সহিংসরূপে রাজপথে আজকাল দেখা যাচ্ছে না জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের। দলের শীর্ষ নেতাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হলে হরতাল ডাকে কিন্তু রাজপথে তাদের কোনো পিকেটিং দেখা যায় না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রায় এক বছর ধরে জামায়াতের হঠাৎ নীরবতা ভাবিয়ে তুলেছে সাধারণ মানুষকে। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন জামায়াত-শিবির কি সহিংসতা ছেড়ে দিয়েছে? নাকি ভয়ানকরূপে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচিতে আগের মতো তাদের দেখা যাচ্ছে না। গুঞ্জন উঠেছে, সরকারের সঙ্গে তারা সখ্য বাড়াচ্ছে। নাকি অন্য কিছু?
কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, আমরা আন্দোলন করছি। নীরবতার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বলেন, আমরা কোনোদিন সহিংস আন্দোলন করিনি; আর করবও না। আমাদের আন্দোলন চলছে এবং চলবে।জানা যায়, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর টানা দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতাগ্রহণের পর হঠাৎ জামায়াতের নিস্তেজ ভাব যাচ্ছে। সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জামায়াতকে এখন আর দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে। পাশাপাশি আদালত কর্তৃক বাংলাদেশ জামায়াতের বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বহাল, জামায়াতের সহযোগী ছাত্র সংগঠন শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীর কাসেম আলীর ফাঁসির দণ্ডের পরও নীরব রয়েছে দলটি। তবে এসবের জবাব যাদের দেওয়ার কথা, তারা এখন অনেকেই রাজনীতি ছেড়ে নিজ কাজে মনোনিবেশ করছেন। কারণ জামায়াত এখন যেভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া কিংবা নীরবতা পালন করছে, তারা এক বছর আগেও এমন ছিল না। সারা দেশে সহিংস আন্দোলন ছিল তাদের নিত্যদিনের কর্মসূচি। হরতালের আগে-পরে কে কতটা বাস পোড়াতে কিংবা ভাঙতে পারবে তা নিয়ে চলত প্রতিযোগিতা। আন্দোলন-সংগ্রামের পরিবর্তে একটু নীরব থেকে সংসার, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যক্তিগত জীবন এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করাকেই এ মুহূর্তে অনেক বেশি শ্রেয় বলে মনে করেন তাদের অনেকে। কারণ বিগত প্রায় আট বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা জামায়াত নেতারা অনেক হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন বলে তারা মনে করে। এদিকে জামায়াতের অন্যতম শক্তি বিএনপির সঙ্গেও এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাই বিএনপির ডাকে কোনো কর্মসূচিতেই জামায়াতের উপস্থিতি আগের মতো সরব নয়। তবে জামায়াত সূত্রে জানায়, জামায়াত এখন দল হিসেবে সুসংগঠিতভাবে কর্মসূচি পালন করবে। এ জন্য তারা কোনো সহিংস আন্দোলনে যাবে না। এমনকি বিএনপির কোনো আন্দোলন কর্মসূচিতে যোগ দিলেও বিএনপি নেতাদের উপস্থিতির পর জামায়াত তাদের কর্মীদের মাঠে নামাবে, তার আগে নয়। সব মিলিয়ে বিএনপির দুর্বল আন্দোলনের কারণে জামায়াত নয়া কৌশল অবলম্বন করছে। শুধু তাই নয়, জামায়াত নেতাদের ধারণা- যদি তারা নীরব থাকেন, তবে তাদের লাভের পাল্পাই ভারী হবে। কেননা, বিএনপি যতই সরকার পতন আন্দোলনের ডাক দিক না কেন, জামায়াত বুঝতে পেরেছে, বিএনপি খুব সহসা আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটাতে পারবে না। তাই অহেতুক আন্দোলন-কর্মসূচিতে সহিংসতা প্রদর্শন করে নতুন করে মামলা-হামলার মুখোমুখি হতে চায় না তারা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আন্দোলনের ধরনে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে জামায়াত। কেন্দ্রীয়ভাবে আপাতত নীরবতা পালন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কর্মীদের। তারা মনে করছেন, সাংগঠনিকভাবে যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে জামায়াত-শিবিরের। তবে নিজস্ব কৌশলে ঘুরে দাঁড়ানোর নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দলটি। জামায়াতের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, জোটবদ্ধ আন্দোলনে জামায়াতের ক্ষতি হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক স্থায়ী নয়। গায়ে পড়ে বিএনপির সঙ্গে থাকবে না জামায়াত। তবে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। সরকারের মনোভাব আরও কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করা হবে। সময় বলে দেবে কি করতে হবে। জামায়াতের নীতি-নির্ধারকরা মনে করেন, সরকার চাইছে জামায়াত সহিংসতা করুক। শিবিরের ছেলেরা অস্ত্র হাতে মাঠে নামুক, যাতে তাদের উগ্রবাদী কিংবা জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাতে সফল হয়নি। সহিংসতা জামায়াত-শিবিরের কর্মসূচি নয়।