ডোরিস লেসিং
আহমেদ ফয়েজ
প্রথম মহাযুদ্ধের সন্তান; মুসোলিনি ও হিটলারের উত্থান ও পতন এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ ও পরবর্তী রুশ-মার্কিন ঠাÐা লড়াইয়ের সাক্ষী ডোরিস লেসিং ১৯১৯ সালের ২২ অক্টোবর আজকের ইরানের খেরমানশাহতে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বের ১১ তম নারী হিসেবে তার পাঁচ দশকের মহাকাব্যধর্মী উপন্যাসগুলোর সাহিত্য মূল্য বিবেচনা করে তাকে এ বছর নোবেল পুরষ্কারের জন্য মনোনীত করা হয়।
ডোরিসের বাবা আলফ্রেড কুক টেইলর ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অব পার্সিয়ার একজন স্থায়ী কেরানী ছিলেন। প্রথম মহাযুদ্ধে তিনি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে একটি পা হারিয়েছেন। তার সেবা করার জন্য নিয়োজিত নার্স এমিলি ম্যাকভে-ই পরবর্তীতে মিসেস টেইলরে পরিণত হন। তাদের সন্তানই ডোরিস লেসিং। ডোরিসের জন্মের ৬ বছর পরই তারা সকলে দক্ষিণ রোডেশিয়া তথা আজকের জিম্বাবুয়েতে চলে আসেন।
১৪ বছর বয়সে-ই ডোরিস একাডেমিক পড়াশুনাকে ইস্তফা দেন। তবে তার পড়াশুনা থেমে থাকেনি। মায়ের সহযোগিতা এবং অনুপ্রেরণায় বিশ্বের বিভিন্ন বই তার পড়া হয়ে যা। যার ফলে একাডেমীক পড়াশুনা না করেও ডোরিস একজন শিক্ষিত নারী হয়ে উঠেন। তাইতো নেই প্রতিভাবান নারী মাত্র ১৭ বছর পা দিতেই দুটি উপন্যাস এর জন্ম দিয়ে দেন।
জীবনের শুরুতে ডোরিস খুবই যুদ্ধ করেন। প্রথম চাকরী ছিল একজন নার্সমেইডের। বাচ্চাদের দেখভাল করা। এই বিরক্তিকর কাজটি তার জীবনকে বিশিয়ে তুলে। তার কথা মতে-
“নার্সমেইডের কাজটা খুব ক্লান্তিকর। ছোট বাচ্চারা দীর্ঘ সময়ের জন্য খুব বিরক্তিকর। প্যারামবুলেটা বাচ্চা ঠেলে ঠেলে পার্ক ঘুরানোর মতো বিরক্তিকর আর কিছু হতে পারেনা- সেই অপরাহ্নগুলো আর ফুরাত না। মাথার মধ্যে কবিতার লাইন ভাঁজতাম আর ভাবতাম কোন না কোন সময় এই একঘেয়েমির অবসান ঘটবে।”
তার জীবনে এই একঘেয়েমির অবসার ঘটেছিল কিনা আজ তা স্পষ্ট। পরবর্তীতে ডোরিসের সাহিত্যে বিভিন্ন বিষয় সন্নিবেশিত হয়েছে। তার সর্বাধিক জনপ্রিয় তিনটি বই হলো: দ্যা গোল্ডেন নোট বুক, মেমোরস অব অ্যা সারভাইভার এবং দ্যা সামার বিফোর ডার্ক। ১৯৬২ সালে তার দ্যা গোল্ডেন নোট বুক এর মাধ্যমে খ্যাতি ছড়ায় এবং একজন নারী বাদী নেত্রী হিসেবে তিনি পরিচিতি পান। তবে লেসিং কখনো এ পরিচয়ে প্রতিষ্ঠালাভ করতে চান নি। বরং পরবর্তীতে এর বিরোধিতাই করেছেন। এ পর্যন্ত তার প্রায় ৬৪টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
গত ১০ অক্টোবর সুইডিশ একাডেমি ডোরিস লেসিং কে নোবেল পুরস্কার প্রদানের ঘোষনা করার পর পরই মার্কিন সাহিত্য সমালোচক হ্যারল্ড বøুম তাকে একজন চতুর্থ শ্রেণীর লেখক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন-
“লেখক জীবনের শুরুতে হয়তো দু’একটি উল্লেখযোগ্য গুণ তার ছিল। কিন্তু লেসিং এর যা দেবার তা সত্তুরের দশকেই নি:শেষিত হয়ে গেছে।”
এরকম অনেক সমালোচনার বান ডোরিসকে সারা জীবন সহ্য করতে হয়েছে। তাই বলা যায় অনেক লিখলে বা অনেক পরিশ্রম করলেও স্বীকৃতি পেতে ডোরিস লেসিংকে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। এক পর্যায়ে তিনি নিজেই তার নোবেল পুরষ্কারের ব্যাপারে আশাহত হয়ে পরেছিলেন যে নোবেল পুরষ্কারটা বুঝি আর পাওয়া হলো না। সেই নিরাশাবাদি লেখকই সাহিত্যে বিরল অবদানের জন্য আর নোবেল পুরষ্কারের মতো এক বিশ্ব মর্যাদায় ভুষিত হয়েছেন। তার এই সাফল্যে বিশ্ব সাহিত্য আবার অনুপ্রাণিত, উৎসাহিত এবং সম্ভ্রান্ত হবে বোধ করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৯