somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ আলী আকন্দ
আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী রায়সমূহ - ৯

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিরান্ডা বনাম এরিজোনা [৩৮৪ ইউ এস ৪৩৬ (১৯৬৬)]
আর্নেস্তো মিরান্ডা -- আবেদনকারী
এরিজোনা -- রেসপন্ডেন্ট
রায় ঘোষণার তারিখ: জুন ১৩, ১৯৬৬

প্রধান বিচারপতি আর্ল ওয়ারেন ৫-৪ সংখ্যাগরিষ্ঠ রায় প্রদান করেন।

মামলার বিবরণ
আর্নেস্তো মিরান্ডা এরিজোনা রাজ্যের ফিনিক্সে অপহরণ এবং ধর্ষণের অভিযোগে ১৯৬৩ সালের ১৩ই মার্চ গ্রেফতার হন। গ্রেফতারের পর পুলিশের দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে সে জেনেশুনে এবং স্বেচ্ছায় তার দোষ স্বীকার করে এবং স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নিজে স্বাক্ষর করে। কিন্তু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার আগে মিরিন্ডাকে জানানো হয়নি যে, তার আইনগত অধিকার আছে জিজ্ঞাসাবাদের উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকার, বা তার অধিকার আছে আইনজীবী নিয়োগ করার অথবা সে জিজ্ঞাসাবাদে যে স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে তা তার বিরুদ্ধে মামলায় প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা হবে। যখন তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদালতে প্রমাণ হিসাবে দাখিল করা হয়, তখন সে বলে যে, সে তার অধিকারগুলি সম্পর্কে জানতো না, তাই তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি স্বেচ্ছায় প্রদান করা হয়েছে বলে গণ্য করা যাবে না।

তার আপত্তি অগ্রাহ্য করে, তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির উপর ভিত্তি করে বিচার আদালত তাকে অপহরণ এবং ধর্ষণের অভিযোগে ৩০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করে। এরিজোনা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে আপিলও খারিজ হয়ে যায়।

বিচার্য বিষয়
(১) পুলিশ যখন কোন সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে তখন নিজেকে দোষী করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ক্ষেত্রে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর সুরক্ষা বিধান প্রযোজ্য হবে কি?

রায়
প্রধান বিচারপতি আর্ল ওয়ারেন ৫-৪ সংখ্যাগরিষ্ঠ রায় প্রদান করেন।

বিচার্য বিষয়ের উত্তর--হাঁ। পুলিশ যখন কোন সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে তখন নিজেকে দোষী করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ক্ষেত্রে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর সুরক্ষা বিধান প্রযোজ্য হবে। ৫ম সংশোধনীতে বিধান রাখা হয়েছে, পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় যখন কোন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তখন পুলিশ প্রথমেই তাকে অভিহিত করবে যে, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে চুপ করে থাকার আইনগত অধিকার তার আছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের সময় সে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে।

নিজেকে জড়িত করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের ক্ষেত্রে ৫ম সংশোধনী নাগরিকদের সুরক্ষা দিয়েছে। সুতরাং সন্দেহভাজন অভিযুক্ত ব্যক্তি আটক থাকা অবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় কোন স্বীকারোক্তি করলে, অভিযোগকারী পক্ষ বিচারের সময় তা তার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে না, যতক্ষণ না পদ্ধতিগত সতর্কতা প্রদান করা হয়। এই পদ্ধতিগত সতর্কতা প্রমাণ হল, (১) সন্দেহভাজন অভিযুক্ত ব্যক্তির জানা থাকতে হবে, জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে চুপ থাকার অধিকার তার আছে; (২) সে যে বক্তব্য দিবে, মামলায় প্রমাণ হিসাবে সেটা তার বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে পারে; (৩) জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার আইনজীবীকে উপস্থিত রাখার অধিকার তার আছে; (৪) তার আইনজীবী নিয়োগ করার অধিকার আছে; (৫) সে স্বেচ্ছায় তার এই অধিকারগুলি বর্জন করতে পারে, এবং (৬) যে মুহূর্তে সে আইনজীবী নিয়োগের কথা বলবে, সেই মুহূর্তে থেকে তাকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করা যাবে না, আইনজীবী না আসা পর্যন্ত।

আদালতের অভিমত হল, এই মামলায় দেখা যায় পুলিশ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কোন জোরজবরদস্তি করে নাই। কিন্তু রাষ্ট্র পক্ষ এটা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, আসামি তার স্বাধীন ইচ্ছায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের জবাব দিয়েছে।

বিচারপতি টম সি ক্লার্ক সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ের সাথে ভিন্নমত করে রায় দেন। তিনি তার রায়ে বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে অযথা ৫ম সংশোধনীকে কঠোর ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এতে পুলিশের পক্ষে তাদের দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে যাবে। সন্দেহভাজন আসামি জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন ছিল, এটা প্রমাণের দায়িত্ব রাষ্ট্র পক্ষের। তবে জিজ্ঞাসাবাদের সময় স্পষ্টভাবে তাকে তার অধিকার সম্পর্কে বলা হয় নাই, শুধুমাত্র এই কারণে তার জবানবন্দি বাদ দেয়া যাবে না।

বিচারপতি জন এম হারলান সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ের সাথে ভিন্নমত পোষণ করে তিনিও পৃথক রায় দেন। তিনি তার রায়ে বলেন, বিভিন্ন মামলার নজির এবং আইনের ধারাবাহিকতার ইতিহাসের আলোকে দেখলে দেখা যায়, 'সন্দেহভাজন অভিযুক্তকে কোন প্রকার চাপ দেয়া যাবে না' এই দৃষ্টিভঙ্গিকে ৫ম সংশোধনী সমর্থন করে না। সন্দেহভাজন অভিযুক্তকে তার অধিকারগুলি স্পষ্টভাবে অভিহিত করতে হবে এমন কোন আইনগত নজিরও নাই।

বিচারপতি পটার স্টুয়ার্ট এবং বিচারপতি বায়রন আর হোয়াইট যৌথভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ের সাথে ভিন্নমত পোষণ করে পৃথক রায় দেন। তারা তাদের রায়ে বলেন, শুধুমাত্র নিজেকে জড়িত করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে তার অধিকারগুলি স্পষ্টভাবে অভিহিত করতে হবে এই সুরক্ষাই ৫ম সংশোধনী প্রদান করেছে। পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ কোন জবরদস্তিমূলক কিছু না, এবং সেই ক্ষেত্রে ৫ম সংশোধনীকে এত ব্যাপক ভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নাই। ৫ম সংশোধনীর এই ধরণের ব্যাখ্যা ফলে ফৌজদারি মামলার কার্যক্রম ব্যাহত হবে এবং স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির গ্রহণ যোগ্যতা অনেক কমে যাবে।

বিশ্লেষণ
এই রায়ের মাধ্যমে --
১. সন্দেহভাজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশ কর্তৃক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটা নীতি নির্ধারণ করা হয়।
২. পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের শুরুতেই সন্দেহভাজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তার অধিকারগুলি স্পষ্টভাবে বলে দিতে হবে।
৩. সন্দেহভাজন অভিযুক্ত ব্যক্তির জানা থাকতে হবে --
(ক) জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে চুপ থাকার অধিকার তার আছে। অর্থাৎ সে পুলিশের প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য নয়।
(খ) সে যে বক্তব্য দিবে, মামলায় প্রমাণ হিসাবে সেটা তার বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে পারে।
(গ) জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার আইনজীবীকে উপস্থিত রাখার অধিকার তার আছে।
(ঘ) তার আইনজীবী নিয়োগ করার অধিকার আছে।
(ঙ) সে স্বেচ্ছায় তার এই অধিকারগুলি বর্জন করতে পারে, এবং
(চ) যে মুহূর্তে সে আইনজীবী নিয়োগের কথা বলবে, সেই মুহূর্তে থেকে তাকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করা যাবে না, আইনজীবী না আসা পর্যন্ত।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×