somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ আলী আকন্দ
আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

বিংশ শতাব্দীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র -- সপ্তদশ পর্ব

১০ ই মে, ২০১৭ রাত ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাগরিক অধিকার আন্দোলন -৩

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র -১
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ১৯২৯ সালের ১৫ জানুয়ারী জর্জিয়া রাজ্যের আটলান্টায় জন্মগ্রহণ করেন। তার আব্বার নাম মার্টিন লুথার কিং সিনিয়র এবং আম্মার নাম আলবার্টা উইলিয়ামস কিং। তিনি জেমস আর্ল রেয় নামের একজন আততায়ীর হাতে ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল টেনেসি রাজ্যের মেমফিসে নিহত হন।

মার্টিন লুথার কিং ১৯৪৮ সালে সমাজবিজ্ঞানে বি.এ. ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ১৯৫১ সালে পেনসিলভানিয়া রাজ্যের ক্রোগার থিওলজিক্যাল সেমিনারি থেকে ব্যাচেলর অফ ডিভাইনিটি ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ১৯৫৫ সালে বোস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে সিস্টেমেটিক থিওলজিতে পিএইচ. ডি. ডিগ্রী লাভ করেন।

মার্টিন লুথার কিং ১৯৫৩ সালের ১৮ জুন কোরেটা স্কটকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে চার সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তিনি ২৫ বছর বয়সে ১৯৫৪ সালে এলাবামা রাজ্যের মন্টগোমেরিতে ডিক্সটার এভিনিউ ব্যাপ্টিস্ট চার্চে পাদ্রী হিসাবে যোগ দেন।

নাগরিক আন্দোলনে মার্টিন লুথার কিংয়ের ভূমিকাঃ
১। মন্টগোমেরি বাস বর্জন আন্দোলন
রোসা পার্কস নামের একজন কালো মহিলা বাসের সামনের দিকের সিটে বসলে তাকে উঠে যেতে বললে সে উঠতে অস্বীকার করে। ওই সময়ে কালোরা বাসের সামনের সিটে বসতে পারত না। তাদেরকে বাসের পিছনের দিকে সিটে বসতে হতো। সামনের সিটে বসে আইন ভঙ্গ করার কারণে রোসা পার্কসকে ১৯৫৫ সালের ১ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয়। রোসা পার্কসকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে মার্টিন লুথার কিংয়ের নেতৃত্বে মন্টগোমারিতে কালোরা বাস বর্জন শুরু করে। এই বাস বর্জন আন্দোলন ৩৮৫ দিন স্থায়ী হয়। এই আন্দোলনের এতই উত্তেজনা ছিল যে, আন্দোলন বিরোধীরা মার্টিন লুথার কিংয়ের বাড়িতে বোমা বর্ষণ করে। তাকে গ্রেফতার করা হয়। অবশেষে ব্রাউডার বনাম গেইলি মামলার রায়ের মাধ্যমে বাসে বর্ণের ভিত্তিতে সিট ব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করা হলে এই আন্দোলনের অবসান হয়। তবে এই আন্দোলনের ভিতর দিয়ে মার্টিন লুথার কিংয়ের নাম জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পরে এবং তিনি নাগরিক অধিকার আন্দোলনের একজন বলিষ্ঠ নেতা হিসাবে আবির্ভূত হন।

২। সাউদারান খ্রীষ্টান লিডারশিপ কনফারেন্স
১৯৫৭ সালে মার্টিন লুথার কিং এবং আরো কয়েকজন নাগরিক অধিকার আন্দোলকারী মিলে সাউদারান খ্রীষ্টান লিডারশিপ কনফারেন্স গঠন করেন। নাগরিক অধিকার আন্দোলনকে অহিংস ভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে কালোদের চার্চগুলিকে সংগঠিত করার জন্য এই সংঘটন সৃষ্টি করা হয়। মার্টিন লুথার কিং আমৃত্যু এই সংঘটনের নেতৃত্ব দেন। নাগরিক অধিকার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাসমূহ পরিচালনার ব্যায় নির্বাহের জন্য গান্ধী সোসাইটি ফর হিউমান রাইট নামে একটা সংঘটন সৃষ্টি করা হয়, যার সভাপতি ছিলেন মার্টিন লুথার কিং। অ্যাটর্নি জেনারেল রবার্ট এফ. কেনেডি এফবিআইকে নির্দেশ দেন মার্টিন লুথার কিং সহ এই সংগঠনের সব নেতার টেলিফোনে আড়িপাততে, কারণ প্রশাসন ধারণা করছিলো এই সংঘটনের সাথে কমিউনিস্টদের যোগাযোগ আছে। কিন্তু তদন্তে এই ধরণের কোনো যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কালোদের ভোটাধিকার, বর্ণ প্রথার অবসান, শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্টা এবং অন্যান আরো নাগরিক অধিকারের জন্য মার্টিন লুথার কিংয়ের নেতৃত্বে এই সংগঠনের অধীনে অহিংস আন্দোলন অনেকাংশেই সফল হয়। এই আন্দোলনের ফলে ১৯৬৪ সালে সিভিল রাইটস এক্ট এবং ১৯৬৫ সালে ভোটিং রাইটস এক্ট পাস হয়। এই দুইটা আইনের মাধ্যমে অধিকাংশ দাবিই আইন সম্মত ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

৩। আলবানী আন্দোলন
জর্জিয়া রাজ্যের আলবানী শহরে ১৯৬১ সালের নভেম্বর মাসে বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে কালোরা এই আন্দোলন শুরু করে। স্থানীয় নেতৃবৃন্দের অধীনে এই আন্দোলন শুরু হলেও মার্টিন লুথার কিংয়ের নেতৃত্বে সাউদারান খ্রীষ্টান লিডারশিপ কনফারেন্স এই আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে। এই আন্দোলন ১৯৬২ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত চলে। বর্ণবাদীদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে এই আন্দোলন তেমন সফল হয় নি। এই আন্দোলনের জন্য আদালত মার্টিন লুথার কিংকে ৪৫ দিন কারাদণ্ড অথবা ১৭৮ ডলার জরিমানা করে। তিনি জরিমানা দিতে অস্বীকার করলে, তাকে কারাদণ্ড ভোগ করার জন্য কারাগারে পাঠানো হয়।

৪। বার্মিংহামে প্রচার অভিযান
১৯৬৩ সালের এপ্রিল মাসে মার্টিন লুথার কিং আলাবামা রাজ্যের বার্মিংহামে বর্ণ বৈষম্য এবং অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান শুরু করেন। প্রচারাভিযানের কৌশল হিসাবে কালোরা আইন অমান্য করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থান যেমন-পার্ক ইত্যাদিতে অবস্থান ধর্মঘট করতে থাকে। আন্দোলন সফল হয়, জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থানগুলিতে কালোদেরও প্রবেশাধিকার দেয়া হয়। এই আন্দোলনের মধ্যদিয়ে মার্টিন লুথার কিংয়ের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা আরো বেড়ে যায়। অবশ্য আন্দোলনের শুরুতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এটা ছিল তার ১৩ তম গ্রেফতার। আন্দোলনের জন্য তাকে সর্বমোট ২৯ বার গ্রেফতার করা হয়। বার্মিংহাম কারাগার থেকে মার্টিন লুথার কিং আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে এক ঐতিহাসিক চিঠি লেখেন, যা Letter from Birmingham Jail নাম বিখ্যাত। তিনি এই পত্রে লেখেন, "উত্পীড়করা কখনোই স্বেচ্ছায় অধিকার ফিরিয়ে দেয় না, নিপীড়িতদেরকে অধিকার আদায় করে নিতে হয়।" ("We know through painful experience that freedom is never voluntarily given by the oppressor; it must be demanded by the oppressed.")

৫। ওয়াশিংটনে মহা-যাত্রা (The Great March on Washington)
১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আফ্রিকান-আমেরিকানদের কর্মসংস্থান ও মুক্তির দাবিতে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষের এক বিরাট সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই মহাসমাবেশের আয়োজক ছিলেন ফিলিপ রেন্ডলফ এবং বেয়ার্ড রুসটিন। তারা 'কাজ এবং মুক্তি' এই ব্যানারের অধীনে নাগরিক অধিকার সংঘটন, শ্রমিক সংঘটন ও ধর্মীয় সংঘটন গুলিকে একত্রিত করে এই মহাসমাবেশের আয়োজন করেন। এই সমাবেশে লিংকন মেমোরিয়ালের পাদদেশে দাঁড়িয়ে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র 'আমার স্বপ্ন' (I Have a Dream) শিরোনামে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এই সমাবেশ এবং এই ভাষণের ফলশ্রুতিতে আমেরিকাতে বর্ণবাদ অনেক কমে আসে, নাগরিক অধিকারের পক্ষে অনেকগুলো আইন পাস হয়, যেমন-সিভিল রাইটস এক্ট, ১৯৬৪; ভোটিং রাইটস এক্ট, ১৯৬৫ ইত্যাদি।

৬। নিউ ইয়র্ক সিটি
ধারাবাহিক প্রচারণার অংশ হিসাবে ১৯৬৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী মার্টিন লুথার কিং নিউ ইয়র্কে আমেরিকার বর্ণবাদী সমস্যা নিয়ে বক্তৃতা করেন। ওই ভাষণে তিনি ইন্ডিয়ার প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহেরুর সাথে তারা আলোচনার সূত্রধরে বলেন, আফ্রিকান-আমেরিকানদের দুঃখজনক অবস্থা ভারতের অস্পৃশ্যদের অবস্থার মতো।

৭। সেইন্ট আগস্টিন, ফ্লোরিডা
১৯৬৪ সালের মার্চ মাসে মার্টিন লুথার কিং ফ্লোরিডার সেইন্ট আগস্টিনে বর্ণবাদ বিরুধী আন্দোলনে অংশ নেন। ওই সময়ে শতশত আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করা হয়। তবে এই আন্দোলন চলাকালীন সময়ই ঐতিহাসিক সিভিল রাইটস এক্ট, ১৯৬৪ পাস হয়।

৮। সেলমা, এলাবামা
১৯৬৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মার্টিন লুথার কিং এলাবামা রাজ্যের সেলমায় বর্ণবাদ বিরুধী আন্দোলনে অংশ নেন। ওই সময়ে স্থানীয় একটি আদালত এই মর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন যে, নাগরিক অধিকার আন্দোলনের ৩ বা ততোধিক কর্মী একত্রে সমবেত হতে পারবে না এবং মার্টিন লুথার কিং সহ ৪১ জন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা কোথাও সমাবেশ করতে পারবে না। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আন্দোলন সাময়িকভাবে থেমে যায়। কিন্তু ১৯৬৫ সালের ২ জানুয়ারী মার্টিন লুথার কিং ব্রাউন চ্যাপেলে বক্তিতার করার মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেন।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৭ রাত ৯:৩৩
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×