ঘটনাটা বছর পাচেক আগের, তখন শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজে চাকুরি করি। ছোট কলেজ, শিক্ষক সংখ্যা সব বিভাগ মিলে ২৫ জনও না। হঠাৎ অনেক শিক্ষকের চোখেই ধরা পড়লো কলেজে নারীঘটিতকিছু নোংরা ব্যাপার ঘটছে।কিন্তু কোন শিক্ষকই একা প্রতিরোধ করার সাহস করছে না, প্রথমত এর কয়েকদিন আগে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের হারুণ স্যার বখাটেদের হাতে নিহত হয়েছে এ জাতীয় একটা ব্যাপারে আর দ্বিতীয়ত যে ছাত্রনেতা কলেজের ছাত্ররাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে সে এই বিষয়ের সাথে জড়িত। বিষয়টা কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় সেটা নিয়ে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে মিটিং বসলো, সিদ্ধান্ত হল একটার পর সব শিক্ষকরা এক সাথে সারা ক্যাম্পাস ভিজিলেন্স করবো, যাতে বিচ্ছিন্নভাবে কোন শিক্ষক যেন সমস্যায় না পরে।
প্রথম যেদিন আমরা বের হলাম সেদিন দুশো গজও যাই নি, সে ছাত্রনেতা পনের বিশ জন সহ আমাদের সামনে এসে দাড়াল, আমাদের ভিজিল্যান্স করতে দিবে না। তাদের আচরণ যখন লান্চ্ঞনার পর্যায়ে গেলো তখন আমরা বাধ্য হলাম প্রিন্সিপ্যাল স্যারের রুমে চলে আসতে। প্রিন্সিপ্যাল স্যার শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কে বিষয়টা জানালো। আমরা গুমোট পরিবেশে পরবর্তি করণীয় নিয়ে মিটিং করছি। এই সময় সেই ছাত্রনেতা ও তার সহযোগি প্রিন্সিপ্যাল স্যারের রুমে ঢুকে দুইহাত জড়ো করে সিলেটি ভাষায় বলছে স্যার আমাদের মাপ করে দেইন যে। এ যেন চড় মেরে গড়।
এটা ছোট কলেজের ছোট একটা ঘটনা। আমরা যারা সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করি বা যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন তাদের প্রতিনিয়তই বিভিন্ন লান্চ্ঞনার ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যাটা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক ক্ষেত্রেই আদর্শিক।
পত্রিকায় সংবাদ পড়লাম এবং ছবি দেখলাম জাফর ইকবাল স্যার তার সহধর্মিণী এবং সমমনা শিক্ষকদের লান্চ্ঞনায় এতটা অপমানিত, এতটা ক্ষুদ্ধ যে নির্বাক হয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছেন এবং বলেছেন এরা যদি তার ছাত্র হয় তাহলে তার গলায় দড়ি দিয়ে মরা উচিত। আমরা এর আগে শিক্ষক লান্চ্ঞনা নিয়ে জাফর ইকবাল স্যারের তেমন কোন প্রতিক্রিয়া পায় নি, যদিও ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। এবার আশা করবো এ জাতীয় ঘটনার বিরুদ্ধে উনি শক্ত অবস্থান নিবেন।