somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আধার আমি
আমি শেষ রাতের অবহেলিত চাঁদ। যাকে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সমাজের বেশির ভাগ মানুষ দেখতে পারে না। ঘুমের দোহাইয়ে সবাই আমার সাথে প্রতারণা করে। আর আমি সমাজ জাগতে জাগতে তে-পান্তরে হারিয়ে যায়।

ইটভাটার শ্রমিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র........

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কোনো প্রেমের স্বার্থক গল্প নয়, এটি ইটভাটার শ্রমিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থক ছাত্রের বেদনার ছত্র, কষ্টের গল্প, হতাশার সুর।

রাতের অন্ধকারে দু’জনে বসে বসে যে গল্পের সূচনা হয়েছিলো সেটি এমন কষ্টের হবে সেটি তখনো ভাবিনি। লালাভো চোখের অব্যক্ত ভাষায় যখন উনি বলছিলেন ভাই জানেন ইদানিং আমি খুব হতাশ হয়ে যাচ্ছি। কিছু ভালো লাগে না।

-কেন ভাই ?
-জানি না, তবে এমন হয়নি কখনো....জীবনে এত কষ্টের বোঝা মাথায় নিয়েছি অথচ এখন আর পারছি না ভাই। এতদিন আমার যে গল্পের কথা কাউকে বলা হয়নি সেটি আজ আপনাকে বলব।

সারাদিন কর্মব্যস্ততার শেষে বসে বসে উনার গল্প শুনব এমন মানসিকতা আমার ছিলো না। কিন্তু যখন উনি বললেন, জানেন আমি যখন প্রাইমারির ছাত্র তখন ইটভাটায় কাজ করতাম।

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীটের এক ছাত্রের মুখে এমন কথা শুনে আমার ক্লান্তি রাতের আধারে হারিয়ে গেল। তারপর মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনে গেলাম কিভাবে ইটভাটার দুইটাকার শ্রমিক থেকে ঢাবির ছাত্র হওয়ার অপ্রকাশিত ইতিহাস।

-বাবা-মায়ের অভাবের সংসারে আমাকে ইটভাটায় কাজ করা লাগত। বাসায় এসে পড়ার জন্য কুপি ছিলো না। পড়াশুনা বেশি করতাম না। মাঝে মাঝে অজান্তেই পড়তে বসতাম তবে কুপিতে নয় কলম পুড়িয়ে হালকা আগুনের নিভুনিভু আলোতে।

ক্লাসে যেতাম না। টাকার অভাবে পরীক্ষা দিতে যায়নি পরে স্যার এসেছে, টাকার সমস্যার কথা বলেছি। স্যার বলেছে পাগল মাত্র ৬০ টাকার জন্য পরীক্ষা দিতে যাসনি! চল পরীক্ষা দিতে হবে। টাকা আমি দিয়ে দেব। ক্লাস থ্রি থেকে রোল এক হয়। তারপর প্রতিটি ক্লাসেই এক রোল হওয়া সুবাদে স্কুল এবং এলাকাবাসীর কাছে আমি জনপ্রিয় হয়ে উঠি

কিন্তু অভাবটা আমার কাছে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এভাবে চলতে চলতে দশম শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষায় এ প্লাস এবং শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করি। এরপরে নজরে আসি আমার এক বংশগত চাচার। উনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার ছিলেন।

উনি আমার বাবাকে বললেন, ও যেন আর ইটভাটা বা শ্রমিকে কাজে না যায়। চাচা তাৎক্ষণিক বাবা মা’র হাতে ২,০০০ টাকা দেয় আমার পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। আরো বললেন, যদি আমি ভালো রেজাল্ট করতে পারি তাহলে সরকারি বৃত্তি পাব। কোনো খরচ লাগবে ন।

এসএসসি পরীক্ষা শেষ করলাম। গোল্ডেন প্লাস পেলাম। চাচা খুশি হলো। সবাই খুশি হলো। চিন্তা শুধু আমার যে এরপর কি হবে?

--তার এই গল্প শুনে আমি এতটাই নিস্তব্ধ ছিলাম যে কোন ভাষা এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হয় আমার মাথা তা সায় দিল না। শুধু এতটুক বললাম, তারপর?

--তারপর চাচা আমাকে ঢাকার একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে এইচএসসি পড়ার জন্য ভর্তি করে দিলেন। । আশা বৃত্তি পাব। প্রথমে ভেবেছিলাম বৃত্তির টাকায় আমি পড়া-লেখা চালিয়ে যাচ্ছি, পরে জেনেছি চাচায় টাকা দিচ্ছে। কারণ উনি অনেক চেষ্টা করেছিলেন একটি বৃত্তির জন্য, কিন্তু পারেননি।

এদিকে চাচার চাকরিও শেষের পথে। চাচার ব্যাংকে কিছু নগদ ক্যাশ আর শেয়ার মার্কেটের ইনভেস্ট ছিলো ১৪ থেকে ১৫ লাখ।

আমার এইচএসসি পরীক্ষার সময়ে চাচা হজে গেলেন। পরীক্ষা দিলাম গোল্ডেন প্লাস পেলাম।

এর মাঝে শেয়ার কেলেংকারির ঘটনায় চাচা একবারে নিঃশ্ব হয়ে গেলেন। উনি হজে থাকতেই আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে এডমিশনের সময় এল। টাকার অভাব তখনো আমার সাথে আন্তরিক। আমাকে ছেড়ে যায়নি। আমার পরিবারকে ছেড়ে যায়নি। কাজের জন্য তখন আমি আরএফএল কোম্পানির একটি কারখানায় বোতল সাজিয়ে রাখার কাজে যায়।

আমার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানার পর একদিন আমাকে ধমকালেন। তারপর জেলা শহরে একটি কোচিংয়ে ভর্তি হলাম। তবে কোচিংয়ে নিয়মিত যেতে পারিনি অর্থাভাবে।

ভর্তি ফরম কেনার সময় এল। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভর্তি ফরম নেব তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। চাচা হজে। তারপর উনি আবার শেয়ার কেলেংকারিতে সব খুইয়েছেন। চাচার বাবা অর্থাৎ আমার দাদা তখন খুবই অসুস্থ। চিকিৎসায় প্রচুর খরচ।

অর্থাভাবে মাত্র ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে দুটি ফরম কিনলাম। খ এবং ঘ। বাড়ি বসে বসে ভাবি আমাকে আর কি করতে হবে। এর মাঝে চাচা জানতে পারে আমি মাত্র ঢাবিতেই ফরম তুলে বসে আছি। তারপর ঐদিন ছিলো রাজশাহীতে ভর্তি ফরম তোলার শেষ দিন। আমার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রাজশাহীতে ফরম নিলাম।

ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। ভালো হলো। মনে বিশ্বাস হলো আমি চান্স পাব। তারপরও আত্মীয় স্বজনদের কথামত গেলাম রাজশাহীতে।

রাজশাহীতে এক ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার পর জানতে পারি আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খ ইউনিটে চান্স পেয়েছি। মেরিট লিস্টে আছি। সিরিয়াল ৫৬৫(আমার আসলে মনে নেই কত বলেছিলেন, এর আশপাশেই হবে)।

তারপর শুরু হলো আরেক বিড়ম্বনা। ভর্তির জন্য টাকা পাব কোথায়? আমার আম্মু কান্নাকাটি শুরু করল। কোথাও টাকার ব্যবস্থা হলো না। পরের দিন ভর্তি হতে ঢাবিতে যেতে হবে। এর মাঝে আমার ভূমিদস্যু চাচার কাছে জমি বিক্রি করতে চায়লো বাবা-মা। চাচা রাজি হলো, কিন্তু ঐদিন উনি টাকা দিতে রাজি হলেন না।

আমার, আম্মুর চিন্তা বেড়ে গেল। কান্নাকাটি শুরু করলেন। তারপর পাশের এক চাচা ঘটনা জানাতে পেরে আমার চাচাকে বললেন। তারপর টাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। তবে চাচা না অন্য কেউ দিয়েছিল সেটি আমার এখন মনে নেই। তারপরের ভর্তি হলাম ঢাবিতে। আজ চার বছর চলছে। শেষ বর্ষ অনার্সের।

হতাশা আর কষ্টের বোঝা এখন যেন অনেক বেশি হয়ে গেলো। কিছু ভালো লাগছে না। আমার এখন এমন অবস্থা যে ইনকামের নিম্নতম একটি পথ না ধরলে আমাকে যেন মরতে হবে। কিছু ভালো লাগে না ভাই..............

আমার সারা জগতের সব ভাষা বুকের গহীনে ঘর বাঁধল। আমি আর সেই ইটভাটার শ্রমিক এই সময়কে এমন ভারি করে তুলবো সেটি রাতের কালো অন্ধকারেরা একটু আগেই বুঝেনি।
প্রিয় পাঠক, জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে অত্যন্ত মেধাবী এই ভাইয়ের জন্য আপনাদে আশির্বাদ, দোয়া চাই........
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×