somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ আলী আকন্দ
আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী রায়সমূহ - ৩

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ড্রেড স্কট বনাম স্যান্ডফোর্ড [৬০ ইউ এস ৩৯৩ (১৮৫৬)]
ড্রেড স্কট -- আবেদনকারী
জন এফ. এ. সানফোর্ড -- রেসপন্ডেন্ট
বিঃদ্রঃ রেসপন্ডেন্টকে সঠিক নাম সানফোর্ড কিন্তু কোর্টের রেকর্ডে এসেছে স্যান্ডফোর্ড।
রায় ঘোষণার তারিখ: মে ৬, ১৮৫৭
বিচারপতি রজার বি. টেনি সংখ্যাগরিষ্ঠ রায় প্রদান করেন। রেসপন্ডেন্ট সানফোর্ডের পক্ষে ৭ জন এবং বিপক্ষে ২ জন বিচারপতি রায় দেন।

মামলার বিবরণ
ড্রেড স্কট একজন ক্রীতদাস ছিলেন। তিনি ভির্জিনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৮২০ সালে মিসৌরি রাজ্যের অধিবাসী জন ইমার্সন তাকে ক্রয় করেন। ইমার্সন স্কটকে কেনার পর তাকে নিয়ে ইলিনয়েস রাজ্যের ফোর্ট আর্মস্ট্রংএ যান। সেখানে তিনি ১৮৩৩ থেকে ১৮৪৩ সাল পর্যন্ত বসবাস করেন। সেখান থেকে উইসকনসিন রাজ্যের ফোর্ট স্নেলিংএ যান। এই দুইটা রাজ্যেই দাস প্রথা নিষিদ্ধ ছিল। ইমার্সন স্কট এবং তার স্ত্রীকে উইসকনসিনে রেখে মিসৌরিতে ফিরে যান। যাবার সময় ইমার্সন তাদেরকে উইসকনসিনের একজন সাদা লোকের কাছে ইজারা দিয়ে যান। যেহেতু ১৮২০ সালের মিসৌরি কম্প্রোমাইস এবং অন্যান্য আইন অনুসারে ঐ সময়ে উইসকনসিনে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ ছিল, তাই তাদেরকে ইজারা দেয়ায় আইন ভঙ্গ হয়।

এরপর ইমার্সন মিসৌরি থেকে লুইসিয়ানাতে চলে আসলে, স্কট এবং তার স্ত্রীও উইসকনসিন থেকে তাদের মালিকের কাছে লুইসিয়ানাতে চলে আসে। উইসকনসিন থেকে মিসিসিপি নদী দিয়ে লঞ্চে করে লুইসিয়ানাতে যাওয়ার পথে তাদের কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। যেহেতু সে মুক্তাঞ্চলে জন্ম নিয়েছে, তাই সে জন্মসূত্রে টেকনিক্যালি মুক্ত মানুষ হিসাবে গণ্য হবে। ইমার্সন আবার উইসকনসিনে ফিরে আসেন, কিন্তু ইমার্সনের স্ত্রী স্কট ও তার স্ত্রীকে নিয়ে মিসৌরিতে ফিরে যান। ইমার্সন আইওয়াতে মারা গেলে তার স্ত্রী উত্তরাধিকার সূত্রে স্কটের মালিক হন। তিনি স্কটকে অন্য লোকের কাছে ইজারা দিয়ে দেন। স্কট ইমার্সনের স্ত্রীর কাছে তার পরিবারের স্বাধীনতা কিনতে চাইলে, তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন। স্কট এর প্রেক্ষিতে মামলা করেন।

স্কট তার আর্জিতে বলেন, যেহেতু তারা মুক্তাঞ্চলের বাসিন্দা, তাই তারা আইনগত ভাবেই মুক্ত মানুষ। মিসৌরি আদালত অভিমত দেয় স্কট মুক্তাঞ্চলের বাসিন্দা, তাই মুক্ত মানুষ, কিন্তু পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য মামলাটি খারিজ করে দেয়। তবে জুরিরা স্কটের পক্ষে রায় দেয়। ইমার্সনের স্ত্রী এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। ইমার্সনের স্ত্রী ইতোমধ্যে ম্যাসাচুসেটস চলে যান এবং সেখানে স্কটকে তার ভাই জন এফ. এ. সানফোর্ডকে দিয়ে দেন। আপিলের রায় ইমার্সনের স্ত্রীর পক্ষে যায়। স্কট হেরে যান। আপিলের রায়ে বলা হয়, স্কট যখন মুক্তাঞ্চলে বাস করছিলো তখন সে মামলা করে নাই, তাই সে এখন মুক্তি পাবে না।

স্যান্ডফোর্ড ম্যাসাচুসেটস থেকে নিউ ইয়র্ককে চলে আসলে, স্কট নিউ ইয়র্ক ফেডারেল কোর্টে আবার নতুন করে স্যান্ডফোর্ডর বিরুদ্ধে তার মামলা চালু করে। স্যান্ডফোর্ড আর্জির জবাবে বলেন সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত এবং দাসদের বংশোদ্ভূত কোন মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারবে না। যেহেতু সে নাগরিক না, তাই তার মামলা করার কোন এখতিয়ার নাই।

বিচার্য বিষয়
(১) ড্রেড স্কট মুক্ত মানুষ, না দাস?

রায়
বিচারপতি রজার বি. টেনি ৭-২ সংখ্যাগরিষ্ঠ রায় প্রদান করেন।

বিচার্য বিষয়ের উত্তর--ড্রেড স্কট মুক্ত মানুষ না, সে দাস। সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে বলা হয় সংবিধানের ৩ এবং ৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে যে ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক না, সে কোন রাজ্যের নাগরিক হতে পারবে না এবং কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসেই নাগরিকত্ব নির্ধারণ করতে পারবে। সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোন ক্রীতদাস বা ক্রীতদাসের বংশধর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারবে না। কোর্ট আরো ঘোষণা করে ১৮২০ সালের মিসৌরি কম্প্রোমাইস অসাংবিধানিক এবং বাতিল বলে গণ্য হবে।

ড্রেড স্কট যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকই না, তাই তার মামলা করার কোন এখতিয়ার নাই। এখতিয়ারের অভাবে তার মামলা খারিজ হবে।

বিশ্লেষণ
ক্রীতদাস এবং আফ্রিকান আমেরিকানরা তাদের অধিকার প্রতিষ্টার জন্য বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনের পাসাপাসি আদালতে মামলাও করে। এই ধরণের এটা প্রথম মামলা।
সংবিধানের ১৩শ এবং ১৪শ সংশোধনীর মাধ্যমে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হওয়ার ফলে এই রায়ের আর কোন কার্যকারিতা নাই। তবে এই রায়ের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। এই রায়ে ঐ সময়ের যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান, আইন, বিচারকদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×