somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ আলী আকন্দ
আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা-১

২৪ শে মে, ২০১৭ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রস্তাবনা
আমরা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ, একটা যথাযথ যুক্তরাষ্ট্র গঠন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্টা, দেশের অভ্যন্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, সবার জন্য একই ধরণের নিরাপত্তা বিধান করা, সাধারণ কল্যাণ সাধন করা, আমাদের নিজেদের এবং আমাদের বংশধরদের জন্য স্বাধীনতার সুফল নিশ্চিত করার উদ্যেশে আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়ন এবং ঘোষণা করছি।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রস্তাবনাটি খুবই সংক্ষিপ্ত। কিন্তু এই সংক্ষিপ্ত প্রস্তাবনার ভিতর দিয়ে মূল সংবিধানটি সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। কারা এই সংবিধান, কি উদ্দেশ্যে এবং কাদের জন্য প্রণয়ন করছে এই প্রস্তাবনা থেকে খুব সহজেই বুঝা যায়।

আমরা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ
এই কথাগুলি দ্বারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ধরণ কি রকম হবে সেই সম্পর্কে ধারণাকে পরিষ্কার করে। যুক্তরাষ্ট্র কোনো একক ব্যাক্তি বা কোনো গোষ্ঠী বা কোনো দলের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় পরিচালিত হবে না। এখানে বিশেষ কোনো ধর্ম বা বর্ণ বা জাতিসত্তার কোনো প্রাধান্য নাই। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ তাদের নিজেদের জন্য এই সংবিধান প্রণয়ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। স্বাভাবিক ভাবে ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্বার এবং ধর্মীয় সম্পদায়ের মানুষের আকাঙ্খা ও স্বার্থ ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু যখন বলা হয় ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রে জনগণ’, তখন সব জাতিসত্বার এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ একটা অভিন্ন লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হয়।

প্রস্তাবনায় ৬টি লক্ষ্যের কথা উল্ল্যেখ করা হয়, যথা:-
১। একটা যথাযথ যুক্তরাষ্ট্র গঠন
২। ন্যায়বিচার প্রতিষ্টা
৩। দেশের অভ্যন্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা
৪। সবার জন্য একই ধরণের নিরাপত্তা বিধান করা
৫। সাধারণ কল্যাণ সাধন করা
৬। আমাদের নিজেদের এবং আমাদের বংশধরদের জন্য স্বাধীনতার সুফল নিশ্চিত করা

একটা যথাযথ যুক্তরাষ্ট্র গঠন
রাষ্ট্র বিজ্ঞানীগন যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের তিনটি প্রধান বৈশিষ্টের কথা উল্ল্যেখ করেছেন। বৈশিষ্টগুলি হলো:
১। কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে ক্ষমতার সুনিদ্রিষ্ট বিভাজন থাকবে। ক্ষমতা বিভাজনের মূল ভিত্তি হবে, শুধুমাত্র জাতীয় স্বার্থের বিষয়গুলি কেন্দ্রীয় সরকার বা ফেডারেল গভর্নমেন্ট দেখাশুনা করবে। আর বাকী বিষয়গুলি অর্থাৎ রাজ্যের স্বার্থের বিষয়ে স্বস্ব রাজ্য ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।
২। সংবিধানের প্রাধান্য থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকার বা ফেডারেল গভর্নমেন্টের একটা সুনিদৃষ্ট লিখিত সংবিধান থাকবে। এই সংবিধানে পরিষ্কারভাবে কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতা বলা থাকবে।
৩। বিচার ব্যবস্থার প্রাধান্য থাকবে। যদিও সংবিধানে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের ক্ষমতা ও কার্যাবলী সুনিদির্ষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকবে, তবুও যদি কেন্দ্রের সাথে রাজ্যের কোনো বিরোধ দেখা দেয় সেই ক্ষেত্রে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারবে।
একটা যথযথ যুক্তরাষ্ট্র গঠন এবং কার্যকরীভাবে পরিচালনার জন্য এই তিনটা শর্ত পালন অপরিহার্য। যুক্তরাষ্টের সংবিধান প্রণয়নের সময় এই শর্তগুলির দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়।

ন্যায়বিচার প্রতিষ্টা
প্রস্তাবনায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্টার কথা বলে জনগণকে এই নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে যে, আইনের চোখে সব নাগরিক সমান। বিচারের ক্ষেত্রে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না। কোনো জাতিসত্বা বা ধর্মের ভিত্তেতে কোনো নাগরিক কোনো বিশেষ সুবিধা ভোগ করতে পারবে না। অনুরূপ ভাবে জাতিসত্বা বা ধর্মের ভিত্তেতে কোনো নাগরিককে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণায় বলা হয়েছে, সৃষ্টিকর্তা সব মানুষকে সমান ভাবে সৃষ্ট্রি করেছেন; একজন মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার এবং সুখী হওয়ার অধিকার তার জন্মগত অবিচ্ছিন্ন অধিকার। ন্যায় বিচার মানুষের এই জন্মগত অবিচ্ছিন্ন অধিকারগুলিকে রক্ষা করে।

দেশের অভ্যন্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা
একটি রাষ্ট্রের বিকাশ ও উন্নতির জন্য অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আন্দোলন, সংগ্রাম এবং অবশেষে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীন হয়। তা ছাড়াও পশ্চিম দিকে রাজ্য বিস্তারের সময় অনেক অভ্যন্তরীন যুদ্ধের সম্মুখীন হয়। রাজ্যগুলি নিজেদের সীমানার মধ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট শক্তি রাখার পরও কেন্দ্রীয় সরকারের হাতকে আরো শক্তিশালী করার জন্য সাংবিধানিক নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকার সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করবে।

সবার জন্য একই ধরণের নিরাপত্তা বিধান করা
এই সংবিধান গৃহীত হওয়ার আগে প্রত্যেক রাজ্যকে তাদের নিজেদের প্রতিরক্ষা নিজেদেরকেই করতে হতো। এই সংবিধানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যাস্ত হয়। কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত সব রাজ্যের নিরাপত্তা সমান ভাবে প্রদান করবে। এই নীতির ফলে সামরিক বাহিনী কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে ন্যস্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সামরিক বাহিনীর কমান্ডার ইন চীফ।

সাধারণ কল্যাণ সাধন করা
সাধারণ কল্যাণ বলতে বুঝায় নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করা, নাগরিকদের মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণ করা, তাদের জীবনযাপন পদ্ধতিকে সহজ ও আরামদায়ক করা। এক কথায় বললে, সরকার সব নাগরিকের ভালো-মন্দ দেখা-শোনা করবে। নাগরিকরা যাতে সুখে শান্তিতে ও আরামে বসবাস করতে পারে তার ব্যবস্থা করা সরকারে দায়িত্ব।

আমাদের নিজেদের এবং আমাদের বংশধরদের জন্য স্বাধীনতার সুফল নিশ্চিত করা
স্বাধীনতার সুফল নিশ্চিত করার অর্থ হচ্ছে, মানুষ কষ্ট করে, ত্যাগ স্বীকার করে এবং জীবনের ও সম্পদের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা লাভ করেছে তা টিকিয়ে রাখা। কোনো অত্যাচারী বা স্বৈরশাসক যাতে জনগণের স্বাধীনতাকে কেড়ে নিতে না পারে তা নিশ্চিত করা । রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে জনগণ শাসিত হবে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধির দ্বারা। বংশ পরম্পরায় কোনো রাজা, বাদশা বা স্বৈরশাসক বা অনির্বাচিত শাসক বা সরকার রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্টান পরিচালনা করতে পারবে না। 'আমাদের নিজেদের এবং আমাদের বংশধরদের জন্য' এই কথার দ্বারা বর্তমানকাল এবং ভবিষৎকালকে বুঝানো হয়েছে। এই রাষ্ট্র ও এই সংবিধান যতদিন থাকবে কোনো অনির্বাচিত সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৫৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×