রফিক আবার বিয়ে করবে। কি নেই রফিকের, কক্সবাজারের বিভিন্ন রুটে চলা বেশ কয়েকটি বাস আছে তার, দুই দুইটা পাচ তলা বাড়ি আছে কক্সবাজার শহরে, প্রেস আছে আরো কত কি। আগের বউতে তার চলবে না। বউটা কক্সবাজার ঘুড়তে আসা মেয়েদের মত উচ্ছল, প্রাণবন্ত না। বউটা সি-বিচে বেড়াতে আসা মেয়েদের মত সুন্দরী না, হালফ্যাশনের জামা পরে না, সমুদ্রের পানিতে জলকেলি করে না।
রফিকের বিয়েটাও একটা ঘটনাবহুল বিয়ে। রফিকের মা অসুস্থ্য তাকে চিটগাং মেডিকেল কলেজে নিতে হবে, হাসপাতালে দেখাশুনার জন্য একজন মেয়ে দরকার। রফিকের শ্বশুড় এক শর্তে মেয়ে পাঠাতে রাজি, যদি রফিক তার মেয়েকে বিয়ে করে হাসপাতালে যাওয়ার আগে। পরিবারের চাপে রফিক বিয়ে করে। রফিকের মা হাসপাতালে মারা যায়। মায়ের শেষকৃত্য শেষে রফিক নিরুদ্দেশ হয়, আট মাস রফিক বেচে আছে না মরে গেছে কেউ জানতে পারে না। আট মাস পর রফিকের বাবা রফিকের খবর পেয়ে তাকে নোয়াখালি থেকে নিয়ে আসে। শুরু হয় রফিকের সংসার জীবন।
রফিকের বউ কক্সবাজারের রক্ষণশীল পরিবারের অল্পবয়সী মেয়ে, স্বামী যার সবকিছু। আটমাস পর সংসার শুরু করা তাদের পরিবারে দুইদুইটা সন্তান হয়। রফিক তার বউকে এই দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে কখনই ভালোবাসতে পারে না। ক্রমাগত অবহেলায় রফিকের বউ এক সময় মানসিক ভারসাম্য হারায়। রফিককে আমি জিজ্ঞাস করছিলাম বউ হিসেবে না, প্রেমিকা হিসেবে না, আপনার দুই সন্তানের মা হিসেবে কি কিছুটা ভালোবাসা আনা যায় না। রফিক সম্ভব না জানায়।
এক উচ্চপদস্ত লোক হোটেলে মদ খেতে খেতে রফিকের গল্প শুনে এবং রফিকের আবার বিয়ের আগ্রহ শুনে তাকে একটা মেয়ের ফোন নাম্বার দেয়। রফিক খুব জোশে আছে, এবার একটা কিছু হবে। আমি রফিককে জিজ্ঞাস করলাম ভাবীকে কি তালাক দিবেন? রফিকের সোজাসাপ্টা জবাব না, নতুন বউকে এপার্টমেন্ট কিনে ঢাকায় রাখবো।
তারপর আমি কক্সবাজার থেকে কর্মস্থলে আসলাম। এর মাস খানেক পর রফিকের সাথে কথা হলে, রফিক জানায় ভাই অল্পের জন্য বেচে গেছি এরকম বিশ্রি চেহারার মেয়ে আমাকে জোর করে বিয়ে করাতে চেেয় ছিল।
রফিক হয়তো এক সময় তার পছন্দের মেয়েকে খুজে পাবে কিন্তু যে মেয়েটা গভীর ভালোবাসা নিয়ে, অভিমানে, অবহেলায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে তার ভালোবাসাটা পাবে না।