী হত্যা প্রচেষ্টা মামলা তদন্ত শুরু হয়, এতে মুফতি হান্নানের নাম বেরিয়ে আসে, তবে পরে তদন্তে আরো কয়েকজনের নাম বেরিয়ে আসলে এর গতি ধীর হয়ে যায়। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে মন্ত্রী সহ কিছু মুল হোতাদের পাকড়াও করে ও জজ মিয়াকে মুক্তি দেয়।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×