নাগরিক অধিকার আন্দোলন -২
১৯৬০ সালে নর্থ ক্যারোলিনার গ্রিনসবোরোতে একটা খাবারের দোকানে একজন কালো ছাত্র খাবার কিনতে গেলে দোকানী কালো ব্যাক্তির কাছে খাবার বিক্রি করতে অস্বীকার করে। এর প্রতিবাদে কালোরা ওই দোকানের সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে। এই আন্দোলন দ্রুত ছড়িয়ে পরে, তারা বিভিন্ন দোকান, হোটেল, সিনেমা হল, এবং পার্কের সামনে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট করতে থাকে। এতে সাফল্য আসে, ওই সমস্ত দোকান ও প্রতিষ্টানে কালোদের প্রবেশাধিকার দেয়া হয়।
১৯৬২ সালের ওলে মিস দাঙ্গা বা অক্সফোর্ডের যুদ্ধ
১৯৫৪ সালে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট ব্রাউন বনাম বোর্ড অফ এডুকেশন মামলায় কালো-সাদার জন্য পৃথক স্কুল ব্যবস্থাকে অ-সাংবিধানিক ঘোষণা করেন। জেমস এইচ. মেরিডিথ, আমেরিকান বিমান বাহিনীর একজন প্রাক্তন সৈনিক, ১৯৬২ সালে ইউনিভার্সিটি অফ মিসিসিপিতে ভর্তি হয়। কিন্তু ভর্তির পরে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ যখন জানতে পারে যে মেরিডিথ একজন কালো আমেরিকান, তখন তারা তার ভর্তি বাতিল করে দেয়। ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করলে একটা ফেডারেল কোর্ট মেরিডিথকে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করার নির্দেশ দেয়। ১৯৬২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মেরিডিথ পুনঃরায় ভর্তি হওয়ার জন্য গেলে, ইউনিভার্সিটির অফিসে ঢুকার মুখে মিসিসিপির গভর্নর রস বার্নেট স্বয়ং তাকে বাধা দেয়। ২৮ সেপ্টেম্বর আদালত গভর্নরকে আদালত অবমাননার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে, নির্দেশ দেয় যে, মেরিডিথকে ইউনিভার্সিটিতে প্রবেশের ক্ষত্রে তিনি বাধা দিতে পারবেন না। যদি আদালতের নির্দেশ তিনি অমান্য করেন, তা হলে তাকে গ্রেফতার করা হবে এবং ১০ হাজার ডলার জরিমানা করা হবে।
ঐ সময়ে আমেরিকার ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি প্রসাশন মিসিসিপির গভর্নর বার্নেটকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু গভর্নর বার্নেট সাদাদের ইউনিভার্সিটিতে কিছুতেই মেরিডিথকে ভর্তি হতে দিবেন না। প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি ও অ্যাটর্নি জেনারেল রবার্ট এফ. কেনেডি নানান দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেন এই অবস্থায় সেনাবাহিনী পাঠানো ঠিক হবে না। সৈন্য পাঠাতে গেলে সশস্ত্র প্রতিবাদকারী ও সৈনিকদের মধ্যে একটা ছোট-খাটো গৃহযুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেন, যেহেতু এই ব্যাপারে আদালতের নির্দেশ আছে, তাই মেরিডিথ মার্শালের পাহারায় ইউনিভার্সিটিতে ঢুকবে। এই ক্ষেত্রে গভর্নর বার্নেট আদালতের নির্দেশ মানতে বাধ্য হবে। এদিকে গভর্নর বার্নেট আদালতের চাপে একটা মুখ-রক্ষামূলক মীমাংসার আশায় কেনেডি প্রশাসনের সাথে আলোচনা চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত গভর্নর বার্নেট মেরিডিথের ভর্তির ব্যাপারে সম্মত হন। অ্যাটর্নি জেনারেল রবার্ট এফ. কেনেডি নির্দেশ দেন মেরিডিথ যখন ভর্তি হতে ইউনিভার্সিটিতে যাবে তখন ৫০০ মার্শাল তাকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাবে।
১৯৬২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মেরিডিথ ৫০০ মার্শালের পাহারায় ইউনিভার্সিটি অফ মিসিসিপির অক্সফোর্ড ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে দাঙ্গ শুরু হয়ে যায়। এই দাঙ্গা পরের দিন অর্থাৎ ১ অক্টোবর পর্যন্ত চলে। এতে ফ্রান্সের একজন সাংবাদিক সহ দুই জন নিহত হয় এবং ৩০০ জনের মতো আহত হয়।
অবশেষে মেরিডিথ ১৯৬২ সালের ১ অক্টোবর প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান ছাত্র ইউনিভার্সিটি অফ মিসিসিপিতে ভর্তি হয় এবং ক্লাস করতে শুরু করে। মেরিডিথ ১৯৬৩ সালে ১৮ অগাস্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানে গ্রাজুয়েট হন। তিনি মিসিসিপি ইউনিভার্সিটিতে পড়ার পুরা সময়টা ২৪ ঘন্টা কয়েক শ' সেনার পাহারায় থাকতেন।
এদিকে আদালতের আদেশ অমান্য করার অপরাধে গভর্নর বার্নেটের জেল হয় এবং সেই সাথে ১০ হাজার ডলার জরিমানা হয়। পরে অবশ্য আপীল কোর্ট তার বিরুদ্ধে অভিযোগ খারিজ করে দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৭ রাত ৯:৪০