যুদ্ধের দামামা
১৯৪০ সালের মধ্যে জার্মানী ডেনমার্ক, নরওয়ে, হল্যান্ড, বেলজিয়াম এবং ফ্রান্স দখল করে নেয়। এর প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাংকলিন ডিলান রুজভেল্ট আমেরিকা সেনাবাহিনীর আকার আরো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জনগণকে বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার আইন প্রচলন করেন। মার্কিন জনমত যুদ্ধের বিপক্ষে ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে যুদ্ধে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪১ সালের জানুয়ারী মাসে মার্কিন কংগ্রেস লেন্ড-লিজ আইন পাস করে। এই আইনে প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা দেয়া হয়, তিনি ইচ্ছা করলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে যে কোনো রাষ্ট্রের কাছে অস্ত্র, খাদ্য বা যেকোনো প্রয়জনীয় সামগ্রী বিক্রি, ধার বা ভাড়া দিতে পারবেন। এই আইনের দ্বারা প্রথমেই তিনি ব্রিটেনের কাছে অস্ত্র বিক্রি শুরু করেন। পরে অবশ্য রাশিয়ার কাছেও অস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি শুরু করেন। ইতোমধ্যে মার্কিন সৈন্যরা আইসল্যান্ড দখল করে নেয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর জাপান পার্ল হার্বারে প্রশান্ত মহাসাগরীয় আমেরিকান নৌবহরকে আক্রমণ করে। পরের দিন অর্থাৎ ৮ ডিসেম্বর মার্কিন কংগ্রেস জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৪১ সালের ১১ ডিসেম্বর জার্মানী ও ইতালি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
যুক্তরাষ্ট্র তার সমস্ত সম্পদকে যুদ্ধের কাজে নিয়োজিত করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার শিল্পোৎপাদন দ্বিগুন হয়ে যায়। ১৯৪৩ সালে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এত বৃদ্ধিপায় যে একজন মার্কিন নাগরিকও বেকার ছিলনা। ১৯৩৯ সালে আমেরিকা দুই হাজার উড়োজাহাজ নির্মাণ করে। আর ১৯৪৪ সালের মধ্যে উড়োজাহাজের উৎপাদন দাঁড়ায় ৯৬ হাজারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যেহেতু যুক্তরাষ্টের ভূখণ্ড সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্র ছিলোনা বা সরাসরি বিমান আক্রমণের আওতায় ছিলোনা তাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা অন্যান্য যুদ্ধমান দেশগুলির জনগণের চাইতে অনেক কম কষ্ট ভোগ করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেক কালো আমেরিকান দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকে উত্তর ও পশ্চিমের রাজ্যগুলিতে বসবাসের জন্য চলে আসে। আমেরিকায় কালোদের সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদা নিয়ে অসন্তোষ দিনে দিনে বাড়ছিল।
যদিও আমেরিকার সেনাবাহিনীতে অনেক জাপানী ছিল, তারপরও পার্ল হার্বারে জাপানের আক্রমণের পর আমেরিকা এক লক্ষেরও বেশি জাপানিকে পশ্চিম উপকূল থেকে আটক করে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে নিয়ে আসে। আমেরিকার ব্যাপক শিল্প উৎপাদনের ক্ষমতা অক্ষ শক্তির (জার্মান, ইতালি এবং জাপান) পরাজয় অবধারিত করে তুলে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট যুদ্ধের বিজয় দেখে যেতে পারেননি। ১৯৪৫ সালের ১২ এপ্রিল তিনি মারা যান।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:৫১